ডিএসইতে চাঙ্গাভাবের সূচনাঃ লেনদেন, সূচক ও বাজার মূলধনে ব্যাপক উল্লম্ফন

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৬ ১৮:৩৩:০৬
ডিএসইতে চাঙ্গাভাবের সূচনাঃ লেনদেন, সূচক ও বাজার মূলধনে ব্যাপক উল্লম্ফন

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদ্যসমাপ্ত সপ্তাহজুড়ে বাজারে দেখা গেছে সুস্পষ্ট চাঙ্গাভাব। ১৮ থেকে ২৪ জুলাইয়ের মধ্যকার এই সপ্তাহে সূচক, লেনদেন এবং বাজার মূলধনের সবগুলো সূচকে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়। সপ্তাহের শুরু থেকেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দৃঢ় আস্থা ও অংশগ্রহণ দেখা যায়, বিশেষ করে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারে। ফলস্বরূপ, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স (DSEX) ২৫৯.৫৬ পয়েন্ট বা ৫.০৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫,৩৯২.০৪ পয়েন্টে, যা বাজারে দৃঢ় ফিরে আসার একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত। অন্যদিকে, ব্লু-চিপ ভিত্তিক সূচক ডিএস৩০ (DS30) এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস (DSES) যথাক্রমে ৭.৯১ শতাংশ ও ৪.৭২ শতাংশ বেড়েছে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের সূচক ডিএসএমইএক্স (DSMEX) ১.৬১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা SME সেগমেন্টে কিছুটা দুর্বল প্রবণতা নির্দেশ করে।

লেনদেনের দিক থেকেও এই সপ্তাহে বড়সড় উত্তরণ দেখা গেছে। মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪২,৯৭২ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ২৬ শতাংশ বেশি। দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৮৫৯ কোটি টাকার উপরে, যেখানে আগের সপ্তাহে ছিল ৬৮১ কোটি টাকা। শেয়ারের মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫৩ কোটি, যা আগের সপ্তাহের ১২৯ কোটির তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বাজার মূলধনও ৭.০৮ ট্রিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা মার্কিন ডলারে ৫৭.৮৯ বিলিয়ন। এই প্রবৃদ্ধি বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরায় প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত বহন করে।

খাতভিত্তিক পারফরম্যান্সে ব্যাংকিং খাত সর্বোচ্চ লেনদেন ও দরবৃদ্ধির নেতৃত্ব দেয়। ৩৬টি ব্যাংকের মধ্যে ৩০টির শেয়ারদর বেড়েছে এবং গড় দৈনিক লেনদেন ৯২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৫ কোটি টাকায়। ঔষধ ও রসায়ন খাত, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও টেলিকম খাতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে লেনদেন বেড়েছে ১৩৩.৯৬ শতাংশ এবং টেলিকম খাতে ১১৪.৬৭ শতাংশ। তবে বস্ত্র, জুট, চামড়া ও কাগজ-ছাপাখানা খাতে দরপতন ও লেনদেনে ভাটা লক্ষ্য করা গেছে।

সপ্তাহের শীর্ষ গেইনারদের মধ্যে ছিল উত্তরা ফাইন্যান্স (UTTARAFIN), যার দর বেড়েছে ৫২.৬৩ শতাংশ। এছাড়া এনসিসি ব্যাংক (NCCBANK), IDLC, BANKASIA, MTB প্রমুখ কোম্পানির শেয়ারে ১৬–১৮ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যবৃদ্ধি হয়। পক্ষান্তরে শীর্ষ লুজার ছিল ইলেকট্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (EIL), যার দর কমেছে ১৫.৭৫ শতাংশ। এছাড়া ডিএসএইচ গার্মেন্টস, স্টাইলক্র্যাফট, SEMLLECMF ইত্যাদি কোম্পানির শেয়ারদর ৮ শতাংশ বা তার বেশি কমে যায়।

লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষে ছিল ব্র্যাক ব্যাংক (BRACBANK), যার মোট লেনদেন ছিল ২৬৮ কোটি টাকার বেশি। এরপর বিএসসি (BSC), সিটি ব্যাংক, বিএটিবিসি (BATBC) ও KBPPWBIL উল্লেখযোগ্য লেনদেন করে। ব্লক মার্কেটেও দৃষ্টিনন্দন লেনদেন হয়েছে, যেখানে BANKASIA, MARICO ও BRACBANK-এর মতো শেয়ারে উল্লেখযোগ্য ব্লক ট্রেড হয়, যার সম্মিলিত মূল্য ছিল ১০০ কোটির বেশি।

সবমিলিয়ে এই সপ্তাহের পারফরম্যান্স বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন পর একটি আশাবাদী বার্তা দেয়। ডলারের স্থিতিশীল হার (১২২.৩), ভালো আর্থিক প্রতিবেদন প্রত্যাশা এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তায় বাজারে ইতিবাচক গতি বজায় রয়েছে। গড় P/E অনুপাত মাত্র ১০.৩১ হওয়ায় মূল্যায়ন এখনো অনুকূলে, এবং এটি বাজারকে আরও বুলিশ ট্রেন্ডে নিয়ে যেতে পারে। সামনের সপ্তাহগুলোতে যদি এ ধারা অব্যাহত থাকে, তবে বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে একটি স্থিতিশীল ও সুসংহত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা জোরদার হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ