কম খরচে বেশি লাভ—পাঙাশ চাষেই মিলছে নতুন জীবিকার পথ

২০২৫ জুলাই ২০ ১২:৫৬:৫৬
কম খরচে বেশি লাভ—পাঙাশ চাষেই মিলছে নতুন জীবিকার পথ
পুকুরে পাঙাশ চাষ ছবিঃ jagonews24

বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় পাঙাশ মাছের অবস্থান বহু পুরনো। একসময় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের মতো বড় বড় নদীতে প্রাকৃতিকভাবেই পাওয়া যেত দেশি পাঙাশ। তবে নদীর নাব্য কমে যাওয়া এবং প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার ফলে এই মাছের প্রাপ্যতা কমে গেছে।

তবে আশার খবর হলো—বর্তমানে পুকুরে পাঙাশ চাষ করে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। আশির দশক থেকেই এই চাষের উদ্যোগ চলছে, আর এখন তা আরও বিস্তৃতভাবে করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশে মূলত দুই জাতের পাঙাশ পাওয়া যায়—দেশি এবং থাই। দেশি পাঙাশ দেখতে রুপালি রঙের ও সুস্বাদু, তবে প্রজনন কঠিন। অপরদিকে থাই পাঙাশ ১৯৯৩ সালে দেশে সফলভাবে প্রজনন শুরু করে এবং দ্রুত বেড়ে ওঠার কারণে বাণিজ্যিকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

পাঙাশ চাষের জন্য পুকুরের ধরন, পানির গুণমান, মানসম্মত পোনা এবং সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়তাকার দোআঁশ মাটির পুকুর এবং ১.৫–২ মিটার গভীর পানির পুকুর সবচেয়ে উপযোগী। পুকুরের আগাছা সরিয়ে, রাক্ষুসে মাছ দূর করে ও চুন এবং সার প্রয়োগের মাধ্যমে পানি প্রস্তুত করতে হয়।

পোনা সংগ্রহের সময় বিশ্বস্ত হ্যাচারির ওপর নির্ভর করাই উত্তম। পরিবহনের আগে পোনাকে কিছু সময় উপোস রেখে তাদের অভিযোজিত করে তুলতে হয়। খাদ্য ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি দানাদার ও বল আকারের সম্পূরক খাবার দিতে হয়।

পাঙাশ সাধারণত ৫-৬ মাসে ৫০০-৬০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজন হয়। এ সময় মাছের প্রায় অর্ধেক বিক্রি করে দিলে অবশিষ্ট মাছগুলো দ্রুত বাড়ে।

বাংলাদেশের প্রায় আড়াই লাখ হেক্টর পুকুর এবং ৬-৭ লাখ হেক্টর জলাশয়কে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে পাঙাশ চাষ করলে দেশের সামগ্রিক মৎস্য উৎপাদনে বড় ধরনের উল্লম্ফন ঘটানো সম্ভব। এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে—বিশেষ করে নারী ও বেকার তরুণদের জন্য।

‘মাছেভাতে বাঙালি’ এই পুরনো চেতনা আবার ফিরিয়ে আনার জন্য পাঙাশ মাছের চাষ হতে পারে একটি শক্তিশালী উদ্যোগ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ