ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ঢাকার ২০টি আসনে বিএনপির নির্বাচনী কৌশল: কারা পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন?

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৬ ১৮:৫৫:৫০
ঢাকার ২০টি আসনে বিএনপির নির্বাচনী কৌশল: কারা পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজধানী ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসন সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। রাজধানী হিসেবে এখানে প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের জন্যই আসনগুলো কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইতোমধ্যেই এসব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করার পথে রয়েছে। এই প্রার্থী তালিকায় একদিকে যেমন পুরনো ও অভিজ্ঞ নেতাদের নাম রয়েছে, তেমনি উঠে এসেছে পরিবারের উত্তরসূরিদের নামও। এখন দেখা যাক, ঢাকার কোন কোন আসনে কারা হতে পারেন বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী।

ঢাকা-১ (দোহার ও নবাবগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক। ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তিনটি ওয়ার্ড, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর এবং সাভারের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। তিনি নির্বাচন না করলে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন তার ছেলে ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান।

ঢাকা-৩ (সাভার) আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। বিকল্প প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে তার পুত্রবধূ এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুন রায় চৌধুরীর নাম। ঢাকা-৪ (ডেমরা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল) আসনে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় রয়েছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ সালাউদ্দিন আহমেদ বা তাঁর ছেলে তানভীর আহমেদ রবিন। মতিঝিল এবং অফিসপাড়া খ্যাত এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী।

ঢাকা-৬ (কোতুয়ালী ও সূত্রাপুর) আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলেই ধরা হচ্ছে। আর রাজধানীর লালবাগ, চকবাজার, হাজারীবাগ ও ধানমণ্ডির একাংশ নিয়ে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ আসন ঢাকা-৭ এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বিএনপির প্রয়াত নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী ও সাবেক কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা। একইসাথে এই আসন থেকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী মনোনয়ন পেতে পারেন বলেও দলের মধ্যে আলোচনা চলছে।

ঢাকা-৮ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য মির্জা আব্বাসের নাম। তবে তিনি যদি এই আসনে না দাঁড়ান, তাহলে বিকল্প হিসেবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন্নবী খান সোহেল হতে পারেন দলের পছন্দ। আবার মির্জা আব্বাস যদি ঢাকা-৮ থেকে নির্বাচন করেন, তাহলে তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন ঢাকা-৯ আসনে। ঢাকা-১০ (সবুজবাগ, মুগদা, শাহজাহানপুর) আসনে মনোনয়নের দৌড়ে আছেন কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ বদিউল আলম রবি।

ঢাকা-১১ (উত্তরা, খিলক্ষেত, ভাটারা) আসনে প্রার্থী হতে পারেন এমএ কাইয়ুম অথবা তাঁর স্ত্রী শামিম বেগম। বিকল্প হিসেবে এজিএম শামসুল ইসলামের নামও রয়েছে আলোচনায়। ঢাকার অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসন ঢাকা-১২ (রমনা) থেকে বিএনপির মহানগর উত্তরের সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব অথবা আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার মনোনয়ন পেতে পারেন। একইভাবে ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর ও আদাবর) আসনে প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বা আতাউর রহমান ঢালি।

ঢাকা-১৪ (মিরপুর ও সাভারের একটি অংশ) আসনে দারুস সালাম থানার আহ্বায়ক এএসএম সিদ্দিক সাজু এবং যুবনেতা মোস্তফা জগলুল পাশা পাপেল প্রার্থী হতে পারেন। পাশাপাশিই, ঢাকা-১৫ (পল্লবী ও রূপনগর) আসনে প্রার্থী হতে পারেন যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসানী। পল্লবী এলাকার আরেকটি আসন ঢাকা-১৬ এ সাবেক জাতীয় ফুটবলার এবং মহানগর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

ঢাকা-১৭ (ক্যান্টনমেন্ট, গুলশান, বনানী) আসনটি বিএনপি হয়তো তাদের আন্দোলনের শরিক বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর জন্য ছেড়ে দিতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। ঢাকা-১৮ (খিলখেত, উত্তরখান) আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন এসএম জাহাঙ্গীর অথবা এম কফিলউদ্দিন আহমেদ। আর শেষের দুইটি আসন—ঢাকা-১৯ ও ২০ (সাভার ও ধামরাই অঞ্চল)—এই দুটি আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দেওয়ান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বাবু, তমিজউদ্দিন ও সুলতান আহমেদ।

এই প্রার্থী তালিকা পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিএনপি একদিকে অভিজ্ঞ নেতাদের পুনঃস্থাপন করতে চাইছে, অন্যদিকে তরুণ মুখ এবং রাজনৈতিক পরিবারগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। ঢাকার আসনগুলোতে যেহেতু রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা সব সময়ই তীব্র, তাই দলীয় ঐক্য, স্থানীয় জনপ্রিয়তা এবং মাঠ পর্যায়ের সংগঠকদের সঙ্গে সম্পর্ক এ প্রার্থী নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ