ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

নতুন বছরে সুস্থ থাকার প্রতিজ্ঞা: দেহ ও মনের যত্নে বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ

২০২৫ এপ্রিল ১৮ ১২:৩৪:৩৯
নতুন বছরে সুস্থ থাকার প্রতিজ্ঞা: দেহ ও মনের যত্নে বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ

সত্য নিউজ:নতুন বছরের সূচনা মানেই এক নতুন সম্ভাবনা। অনেকেই এ সময়টিতে নিজের স্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন। সবার ভাবনায় থাকে—যোগব্যায়াম, হাঁটাহাঁটি, খাদ্য তালিকা থেকে চর্বি ও শর্করা কমানো, ডায়েট পরিকল্পনা, শরীরচর্চার রুটিন ইত্যাদি।

কিন্তু যদি বলা হয়, এত কিছু না করে, বরং কিছু নির্দিষ্ট ও সহজ কিছু অভ্যাস গড়ে তুললেই আপনি থাকতে পারেন সুস্থ ও প্রাণবন্ত? তাহলে নিশ্চয়ই আপনি সেই কার্যকর অথচ বাস্তবসম্মত পথটি অনুসরণ করবেন।

১. শুধু দেহ নয়, মনকেও দিন অগ্রাধিকার

সুস্থতা মানে শুধুই শারীরিক সুস্থতা নয়। এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পোর্টস অ্যান্ড এক্সারসাইজ বিভাগের শিক্ষক ড. নেডাইন স্যামি বলেন, “আমাদের মনের যত্ন নেওয়া দেহের মতোই গুরুত্বপূর্ণ।”

তার মতে, আত্ম-সচেতনতা বা Self-awareness হলো এমন একটি ক্ষমতা, যা মানুষকে নিজের অনুভূতি, আবেগ ও চাহিদা বোঝার ক্ষমতা দেয়। আত্ম-সচেতন ব্যক্তি নিজের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো ভালোভাবে চিনতে পারে, এবং সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পথও খুঁজে পায়।

২. পাতে থাকুক ৩০ রকমের সবজি ও ফল

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের কথা বললে শুধু ‘সবজি খাও’ বললেই হয় না। লন্ডনের কিংস কলেজের গবেষণা ফেলো ড. মেগান রসি জানাচ্ছেন, “প্রতিসপ্তাহে অন্তত ৩০ ধরনের বিভিন্ন সবজি ও ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।”

তার ব্যাখ্যায়, আমাদের শরীরের অন্ত্রে থাকা মাইক্রোবায়োম নামক ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিপাক ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। আর এই মাইক্রোবায়োমকে পুষ্ট করতে প্রয়োজন হয় বৈচিত্র্যময় উদ্ভিজ্জ খাদ্য।

৩. হাসুন, কারণ আনন্দে রয়েছে আরোগ্য

ড. জেমস গিল বলেন, “সুখী হওয়া আসলে সহজ, যদি আপনি ইচ্ছা করেন।” তার মতে, দৈনন্দিন জীবনে বেশি করে হাসা মানেই মানসিক চাপ হ্রাস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ইমিউন সিস্টেমের উন্নতি।

প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় নিজেকে আনন্দে রাখার চেষ্টাটুকুই বড় একটা পদক্ষেপ হতে পারে সুস্থতার পথে।

৪. ঘুম—ভালো স্বাস্থ্যের মৌলিক চাবিকাঠি

ঘুম নিয়ে অনিয়ম এখনকার অনেক মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর প্রভাব ভয়াবহ। ড. গেভিন বাকিংহাম, এক্সেটার ইউনিভার্সিটির স্পোর্ট অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক, জানান—ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হ্রাস পায়, শেখার ক্ষমতা কমে যায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হয়।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। ঘুম ঠিক রাখলে শরীরও ঠিক থাকে, মেজাজ থাকে ইতিবাচক।

৫. সঠিক সময়ে সুষম খাবার, নিয়মিত পানি পান ও বিশ্রাম

বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. মো. আব্দুল হালিম বলেন, “সুস্থ থাকতে হলে আমাদের জীবনযাত্রায় শৃঙ্খলা আনতে হবে।” তার মতে, নিম্নোক্ত অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা উচিত:

  • সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া:

    • নাস্তা: সকাল ৭টা–৮টার মধ্যে

    • হালকা স্ন্যাকস: সকাল ১০টা–১১টার মধ্যে

    • দুপুরের খাবার: ১২টা–১টার মধ্যে

    • বিকেলের নাস্তা: ৩:৩০–৪টার মধ্যে

    • রাতের খাবার: সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে

    • রাত ১০টার দিকে হালকা কিছু (যদি প্রয়োজন হয়)

  • প্রচুর পানি পান: দৈনিক ৮–১০ গ্লাস

  • শরীরচর্চা ও বিশ্রাম: প্রতিদিন কিছুটা হোক, নিয়মিত হতে হবে

  • শাকসবজি ও ফলমূলের আধিক্য: বৈচিত্র্যময় উদ্ভিজ্জ খাদ্য শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী

তার মতে, আমাদের দেশে অনেকেই খাবার খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় মানেন না, যা দীর্ঘমেয়াদে নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।

নতুন বছর মানেই নতুন লক্ষ্যের দিকে যাত্রা। সুস্থ জীবনযাত্রা গড়ে তুলতে হলে বড় কোনো পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই—বরং ছোট ছোট অভ্যাসের পরিবর্তনই পারে আপনাকে এনে দিতে দীর্ঘমেয়াদি সুফল।

নিজের মনকে জানুন, খাদ্যে বৈচিত্র্য আনুন, বেশি করে হাসুন, ঘুম ঠিক রাখুন, আর সময়মতো সুষম খাবার গ্রহণ করুন—এই কয়েকটি সহজ ধাপে আপনি থাকতে পারেন সুস্থ, প্রফুল্ল ও উদ্যমী।