কর্ণফুলী টানেলে দৈনিক কোটি টাকার লোকসান, চলাচল করছে না গাড়ি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৬ ১২:৫৪:৫৬
কর্ণফুলী টানেলে দৈনিক কোটি টাকার লোকসান, চলাচল করছে না গাড়ি
কর্ণফুলী টানেল ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত দেশের প্রথম সুড়ঙ্গপথ বা টানেল দিয়ে যাত্রী ও যানবাহনের চলাচল আশানুরূপ হচ্ছে না। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৯ জুলাই পর্যন্ত টানেল দিয়ে মাত্র ২৪ লাখ ২৮ হাজার ৩১৫টি গাড়ি চলাচল করেছে। অথচ এই সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৩১ লাখ ২২ হাজার ৬৮১টি গাড়ি। ফলে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ ৯৪ হাজারটি গাড়ি কম চলেছে, যা মোট লক্ষ্যচ্যুতির প্রায় ৮১.৫ শতাংশ।

টানেল চালুর আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার ৭১৯টি গাড়ি চলবে। পরে এই পূর্বাভাস কিছুটা কমিয়ে ২০২৪ সালের জন্য ১৮ হাজার ৪৮৫টি এবং ২০২৫ সালের জন্য ১৯ হাজার ৬৬৯টি গাড়ির পূর্বাভাস দেওয়া হয়। বাস্তবে এখন পর্যন্ত কোনো দিনই ওই সংখ্যক গাড়ি চলাচল করেনি।

এই কম ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, টানেল চালুর পর প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান টানেলটিকে ‘বাহাদুরি প্রকল্প’ বলে উল্লেখ করেছেন।

টানেল প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭০ কোটি টাকা চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া হয়। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই টানেল ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু চালুর পর এখন পর্যন্ত শুধু টোল বাবদ আয় হয়েছে মাত্র ৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে আয় হচ্ছে ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, যেখানে দৈনিক ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। ফলে প্রতিদিন গড়ে ২৭ লাখ টাকার বেশি ঘাটতি হচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১৯১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টানেলের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে আশপাশের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। যেমন, মিরসরাই শিল্পনগর থেকে শুরু করে আনোয়ারা, বাঁশখালী হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চালু, এবং শিল্পায়ন ও আবাসিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, চালুর প্রথম পাঁচ বছর টানেল পুরোপুরি ব্যবহার হবে না। এই সময়কে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে দেখা উচিত।

টানেল ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই হালকা যানবাহন, যার মধ্যে রয়েছে কার, জিপ, মাইক্রোবাস ও পিকআপ। ভারী ও বাণিজ্যিক যানবাহনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম, যা মূলত আশপাশের শিল্প ও বন্দর কার্যক্রম ধীর গতির কারণেই হয়ে থাকতে পারে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ মনে করছে, আগামী অর্থবছরেও টানেল পরিচালনায় বড় ধরনের ঘাটতি থাকবে। তাদের হিসেব মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আয় হবে প্রায় ৩৯ কোটি টাকা, কিন্তু ব্যয় দাঁড়াবে ২০৮ কোটি টাকারও বেশি।

/আশিক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ