সন্তানের মৃত্যুতে  পিতা-মাতার ধৈর্য ধারণের প্রতিদান

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২২ ১১:৫১:১৯
সন্তানের মৃত্যুতে  পিতা-মাতার ধৈর্য ধারণের প্রতিদান

মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় ও মর্মন্তুদ দুঃখগুলোর একটি হলো নিজের প্রিয় সন্তানের মৃত্যু। এই শোক এতটাই গভীর যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সন্তানের আকস্মিক বিদায়ে শোকাতুর পিতা-মাতার হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে, মন পুড়ে যায় দহনজ্বালায়। তবে ইসলাম এমন বিপর্যয়ে ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য অপার প্রতিদানের আশ্বাস দিয়েছে। পবিত্র হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে মা-বাবা সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করেন, তারা জান্নাতের মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারে ভূষিত হবেন।

সহিহ বুখারির একটি হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি যদি কোনো মুমিন বান্দার দুনিয়ায় সবচেয়ে প্রিয় কাউকে (যেমন সন্তান) তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নিই, আর সে যদি তা ধৈর্যের সঙ্গে মেনে নেয় ও আমার কাছ থেকে সওয়াব প্রত্যাশা করে, তবে তার জন্য আমার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।” (সহিহ বুখারি: ৬৪২৪)

এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, সন্তান হারানোর পরও আল্লাহর প্রতি অটল আস্থা রেখে ধৈর্য ধারণই জান্নাতের সর্বোচ্চ প্রতিদানের পথ হতে পারে।

অন্য এক বর্ণনায়, হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে এসেছে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যখন কোনো মুমিন বান্দার সন্তান মৃত্যুবরণ করে, তখন আল্লাহ ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ?’ ফেরেশতারা বলেন ‘হ্যাঁ’। আল্লাহ জিজ্ঞাসা করেন ‘সে কী বলেছে?’ তারা বলেন ‘সে ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পাঠ করেছে এবং আপনার প্রশংসা করেছে’। তখন আল্লাহ বলেন ‘তোমরা আমার সেই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ কর এবং তার নাম রাখো “বাইতুল হামদ” প্রশংসার ঘর।” (তিরমিজি: ১৩৯৫)

এটি নিছক সান্ত্বনা নয়, বরং ধৈর্যের এক মহামূল্যবান মূল্যায়ন যেখানে শোকাহত হৃদয়ের প্রশান্তির জন্য জান্নাতের স্থায়ী প্রতিদান প্রস্তুত।

শিশু সন্তানদের মৃত্যু নিয়েও ইসলামে গভীর করুণা ও আশাবাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, শিশু সন্তানেরা আখেরাতে জান্নাতের প্রজাপতির মতো হবে। তারা জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে এবং মাকে বা বাবাকে দেখে তাদের হাত কিংবা কাপড় ধরে টানবে। যতক্ষণ না আল্লাহ তাদের মা-বাবাকেও জান্নাতে প্রবেশ করান, ততক্ষণ তারা সেই হাত ছাড়বে না। (সহিহ মুসলিম: ৬৩৭০)

আবু হুরায়রা (রা.)-কে এক ব্যক্তি বলেছিলেন, “আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আমাকে এমন কিছু বলুন যাতে আমার মন সান্ত্বনা পায়।” উত্তরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাণী উল্লেখ করে বলেন শিশুরা জান্নাতের দরজায় অপেক্ষা করে, যেন তারা নিজের বাবা-মাকে সঙ্গী করে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারে।

এমনকি এক সাহাবির সন্তান মৃত্যুর পর তিনি নবিজি (সা.)-এর মজলিসে যাওয়া বন্ধ করে দিলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ডেকে নিয়ে বোঝান, “তুমি যদি চাও, দুনিয়ায় তার সঙ্গে কিছু সময় কাটাও, না হয় আখেরাতে তাকে জান্নাতের দরজায় পাও, যে তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেবে তোমার কাছে কোনটা ভালো?” (সুনানে নাসাঈ: ২০৯০)

শিশুরা নিষ্পাপ। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, যারা বাল্য বয়সেই মৃত্যুবরণ করে তারা কোনো গুনাহর ভার বহন করে না। তাই তাদের স্থান স্বয়ং জান্নাতের উদ্যান। রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি স্বপ্নে দেখেছেন, এক বাগানে তিনি অসংখ্য বালক-বালিকাকে খেলতে দেখেছেন। পাশে ছিলেন নবী ইবরাহিম (আ.)। তাঁকে জানানো হয় এই সব শিশুরা হলো পৃথিবীতে অল্প বয়সে মৃত্যুবরণ করা নিষ্পাপ আত্মা। (সহিহ বুখারি: ৪২৯)

এমন করুণ বাস্তবতায় ইসলামের এই আশাবাদী বাণী একান্ত প্রয়োজনীয় সান্ত্বনার উৎস হতে পারে। এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী; বিপদ-আপদ আসবেই। কিন্তু মুমিনের জন্য আখেরাতের সফলতাই চূড়ান্ত লক্ষ্য। আর যারা সন্তানের হারানোর মত কঠিন পরীক্ষায় ধৈর্য ধারণ করেন, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

লেনদেনের শীর্ষ দশে যেসব শেয়ার

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার (২১ জুলাই) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছিল কিছুটা চাঙা। এই দিনে লেনদেনের... বিস্তারিত