বিশেষ প্রতিবেদন

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রাণহানি বেড়ে ৩২, সংকটাপন্ন ৬ শিশুর জীবন নিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৫ ১২:৫০:১৪
মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রাণহানি বেড়ে ৩২, সংকটাপন্ন ৬ শিশুর জীবন নিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর যুদ্ধ
মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজে বিমান দুর্ঘটনা। ফাইল ছবি।

২০২৫ সালের ২৩ জুলাইয়ের ভয়াবহ বিকেলটি রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যেন দীর্ঘতম কালো ছায়া ফেলে রেখেছে। বিস্ময় আর বেদনায় স্তব্ধ হয়ে যাওয়া পুরো জাতি যখন এখনও ধাক্কা সামলাতে পারেনি, ঠিক তখনই নিশ্চিত হলো আরও একটি দুঃসংবাদ: বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন মোট ৩২ জন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী, যাদের জীবন থেমে গেল পড়ার টেবিল ছেড়ে আকাশ থেকে নেমে আসা এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে।

চিকিৎসা চলছে সাতটি হাসপাতালে, শ্বাস আটকে রাখা পরিস্থিতি বার্ন ইনস্টিটিউটে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি জানান, সাতটি হাসপাতালের আইসিইউ ও ওয়ার্ডে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫১ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৪১ জন ভর্তি রয়েছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। বাকি রোগীরা রয়েছেন সিএমএইচ (৮ জন), শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ (১ জন) এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (১ জন)-এ।

বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বৃহস্পতিবার রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, ৮ জন রোগী আইসিইউতে, যাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি প্রতিটি শিশুকে সর্বোচ্চ যত্নে রাখতে। ইতোমধ্যে ১৩ জন রোগীকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে আমরা দুই এক দিনের মধ্যেই ছাড়পত্র দিতে পারব।”

মানবিক সহায়তার ঢল, তবুও সরকারি খরচে চিকিৎসা

গুজবের প্রেক্ষিতে জনসাধারণকে স্বস্তি দিয়ে ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, "আমাদের স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্কিন মজুত আছে, অতএব বর্তমানে স্কিন ডোনেশনের প্রয়োজন নেই। একইভাবে কেউ বিকাশ বা নগদে অর্থ পাঠাতে চাইলে, আমরা তা গ্রহণ করছি না। সরকারের পক্ষ থেকে শিশুদের সব চিকিৎসা খরচ বহন করা হচ্ছে।”

আন্তর্জাতিক সহায়তা ও কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা

এ দুর্ঘটনা কেবল দেশকে নয়, আন্তর্জাতিক মহলকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। ডা. নাসির জানান, চিকিৎসা সহায়তার বিষয়ে ভারত ও চীন থেকে বিশেষজ্ঞ দল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় প্রতিনিধি দল ঢাকা এসে কেস স্টাডি পর্যালোচনা করেছে, এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে মতামত বিনিময় করেছে। চীনা দল এখনও পৌঁছায়নি, তবে জুম মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে, এবং শুক্রবার রাতেই পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল ঢাকায় আসছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় সমন্বয়

চিকিৎসা সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো মতানৈক্য নেই জানিয়ে পরিচালক বলেন, “আমাদের দেশীয় চিকিৎসকদের সঙ্গেও সমন্বয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরামর্শকদের। আমরা যা করছি, সবই শিশুদের জন্য। কোনো দেশকে আলাদা করে দেখছি না, যার পরামর্শ ভালো মনে হচ্ছে সেটিই গ্রহণ করছি।”

একটি জাতির হৃদয়ে স্থায়ী ক্ষত

মাইলস্টোন স্কুলের আকাশে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ ট্র্যাজেডি শুধু একটি দুর্ঘটনা নয় — এটি একটি জাতীয় মানবিক বিপর্যয়। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে অঙ্গার হয়ে যাওয়া দেহগুলোর পরিচয় শনাক্তে চলছে অতিদ্রুত প্রক্রিয়া, নিহতদের মধ্যে অনেকেই এমন ছিল যাদের ভবিষ্যৎ ছিলো সম্ভাবনায় ভরপুর। চিকিৎসক, শিক্ষক, অভিভাবক ও সচেতন সমাজ আজ এই ঘটনার সামনে দাঁড়িয়ে একটিই প্রশ্ন করছে — এই প্রাণহানির দায়ভার কে নেবে?

দেশ শোকাহত, পরিবারগুলো আজ অস্তিত্বের সংকটে, আর আইসিইউতে ঝুলছে কয়েকটি শিশুর জীবন। জাতীয়ভাবে এই ঘটনা যেন কেবল তদন্তের নয়, অ্যাকশন প্ল্যান ও দায়িত্ববোধের এক জাগরণ হয়ে ওঠে — সেটাই এখন সময়ের দাবি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ