“যেখানে পাবে গুলি করবে”—ফোনে শেখ হাসিনা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৬ ২১:৫৬:৩৯
“যেখানে পাবে গুলি করবে”—ফোনে শেখ হাসিনা
ছবি: আল-জাজিরা

গোপন ফোনালাপে শেখ হাসিনার ‘গুলি চালানোর নির্দেশ’, আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখোমুখি হতে পারেন

২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণবিক্ষোভ দমনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দেন বলে দাবি করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তারা দাবি করেছে, শেখ হাসিনার ফোনালাপের গোপন রেকর্ডে এই নির্দেশনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে আল-জাজিরার ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট জানিয়েছে, অডিওগুলোতে কোনো কারসাজি হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে অডিও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করেছেন এবং ভয়েস মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছেন।

একটি ফোনকলে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। এখন লিথাল ওয়েপনস ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি এত দিন বাধা দিয়ে রাখছিলাম, ওই স্টুডেন্টদের সেফটির কথা চিন্তা করে।”

এই ফোনালাপটি ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (NTMC) রেকর্ড করেছিল বলে দাবি করা হয়েছে। এ সংস্থা সরকারের নজরদারির একটি মূল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

আরেকটি ফোনালাপে শেখ হাসিনা ও তৎকালীন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপসের মধ্যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ওপর অভিযান নিয়ে আলোচনা হয়। শেখ হাসিনাকে রেকর্ডিংয়ে বলতে শোনা যায়, “যেখানেই গ্যাদারিং দেখবে, ওপরে থেকে করা হচ্ছে—অলরেডি শুরু হয়ে গেছে কয়েকটা জায়গায়।”

যদিও সরকার হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছে, ঢাকার পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শাবির শরিফ আল-জাজিরাকে জানান, হাসপাতালের সামনে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ার শেল ছোড়া হয়েছে এবং গুলিবিদ্ধ রোগীদের চিকিৎসা করতে হয়েছে। এক্স-রেতে শরীরের ভেতরে থাকা গুলির স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে তিনি দাবি করেন।

এই ফোনালাপের তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, তার এক উপদেষ্টা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে ট্রাইব্যুনাল। আগস্ট মাসে বিচার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

ফোনালাপে শেখ হাসিনার এক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে দেখা যায় নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহে আগ্রহী। ওই শিক্ষার্থী ১৬ জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। এই ঘটনার পর আন্দোলন দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁকে অন্তত পাঁচবার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পরিবর্তনের জন্য চাপ দিয়েছিল। তারা চেয়েছিল রিপোর্টে বলা হোক, ছাত্রটি ইটপাটকেলের আঘাতে মারা গেছে, যদিও প্রকৃতপক্ষে গুলিতে মৃত্যুর প্রমাণ ছিল।

আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় এনে গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করানো হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে সরাসরি সম্প্রচারিত এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিচার এবং আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দেন। তবে শিক্ষার্থীর পরিবার দাবি করেছে, তাদের সেখানে জোর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র আল-জাজিরাকে পাঠানো বিবৃতিতে বলেন, শেখ হাসিনা কখনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেননি। ফোনালাপগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেটে-ছেঁটে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ