বই পড়া শেষ, এখন কী? স্মৃতিতে রাখতে ৭টি পরামর্শ

জীবনযাপন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৭ ০৮:৫২:৫৯
বই পড়া শেষ, এখন কী? স্মৃতিতে রাখতে ৭টি পরামর্শ

বই পড়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাগুলোকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ করে দেয়। যখন আপনি কোনো নতুন ধারণা বা মানসিক মডেল শিখেন, তখন এটা আপনার মস্তিষ্কের “সফটওয়্যার” আপডেট হওয়ার মতো। এতে পুরোনো স্মৃতিগুলোকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে পারেন এবং পুরনো মুহূর্ত থেকে নতুন শিক্ষা অর্জন করতে পারেন। প্যাট্রিক ও’শঘনেসির কথায়, “বই পড়া অতীতকেও পরিবর্তন করে।”

তবে এই পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন আপনি পড়া বিষয়বস্তু ভালোভাবে মনের সঙ্গে ধারণ করেন এবং মনে রাখেন। শুধু বই পড়ে শেষ করা যথেষ্ট নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো পড়া জ্ঞানকে ধরে রাখা এবং সময়ের সাথে সাথে তা বাড়ানো। আনন্দের জন্য বই পড়াও ভালো, তবে এখানে আমরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো শেখার উদ্দেশ্যে কীভাবে ভালোভাবে পড়া যায়।

১. বই বেশি শুরু করুন, কিন্তু দ্রুত ছেড়ে দিন

অধিকাংশ মানুষ অনেক বই শুরু করার থেকে কম বই শুরু করে। ভালো বই চিনে নিতে অনেক সময় লাগে না টেবিল অফ কনটেন্টস, অধ্যায়ের শিরোনাম বা পাতাগুলো দ্রুত স্কিম করে বুঝতে পারেন বইটা আপনার জন্য ভালো কি না। যদি ভালো না মনে হয়, তাহলে গিলগিল করে পড়ার পরিবর্তে দায়িত্বমুক্তভাবে বই ছেড়ে দিন। কারণ সময় সীমিত এবং ভালো বই পড়ার সুযোগ অনেক বেশি। স্ট্রাইপের প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিক কলিসনের কথা মনে রাখুন, “জীবন খুব ছোট যাতে আপনি এখন আপনার জানা সেরা বই পড়তে না পারেন।” তাই বেশি বই শুরু করুন, বেশির ভাগই ছেড়ে দিন এবং ভালো বই গুলো দুবার পড়ুন।

২. এমন বই বাছাই করুন যা আপনি শীঘ্রই কাজে লাগাতে পারেন

যেসব বই আপনি সরাসরি আপনার কাজ বা জীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন, সেগুলো পড়লে মনোযোগ বেশি যায় এবং মনে রাখা সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসা শুরু করছেন তাহলে বিক্রয় সম্পর্কিত বই থেকে সর্বোচ্চ লাভ নিতে চেষ্টা করবেন। জীববিজ্ঞানে কাজ করলে ‘অরিজিন অফ স্পিসিজ’ পড়তে বেশি মনোযোগ দেবেন। সব বই তাত্ক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য না হলেও, যেসব বই আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক, সেগুলো মনে রাখা সহজ হয়।

৩. সার্চযোগ্য নোট নিন

পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখুন। এটা যেকোনোভাবে করতে পারেন কিন্ডলে হাইলাইট করা, অডিওবুক থেকে উক্তি টাইপ করা, কিংবা প্রিন্ট বই পড়ার সময় নোট নেওয়া। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার নোটগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা যাতে সেগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। ডিজিটাল টুলস যেমন Evernote ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এটি বিভিন্ন ডিভাইসে সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং অফলাইনে ও কাজ করে। লক্ষ্য হলো—মস্তিষ্কের স্মৃতির উপর নির্ভর না করে আপনার নোটগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত বের করে নেওয়া।

৪. বিভিন্ন বইয়ের জ্ঞান একত্রিত করুন

একটি বইকে একটি “জ্ঞান বৃক্ষ” হিসেবে ভাবুন, যার মূল অংশ হলো মূল ধারণা আর শাখাগুলো হলো বিস্তারিত বিষয়। নতুন বই পড়ার সময় আগের বই থেকে শেখা ধারণাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন। যেমন, নিউরোসায়েন্টিস্ট ভি.এস. রামচন্দ্রনের বইয়ের একটি ধারণা সামাজিক গবেষক ব্রেনে ব্রাউন এর তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত হতে পারে। এভাবে নতুন তথ্যকে পূর্বের ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত করলে স্মরণশক্তি বাড়ে এবং জ্ঞান গভীর হয়। চার্লি মুংগারের কথায়, “আপনি যখন পড়ার সময় বিষয়গুলোকে মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করেন, তখন আপনি ধীরে ধীরে জ্ঞান অর্জন করেন।”

৫. সংক্ষিপ্ত সারাংশ লিখুন

বই শেষ করার পর সেটির সারমর্ম তিন বাক্যে লিখে ফেলুন। এটি একটি চমৎকার চর্চা যা আপনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিনতে সাহায্য করে। যদি এটা কঠিন মনে হয়, তাহলে ফেইনম্যান টেকনিক ব্যবহার করুন বইয়ের নাম লিখে এমনভাবে ব্যাখ্যা দিন যেন কেউ আগে শুনে নাই। এতে বোঝার ঘাটতি থাকলে তা স্পষ্ট হয় এবং পুনরায় পড়ার প্রয়োজন বুঝতে পারেন। বেন কার্লসনের মতে, “বই থেকে শেখার সেরা উপায় হলো তার ওপর কিছু লেখা।”

৬. একই বিষয়ে বিভিন্ন বই পড়ুন

একটি বই বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে পুরো বিশ্বাস গঠন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই একই বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি পড়ুন। এটি আপনার ধারণাকে আরও সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ করে তোলে। মরগান হাউজেল বলেছেন, “ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা পৃথিবীর অতি ছোট একটি অংশ, কিন্তু আমরা প্রায়শই তা দিয়ে পৃথিবী কেমন কাজ করে তার ৮০% ধারনা করি।” তাই বিস্তৃত পড়াশোনা আমাদের পক্ষপাত থেকে মুক্তি দেয়।

৭. ভালো বই বারবার পড়ুন

একটি ভালো বই একবার পড়ার মতো নয়, বরং বারবার পড়তে হয়। কার্ল পপার বলেছেন, “যেকোনো মূল্যবান বই শুধু একবার নয়, অনেকবার পড়ার যোগ্য।” জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার চিন্তা ও প্রয়োজন পরিবর্তিত হয়, তাই আগের বার চোখে না পড়া তথ্য আবার নতুন করে বোঝা যায়। দার্শনিক চার্লস চু বলেন, “আমি প্রিয় লেখকদের কাছে বারবার ফিরে যাই এবং প্রতিবার নতুন কিছু পাই।” পাশাপাশি, পুনরাবৃত্তি ছাড়া কোনো ধারণা মস্তিষ্কে গভীরভাবে গেঁথে যায় না।

সারসংক্ষেপে, বই পড়া মানে শুধু পৃষ্ঠা উল্টানো নয়, বরং পড়াকে এমন অভ্যাসে পরিণত করা যা গভীর বোঝাপড়া ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। অধিক বই শুরু করা, প্রাসঙ্গিক বই নির্বাচন, সার্চযোগ্য নোট নেওয়া, ধারণাগুলোকে একত্রিত করা, সংক্ষিপ্ত সারাংশ লেখা, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পড়া এবং পুনরায় পাঠ করা এসব কৌশল আপনাকে বই থেকে সর্বোচ্চ লাভবান হতে সাহায্য করবে। এই জ্ঞান আপনার মস্তিষ্ককে পরিমার্জিত করে অতীতকে নতুনভাবে বুঝতে ও ভবিষ্যত গড়তে সক্ষম করে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ