স্বাস্থ্য খাত সংস্কার

'জুলাই সনদে স্বাস্থ্য সংস্কার অন্তর্ভুক্ত হোক': বিশিষ্টজনদের জোর দাবি

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০৩ ১১:৩৬:৪৯
'জুলাই সনদে স্বাস্থ্য সংস্কার অন্তর্ভুক্ত হোক': বিশিষ্টজনদের জোর দাবি

দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি এক খোলা চিঠিতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের গভীর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন স্বাস্থ্য খাত–সংশ্লিষ্ট ছয়জন খ্যাতিমান ব্যক্তি। তাঁরা চিঠিতে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান এবং এসব সুপারিশ জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আহ্বান জানান।

গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই খোলা চিঠিটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বিশিষ্টজনেরা হলেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন, লিয়াকত আলী, নায়লা জামান খান, আজহারুল ইসলাম খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ।

নেতৃত্বের নৈতিক দায় ও ঐতিহাসিক মুহূর্ত

খোলা চিঠিতে তাঁরা লেখেন, "ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে প্রধান উপদেষ্টা নেতৃত্বের যে গুরুদায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন, তা শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং গভীর নৈতিক দায়ও বহন করে।" তাঁরা আশা প্রকাশ করেন, এই অন্তর্বর্তী নেতৃত্ব দেশের শাসনব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং মানবিক করতে সক্ষম হবে।

স্বাস্থ্য খাত শুধু সেবা নয়, জাতীয় উন্নয়নের স্তম্ভ

চিঠিতে স্বাস্থ্য খাতকে কেবল একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নের মৌলিক স্তম্ভ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তারা বলেন, “স্বাস্থ্যখাত মানবসম্পদের বিকাশ, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সম–অধিকার নিশ্চিতকরণের অন্যতম ভিত্তি। একটি কার্যকর, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছাড়া জাতীয় উন্নয়নের কল্পনাও করা যায় না।”

সাফল্য ও সংকটের সহাবস্থান

বিশিষ্টজনেরা স্বীকার করেন যে, গত কয়েক দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা সতর্ক করে বলেন, কাঠামোগত দুর্বলতা, শাসন ব্যবস্থার বিচ্যুতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতার অভাব দেশের এই অগ্রযাত্রাকে বারবার প্রতিহত করেছে। ফলে মৌলিক ও টেকসই রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

সুপারিশ বাস্তবায়ন: ভবিষ্যতের রূপরেখা

খোলাচিঠিতে বলা হয়, "স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো কেবল সেবার সম্প্রসারণ বা মানোন্নয়নের দিকনির্দেশনা নয়— এগুলো একটি সুসংহত রূপান্তর পরিকল্পনার রূপরেখা।" তাঁরা মনে করেন, এই সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন, প্রশাসনিক জবাবদিহির কাঠামো এবং স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।

বিশিষ্টজনেরা জোর দিয়ে বলেন, যদি এই সুপারিশগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন না হয়, তাহলে তা কেবল নথিতে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। কিন্তু যদি এগুলো জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে তা হবে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ—যা অতীতের ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি রোধ করে ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

প্রস্তাবিত নীতিগত ও কাঠামোগত সংস্কার

চিঠিতে তিনটি প্রধান সংস্কারমূলক প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়:

  • স্বাধীন, গণজবাবদিহিমূলক এবং উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্বাস্থ্য কমিশন গঠন।
  • গ্রাম ও শহরে সবার জন্য বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা।
  • উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন।

তাঁরা বলেন, এসব প্রস্তাব ২০২৫ সালের মধ্যভাগে কার্যকরভাবে গ্রহণ করলে, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি আদেশ ও অধ্যাদেশ জারি করা সম্ভব হবে। এমনকি ২০২৬ সালের প্রথম প্রান্তিকে জনগণের সামনে কাঠামোগত রূপান্তরের দৃশ্যমান অগ্রগতি তুলে ধরা সম্ভব হবে।

এই খোলাচিঠি শুধুমাত্র স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের প্রতি একটি আহ্বান নয়, বরং এটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের প্রতি এক দৃঢ় রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রত্যাশার প্রতিফলন। যেখানে নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি অবকাশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ