খাবারের আশায় ১২ কিলোমিটার হাঁটা শিশুটি ইসরায়েলি গুলিতে নিহত

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ০১ ১৩:৩৯:৩৮
খাবারের আশায় ১২ কিলোমিটার হাঁটা শিশুটি ইসরায়েলি গুলিতে নিহত
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ত্রাণ নিতে আসা এক ছোট্ট শিশু আমিরের করুণ মৃত্যু মানবতা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য গভীর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছেঁড়া জামাকাপড় পরিহিত এই শিশু ১২ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের দিকে গিয়েছিল, যেখানে সে সাহায্যের ক্ষুদ্র একটি প্যাকেট হাতে পাওয়ার পরই ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সেনাসদস্য ও জিএইচএফের সাবেক কর্মী অ্যান্থনি অ্যাগুইলার, যিনি মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘আনএক্সপেক্টবল’ পডকাস্টে এ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন।

অ্যাগুইলার জানিয়েছেন, শিশুটি তার কাছে এসে হাত বাড়িয়ে নেয়, সে তার হাত ধরে কৃতজ্ঞচিত্তে ধন্যবাদ জানায়। কিন্তু সেই মুহূর্তটি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই ইসরায়েলি বাহিনীর পিপার স্প্রে, টিয়ার গ্যাস, স্টান গ্রেনেড ও গুলিবর্ষণের কারণে ত্রাণ নিতে আসা নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর হামলা শুরু হয়। চারপাশে মেশিনগানের শব্দ, মাটিতে পড়ে মানুষের মৃত্যু এই ভয়াবহ দৃশ্য তিনি প্রত্যক্ষ করেন।

এই নৃশংস ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নেতারা কড়া সমালোচনা করেছেন। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জঁ-নোয়েল ব্যারো জিএইচএফের পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রমকে ‘লজ্জাজনক’ উল্লেখ করে অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

২০২৫ সালের মে মাসের শেষে গাজার ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সমর্থনে নতুন পদ্ধতি চালু হয়, যা পূর্ববর্তী জাতিসংঘ-সমর্থিত ব্যবস্থার বিকল্প। এই পদ্ধতিতে গাজার বাসিন্দাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ত্রাণ নিতে যেতে হয়। ইসরায়েল দাবি করে, এভাবে হামাসের হাতে ত্রাণ পৌঁছানোর আশঙ্কা কমবে, যদিও মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিশ্লেষণ ও ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের বক্তব্যে হামাসের মাধ্যমে বড় আকারে ত্রাণ চুরি হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই।

জিএইচএফ তাদের সাবেক কর্মী অ্যাগুইলারকে ‘অসদাচরণে বরখাস্ত’ হওয়া ও অসন্তুষ্ট ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করলেও, তার বর্ণনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ত্রাণ বিতরণের সময় গাজায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যার মধ্যে শুধুমাত্র ৩১ জুলাই কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলমান সংঘর্ষ শুরু থেকে প্রায় ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

জাতিসংঘের হুঁশিয়ারি অনুযায়ী, গাজায় ত্রাণের প্রবাহ ভয়াবহভাবে অপ্রতুল রয়েছে, তীব্র দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে ১৫৪ জন অনাহারে মারা গেছেন, যার মধ্যে ৮৯ জন শিশু। আন্তর্জাতিক চাপ ও মানবিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল কিছু অন্যান্য সংস্থাকেও ত্রাণ বিতরণের অনুমতি দিয়েছে, তবে গাজার মানবিক দুর্যোগ এখনও অব্যাহত রয়েছে।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ