‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা

 কি আছে এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে? 

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৪ ২৩:৫১:১৪
 কি আছে এনসিপির ২৪ দফা ইশতেহারে? 
জুলাই-গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: প্রথম আলো।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি বিস্তৃত ও ব্যাপক রাজনৈতিক ইশতেহার ঘোষণা করেন, যার লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে দেশজুড়ে দলীয় নেতা-কর্মী, শহীদ পরিবার ও আহতদের উপস্থিতিতে তিনি ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ নামে এই ২৪ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

পটভূমি ও ঘোষণার প্রেক্ষাপট

সমাবেশের সূচনায় নাহিদ ইসলাম স্মরণ করেন এক বছর আগের ঐতিহাসিক ঘোষণা—যেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের প্রতীক হিসেবে এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নামে। তিনি স্পষ্ট করে দেন, এই আন্দোলনের নেতৃত্ব কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নয়, বরং গোটা দেশের জনগণ ও অভ্যুত্থানকারী তরুণদের। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এনসিপির জন্ম এবং আজকের এই ২৪ দফা ইশতেহার।

নাহিদ ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই ইশতেহার জনগণের স্বপ্ন ও শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি। আমাদের সংগ্রাম কেবল সরকারের পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং সেই কাঠামো বদলের জন্য, যার ভেতরে ফ্যাসিবাদ গড়ে ওঠে।”

ইশতেহারের মূল আকর্ষণ

এই ২৪ দফায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, যেমন নতুন সংবিধান প্রণয়ন, ফ্যাসিবাদী অপরাধের বিচার, বিচার ও প্রশাসনিক সংস্কার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, নারী-যুব-সংখ্যালঘুদের ক্ষমতায়ন, শ্রমিক-কৃষকের অধিকার, প্রযুক্তিনির্ভর গবেষণা, জলবায়ু সহনশীলতা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল।

প্রতিটি দফা মূলত একটি করে রাষ্ট্রীয় সংকল্প ও উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার ভিত্তি স্থাপন করে।

১। নতুন সংবিধান ও দ্বিতীয় রিপাবলিকের প্রবর্তন

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক পরিকাঠামো একনায়কতান্ত্রিক ও পরিবারতন্ত্রের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হওয়ায়, এনসিপি একটি নতুন সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে। এই সংবিধান হবে জনগণের অংশগ্রহণে গণপরিষদের মাধ্যমে গৃহীত, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় নির্মিত হবে। নতুন সংবিধানে ব্যক্তির মর্যাদা, মৌলিক অধিকার, গণতন্ত্র, ক্ষমতার ভারসাম্য এবং আইনের শাসন সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হবে। একনায়কতন্ত্র, দলীয়করণ, বিচারব্যবস্থার ওপর নির্বাহী হস্তক্ষেপ, ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতাকে বন্ধ করা হবে সাংবিধানিকভাবে।

২। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার নিশ্চিতকরণ

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা কর্তৃক পরিচালিত গণঅভ্যুত্থান ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী এক ঐতিহাসিক রূপান্তর। এনসিপি এই অভ্যুত্থানের শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের পাশাপাশি শাপলা গণহত্যা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চায়। পাশাপাশি আহতদের পুনর্বাসন ও আজীবন রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

৩। গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ সংস্কার

জনগণের প্রকৃত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এনসিপি এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করতে চায়, যেখানে সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ না হয়ে স্বতন্ত্র ও কার্যকর হবে। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে কালো টাকার প্রভাব দূর করার জন্য রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে নির্বাচনী ব্যয় বহনের পরিকল্পনা রয়েছে। গণতন্ত্র শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রতিটি স্তরে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

৪। বিচারব্যবস্থার ন্যায়ভিত্তিক রূপান্তর

এনসিপি চায় এমন এক বিচারব্যবস্থা, যা ক্ষমতাবানদের রক্ষা না করে, মজলুমদের পক্ষে দাঁড়াবে। ঔপনিবেশিক যুগের অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইন সংস্কার করে মানবাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিচারনীতি চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল ফাইলিং, অনলাইন ট্র্যাকিং, আলাদা সচিবালয়, বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা ইত্যাদির মাধ্যমে বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত ও কার্যকর হবে।

৫। দুর্নীতিমুক্ত ও জনসেবামূলক প্রশাসন

আমলাতন্ত্রকে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বিপরীতে এনসিপি দক্ষ, নিরপেক্ষ ও সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছে। সরকারি নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে। ডিজিটাল গভর্ন্যান্স চালু করে জনসেবার গতি বাড়ানো হবে এবং দুর্নীতির দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির নিশ্চয়তা থাকবে। Whistleblower Protection আইন প্রণয়ন করে দুর্নীতিবিরোধী সাহসী নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া হবে।

৬। মানবাধিকার রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সংস্কার

র‌্যাব বিলুপ্তিসহ পুলিশ ব্যবস্থার রাজনৈতিক অপব্যবহার রোধে স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে। গ্রেপ্তারে ওয়ারেন্ট বাধ্যতামূলক করা, বডি ক্যামেরা চালু, কমিউনিটি পুলিশিং চালু, এবং মানবাধিকারভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে আইনি কাঠামোর আওতায় আনা হবে যাতে রাজনৈতিক নির্যাতন বন্ধ হয়।

৭। গ্রাম পার্লামেন্ট ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ

শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়, উন্নয়ন ছড়িয়ে দিতে গ্রামে 'গ্রাম পার্লামেন্ট' গঠন করা হবে যাতে স্থানীয় সমস্যা, উন্নয়ন ও সরকারি সেবার বিষয়গুলো জনগণের অংশগ্রহণে নির্ধারিত হয়। সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা ছাঁটাই করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর করা হবে। স্থানীয় সরকারকে একটি স্বাধীন কমিশনের মাধ্যমে পরিচালনা করে তা শক্তিশালী করা হবে।

৮। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ

গণমাধ্যম যেন কোনো কর্পোরেট বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর না হয়ে জনগণের পক্ষ হয়ে কথা বলে, তার জন্য মালিকানার বৈচিত্র্য ও আইনি কাঠামো নিশ্চিত করা হবে। প্রেস কাউন্সিলকে সক্রিয় করা হবে এবং মিথ্যা তথ্য বা গুজব রোধে নিরপেক্ষ তথ্য যাচাই ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে। নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণে নীতিনির্ধারণে গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করা হবে।

৯। সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা

জিপিএস-চালিত অ্যাম্বুলেন্স, ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড, ইউনিক হেলথ আইডি, মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ, অঞ্চলভিত্তিক বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নারী-সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিক চিকিৎসাকে মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে একটি শক্তিশালী জাতীয় স্বাস্থ্য কাঠামো গঠন করা হবে।

১০। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য শিক্ষানীতি

সকল শিক্ষার ধারা যেমন বাংলা, ইংরেজি, মাদ্রাসা ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় করে জাতীয় পাঠ্যক্রম আধুনিকায়ন করা হবে। শিক্ষা হবে অধিকার, পণ্য নয়। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক, নৈতিকতা ও নাগরিক চেতনা সম্পন্ন শিক্ষার মাধ্যমে উদ্ভাবনক্ষম নাগরিক তৈরি করা হবে। শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

১১। গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লব

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এনসিপি গবেষণা খাতে বিপ্লব ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে ৫০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে, যার আওতায় থাকবে মহাকাশ প্রযুক্তি, রাডার, AI, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি, ন্যানোটেক, নিউক্লিয়ার সায়েন্স, সেমিকন্ডাক্টর, বায়োটেকনোলোজি প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণা ও ল্যাব প্রতিষ্ঠা। বিশ্বমানের গবেষণাগারের সঙ্গে সহযোগিতা করে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হবে। কম্পিউটেশনাল গবেষণার জন্য ন্যাশনাল কম্পিউটিং সার্ভার গঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ক্লাস্টার তৈরি করা হবে। সাইবার নিরাপত্তা রক্ষায় আলাদা কমিশন গঠন করা হবে।

১২। ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্ত্বার মর্যাদা

বাংলাদেশের বহুজাতিক, বহু ভাষাভিত্তিক ও বহু সংস্কৃতির সমাজে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে নিপীড়নের বিরুদ্ধে এনসিপির অবস্থান দৃঢ়। তারা প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অধিকার, মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। হিন্দুদের জমি দখলের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা, দলিত ও তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানে বিশেষ বরাদ্দ এবং সকল ধর্মে বিদ্বেষমূলক আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মানবাধিকার কমিশনের অধীনে একটি স্বতন্ত্র সেল গঠন করা হবে যা এসব নিপীড়নের তদন্ত ও পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।

১৩। নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন

নারী অংশগ্রহণের সত্যিকার নিশ্চয়তা দিতে সংসদে ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর অংশ, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমবেতন, গৃহিনীর অবদানকে জিডিপির অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। প্রতিটি থানায় নারী সহিংসতা প্রতিরোধ সেল, নারী পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি, ধর্ষণ মামলার ফাস্ট ট্র্যাক ট্রায়াল এবং গণমাধ্যমে ভিকটিমের পরিচয় গোপনের বিধান কার্যকর করা হবে। মাতৃত্বকালীন ও পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত, ব্রেস্টফিডিং রুম, বয়স্ক ও শিশু সেবা কেন্দ্র এবং নিরাপদ যাতায়াতের জন্য নারীবাস চালু করা হবে।

১৪। মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি

এনসিপি চায় এমন একটি অর্থনীতি যেখানে ব্যক্তি নয়, সমাজ ও রাষ্ট্র হবে কেন্দ্রীয়—যেখানে মানুষ, পরিবেশ, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার থাকবে মূলধারায়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নয়, মানুষের জীবনমান উন্নয়ন হবে উন্নয়নের সূচক। বেকার, প্রবীণ, বিধবা, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত হবে। কর কাঠামো হবে প্রগতিশীল; ধনীদের কাছ থেকে বেশি কর আদায় করে গরিবদের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংক, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র ও ঋণনীতির পূর্ণ সংস্কার ঘটানো হবে।

১৫। তারুণ্য ও কর্মসংস্থান

বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি ইন্টার্নশিপ সম্প্রসারণ, প্রশ্নফাঁস রোধে স্বচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষা ব্যবস্থা, উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা ও ফ্রিল্যান্স হাব গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। প্রবাসে কাজের জন্য IT, নার্সিং, হসপিটালিটি ইত্যাদি খাতে ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন, বিদেশি সনদপ্রাপ্তি এবং জেলা পর্যায়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

১৬। বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ন নীতি

গার্মেন্টসনির্ভরতা কমিয়ে চামড়া, আসবাব, হালকা প্রকৌশল, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। ওষুধ শিল্পের সুরক্ষা, ICT খাত সম্প্রসারণ, চট্টগ্রাম-মংলা-মাতারবাড়িকে লজিস্টিক হাবে রূপান্তর এবং শিল্প উন্নয়নে ৫০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার জন্য জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।

১৭। টেকসই কৃষি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব

প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রযুক্তি ও ভর্তুকি, বিষমুক্ত ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন, কৃষকদের সরাসরি বিক্রয়ের সুযোগ এবং ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে অঞ্চলভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বীজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন ও কৃষি রপ্তানির উপযোগিতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

১৮। শ্রমিক-কৃষকের অধিকার

শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি কাঠামো, সামাজিক সুরক্ষা, বাধ্যতামূলক কর্ম-সুরক্ষা-বীমা, পেনশন তহবিল, শ্রম ট্রাইব্যুনালের বিস্তৃতি এবং শিশুশ্রম নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দামে বিক্রির জন্য হিমাগার, কৃষি বীমা, আবহাওয়া ও বাজার সম্পর্কিত জাতীয় মোবাইল প্ল্যাটফর্ম গঠনের কথা বলা হয়েছে।

১৯। জাতীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনা

গ্যাস, খনিজ, কয়লা, পাথরসহ প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা হবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই খনন নীতি প্রণয়ন, আন্তর্জাতিক চুক্তির পুনর্বিন্যাস এবং সুন্দরবনের সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

২০। পরিকল্পিত নগরায়ন ও পরিবহন ব্যবস্থা

রাজধানীকেন্দ্রিক কেন্দ্রীয়করণ বন্ধ করে অন্যান্য শহরে সরকারি সেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা হবে। সামাজিক আবাসন, বাড়িভাড়া নীতিমালা, নদী খাল ভিত্তিক নগরায়ন, পরিবেশবান্ধব গণপরিবহন, সবুজ উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ এবং সাশ্রয়ী ও গতিশীল আন্তঃজেলা যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

২১। জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষা

জলবায়ু বিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলায় বনায়ন, নদী সংরক্ষণ, সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা, খনন নিয়ন্ত্রণ, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিস্তার, আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলবায়ু ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্তর্জাতিক ফোরামে সক্রিয় কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

২২। প্রবাসী বাংলাদেশির মর্যাদা ও অধিকার

প্রবাসীদের শুধু রেমিট্যান্স উৎস না ভেবে রাষ্ট্রের অংশীদার হিসেবে দেখার কথা বলা হয়েছে। দূতাবাসে হয়রানিমুক্ত সেবা, ভোটাধিকার, বিনিয়োগ সহায়তা, প্রবাসে মৃত্যুর পর মরদেহ ফেরত আনা এবং প্রবাসী নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।

২৩। বাংলাদেশকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি

বাংলাদেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চে রেখে দলনিরপেক্ষ, সার্বভৌম, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক সমাধান, মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও পাবলিক ডিপ্লোম্যাসির বিস্তার হবে এই নীতির মূল লক্ষ্য।

২৪। জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশল

সক্ষমতা ও শৃঙ্খলাভিত্তিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্য নিয়ে সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল, UAV ব্রিগেড, সাবমেরিনভিত্তিক নৌবাহিনী, সেকেন্ড স্ট্রাইক সক্ষমতা এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা হবে। প্রতিরক্ষা হবে সংসদীয় নজরদারিতে পরিচালিত, যা আঞ্চলিক শান্তি ও কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখবে।

ইশতেহার ঘোষণার শেষ মুহূর্তে নাহিদ ইসলাম আবারও জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া শপথের কথা—এই দেশকে স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে মুক্ত করার। তিনি বলেন, “আপনারা সাড়া দিয়েছেন, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছেন। এখন সময় এসেছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার।”


 বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চলছে: তারেক রহমান

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ২১:৩৭:৫৩
 বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চলছে: তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান / ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, শুধুমাত্র বিএনপির পরাজয় ঠেকাতে গিয়েই পতিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছর সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। তবে উদ্বেগ ও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।

রবিবার (২ নভেম্বর) গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিএনপির প্রবাসী সদস্যদের জন্য অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ঐক্য ও সমর্থন তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদীতে বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপিকে কোনোভাবেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।

নির্বাচনী সংশয় তিনি বলেন, পতিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে জনগণের নির্বাচনের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে কোনো কোনো সময় জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে—যথাসময় কি নির্বাচন হবে? তিনি মনে করেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে গণমনে সৃষ্ট সংশয়-সন্দেহ গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।

সহযোগিতা ও বাধা তিনি জানান, বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে গণতান্ত্রিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও সহযোগিতা করে আসছে। অথচ একের পর এক নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপন্ন করে তোলা হচ্ছে।

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের লক্ষ্যে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী অথবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।

ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীদেরও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে কিছু কিছু আসনে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন।

ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত হিসেবে সবাইকে মেনে নিতে হবে।

গুপ্ত স্বৈরাচার তারেক রহমান নেতাকর্মীদের আবারও সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচারেরা ওত পেতে রয়েছে। নিজেদের মধ্যে কোনো বিবাদ-বিরোধ না রাখতে অনুরোধ করে তিনি জানান, এসবের কারণে প্রতিপক্ষ যেন কোনো সুযোগ নিতে না পারে।

তারেক রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবসময় বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। কিন্তু বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা অধিকাংশ সময় প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে বিএনপি একটি বিশ্বস্ত রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।


আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল এনসিপি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ২০:২৬:৫৫
আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল এনসিপি
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। একই সঙ্গে এ দুটি বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছে দলটি।

রোববার (২ নভেম্বর) এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সই করা ওই চিঠিটি আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

চিঠিতে এনসিপি বলেছে, সম্প্রতি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় একটি রাজনৈতিক দলকে আইন উপদেষ্টার 'ব্যক্তিগত আশ্বাস ও অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে'। এনসিপি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে; একজন উপদেষ্টা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ আইন উপদেষ্টা; কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন।

এনসিপি মনে করে; নির্বাচনী আইন সংশোধনের মতো বিষয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে এককভাবে আশ্বাস দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থী। এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া যা একটি নির্দিষ্ট দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়; তা প্রশাসনের প্রতি জনআস্থাকে দুর্বল করবে এবং সরকারের নিরপেক্ষতার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

চিঠিতে এনসিপি তিনটি যুক্তি তুলে ধরে জানিয়েছে যে; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার অবস্থান সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী।

প্রথমত, এনসিপি মনে করে; নিবন্ধিত দল যদি অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করে; তবে তারা নিবন্ধনের দায়বদ্ধতা থেকে অব্যাহতি পায় এবং আইনি বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। এতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নিজস্ব অর্থই হারিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, এটি গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি—অর্থাৎ রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি ভেঙে দেয়। কারণ যখন একাধিক নিবন্ধিত দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করে; তখন ভোটারের কাছে রাজনৈতিক দর্শন অস্পষ্ট হয়ে পড়ে এবং ভোটার-দায়বদ্ধতার সম্পর্ক ভেঙে যায়।

তৃতীয়ত, এই বিধান কৃত্রিম বহুদলীয়তা সৃষ্টি করে এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠামোগত সুবিধা দেয়। এর ফলে বড় দলগুলো নিজস্ব স্বার্থে ছোট ছোট 'প্রক্সি দল' তৈরি করে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করায়।

এনসিপি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে; তারা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের সঙ্গে একমত। তাদের দাবি হলো; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন যে; কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। যদি কোনো জোট বা জোটনির্ভর প্রার্থী মনোনয়ন করতে হয়; তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ইসির কাছে নিবন্ধন করতে হবে।

এই সংশোধন প্রকৃত গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করবে; কারণ এতে প্রতিটি দলকে নিজের নাম, নীতি ও নেতৃত্বের দায় নিজেকেই নিতে হবে। এনসিপি নেতা আখতার হোসেন চিঠিতে উল্লিখিত এই দুটি বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছেন।


আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল এনসিপি

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ২০:২৬:৫৫
আইন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিল এনসিপি
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ তুলেছে। একই সঙ্গে এ দুটি বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছে দলটি।

রোববার (২ নভেম্বর) এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সই করা ওই চিঠিটি আইন উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়।

চিঠিতে এনসিপি বলেছে, সম্প্রতি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় একটি রাজনৈতিক দলকে আইন উপদেষ্টার 'ব্যক্তিগত আশ্বাস ও অবস্থান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে'। এনসিপি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে; একজন উপদেষ্টা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ আইন উপদেষ্টা; কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন।

এনসিপি মনে করে; নির্বাচনী আইন সংশোধনের মতো বিষয়ে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে এককভাবে আশ্বাস দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতার পরিপন্থী। এমন কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়া যা একটি নির্দিষ্ট দলের দাবির সঙ্গে একমত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়; তা প্রশাসনের প্রতি জনআস্থাকে দুর্বল করবে এবং সরকারের নিরপেক্ষতার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

চিঠিতে এনসিপি তিনটি যুক্তি তুলে ধরে জানিয়েছে যে; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ও ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে আইন উপদেষ্টার অবস্থান সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপন্থী।

প্রথমত, এনসিপি মনে করে; নিবন্ধিত দল যদি অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করে; তবে তারা নিবন্ধনের দায়বদ্ধতা থেকে অব্যাহতি পায় এবং আইনি বৈপরীত্য সৃষ্টি হয়। এতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার নিজস্ব অর্থই হারিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, এটি গণতন্ত্রের মৌলিক নীতি—অর্থাৎ রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি ভেঙে দেয়। কারণ যখন একাধিক নিবন্ধিত দল বড় দলের প্রতীকে নির্বাচন করে; তখন ভোটারের কাছে রাজনৈতিক দর্শন অস্পষ্ট হয়ে পড়ে এবং ভোটার-দায়বদ্ধতার সম্পর্ক ভেঙে যায়।

তৃতীয়ত, এই বিধান কৃত্রিম বহুদলীয়তা সৃষ্টি করে এবং বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে কাঠামোগত সুবিধা দেয়। এর ফলে বড় দলগুলো নিজস্ব স্বার্থে ছোট ছোট 'প্রক্সি দল' তৈরি করে তাদের প্রতীকে নির্বাচন করায়।

এনসিপি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে; তারা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ও নির্বাচন কমিশনের অবস্থানের সঙ্গে একমত। তাদের দাবি হলো; গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ২০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে স্পষ্টভাবে বলা প্রয়োজন যে; কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অন্য কোনো দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। যদি কোনো জোট বা জোটনির্ভর প্রার্থী মনোনয়ন করতে হয়; তবে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে ইসির কাছে নিবন্ধন করতে হবে।

এই সংশোধন প্রকৃত গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদকে শক্তিশালী করবে; কারণ এতে প্রতিটি দলকে নিজের নাম, নীতি ও নেতৃত্বের দায় নিজেকেই নিতে হবে। এনসিপি নেতা আখতার হোসেন চিঠিতে উল্লিখিত এই দুটি বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার অনুরোধ জানিয়েছেন।


সংস্কার ও বিচার বাদ দিয়ে নির্বাচন নয় জামায়াত নেতার কঠোর বার্তা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৯:১৮:০১
সংস্কার ও বিচার বাদ দিয়ে নির্বাচন নয় জামায়াত নেতার কঠোর বার্তা
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে খুশি করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়; বরং সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, সংস্কার ও বিচার বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচন দিলে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা হবে না।

রবিবার (২ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বিএনপিকে নিশানা করে বলেন, জুলাই সনদ পড়ে ও বুঝেই সব দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বাক্ষর করেছে; এখন তারা আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, "শহীদদের রক্তের চেয়ে টাকার অংক কখনো দামি হতে পারে না।"

তিনি বিএনপির গণভোট একই দিনে আয়োজন করার দাবির সমালোচনা করে বলেন; গণভোট কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের দিন সম্ভব নয়; একইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপির কাছে ২ হাজার শহীদ ও ৫০ হাজারের অধিক আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীর রক্তের চেয়ে ৩ হাজার কোটি টাকা (গণভোটের সম্ভাব্য খরচ) বেশি দামি। তিনি শহীদদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান।

ডা. তাহের বলেন, জুলাই সনদের বিরোধিতা করার মানে হচ্ছে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে; কারণ এক ব্যক্তির হাতে অসম ক্ষমতা থাকলে ফ্যাসিজমের জন্ম হয়। তিনি প্রকৃত দেশপ্রেমিক নেতা বারবার ক্ষমতা চান না উল্লেখ করে বলেন, যেখানে দেশের সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না; সেখানে বিএনপির আপত্তির উদ্দেশ্য জাতি বোঝে।

তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, "আপনার প্রতিশ্রুতি ছিল সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন; সুতরাং আপনার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় জুলাই সনদের বাস্তবায়নের জন্য নভেম্বরে গণভোট এবং ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করুন।" তিনি বলেন, সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে ড. ইউনূস জিরো, আর বাস্তবায়ন হলে ড. ইউনূস হিরো।

সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।


পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থ পাচারের মামলা

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৯:১১:০৬
পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থ পাচারের মামলা
ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পরিচিত ব্যক্তি ও তার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম, “পানি জাহাঙ্গীর” নামে পরিচিত, এর বিরুদ্ধে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার রাতের দিকে নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়ার পর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় চাটখিল থানায় পুলিশের পরিদর্শক মেহেদী হাসানের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাহাঙ্গীর আলম নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার একটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তিনি প্রথমে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে চাকরি শুরু করেন এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের গঠনের পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চাকরি পান।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর আলম ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি স্থাপন করেন এবং বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা শুরু করেন। তবে এই ব্যবসার আড়ালে তিনি এবং তার পরিবার বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিপুল অঙ্কের সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন চালান।

২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির নামে বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা করা হয়েছে এবং এই অর্থের বৈধ উৎস শনাক্ত করা যায়নি।

সিআইডির প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার এবং ভাই মনির হোসেনের সহযোগিতায় দীর্ঘ সময় ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন এবং বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত ছিলেন। ২০২৪ সালের জুনে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মিলেছে যে, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা যৌথভাবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, অভিযোগটি গ্রহণ করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে সিআইডির তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

-শরিফুল


ধানের শীষ-শাপলা কলি: ত্রয়োদশ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৯:০৫:৩২
ধানের শীষ-শাপলা কলি: ত্রয়োদশ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকধারী দল এবং শাপলা কলি প্রতীকধারী দলের মধ্যে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

রোববার (২ নভেম্বর) বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এর আগে ‘শাপলা’ প্রতীক নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি প্রায় চার মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিবাদে জড়িত ছিল। তবে সম্প্রতি এনসিপি ‘শাপলা কলি’ প্রতীকের বিষয়ে সম্মতি পেয়েছে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, দলটি নির্বাচনী চিঠিতে তিনটি বিকল্প প্রতীক শাপলা, সাদা শাপলা এবং শাপলা কলি চেয়েছিল। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন শাপলা কলি অনুমোদন দিলে এনসিপি তা ব্যবহার করবে।

আসন্ন নির্বাচনে সম্ভাব্য জোটের বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপি ও জামায়াত যদি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও গডফাদার রাজনীতি থেকে সরে আসে, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে জোট গঠন করতে পারি।”

এসময় নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী আরও উল্লেখ করেন, গণভোটের সুষ্ঠু আয়োজন নিশ্চিত করতে হবে, তা নির্বাচনের দিনই হোক বা তার আগে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, গণভোট যাতে সকলের অংশগ্রহণে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেটি দলের প্রধান দাবি।

-রাফসান


পানিতে ডুবে মরা ভালো' চুপ্পুর হাতে জুলাই সনদ গ্রহণের চেয়ে: হাসনাত

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৮:০৭:২১
পানিতে ডুবে মরা ভালো' চুপ্পুর হাতে জুলাই সনদ গ্রহণের চেয়ে: হাসনাত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ঢাকার পর দ্বীপ জেলা ভোলায় জুলাই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন; এখন 'চুপ্পুর' হাত থেকে যদি জুলাই সনদের সার্টিফিকেট নিতে হয়, তাহলে শহীদ ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পরিবারের কাছে তা হবে চরম অপমানের। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এরচেয়ে পানিতে ডুবে মরা ভালো।"

রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে ভোলা জেলা পরিষদ অডি‌টো‌রিয়ামে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এন‌সি‌পি) ভোলা জেলা সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ইতিহাসের নির্মম বাস্তবতা হলো—যারা জুলাই আন্দোলনের চেতনা ধরে রাখার কথা বলে; তারাই আজ 'চুপ্পুর' কাছে 'বায়াত' নিয়ে সেই সনদ নিতে চাইছে। তিনি 'চুপ্পু'কে 'ফ্যাসিবাদের সুপ্রিম লিডার' হিসেবে উল্লেখ করে মন্তব্য করেন, তার কাছ থেকে 'বায়াত' নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা এক ধরনের প্রতারণা।

এনসিপি নেতা আরও বলেন, জুলাই সনদের বৈধতা একমাত্র ড. মুহাম্মদ ইউনূসের; গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়ার কারণে তার নির্দেশেই সনদ প্রদান হতে হবে। তিনি মনে করেন, কোনো প্রজ্ঞাপন বা অস্থায়ী নির্দেশ নয়; সরকারের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের মতো জুলাই সনদের ক্ষেত্রেও সরকারের বৈধ ম্যান্ডেট রয়েছে; নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারিই হতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা বলে জুলাই সনদ প্রয়োজন নেই; তারা কাল হয়তো বলবে ২৪ আন্দোলনেরও প্রয়োজন নেই।

এসময় ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে পেশী-শক্তির ব্যবহার মারাত্মক সংকেত; আমরা আশা করি পার্থ ভেবে দেখবেন এবং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আগের অবস্থানে ফিরে আসবেন।

সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল বিভাগীয় সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন, দক্ষিণাঞ্চলীয় যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতুসহ এনসিপির কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।


‘গণভোট নিয়ে তর্ক বন্ধ করুন’- বিএনপি–জামায়াতকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৮:০৩:২৭
‘গণভোট নিয়ে তর্ক বন্ধ করুন’- বিএনপি–জামায়াতকে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
ছবি: সংগৃহীত

গণভোটের সময়সূচি ও পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ না বাড়িয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি সতর্ক করে বলেন, গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পারস্পরিক তর্কাতর্কি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলছে, যা শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ব্যাহত করার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

রোববার (২ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “গণভোট নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। এই ধরনের ‘রাজনৈতিক যুদ্ধ’ শুধু অযৌক্তিকই নয়, বরং নির্বাচনের প্রস্তুতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমি দুই দলকেই আহ্বান জানাই এ ধরনের সংঘাত এড়িয়ে চলুন, যাতে নির্বাচন পিছিয়ে না যায়।”

তিনি আরও বলেন, “গণভোটের সময়টা আসলে মূল ইস্যু নয়। আমরা চাই এই গণভোটটি যেন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জনগণ ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে। গণভোট নির্বাচনের দিনেও হতে পারে, তার আগেও হতে পারে এই বিষয়ে আমরা সম্পূর্ণ ফ্লেক্সিবল।”

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “আমাদের দৃষ্টিতে, যদি গণভোট আগে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে জনগণের মধ্যে সংবিধান সংস্কার নিয়ে আগ্রহ ও উদ্দীপনা বাড়বে। এতে প্রচার-প্রচারণার সুযোগও বাড়বে এবং সংস্কার প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ইতিবাচক রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হবে। তবে সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ানো অযৌক্তিক এতে জনগণ বিভ্রান্ত হবে এবং আন্দোলনের লক্ষ্য দুর্বল হয়ে পড়বে।”

তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, গণভোটকে কেন্দ্র করে সংঘাত বা মুখোমুখি অবস্থান সৃষ্টি করা গণতান্ত্রিক সংস্কারের চেতনাকে বিকৃত করবে। “গণভোট হলো জনগণের অংশগ্রহণের একটি উৎসব, কোনো রাজনৈতিক যুদ্ধক্ষেত্র নয়,” বলেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।

তিনি আরও বলেন, “এনসিপি বিশ্বাস করে, গণভোট একটি ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়া হওয়া উচিত যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মতামত গ্রহণে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু গণভোটের মতো সংবেদনশীল ইস্যুতে ঐক্যই আমাদের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”

তিনি শেষে আবারও দুই প্রধান দলকে সতর্ক করে বলেন, “অপ্রয়োজনীয় কুতর্ক ও সংঘাত এড়িয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই এখন সময়ের দাবি। কারণ, নির্বাচন বিলম্বিত হলে এর দায় কোনো একক দলের নয়, বরং গোটা জাতির ওপর পড়বে।”


প্রেসিডেন্টের আদেশ মানে জুলাই বিপ্লবের কফিনে শেষ পেরেক: নাহিদ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ নভেম্বর ০২ ১৭:১৯:০৭
প্রেসিডেন্টের আদেশ মানে জুলাই বিপ্লবের কফিনে শেষ পেরেক: নাহিদ
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই জাতীয় সনদ বা সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত আদেশের দায়িত্ব কেবলমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, এই আদেশ রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কার্যালয় থেকে জারি করা হলে তা হবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষার ‘কফিনে শেষ পেরেক’।

রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “জুলাই সনদ হলো জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক ও নৈতিক উত্তরাধিকার। সুতরাং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কোনো প্রশাসনিক বা সাংবিধানিক নির্দেশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে নয়, বরং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকেই জারি করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যদি এই আদেশ তথাকথিত রাষ্ট্রপতির অফিস থেকে জারি হয়, তবে এর কোনো রাজনৈতিক বা আইনি বৈধতা থাকবে না। বরং সেটা গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে।” নাহিদ ইসলাম সতর্ক করে বলেন, “প্রেসিডেন্ট চুপ্পু যদি এমন কোনো নির্দেশ জারি করেন, সেটা হবে রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর এবং সাংবিধানিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।”

এনসিপি আহ্বায়ক মনে করেন, জুলাই সনদের উদ্দেশ্য ছিল জনগণনির্ভর একটি নতুন রাষ্ট্রচেতনা প্রতিষ্ঠা করা, যা কোনো নির্দিষ্ট পদ বা প্রথাগত ক্ষমতাকেন্দ্রের দ্বারা নয়, বরং জনগণের স্বার্থে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। তাই অধ্যাপক ড. ইউনূসকেই এই আদেশ জারি করতে হবে—এটাই গণঅভ্যুত্থানের যৌক্তিক ও বৈধ পরিণতি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গণভোট ও নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের চলমান মতবিরোধেরও কঠোর সমালোচনা করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কার ও জুলাই সনদের প্রস্তাবনার মূল বিষয় হওয়া উচিত সংস্কারের ধরন, আইনি কাঠামো এবং প্রধান উপদেষ্টার আদেশের প্রক্রিয়া। কিন্তু এর পরিবর্তে বিএনপি ও জামায়াত এখন বিতর্কে জড়িয়েছে গণভোটের সময় নিয়ে—গণভোট আগে হবে নাকি নির্বাচনের দিনেই হবে। এই দ্বন্দ্ব আসলে অপ্রয়োজনীয় এবং রাজনৈতিকভাবে বিভ্রান্তিকর।”

তিনি আরও যোগ করেন, “সংস্কারের বিষয়বস্তু ও প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য হলে গণভোট কখন হবে সেটা বড় বিষয় নয়। চাইলে আমরা নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করতে পারি, কিংবা তার আগেও করতে পারি। কিন্তু এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে মূল সংস্কার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আন্দোলনের লক্ষ্যকেই দুর্বল করছে।”

নাহিদ ইসলাম শেষে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ যে পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, সেটি এখন বাস্তব রূপ পেতে যাচ্ছে। তাই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরই জনগণের আস্থা নির্ভর করছে, এবং জুলাই সনদের আদেশ তিনিই জারি করলে তবেই তা নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বৈধতা পাবে।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে। নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকাকে... বিস্তারিত