ছাত্রদলের মহাসমাবেশ

বাংলাদেশ আর প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না: তারেক রহমানের প্রত্যয়ী ঘোষণা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ২৩:১৯:৪১
বাংলাদেশ আর প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না: তারেক রহমানের প্রত্যয়ী ঘোষণা
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে আজ শাহবাগে ছাত্রদল আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: প্রথম আলো।

জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক ছাত্র-যুব গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “বাংলাদেশের মানুষ আর বিভেদ-বিরোধ ও প্রতিহিংসা–প্রতিশোধের রাজনীতি চায় না।”

রোববার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে অনুষ্ঠিত এই ছাত্র সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত রাষ্ট্র। জনগণ এখন গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তন চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত এই বাস্তবতাকে সম্মান করা এবং মানসম্পন্ন, কল্যাণমুখী রাজনীতির পথে অগ্রসর হওয়া।”

ভবিষ্যৎ রাজনীতির নতুন রূপরেখা

তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দর্শন ব্যাখ্যা করেন, যেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধকে উচ্চকিত রেখে মানবিক মানুষ তৈরির প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “বিএনপির নীতি হলো—জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত কর্মমুখী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন।”

এ সময় তিনি দেশের তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আজকের তরুণেরা যেন দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী হয়—এটাই বিএনপির অঙ্গীকার।”

শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনা

তারেক রহমান দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার চরম দুরবস্থার জন্য ক্ষমতাসীন ‘ফ্যাসিস্ট চক্রকে’ দায়ী করে বলেন, “তারা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করেছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত করেছে।”

তিনি জানান, বিএনপি আগামী দিনে শিক্ষা কারিকুলামকে ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষাভিত্তিক করে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে স্কুল পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীরা বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরপরই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

পাঠ্যক্রমে দক্ষতার উপর গুরুত্ব

তারেক রহমান বলেন, “একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যদি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ অনুযায়ী দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হয়, তাহলে একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষে আর বেকার থাকবে না। বরং সে হবে আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মবিশ্বাসী।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি এই বাস্তব ভিত্তিক শিক্ষাকে স্কুল পর্যায় থেকে চালুর বিষয়ে কাজ করছে, যাতে করে প্রতিটি তরুণ তার ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে প্রস্তুত থাকতে পারে।”

ছাত্রদলের শক্তিশালী অবস্থান ও উপস্থিতি

সমাবেশে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান ও আসাদুজ্জামান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির, হাবিব উন নবী খান ও শহীদ উদ্দীন চৌধুরী।

সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিকেল সোয়া তিনটার দিকে তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হলে শাহবাগ চত্বরজুড়ে নেতা–কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।

রাজনীতিতে প্রতিশোধ নয়, মানবিকতা

তারেক রহমানের কথায় স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়েছে—একটি ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শনের আহ্বান। তিনি বলেছেন, “বিএনপি আর পুরোনো দিনের বিভাজন নয়, মানবিক সমাজ গঠনের রাজনীতি চায়। আমাদের লক্ষ্য প্রতিশোধ নয়, উন্নয়ন। আমাদের লক্ষ্য দমন নয়, সম্মান।”

এ বক্তব্যে একদিকে যেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনের দাবি উঠে এসেছে, তেমনি অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি মানবিক ও দক্ষ রাষ্ট্র গঠনের সংকল্প প্রকাশ পেয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ