বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা বহিষ্কার, নেপথ্যে যা থাকছে

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৭ ০৮:১৫:৫৩
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা বহিষ্কার, নেপথ্যে যা থাকছে
সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজিকালে গ্রেপ্তার ৫ যুবক। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে একটি প্রভাবশালী সাবেক নারী সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির চেষ্টাকালে পাঁচজন যুবককে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে তিনজন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামক সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মী ছিলেন। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্তদের সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যার পর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডের একটি বাসায় চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে উপস্থিত হলে সন্দেহভাজনদের আটক করে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে নেতৃত্বে ছিলেন ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ধারী রিয়াদ (২৫)। তার সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছে সাকাদাউন সিয়াম (২২), সাদমান সাদাব (২১), ইব্রাহীম হোসেন (২৪) এবং কিশোর আমিনুল ইসলাম (১৩)।

রিয়াদ নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা হলেও রাজধানীর ধানমন্ডির নিউ মডেল এলাকায় বসবাস করেন। ইব্রাহিমের বাড়ি চাঁদপুরে, অন্যদিকে সাদমান নাটোরের লালপুরের বাসিন্দা। কিশোর আমিনুল ঢাকার বাড্ডায় অবস্থিত আলাতুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র।

৫০ লাখ টাকার চাঁদা দাবি, ১০ লাখ গ্রহণ, গ্রেফতার হলো বাকি অর্থ তুলতে গিয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, অভিযুক্তরা নিজেকে বিভিন্ন সংগঠনের ‘সমন্বয়ক’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য সাম্মী আহমেদের পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। কয়েকদিন আগে তারা প্রথম দফায় ১০ লাখ টাকা আদায় করেছিল। শনিবার রাতে বাকি অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিতে এসে তারা ধরা পড়ে। “তাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং আমরা প্রত্যেককে জিজ্ঞাসাবাদ করছি,” বলেন ওসি।

ঘটনার পর সংগঠনের ভেতরেও দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ এবং সাধারণ সম্পাদক হাসান ইনাম কর্তৃক অনুমোদিত এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সংগঠনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম এবং সাদমান সাদাবকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযুক্তরা সংগঠনের নীতিমালা এবং শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করেছেন। এ কারণে সাংগঠনিকভাবে তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখার জন্য সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনার মাধ্যমে নতুন একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা সামনে এসেছে। রাজনৈতিক পরিচয় এবং ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অপচেষ্টা সমাজে অনৈতিক ও অপরাধপ্রবণ মানসিকতার ইঙ্গিত দেয়।বিশেষ করে একজন কিশোরের এই চক্রে যুক্ত থাকা এবং স্কুলশিক্ষার্থী হিসেবে অপরাধে জড়িয়ে পড়া বর্তমান সমাজের জন্য একটি অশনিসংকেত।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ঘটনায় সাম্মী আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট অন্যদের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত চলছে।সাবেক সংসদ সদস্য সাম্মী আহমেদ বর্তমানে পলাতক থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে তার পরিবার জানিয়েছে, অভিযুক্তরা ভয়ভীতি ও চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছিল।

-শরিফুল

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ