ডোমিনো এফেক্ট: ছোট পরিবর্তনে কীভাবে বদলায় বড় সিদ্ধান্ত

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০১ ১৯:৪১:৪০
ডোমিনো এফেক্ট: ছোট পরিবর্তনে কীভাবে বদলায় বড় সিদ্ধান্ত
ছবিঃ সংগৃহীত

মানব আচরণগুলো প্রায়ই একে অপরের সঙ্গে জটিলভাবে জড়িত। একটি ছোট পরিবর্তন অনেক সময় একটি বড় রূপান্তরের সূচনা করে। একে বলা হয় ডোমিনো এফেক্ট বা ডোমিনো প্রভাব যা একটি অভ্যাস পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আরেকটি অভ্যাসে প্রভাব ফেলে এবং সে ধারাবাহিকতায় শুরু হয় আচরণগত শৃঙ্খলার একটি পরস্পর সংযুক্ত ঢেউ।

এই প্রক্রিয়ার বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যায় জেনিফার ডিউকস লি নামের এক নারীর অভিজ্ঞতায়। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি নিয়মিতভাবে বিছানা গোছাতে পারতেন না, তবে একদিন আকস্মিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন অভ্যাসটি গড়ে তোলার। মাত্র চারদিন ধারাবাহিকভাবে বিছানা গুছিয়ে রাখার পরই তিনি দেখতে পান, সেই ছোট কাজটি তাকে ধীরে ধীরে আরও অনেক গৃহস্থালি দায়িত্বে সক্রিয় করে তুলেছে। বিছানা গুছানোর পর তিনি ঘরের কাপড় ভাঁজ করেন, রান্নাঘরের বাসনপত্র ধুয়ে রাখেন, আলমারি গোছান, এমনকি একটি সাজসজ্জার সামগ্রী দিয়েও রান্নাঘর সাজিয়ে ফেলেন।

তিনি জানান, “একটা বিছানা গুছানো আমাকে টেনে নিয়ে গেল গোটা ঘর গোছানোর দিকে... আমি অনুভব করলাম, আমি যেন এক পূর্ণাঙ্গ, পরিপাটি মানুষে রূপ নিচ্ছি।”

এই আচরণিক রূপান্তরই Domino Effect-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

ডোমিনো প্রভাব কী?

ডোমিনো এফেক্ট বোঝায়- যখন আপনি একটি আচরণে পরিবর্তন আনেন, তখন সেই পরিবর্তন আরেকটি সংশ্লিষ্ট আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে, এবং ক্রমান্বয়ে একটি আচরণিক শৃঙ্খলা গড়ে ওঠে। এটি একটি চেইন রিঅ্যাকশনের মতো কাজ করে, যেখানে একটিকে ঠেলে দিলে অন্যগুলোও একে একে নড়ে পড়ে।

২০১২ সালে Northwestern University-র এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা দিনে বসে থাকার সময় কমিয়ে আনে, তারা তাদের দৈনন্দিন চর্বি গ্রহণও অনায়াসে কমিয়ে ফেলেন যদিও তাদেরকে সরাসরি কখনো খাদ্যাভ্যাস বদলাতে বলা হয়নি। কারণ, সোফায় বসে টিভি দেখা কমলে সেই সঙ্গে কমে যায় মনের অজান্তে খাওয়া অভ্যাসও।

এই অভ্যাস পরিবর্তন শুধু ইতিবাচক নয়, নেতিবাচক দিকেও কাজ করে। যেমন মোবাইল চেক করা থেকে শুরু হয় নোটিফিকেশন ক্লিক করা, তারপর সামাজিক মাধ্যমে ঢুকে ২০ মিনিট চলে যায় অপ্রয়োজনীয় ব্রাউজিংয়ে। এভাবেই একটি ক্ষুদ্র নেতিবাচক অভ্যাস হয়ে ওঠে সময় নষ্টের বড় চক্র।

কেন ঘটে ডোমিনো প্রভাব?

এই প্রক্রিয়া দুটি প্রধান কারণে ঘটে:

১. আচরণগত আন্তঃসম্পর্ক: আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। একটি ছোট সিদ্ধান্ত যেমন বিছানা গুছানো আসলে পরিচ্ছন্নতা, নিয়মানুবর্তিতা, মনোযোগ, এমনকি আত্ম-সম্মানবোধের সঙ্গে জড়িত।

২. আত্মপরিচয়ের প্রতি প্রতিশ্রুতি: মানুষ তার নিজের সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করে, তা রক্ষা করতে চায়। বিছানা গুছানোর মতো একটি ছোট কাজ মানুষকে মনে করিয়ে দেয়- “আমি এমন একজন, যে ঘর পরিষ্কার রাখে।” এরপর সেই আত্মপরিচয়ের প্রতিফলন দেখা যায় রান্নাঘর, কর্মক্ষেত্র এমনকি খাদ্যাভ্যাসেও।

ডোমিনো প্রভাব তৈরির ৩টি কার্যকর নিয়ম

ডোমিনো প্রভাব কেবল একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়, বরং সচেতনভাবে এর সূত্রপাত ঘটানো যায়। নিচে এমন তিনটি মূলনীতি তুলে ধরা হলো, যার মাধ্যমে আপনি নিজের জীবনে ইতিবাচক আচরণিক শৃঙ্খলার সূচনা করতে পারেন:

১. যেটায় সবচেয়ে বেশি উৎসাহ অনুভব করেন, তা দিয়েই শুরু করুন।

ছোট কিন্তু মোটিভেটিং কোনো কাজ দিয়ে অভ্যাস গড়ার সূচনা করুন। এই ছোট পদক্ষেপটাই আত্মবিশ্বাস তৈরি করে এবং নতুন পরিচয়ের ভিত্তি গড়ে তোলে। (এক্ষেত্রে “টু-মিনিট রুল” কার্যকর হতে পারে।)

২. এক কাজ শেষ করে পরেরটিতে দ্রুত এগিয়ে যান।

যতক্ষণ পর্যন্ত গতি থাকে, ততক্ষণ তা বজায় রাখুন। এক কাজের সফলতা যেন পরবর্তী কাজের দিকে ঠেলে দেয়। অভ্যাসের পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়েই নতুন আত্মপরিচয় গড়ে ওঠে।

৩. সন্দেহ থাকলে কাজটা আরও ছোট করে ফেলুন।

অভ্যাসটি যেন বড় না হয়ে যায়। ছোট, টেকসই অংশে ভাগ করুন যাতে তা সহজে গ্রহণযোগ্য হয়। মনে রাখবেন, ডোমিনো এফেক্ট মূলত অগ্রগতির ধারাবাহিকতা not perfection, just progression.

ডোমিনো এফেক্ট আমাদের জীবনের অভ্যাস গঠনের অন্যতম শক্তিশালী একটি ধারণা। একটিমাত্র ছোট অভ্যাস- যেমন বিছানা গুছানো, সকালে পানি খাওয়া, অথবা দিনের শুরুতে ২ মিনিটের ধ্যান—হতে পারে এমন একটি প্রাথমিক ধাক্কা, যা আপনার জীবনের আরও বহু জায়গায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ