বই পড়া শেষ, এখন কী? স্মৃতিতে রাখতে ৭টি পরামর্শ

বই পড়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে, তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো এটি আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাগুলোকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ করে দেয়। যখন আপনি কোনো নতুন ধারণা বা মানসিক মডেল শিখেন, তখন এটা আপনার মস্তিষ্কের “সফটওয়্যার” আপডেট হওয়ার মতো। এতে পুরোনো স্মৃতিগুলোকে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে পারেন এবং পুরনো মুহূর্ত থেকে নতুন শিক্ষা অর্জন করতে পারেন। প্যাট্রিক ও’শঘনেসির কথায়, “বই পড়া অতীতকেও পরিবর্তন করে।”
তবে এই পরিবর্তন তখনই সম্ভব যখন আপনি পড়া বিষয়বস্তু ভালোভাবে মনের সঙ্গে ধারণ করেন এবং মনে রাখেন। শুধু বই পড়ে শেষ করা যথেষ্ট নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো পড়া জ্ঞানকে ধরে রাখা এবং সময়ের সাথে সাথে তা বাড়ানো। আনন্দের জন্য বই পড়াও ভালো, তবে এখানে আমরা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো শেখার উদ্দেশ্যে কীভাবে ভালোভাবে পড়া যায়।
১. বই বেশি শুরু করুন, কিন্তু দ্রুত ছেড়ে দিন
অধিকাংশ মানুষ অনেক বই শুরু করার থেকে কম বই শুরু করে। ভালো বই চিনে নিতে অনেক সময় লাগে না টেবিল অফ কনটেন্টস, অধ্যায়ের শিরোনাম বা পাতাগুলো দ্রুত স্কিম করে বুঝতে পারেন বইটা আপনার জন্য ভালো কি না। যদি ভালো না মনে হয়, তাহলে গিলগিল করে পড়ার পরিবর্তে দায়িত্বমুক্তভাবে বই ছেড়ে দিন। কারণ সময় সীমিত এবং ভালো বই পড়ার সুযোগ অনেক বেশি। স্ট্রাইপের প্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিক কলিসনের কথা মনে রাখুন, “জীবন খুব ছোট যাতে আপনি এখন আপনার জানা সেরা বই পড়তে না পারেন।” তাই বেশি বই শুরু করুন, বেশির ভাগই ছেড়ে দিন এবং ভালো বই গুলো দুবার পড়ুন।
২. এমন বই বাছাই করুন যা আপনি শীঘ্রই কাজে লাগাতে পারেন
যেসব বই আপনি সরাসরি আপনার কাজ বা জীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন, সেগুলো পড়লে মনোযোগ বেশি যায় এবং মনে রাখা সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসা শুরু করছেন তাহলে বিক্রয় সম্পর্কিত বই থেকে সর্বোচ্চ লাভ নিতে চেষ্টা করবেন। জীববিজ্ঞানে কাজ করলে ‘অরিজিন অফ স্পিসিজ’ পড়তে বেশি মনোযোগ দেবেন। সব বই তাত্ক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য না হলেও, যেসব বই আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক, সেগুলো মনে রাখা সহজ হয়।
৩. সার্চযোগ্য নোট নিন
পড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নোট করে রাখুন। এটা যেকোনোভাবে করতে পারেন কিন্ডলে হাইলাইট করা, অডিওবুক থেকে উক্তি টাইপ করা, কিংবা প্রিন্ট বই পড়ার সময় নোট নেওয়া। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার নোটগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ করা যাতে সেগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। ডিজিটাল টুলস যেমন Evernote ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এটি বিভিন্ন ডিভাইসে সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং অফলাইনে ও কাজ করে। লক্ষ্য হলো—মস্তিষ্কের স্মৃতির উপর নির্ভর না করে আপনার নোটগুলো থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুত বের করে নেওয়া।
৪. বিভিন্ন বইয়ের জ্ঞান একত্রিত করুন
একটি বইকে একটি “জ্ঞান বৃক্ষ” হিসেবে ভাবুন, যার মূল অংশ হলো মূল ধারণা আর শাখাগুলো হলো বিস্তারিত বিষয়। নতুন বই পড়ার সময় আগের বই থেকে শেখা ধারণাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন। যেমন, নিউরোসায়েন্টিস্ট ভি.এস. রামচন্দ্রনের বইয়ের একটি ধারণা সামাজিক গবেষক ব্রেনে ব্রাউন এর তত্ত্বের সঙ্গে জড়িত হতে পারে। এভাবে নতুন তথ্যকে পূর্বের ধারণার সঙ্গে সংযুক্ত করলে স্মরণশক্তি বাড়ে এবং জ্ঞান গভীর হয়। চার্লি মুংগারের কথায়, “আপনি যখন পড়ার সময় বিষয়গুলোকে মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করেন, তখন আপনি ধীরে ধীরে জ্ঞান অর্জন করেন।”
৫. সংক্ষিপ্ত সারাংশ লিখুন
বই শেষ করার পর সেটির সারমর্ম তিন বাক্যে লিখে ফেলুন। এটি একটি চমৎকার চর্চা যা আপনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চিনতে সাহায্য করে। যদি এটা কঠিন মনে হয়, তাহলে ফেইনম্যান টেকনিক ব্যবহার করুন বইয়ের নাম লিখে এমনভাবে ব্যাখ্যা দিন যেন কেউ আগে শুনে নাই। এতে বোঝার ঘাটতি থাকলে তা স্পষ্ট হয় এবং পুনরায় পড়ার প্রয়োজন বুঝতে পারেন। বেন কার্লসনের মতে, “বই থেকে শেখার সেরা উপায় হলো তার ওপর কিছু লেখা।”
৬. একই বিষয়ে বিভিন্ন বই পড়ুন
একটি বই বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে পুরো বিশ্বাস গঠন করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই একই বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি পড়ুন। এটি আপনার ধারণাকে আরও সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ করে তোলে। মরগান হাউজেল বলেছেন, “ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা পৃথিবীর অতি ছোট একটি অংশ, কিন্তু আমরা প্রায়শই তা দিয়ে পৃথিবী কেমন কাজ করে তার ৮০% ধারনা করি।” তাই বিস্তৃত পড়াশোনা আমাদের পক্ষপাত থেকে মুক্তি দেয়।
৭. ভালো বই বারবার পড়ুন
একটি ভালো বই একবার পড়ার মতো নয়, বরং বারবার পড়তে হয়। কার্ল পপার বলেছেন, “যেকোনো মূল্যবান বই শুধু একবার নয়, অনেকবার পড়ার যোগ্য।” জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আপনার চিন্তা ও প্রয়োজন পরিবর্তিত হয়, তাই আগের বার চোখে না পড়া তথ্য আবার নতুন করে বোঝা যায়। দার্শনিক চার্লস চু বলেন, “আমি প্রিয় লেখকদের কাছে বারবার ফিরে যাই এবং প্রতিবার নতুন কিছু পাই।” পাশাপাশি, পুনরাবৃত্তি ছাড়া কোনো ধারণা মস্তিষ্কে গভীরভাবে গেঁথে যায় না।
সারসংক্ষেপে, বই পড়া মানে শুধু পৃষ্ঠা উল্টানো নয়, বরং পড়াকে এমন অভ্যাসে পরিণত করা যা গভীর বোঝাপড়া ও দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে রূপান্তরিত হয়। অধিক বই শুরু করা, প্রাসঙ্গিক বই নির্বাচন, সার্চযোগ্য নোট নেওয়া, ধারণাগুলোকে একত্রিত করা, সংক্ষিপ্ত সারাংশ লেখা, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পড়া এবং পুনরায় পাঠ করা এসব কৌশল আপনাকে বই থেকে সর্বোচ্চ লাভবান হতে সাহায্য করবে। এই জ্ঞান আপনার মস্তিষ্ককে পরিমার্জিত করে অতীতকে নতুনভাবে বুঝতে ও ভবিষ্যত গড়তে সক্ষম করে।
হাঁটার জাদু: সপ্তাহে পাঁচ দিনেই দূরে রাখুন হৃদরোগ ও চাপ
সকালের স্নিগ্ধ বাতাসে কিংবা পড়ন্ত বিকেলের নিরিবিলি সময়ে হাঁটা শুধুমাত্র মনকে প্রফুল্ল করে না, বরং শরীরের জন্যও আনে বহুমুখী উপকার। চিকিৎসকরা বলেন, যারা ওজন কমাতে চান কিংবা সুস্থ জীবনযাপন করতে আগ্রহী, তাদের জন্য হাঁটাই হতে পারে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর শরীরচর্চা।
হাঁটা-হৃদযন্ত্র থেকে মানসিক স্বাস্থ্য পর্যন্ত
নিয়মিত হাঁটা এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। এটি হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরকে হালকা রাখে এবং মানসিক চাপ কমিয়ে মনকে করে উজ্জ্বল। তবে প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিদিনই কি হাঁটা জরুরি, নাকি নির্দিষ্ট দিনে হাঁটলেই যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়?
পাঁচ দিনের সোনালী নিয়ম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের (AHA) সুপারিশ অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের শারীরিক অনুশীলন প্রয়োজন। এর সহজতম উপায় হলো সপ্তাহে পাঁচ দিন, প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা দ্রুত হাঁটা। নিয়মিত এ অভ্যাস হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সামগ্রিক জীবনমান উন্নত করে। বিশেষজ্ঞরা তাই হাঁটাকে আখ্যা দেন “প্রিভেন্টিভ মেডিসিন” হিসেবে, যা আগেভাগেই নানা রোগকে প্রতিরোধে সাহায্য করে।
সপ্তাহে এক–দুই দিন হাঁটলেও উপকার
সবাই নিয়মিত পাঁচ দিন সময় বের করতে পারেন না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং এবং জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে মাত্র এক বা দুই দিন প্রায় আট হাজার পদক্ষেপ হাঁটলেও হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। অর্থাৎ ব্যস্ত জীবনে প্রতিদিন হাঁটার সুযোগ না পেলেও সপ্তাহান্তে দীর্ঘ সময় হাঁটলে শরীর ও মন সমানভাবে উপকৃত হয়।
বয়সের ছাপ মুছে ফেলে হাঁটা
হাঁটার রয়েছে বার্ধক্য ঠেকানোর অসাধারণ ক্ষমতা। নিয়মিত হাঁটলে ডায়াবেটিস, ক্যানসারসহ বয়সজনিত নানা রোগের ঝুঁকি কমে যায়। শুধু তাই নয়, হাঁটা মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা হাঁটাকে এক প্রকার অ্যান্টি-এজিং থেরাপি হিসেবেও বর্ণনা করেন।
হাঁটা শুরু করার সহজ উপায়
হাঁটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি শুরু করতে বিশেষ কোনো প্রস্তুতি বা বিনিয়োগের প্রয়োজন নেই। দামি জুতা বা জিমে সদস্য হওয়ার দরকার নেই। প্রতিদিন সকালে বা সন্ধ্যায় মাত্র ৩০ মিনিট সময় বের করলেই যথেষ্ট। ব্যস্ততার কারণে প্রতিদিন না পারলেও অন্তত সপ্তাহে এক–দুদিন দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটুন। চাইলে বন্ধু বা পরিবারের কাউকে সঙ্গে নিলে হাঁটার সময়টা হয়ে উঠবে আরও আনন্দময়।
হাঁটা এমন এক সহজ অথচ কার্যকর অভ্যাস, যা শরীরকে রাখে ফিট এবং মনকে রাখে প্রফুল্ল। তাই সপ্তাহে নিয়মিত পাঁচ দিন আধা ঘণ্টা করে হাঁটুন, আর যদি তা সম্ভব না হয় তবে অন্তত সপ্তাহে এক–দুদিন দীর্ঘ সময় হাঁটা চালিয়ে যান। সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবনের জন্য হাঁটাকে তাই জীবনের স্থায়ী সঙ্গী করে নেওয়াই শ্রেয়।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA), সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC), জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA), জার্নাল অব জেরোন্টোলজি
মরুভূমির বুকে এক বিস্ময়: সৌদি আরবের ‘ডেজার্ট রক’ রিসোর্ট
সৌদি আরবের লোহিত সাগর উপকূলে পাহাড়ের ভেতর খোদাই করে তৈরি হয়েছে এক অভিনব ফাইভ স্টার রিসোর্ট, যার নাম ‘ডেজার্ট রক’। গত বছর উদ্বোধনের পর সংক্ষিপ্ত সংস্কার শেষে এ গ্রীষ্মে আবারও অবকাশ যাপনকারীদের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়েছে।
এই রিসোর্টে প্রবেশ করতে হয় সরু ও বাঁকানো শিলা কেটে তৈরি গলি পেরিয়ে। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে একটি আকর্ষণীয় ওয়েলকাম প্যাভিলিয়ন, যেখানে সুরেলা সংগীত অতিথিদের স্বাগত জানায়। ডেজার্ট রকে থাকার জায়গা চার ভাগে বিভক্ত। হোটেলের সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে দুই শয্যার একটি ভিলা। এর মাস্টার বেডরুম থেকে দুর্গম পাহাড়ি দৃশ্য ও ব্যক্তিগত ইনফিনিটি পুলের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। অন্যান্য কক্ষে দুটি কুইন বেড, বড় ডাইনিং স্পেস ও শিলার দেওয়ালে সাজানো বসার ঘর রয়েছে। এর বাথরুমেও ফ্লোর-টু-সিলিং জানালা ও ওয়াক-ইন রেইন শাওয়ারের ব্যবস্থা আছে, যা থেকে বাইরের দৃশ্যের স্বাদ নেওয়া যায়।
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ব্যতিক্রমী আয়োজন
রিসোর্টের সাজসজ্জায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান ও রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, যা মরুভূমির পরিবেশের সঙ্গে মিশে গেছে। খাবারের তালিকায় রয়েছে পেরুভিয়ান, কাশ্মীরি ভেড়ার মাংসসহ বিভিন্ন দেশের সিগনেচার আইটেম।
এখানে অবকাশ যাপনকারীদের জন্য থাকছে ওয়াদি পুল, অবজারভেটরি, ডেজার্ট গেমসসহ নানা ধরনের বিনোদন। পাশাপাশি যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাদের জন্য অ্যাবসেইলিং, জিপলাইন, ক্লাইম্বিং, হাইকিং, ই-বাইকিং ও নক্ষত্রদর্শনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যবস্থা আছে। এখানে সৌদি রান্না শেখানোর ক্লাসও রাখা হয়েছে।
রিসোর্টের স্পা সেন্টারে অতিথিরা সাওনা, স্টিম রুম, হাম্মাম, ভিটালিটি পুল ও কোল্ড প্লাঞ্জসহ নানা ধরনের থেরাপি উপভোগ করতে পারবেন। ডেজার্ট রকে এক রাতের জন্য এক শয্যার ওয়াদি ভিলায় থাকতে হলে সর্বনিম্ন ১,৮৬৬ ডলার খরচ করতে হবে।
খবর : দ্য ন্যাশনাল
জ্বর, মাথাব্যথা, আর্থ্রাইটিস—ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় ভিন্ন ডোজ প্যারাসিটামল
জ্বর ও ব্যথা কমানোর ক্ষেত্রে প্যারাসিটামলকে সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধগুলোর মধ্যে গণ্য করা হয়। আমাদের দেশে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং অনেকে শরীরে সামান্য তাপমাত্রা বাড়লেই বা গা ব্যথা হলেই দ্রুত প্যারাসিটামল সেবন করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত জ্বরের ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে গেলে কিংবা হালকা ব্যথায় অযথা প্যারাসিটামল খাওয়ার অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ ডা. তাহমীদ কামাল জানিয়েছেন, প্যারাসিটামলের বিভিন্ন ডোজ এবং ভিন্ন ধরনের সমন্বিত ফর্মুলা রয়েছে। প্রতিটির আলাদা প্রয়োগ ক্ষেত্র, সুবিধা এবং ঝুঁকি রয়েছে। কোন পরিস্থিতিতে কোন প্যারাসিটামল ব্যবহার করতে হবে তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্যারাসিটামলের ধরন ও ব্যবহার
প্যারাসিটামল 500 mg
- ব্যবহার: জ্বর এবং হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যথা যেমন মাথাব্যথা, দাঁতের ব্যথা, কানের ব্যথা, মাসিকজনিত ব্যথা, শরীর ব্যথা বা মচকে যাওয়া।
- প্রতিক্রিয়া: সাধারণত নিরাপদ হলেও মাত্রাতিরিক্ত সেবনে লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
প্যারাসিটামল + ক্যাফেইন
- ব্যবহার: জ্বর, মাথাব্যথা (বিশেষত মাইগ্রেইন), সর্দিজনিত মাথাব্যথা।
- বিশেষত্ব: ক্যাফেইন শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ব্যথা কমাতে বাড়তি সহায়তা দেয়।
- প্রতিক্রিয়া: অনিদ্রা, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, হাত কাঁপা বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া।
প্যারাসিটামল 665 mg (Extended Release)
- ব্যবহার: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা যেমন আর্থ্রাইটিসে কার্যকর। দিনে ২–৩ বার সেবন করা যায়।
- প্রতিক্রিয়া: মাত্রা অতিক্রম করলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
প্যারাসিটামল 1000 mg
- ব্যবহার: তীব্র জ্বর বা ব্যথার ক্ষেত্রে, শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।
- প্রতিক্রিয়া: লিভারের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, মাত্রাতিরিক্ত সেবনে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।
প্যারাসিটামল + ট্রামাডল
- ব্যবহার: মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথায়, যেমন অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ব্যথা বা ক্যানসারজনিত ব্যথা।
- প্রতিক্রিয়া: মাথা ঘোরা, তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব, বমিভাব দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন খেলে আসক্তি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
প্যারাসিটামল 500 mg (Rapid Action Technology)
- ব্যবহার: সাধারণ প্যারাসিটামলের মতোই, তবে বিশেষ প্রযুক্তির কারণে ২ মিনিটের মধ্যে কাজ শুরু করে।
- শর্ত: শুধুমাত্র ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য।
সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন:
- একই সময়ে একাধিক ধরনের প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ কখনোই সেবন করবেন না।
- লিভারের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল খাবেন না।
- ট্রামাডলসমৃদ্ধ ওষুধ অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে নিতে হবে।
- নির্ধারিত ডোজ না মানলে এমনকি সাধারণ প্যারাসিটামলও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
প্যারাসিটামল নিরাপদ ও বহুল ব্যবহৃত একটি ওষুধ হলেও এটি অবহেলায় ব্যবহার করা উচিত নয়। ডোজ অতিক্রম করলে লিভার, কিডনি এমনকি জীবনের জন্যও হুমকি তৈরি হতে পারে। তাই সামান্য জ্বর বা ব্যথার জন্য অযথা প্যারাসিটামল না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
চুল পড়া কমাতে চাইলে খাদ্যতালিকায় রাখুন ৫ ভিটামিন
চুল উঠে যাওয়ায় চিন্তিত? শুধু বাহ্যিক যত্ন নয়, ভেতর থেকেও প্রয়োজন সঠিক পুষ্টির। ২০১৮ সালে প্রকাশিত ডার্মাটোলজি অ্যান্ড থেরাপি জার্নালের এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে শরীরে উপযুক্ত ভিটামিন ও খনিজের অভাব হলে চুল ঝরা বাড়তে পারে। তাই খাদ্যতালিকায় সঠিক ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করলে চুল আরও মজবুত, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হবে।
ভিটামিন ‘এ’: রুক্ষ চুলের জন্য অপরিহার্য
যাদের চুল সবসময় শুষ্ক ও রুক্ষ থাকে, তাদের জন্য ভিটামিন ‘এ’ বিশেষ উপকারী। এই ভিটামিন সেবাম নামক প্রাকৃতিক তেল উৎপাদন বাড়ায়, যা চুলকে আর্দ্র রাখে এবং শুষ্কতা দূর করে। ফলে চুল হয় মসৃণ ও নমনীয়। প্রতিদিনের খাবারে গাজর, ডিম, রাঙা আলু ও ক্যাপসিকাম রাখলে সহজেই ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি পূরণ হবে।
ভিটামিন ‘সি’: কোলাজেন ও চুলের ঔজ্জ্বল্য রক্ষায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভিটামিন ‘সি’ চুলের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চুলের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান হলো কোলাজেন, যা বয়স, দূষণ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসে কমে যায়। কোলাজেন উৎপাদন বজায় রাখতে লেবু, বেল পেপার, ব্রকোলি, টমেটো ও বেরিজাতীয় ফল খাওয়া উচিত। এতে চুল যেমন ঘন হবে, তেমনি উজ্জ্বলতাও বাড়বে।
ভিটামিন ‘ডি’: ফলিকল মজবুত করতে কার্যকর
চুল ঝরার অন্যতম কারণ হলো দুর্বল হেয়ার ফলিকল। ভিটামিন ‘ডি’ ফলিকল শক্তিশালী করে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। বিশেষ করে অ্যালোপেসিয়া এরিয়েটা জাতীয় অবস্থায় এ ভিটামিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। ভিটামিন ‘ডি’-এর উৎস হলো সূর্যালোক, ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাছ ও দুধ। নিয়মিত এগুলো গ্রহণ করলে চুল পড়া অনেকটাই কমতে পারে।
ভিটামিন ‘ই’: চুলের সুরক্ষাবর্ম
অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভেঙে পড়ে। ভিটামিন ‘ই’ শরীরে তৈরি হওয়া ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাব কমিয়ে চুলকে সুরক্ষা দেয়। পাশাপাশি এটি কোষ পুনরুজ্জীবিত করে ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করে। বিভিন্ন রকম বাদাম, আম, ব্রকোলি, রাঙা আলু এবং সবুজ শাকসবজি ভিটামিন ‘ই’-এর সমৃদ্ধ উৎস।
ভিটামিন ‘বি৭’ বা বায়োটিন: কেরাটিন উৎপাদনে অপরিহার্য
কেরাটিন নামক প্রোটিন চুলের মূল উপাদান। বায়োটিন বা ভিটামিন ‘বি৭’-এর অভাবে কেরাটিন উৎপাদন ব্যাহত হয়, ফলে চুল দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া বায়োটিন শরীরে গ্লুকোজ, ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যামাইনো অ্যাসিডের বিপাকে সহায়তা করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ৩০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন প্রয়োজন। বাদাম, শাক, বীজ, দুধ, দই ও রাঙা আলু নিয়মিত খেলে এ ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয় এবং চুল থাকে স্বাস্থ্যকর।
চুল ঝরা রোধে শুধু বাহ্যিক প্রসাধনী নয়, শরীরের ভেতর থেকে সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি। ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘ই’ ও ‘বি৭’ সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে চুল হবে আরও মজবুত, উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
হাঁড়ি-কলসি থেকে টেরাকোটা: দোয়েল চত্বরে মাটির শিল্পের রঙিন দুনিয়া
বিকেলের ফিকে আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোয়েল চত্বর যেন এক ভিন্ন আবহ তৈরি করে। চারপাশে ব্যস্ত মানুষের ভিড় থাকলেও নজর কাড়ে সারি সারি সাজানো মাটির সামগ্রীর দোকান। লালচে আভায় মোড়া কলসি, হাঁড়ি, ফুলদানি, শোপিস, কাপ-গ্লাস কিংবা ক্রোকারিজের মায়াবী ঝলক বাতাসে মিশে থাকা মাটির গন্ধকে আরও জীবন্ত করে তোলে। শহরের কোলাহলের মাঝেও এখানে এসে যেন মানুষ এক মুহূর্তের জন্য থমকে যায়—এখানকার পসরা কেবল বাজার নয়, এটি আমাদের শেকড়ের টান অনুভব করার এক ছোট্ট আয়োজন।
ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার
দোয়েল চত্বরে টানা ২৮ বছর ধরে ব্যবসা করছেন ইব্রাহিম বাবুল। তিনি জানান, মৃৎশিল্প মূলত পাল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পেশা। ১৯৮৫–৮৬ সালের দিকে পালরা এখানে আসেন, তাদের দেখে ধীরে ধীরে অন্যরাও এ ব্যবসায় যুক্ত হন। অনেকেই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছেন, কেউ পেশা বদল করেছেন, তবে এখনো কিছু পরিবার এ পেশায় টিকে আছেন। বাবুলের ভাষায়, “মানুষ যাবে-আসবে, কিন্তু যুগ যুগ ধরে এই ব্যবসা বেঁচে থাকবে।”
হারানো দিন আর বর্তমান বাস্তবতা
একসময় গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরে মাটির হাঁড়ি-কলসি অপরিহার্য ছিল। রান্না, পানি সংরক্ষণ থেকে শুরু করে অতিথি আপ্যায়ন—সব ক্ষেত্রেই মাটির জিনিসপত্র ব্যবহার হতো। বর্তমানে সিরামিক, প্লাস্টিক ও কাচের পণ্যে বাজার ভরে গেলেও রুচিশীল মানুষের কাছে এখনো মাটির সামগ্রীর কদর রয়ে গেছে। কেউ ফুলগাছ সাজাতে টব কিনছেন, কেউ ফুলদানি, কেউবা সৌখিনতার বশে খাবার প্লেট বা ফিল্টার। এভাবে মাটির জিনিসপত্র আজও আভিজাত্য ও শৌখিনতার প্রতীক হয়ে টিকে আছে।
ব্যবসায়ীর অভিজ্ঞতা
বাবুলের মতে, আগের মতো চাহিদা নেই, তবে যারা শিক্ষিত ও রুচিশীল, তারাই বেশি কেনেন। তাদের কাছে মাটির জিনিসের আলাদা মূল্য আছে। মৃৎশিল্প তৈরির জন্য বিশেষ ধরনের এটেল মাটি প্রয়োজন হয়, যা শরীয়তপুর, কুষ্টিয়া, কুমিল্লার বিজয়পুর ও বরিশালের বগাদিয়া-কনদিয়া এলাকা থেকে আনা হয়। ঢাকার মাটি দিয়ে এই শিল্প সম্ভব নয়। এটেল মাটির সঙ্গে বালি, দোয়াশ মাটি এবং কখনো রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি হয় নান্দনিক সামগ্রী।
মাটির শিল্পের বৈচিত্র্য
দোয়েল চত্বরে সাজানো দোকানগুলোয় গেলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মাটির কাপ, মগ, জগ, ফুলদানি, শোপিস, ফিল্টার, ডিনার সেটের পাশাপাশি পোড়ামাটির টেরাকোটা, দেয়াল সাজানোর শিল্পকর্ম এমনকি নারীদের গহনা—কানের দুল, বালা, গলার মালাও পাওয়া যায়। দাম শুরু হয় ২৫০ টাকা থেকে, আর নিপুণ শিল্পকর্মের জটিলতা ও আকারভেদে তা কয়েক হাজার টাকায় গড়ায়।
ঐতিহ্য ধরে রাখার সংগ্রাম
দীর্ঘদিন ধরে দোয়েল চত্বরে ব্যবসা করছেন আবু তাহেরও। তিনি বলেন, “গ্রামে এখন আর মাটির জিনিসপত্র তেমন চলে না। কিন্তু ঢাকায় যারা শখ করে ঘর সাজান, তারাই আমাদের জিনিস কেনেন। মাটির টব, ফুলদানি আর ফিল্টারের ভালো চাহিদা আছে। অনেকে আবার প্রিয়জনকে উপহার দিতেও কেনেন। আমাদের কাছে এই কাজ কেবল ব্যবসা নয়, এটা জীবনের অংশ।”
দোকানিদের মতে, বর্তমানে মৃৎশিল্প নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। একদিকে দামী কাঁচামাল, অন্যদিকে উৎপাদনের সময় বিপুল পরিমাণ ক্ষতি—সব মিলিয়ে ব্যবসা লাভজনক থাকছে না। তবুও মাটির গন্ধ, শেকড়ের টান আর ঐতিহ্যের মায়াই তাদের টিকিয়ে রেখেছে। তাদের বিশ্বাস, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পাল সম্প্রদায়ের হাত ধরে আসা এই শিল্প আবারো ফিরে পাবে তার পুরোনো সম্মান।
দোয়েল চত্বরে সাজানো রঙিন হাঁড়ি-কলস আর শিল্পীর নিপুণ হাতে গড়া শোপিসগুলো যেন আজও দর্শনার্থীদের স্মরণ করিয়ে দেয়, “আমরা এখনো শেকড়ে বাঁধা আছি।” মাটির টান যে কখনো হারায় না, এই চত্বর তার জীবন্ত প্রমাণ।
ব্ল্যাকহেড্স দূর করার ঘরোয়া উপায়: মাত্র দুটি জিনিস লাগবে
নাক, কপাল ও মুখের যেসব জায়গায় অতিরিক্ত সেবাম জমে ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়, সেসব জায়গাতেই দেখা যায় ব্ল্যাকহেড্স। এগুলো ছোট ছোট কালো রোমের মতো দেখতে। ব্ল্যাকহেড্স দূর করতে অনেকে পার্লারে গেলেও, সঠিক পদ্ধতি জানা থাকলে ঘরে বসেই এটি পরিষ্কার করা সম্ভব।
ব্ল্যাকহেড্স কেন হয়?
ত্বকে থাকা সূক্ষ্ম রন্ধ্রে ময়লা, তেল বা মৃত কোষ জমলে ব্ল্যাকহেড্সের সৃষ্টি হয়। রন্ধ্রের মধ্যে এই ময়লা শুকিয়ে কালো বিন্দুর মতো ব্ল্যাকহেড্স তৈরি করে।
দূর করার সহজ কৌশল
ব্ল্যাকহেড্স দূর করতে আপনার প্রয়োজন হবে পরিষ্কার তোয়ালে এবং গরম পানি।
পদ্ধতি:
১. প্রথমে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।
২. এরপর গরম পানির ভাপ নিতে হবে। একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে পানি নিংড়ে নিন এবং
তা মুখের ওপর বা যেখানে ব্ল্যাকহেড্স আছে, সে অংশে চেপে ধরুন।
৩. গরম ভাপের কারণে ত্বকের রন্ধ্রগুলো উন্মুক্ত হবে এবং ব্ল্যাকহেড্স নরম হয়ে যাবে।
৪. এবার তোয়ালে দিয়ে আলতো চাপে ঘষাঘষি করলেই ব্ল্যাকহেড্স পরিষ্কার হয়ে যাবে। মনে রাখতে
হবে, খুব বেশি জোরে ঘষা যাবে না, এতে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
৫. সবশেষে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে, যাতে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর দেখায়।
ব্ল্যাকহেড্স এড়ানোর উপায়
এক্সফোলিয়েশন: ফেসওয়াশ দিয়ে নিয়মিত মুখ পরিষ্কারের পাশাপাশি সপ্তাহে দুই দিন স্ক্রাবিং করা জরুরি। এক্সফোলিয়েশন করলে ব্ল্যাকহেড্স হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
পরিচ্ছন্নতা: ক্রিম মেখে ধুলোভরা বা অপরিচ্ছন্ন বালিশ ও বিছানায় ঘুমালে এই সমস্যা বাড়তে পারে। তাই বিছানা সবসময় পরিষ্কার রাখা উচিত।
এছাড়াও, তোয়ালে দিয়ে ব্ল্যাকহেড্স পরিষ্কারের এই পদ্ধতিটি মাসে সর্বোচ্চ চারবার করা যেতে পারে, এর বেশি নয়।
সূত্র : আনন্দবাজার ডট কম
কেন প্রতিদিন লেখার চর্চা আপনাকে করে তুলতে পারে আলাদা? জানুন কিভাবে
মানুষের জীবনে সবচেয়ে কার্যকরী দক্ষতা কোনটি এই প্রশ্ন করলে অনেকেই বলবেন প্রযুক্তিগত দক্ষতা, ভাষাজ্ঞান কিংবা যোগাযোগ দক্ষতা। কিন্তু এর ভেতরে সবচেয়ে প্রভাবশালী হলো লেখালেখি। লেখালেখি শুধু তথ্য প্রকাশ নয়, বরং চিন্তাকে গোছানো, স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা এবং নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠিত করার শক্তিশালী হাতিয়ার।
লেখালেখির দক্ষতা অর্জন মানে শুধু সুন্দর বাক্য লেখা নয়, বরং পরিষ্কারভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা তৈরি করা। একজন ব্যক্তি যখন লেখায় দক্ষ হন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই ভালো বক্তা হন, পরিষ্কারভাবে যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন এবং সম্পর্ক বা ক্যারিয়ার দুটোতেই সুযোগ পান।
লেখালেখি শেখা কেন কঠিন
বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, লেখালেখি একটি জন্মগত প্রতিভা। অথচ বাস্তব হলো এটি একটি দীর্ঘ চর্চার ফল। লেখক হওয়ার জন্য বছরের পর বছর অনুশীলন, ভুল থেকে শেখা এবং চিন্তাকে ভাষায় রূপান্তর করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হয়। তবে কিছু মৌলিক কৌশল নিয়মিত প্রয়োগ করলে দ্রুত লেখার মান উন্নত করা সম্ভব।
লেখালেখি উন্নত করার ১৫টি কার্যকর কৌশল
১. সংক্ষিপ্ত রাখুন
লম্বা ও ঘুরানো লেখা পাঠকের ধৈর্য নষ্ট করে। সংক্ষিপ্ত লেখা লেখককে স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে বাধ্য করে এবং পাঠকের কাছে বার্তা দ্রুত পৌঁছে দেয়।
২. ধরে নিন পাঠক জানে না
প্রতিটি লেখার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে—পাঠক আপনার অভিজ্ঞতা জানে না। সহজভাবে বিষয় ব্যাখ্যা করুন, তাহলে লেখা হবে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য।
৩. দিনের সেরা সময়ে লিখুন
লেখা মানুষের আবেগ প্রতিফলিত করে। তাই যখন মানসিকভাবে স্বস্তিদায়ক বোধ করবেন, তখনই লেখায় বসা উচিত। সকালে বা রাতে অনেকের জন্য এটি সবচেয়ে ফলপ্রসূ সময়।
৪. ব্যক্তিগত গল্প শেয়ার করুন
মানুষ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে বেশি সংযুক্ত হয়। লেখায় ব্যক্তিগত গল্প থাকলে পাঠক লেখকের সঙ্গে সম্পর্ক অনুভব করে, যা লেখাকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
৫. লিখেই সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশ করবেন না
লেখা শেষ করেই প্রকাশ না করে কিছু সময় বিরতি দিয়ে আবার পড়া জরুরি। এতে তাড়াহুড়া থেকে হওয়া ভুল, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা বা তথ্য বাদ যাওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৬. ক্লিশে এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত ব্যবহৃত কর্পোরেট বা ঘষামাজা শব্দ লেখাকে প্রাণহীন করে তোলে। সাধারণ, সরল ও প্রাকৃতিক শব্দ ব্যবহার করলে লেখা হবে মানবিক ও আকর্ষণীয়।
৭. প্রতিদিন জার্নাল লিখুন
নিয়মিত লেখার অভ্যাস তৈরি করার সেরা উপায় হলো ডায়েরি লেখা। এটি চিন্তাকে পরিষ্কার করতে এবং শব্দ দিয়ে প্রকাশের ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. সরাসরি লিখুন
বার্তা ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি বলুন। অস্পষ্ট লেখা পাঠককে বিভ্রান্ত করে এবং লেখকের বিশ্বাসযোগ্যতা কমায়।
৯. ছোট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করুন
লম্বা অনুচ্ছেদ পড়া কঠিন। ৩-৪ বাক্যে সীমাবদ্ধ ছোট অনুচ্ছেদ পাঠকের চোখকে আরাম দেয় এবং তথ্য গ্রহণ সহজ করে।
১০. অযথা বেশি মতামত চাইবেন না
অভিজ্ঞ নন এমন মানুষের পরামর্শ লেখাকে দুর্বল করে। তাই লেখার ফিডব্যাক চাইতে হলে অভিজ্ঞ লেখকের কাছেই চাইতে হবে।
১১. দৈনন্দিন ব্যবহৃত শব্দ ব্যবহার করুন
“ল্যকনিক”, “ইনট্রান্সিজেন্ট” ইত্যাদি জটিল শব্দ লেখাকে কৃত্রিম করে তোলে। বরং সহজ ও প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করুন, যাতে পাঠক সহজে বুঝতে পারে।
১২. মনোযোগ দিয়ে লিখুন
লেখালেখি মানসিক পরিশ্রমের কাজ। তাই লেখার সময় পূর্ণ মনোযোগ প্রয়োজন। একান্তে বসে লিখলে মান ভালো হয়।
১৩. সত্য লিখুন
লেখালেখির ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী কৌশল হলো সত্য প্রকাশ করা। পাঠক সহজাত সততাকে দ্রুত চিনতে পারে এবং তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
১৪. নির্ভীক হোন
ভুল করার ভয় করবেন না। টাইপো, ছোটখাটো ব্যাকরণ ভুল বা সমালোচনার ভয়ে লেখাকে আটকে রাখা উচিত নয়। আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ভাষায়: “এক পৃষ্ঠার মাস্টারপিস লিখতে গিয়ে ৯১ পৃষ্ঠা আবর্জনা লিখেছি, সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।”
১৫. আটকে গেলে বিরতি নিন
যখন লেখায় অগ্রগতি হয় না, তখন জোর করে লেখা উচিত নয়। কিছুক্ষণ বিরতি নিন, চা খান বা অন্য কিছু করুন। পরে নতুন করে শুরু করলে লেখার গতি ফিরে আসবে।
লেখালেখি মানে ভালো চিন্তা
ভালো লেখা কেবল সুন্দর ভাষা নয়; এটি আসলে ভালো চিন্তার প্রতিফলন। লেখককে নিজের চিন্তাকে শব্দে রূপান্তর করতে হয় এবং সেই সঙ্গে পাঠকের সুবিধার কথাও ভাবতে হয়। পাঠক যেন সহজে বার্তা বুঝতে পারে এই সম্মান দেখানোই লেখালেখির প্রকৃত দায়িত্ব।
লেখালেখি রাতারাতি আয়ত্ত করা যায় না। এটি দীর্ঘ সময়ের অনুশীলন, ধারাবাহিকতা এবং ভুল থেকে শেখার মধ্য দিয়ে তৈরি হয়। তবে নিয়মিত অভ্যাস ও সচেতন প্রয়াস একজন মানুষকে দক্ষ লেখক বানাতে পারে। আর দক্ষ লেখক মানেই দক্ষ চিন্তক ও সফল যোগাযোগকারী। ব্যক্তিগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে পেশাগত সফলতা সবকিছুর জন্যই লেখালেখি হলো জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
কেন আমরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি- মনোবিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা
আমাদের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই আসলে সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত। কখনো উদ্বেগে ভোগেন, কখনো সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে বেশি ভাবেন, আবার কখনো সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দোটানায় থাকেন। ফলে জীবনে অনিশ্চয়তা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হয়।
একজন শিক্ষকের কথা এখানে প্রাসঙ্গিক। লেখক স্মৃতিচারণ করে উল্লেখ করেছেন, স্কুলজীবনে তাঁর শিক্ষক প্রায়ই বলতেন “জীবন হলো তোমার নেওয়া সিদ্ধান্তের ফল।” তখন এই কথাটি ছাত্রদের কাছে তেমন গুরুত্ব পায়নি, বরং তাঁকে “choices guy” বলে মজা করা হতো। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কথাটির গভীরতা পরিষ্কার হয়ে গেছে মানুষ আসলেই তার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজের ভাগ্য গড়ে তোলে।
সিদ্ধান্তহীনতার কারণ
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল করে কারণ তারা ‘Outcome Think’-এ ভোগেন। অর্থাৎ, ফলাফলের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেন। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ হাওয়ার্ড মার্কস তাঁর আলোচিত বই The Most Important Thing এ লিখেছেন “একটি সিদ্ধান্তের সঠিকতা কেবল তার ফলাফল দিয়ে বিচার করা যায় না।” কারণ আমরা ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, কেবল আমাদের কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
যেমন, কেউ যদি একটি বাড়ি কিনে তা বিক্রি করে ১ লাখ ডলার লাভ করার আশা করেন, তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বাজার পরিস্থিতিকে ফলাফলের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলছেন। এতে অযথা উদ্বেগ বাড়বে এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্তহীনতা তৈরি হবে। তাই ফলাফল নয়, বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় মনোযোগী হওয়া জরুরি।
জটিলতা নয়, সরলীকরণ জরুরি
গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত বিশ্লেষণ মানুষকে কার্যত অচল করে দেয় যাকে বলা হয় Analysis Paralysis। একইভাবে Decision Fatigue বা সিদ্ধান্ত ক্লান্তিও একটি বড় সমস্যা; যখন পরপর অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন সিদ্ধান্তের গুণগত মান কমে যায়। আবার অনেক তথ্যের ভিড়ে (Information Overload) কিংবা প্রচুর বিকল্প সামনে থাকলে (Overchoice) মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, সিদ্ধান্তকে সহজ করতে হবে এবং বিকল্প সীমিত করতে হবে। বিষয়গুলো যত জটিল করা হবে, ততই বিভ্রান্তি বাড়বে। সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য সরলীকরণই সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
পরিস্থিতি থেকে মানসিক বিচ্ছিন্নতা দরকার
অনেক সময় মানুষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও আফসোসে ভোগেন যাকে বলা হয় Buyer’s Remorse। ব্যয়বহুল পণ্য কেনার ক্ষেত্রেই শুধু নয়, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেমন ক্যারিয়ার নির্বাচন, বিয়ে কিংবা পড়াশোনার ক্ষেত্রেও একই অভিজ্ঞতা হতে পারে।
গবেষণা বলছে, কোনো সিদ্ধান্তে যত বেশি সময় ও শ্রম বিনিয়োগ করা হয়, ততই আফসোস বা অনুশোচনার সম্ভাবনা বাড়ে। তাই সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত থেকে মানসিক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করতে হবে। ব্যর্থতা আসলে তাতে দমে যাওয়ার কিছু নেই সবসময় বিকল্প সুযোগ থাকে। ভুল সিদ্ধান্ত নয়, বরং দুর্বল সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াই মানুষের জীবনে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনে।
কেন দৃঢ় সিদ্ধান্ত জরুরি
মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার কারণ হিসেবে সিদ্ধান্তহীনতাকে দেখা হয়। সম্পর্ক, ক্যারিয়ার, ব্যবসা প্রতিটি ক্ষেত্রেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই মনে করেন সিদ্ধান্তহীনতা আত্মবিশ্বাসের অভাবের প্রতিফলন।
তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো মূল্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যত বেশি বিষয়কে জটিল করে তোলা হবে, ততই পিছিয়ে পড়তে হবে। জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এটি সত্যি “সিদ্ধান্ত নাও এবং এগিয়ে চলো।”
মার্কেটিং ও উদ্যোক্তাবৃত্তিতে গল্প বলার চার বৈজ্ঞানিক নীতি
সফল নেতা, দক্ষ মার্কেটার কিংবা দূরদর্শী উদ্যোক্তা প্রত্যেকেই মূলত একজন শক্তিশালী গল্পকার। কারণ গল্প বলা কেবল শিল্প নয়, এটি একাধারে মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং আচরণগত নকশায় ভিত্তিক এক বিজ্ঞান। নতুন গ্রন্থ A Story is a Deal থেকে অভিযোজিত চারটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নীতি এখানে তুলে ধরা হলো, যা গল্পকে করে তোলে প্রভাবশালী ও প্ররোচনামূলক।
১. শ্রোতাকে নিজের গল্পের সাথে একাত্ম করা
গল্পের মূল শক্তি নিহিত থাকে পরিচিতি বা Identification-এ। যখন কোনো শ্রোতা বা পাঠক গল্পের নায়ক কিংবা পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের মিল খুঁজে পান, তখন তারা অবচেতনে সেই অভিজ্ঞতাকে নিজেদের বলে অনুভব করেন। এ কারণে গল্পের বার্তা দীর্ঘমেয়াদে মনে গেঁথে যায়।
স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণা এ ধারণাকে সমর্থন করে। বিবিসি স্টোরিওয়ার্কস-এর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, আবেগপূর্ণ গল্প দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি তৈরিতে উল্লেখযোগ্যভাবে কার্যকর। বিশেষ করে, গল্পে আবেগের তীব্রতা ও পুনরাবৃত্তি যত বেশি হয়, প্রভাবও তত দীর্ঘস্থায়ী হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, গল্পের শুরুতেই আবেগময় মুহূর্ত রাখলে স্মৃতিতে তার ছাপ আরও গভীর হয়।
ব্যবসায়িক শিক্ষা: গ্রাহক ধরে রাখা ও ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা তৈরি করতে এমন গল্প ব্যবহার করুন, যেখানে আপনার শ্রোতারা নিজেদের জীবন, চ্যালেঞ্জ কিংবা স্বপ্নকে প্রতিফলিত হতে দেখবেন।
২. সরলতায় শক্তি
বাস্তবতা জটিল হলেও, প্ররোচনামূলক গল্পের শক্তি নিহিত থাকে সরলতায়। মানুষের মস্তিষ্ক পরিষ্কার ও সোজাসাপ্টা বার্তা পছন্দ করে। জটিলতা বাড়লে চিন্তার চাপও বাড়ে, ফলে আগ্রহ হারিয়ে যায়। একক নায়ক ও সহজ ভাষাভিত্তিক গল্প অনেক বেশি কার্যকর।
মনোবিজ্ঞানীরা একে বলেন “Identifiable Victim Effect”। যেমন, সিরীয় শরণার্থী শিশু অ্যালান কুর্দির লাশের ছবি বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং একটি সংস্থার অনুদান বেড়েছিল ১৫ গুণ। অপরদিকে, চ্যানেল ব্র্যান্ডের অতিমাত্রায় বিমূর্ত বিজ্ঞাপন ব্যর্থ হয়েছে শুধু জটিল ও দুর্বোধ্য ভাষার কারণে। গবেষণা প্রমাণ করে, অতিরিক্ত জার্গন ব্যবহার অনেক সময় বুদ্ধিমত্তার বদলে নিম্নতর অবস্থান প্রকাশ করে।
ব্যবসায়িক শিক্ষা: আপনার উপস্থাপনা, পিচ কিংবা বিজ্ঞাপনে সরল ও সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করুন। বিমূর্ততা বা কঠিন শব্দ পরিহার করুন, বরং স্পষ্টতা বজায় রাখুন।
৩. বাধা ও লক্ষ্য পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা
মানুষের গল্প বলার প্রাচীনতম উদ্দেশ্য ছিল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার কৌশল ভাগাভাগি করা। তাই প্রভাবশালী গল্পে সবসময় একজন নায়ক থাকেন, যিনি নির্দিষ্ট বাধার সম্মুখীন হন এবং তা অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছান। এখানে চূড়ান্ত জয়ের পাশাপাশি মূল শিক্ষা বা lesson-ও শ্রোতাকে অনুপ্রাণিত করে।
ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপটে এই শিক্ষা হতে পারে আপনার পণ্য বা সেবা কীভাবে গ্রাহকের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করবে এবং তাকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যে পৌঁছে দেবে।
ব্যবসায়িক শিক্ষা: স্পষ্টভাবে গ্রাহকের সমস্যা চিহ্নিত করুন, দেখান কীভাবে আপনার সমাধান কার্যকর, এবং রূপান্তরের ফলাফল তুলে ধরুন। এতে গ্রাহকের বিশ্বাস বাড়ে এবং তারা পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ হয়।
৪. নির্দিষ্ট ও বাস্তবচিত্রময় হওয়া
অস্পষ্ট ও সাধারণীকৃত গল্প মনে থাকে না। বরং নির্দিষ্ট ও বাস্তব চিত্রসমৃদ্ধ গল্প মানুষের মস্তিষ্কে কল্পনা জাগিয়ে তোলে এবং দীর্ঘদিন স্মৃতিতে থাকে। নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও এই কৌশল কার্যকর সুস্পষ্ট ও কংক্রিট ভিশন কর্মীদের প্রেরণা বাড়ায় এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে।
উদাহরণস্বরূপ, জন এফ. কেনেডি যখন ঘোষণা দেন “একজন মানুষকে চাঁদে পাঠানো হবে এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফেরানো হবে” তখন লক্ষ্যটি হয়ে ওঠে বাস্তব ও অর্জনযোগ্য। একইভাবে, বিল গেটসের স্বপ্ন “প্রতিটি ঘরে ও ডেস্কে একটি কম্পিউটার” ছিল স্পষ্ট ও নির্দিষ্ট, যা মাইক্রোসফটকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ব্যবসায়িক শিক্ষা: আপনার ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে অস্পষ্ট ভাষায় নয়, বরং স্পষ্ট, নির্দিষ্ট ও বাস্তবভাবে তুলে ধরুন। তবেই আপনার দল ও গ্রাহক উভয়েই সেই ভিশনকে ধারণ করতে পারবেন।
সংক্ষেপে বলা যায়, গল্প বলা শুধুই বিনোদন নয়, বরং নেতৃত্ব, মার্কেটিং ও উদ্যোক্তা জীবনে এটি এক অপরিহার্য বিজ্ঞান। সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে গল্প গ্রাহকের মনে ব্র্যান্ডকে অমর করে তোলে, কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করে এবং সাফল্যের পথকে করে আরও সুদৃঢ়।
পাঠকের মতামত:
- ১০ সেপ্টেম্বর শেয়ারবাজারের সার্বিক চিত্র ও বিশ্লেষণ
- ডিএসই ব্লক মার্কেট: বড় লেনদেনে যেসব কোম্পানি
- ১০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- জলবায়ু ইস্যুতে গণমাধ্যমের দায়িত্ব বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পিকেএসএফ চেয়ারম্যান
- ১০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: নিরাপত্তায় ১২০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
- ১০ সেপ্টেম্বর ডিএসইতে দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০ শেয়ার
- ডেঙ্গুতে আরও দুইজনের মৃত্যু, একদিনে আক্রান্ত ৬২৫
- ভাঙ্গায় ১১ ঘণ্টা অবরোধ শেষে ফের নতুন ঘোষণা
- জাতীয় পরিচয়পত্র হারালে আর জিডি করতে হবে না: ইসি
- ডাকসুতে জয়ীদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমিরের বার্তা
- কর ফাঁকি তদন্তে শেখ হাসিনার ব্যাংক লকার সিলগালা
- "ষড়যন্ত্র ভেদ করে ধানের শীষের জয় নিশ্চিত করতে হবে"
- ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৫: কারা পেলেন সেরা সম্মাননা
- যুক্তরাষ্ট্রে আটক কোরীয় শ্রমিকদের দেশে ফেরাতে চার্টার্ড ফ্লাইট
- কাপ্তাই বাঁধে ১৬ গেট খোলা: কর্ণফুলীতে তীব্র পানি প্রবাহ
- জরায়ুর যত্নে সচেতনতা: নারীর সুস্থ জীবনের অপরিহার্য শর্ত
- মহেশখালী-মাতারবাড়ি: পর্যটন ও অর্থনীতির নতুন দিগন্ত
- ডোপ টেস্ট কী, কেন করা হয়, কেন এত এখন জরুরি
- একীভূতকরণ প্রসঙ্গে এক্সিম ব্যাংকের ব্যাখ্যা
- বিজয়ের পর শিবিরের তিনটি কাজের নির্দেশ
- ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েমকে নিয়ে জুলকারনাইন সায়েরের বার্তা
- স্বাস্থ্য জটিলতায় স্ত্রীকে নিয়ে বিদেশে বিএনপি মহাসচিব
- মাত্র ২৪ ঘণ্টায় নতুন প্রধানমন্ত্রী
- আসন পুনর্বিন্যাসে উত্তাল ফরিদপুরের ভাঙ্গা
- ইসরায়েলের হামলা, কাতারের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
- ঢাবি ডাকসু: ভিপি–জিএস–এজিএস পদে শিবিরের দাপট
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- নিরাপদ কাতারেও হামলা! দোহায় ইসরাইলি হামলায় তোলপাড় আরব বিশ্ব
- ইইউ সংলাপ: ঢাকার অগ্রাধিকার বাণিজ্য, ইউরোপের নজর অনিয়মিত অভিবাসনে
- খুনের পরিসংখ্যানে বৃদ্ধি: দেরিতে দায়ের হওয়া মামলার প্রতিফলন
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- বিক্ষোভে রক্তক্ষয়, নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ
- ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে, নির্বাচন স্বচ্ছ দাবি ঢাবি ভিসির
- টিএসসি কেন্দ্রে তিন ঘণ্টায় ৩৫% ভোট
- অল্প সময়েই ছয় দফা বৃদ্ধি: স্বর্ণের বাজারে আগুন
- আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতিতে ইরান: সেনাপ্রধান হাতামির হুঁশিয়ারি
- থাকসিন শিনাওত্রার কারাদণ্ড: রাজনৈতিক বংশপরিচয়ের পতনের আভাস
- বার্মিংহামে বলিউডের ‘ওজিজি’ রানী: কারিনা কাপুর খানের সিলভার শাড়ি
- ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস: পোশাক নয়, স্টাইলের প্রদর্শনী
- বলিউডে বহিরাগতদের প্রতি ক্ষোভ, ‘নেপো বেবি’দের পক্ষ নিলেন তনিশা মুখার্জি
- মেক্সিকোতে ভয়াবহ ট্রেন-বাস সংঘর্ষে ১০ নিহত, আহত ৪১
- ডাকসু নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য
- বিদায় নিশ্চিত, সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩
- উয়েফার নিয়ম মানতে প্রস্তুত হ্যারি কেইন ও দল
- পরিচালকের শেয়ার কেনা সম্পন্ন
- যে ভোট রাতেই করা যায়, সেটা দিনে টেনে রাখা কেন?- ফারুকী
- মহাবিশ্বে নতুন দৈত্য কৃষ্ণগহ্বরের সন্ধান
- বার্নি স্যান্ডার্সের সঙ্গে জোহরান মামদানি, নিউইয়র্ক মেয়র নির্বাচনে প্রগতিশীল ঢেউ
- গাজা অভিমুখী শান্তিপূর্ণ মিশনে হামলা
- ডাকসু নির্বাচনের ভোট শেষ, ফলাফলের আগে অস্থির ঢাবি—পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত পরিবেশ
- ডিএসইতে আজকের লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- গোয়ালন্দে কবর অবমাননার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের তীব্র নিন্দা
- “তারেক রহমানের নেতৃত্বেই ঐক্য সম্ভব”
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ডাকসু নির্বাচন: ৪৭১ প্রার্থী, ৩৯ হাজার ভোটার, টানটান নিরাপত্তায় উৎসবমুখর ভোটযুদ্ধ
- সৌদি রাজতন্ত্রের অজানা অধ্যায়: ক্ষমতার জন্য বাবা ও ভাইদের ছাড় দিলেন না মোহাম্মদ বিন সালমান
- প্রথমবার আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী বিদায়, ইতিহাস গড়ল ফ্রান্স
- চাকরির প্রলোভনে কোটি টাকা হাতিয়ে ৩ প্রতারক গ্রেপ্তার
- নেপালে অস্থিরতা: বাংলাদেশি নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দূতাবাসের
- ডিএসইতে বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে টপ লুজার তালিকা প্রকাশ
- ড. ইউনূসকে সরাতে কঠোর আন্দোলন হতে পারে: জাহেদ উর রহমান
- জ্বর, মাথাব্যথা, আর্থ্রাইটিস—ভিন্ন ভিন্ন সমস্যায় ভিন্ন ডোজ প্যারাসিটামল
- শেয়ারদর বৃদ্ধি নিয়ে ডিএসইকে যে ব্যাখ্যা দিল বিডিকম অনলাইন
- শেখ হাসিনার উত্তরাধিকার প্রশ্ন: আওয়ামী লীগের সামনে এক অমীমাংসিত সংকট