অন্যান্য

বোবায় ধরার অভিজ্ঞতা আসলে কী? জানুন বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০২ ২১:৩৫:০০
বোবায় ধরার অভিজ্ঞতা আসলে কী? জানুন বিশেষজ্ঞের ব্যাখ্যা
ছবি: সংগৃহীত

ঘুম ভেঙে নড়তে পারছেন না? জানুন ‘বোবায় ধরা’ আসলে কী এবং কেন হয়

মাঝরাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙার পর বুকের ওপর ভারী চাপ অনুভব করছেন, নড়তে-চড়তে পারছেন না, এমনকি চিৎকারও করা যাচ্ছে না—অনেকেই জীবনে অন্তত একবার এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যান। এই অবস্থাকে সাধারণভাবে ‘বোবায় ধরা’ বলা হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম স্লিপ প্যারালাইসিস।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা কোনো অতিপ্রাকৃত বিষয় নয়। এটি আসলে ঘুম ও জাগরণের মধ্যবর্তী এক ধাপে শরীরের পেশিগুলো সাময়িকভাবে অবশ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। এই সময় মস্তিষ্ক জেগে গেলেও শরীর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। ফলে কেউ কথা বলতে পারে না, নড়াচড়া করতেও ব্যর্থ হয়।

বোবায় ধরার সময় কী হয়?

এ ধরনের অবস্থায় অনেকে মনে করেন, কেউ বা কিছু তার গলায় চেপে ধরেছে, কেউ পাশে দাঁড়িয়ে আছে বা ঘরে কোনো অদৃশ্য সত্তা ঘোরাফেরা করছে। আসলে এটি একটি হ্যালুসিনেশনের মতো অভিজ্ঞতা, যার কারণ মস্তিষ্কের রেম (REM) স্লিপ পর্যায়ে বিঘ্ন ঘটানো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেড-নেক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. হাসানুল হক নিপুন বলেন, অনেকে একে জিনে ধরা বা ভূতে ধরার সঙ্গে তুলনা করেন, যা কুসংস্কার। আসলে এটি স্নায়ুবিক একটি অবস্থা। যাদের নারকোলিপসি, উদ্বেগজনিত সমস্যা, মাইগ্রেন বা ঘুমে বিঘ্ন ঘটে, তাদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।

কীভাবে ঘটে?

ঘুমের সময় মস্তিষ্কে গ্লাইসিন ও গামা অ্যামাইনোবিউটারিক অ্যাসিড নামক দুটি রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ হয়। এগুলো পেশিগুলোকে সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। জেগে ওঠার আগেই যদি মস্তিষ্কের নিচের অংশে এই প্রভাব থেকে যায়, তাহলে শরীর কিছুক্ষণ অবশ হয়ে থাকে, যেটি আমরা বোবায় ধরা হিসেবে অনুভব করি।

লক্ষণসমূহ:

জেগে উঠে নড়াচড়া বা কথা বলতে না পারা

বুকের ওপর চাপ অনুভব

গলা চেপে ধরার অনুভূতি

ভৌতিক কিছু দেখা বা গন্ধ পাওয়া

শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া

হৃৎস্পন্দন ও ঘাম বেড়ে যাওয়া

চিকিৎসা কী?

এই অবস্থা সাধারণত ভয়ংকর কোনো রোগ নয়। অধিকাংশ সময় নিজে থেকেই সেরে যায়। তবে যদি নিয়মিত হয়, বিশেষ করে সপ্তাহে একাধিকবার, তখন নিউরোলজিস্ট বা হেড-নেক সার্জনের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। চিকিৎসার অংশ হিসেবে:

পর্যাপ্ত ঘুম

স্ট্রেস কমানো

ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার

মানসিক শান্তি ও সচেতন জীবনযাপন

ডা. হাসানুল হক বলেন, বোবায় ধরা রোধে মূল বিষয় হলো—ঘুমের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। নিয়মিত ঘুম, শরীরচর্চা এবং মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন এ সমস্যা প্রতিরোধে সহায়ক।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ