উপকূলজুড়ে নিম্নচাপের তাণ্ডব, প্লাবিত ১৬ জেলা

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৬ ০৮:৪৪:১১
উপকূলজুড়ে নিম্নচাপের তাণ্ডব, প্লাবিত ১৬ জেলা
ছবি: সংগৃহীত

উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়ে গতকাল বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এর প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১৬টি জেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে বর্তমানে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং আশপাশের অঞ্চলে অবস্থান করছে।

গতকাল রাতভর প্রচণ্ড জোয়ার ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চল ও নিচু জনপদে পানি উঠে পড়ে। ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে বসতঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও পুকুর ডুবে গেছে। এসব এলাকায় নৌযান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এই পরিস্থিতি কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় শুক্রবার সকালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট বেশি উচ্চতার জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি ঢুকে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

জাপানের উপগ্রহচিত্র বিশ্লেষণ করে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, দেশের ওপর বৃষ্টির প্রভাব সোমবার পর্যন্ত থাকতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘন্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। ফলে নদ-নদীর মোহনায় উত্তাল অবস্থা বিরাজ করছে। মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, ভারতের দক্ষিণবঙ্গেও ভারী বর্ষণের খবর দিয়েছে কলকাতা আবহাওয়া দপ্তর। তারা জানিয়েছে, নিম্নচাপটি ধীরে ধীরে ওড়িশা হয়ে ঝাড়খন্ড ও ছত্তিশগড়ের দিকে অগ্রসর হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামের নদীগুলোর পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে ভারি বৃষ্টি হয়েছে, তবে উজানে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও কয়েকটি নদীর পানি বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

ফেনীর মুহুরী ও সেলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও বান্দরবানের নদীগুলোতে পানির উচ্চতা বাড়ছে। সিলেটের মনু, ধলাই ও খোয়াই নদীতেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।

বরিশালে কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নগরীর সদর রোডসহ বেশ কিছু এলাকার রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বিকেল ৩টার আগের ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সমুদ্রবন্দরসমূহ—চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রাকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ