সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমজমাট প্রস্তুতি: ১০ লাখ মানুষের লক্ষ্য নিয়ে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ

রাজনীতি ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৮ ২৩:০১:০৯
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমজমাট প্রস্তুতি: ১০ লাখ মানুষের লক্ষ্য নিয়ে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত।

নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই রাজধানী ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরব হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ। শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো নেতাকর্মী শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেছেন। শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, কাকরাইল, মৎসভবন ও আশপাশের এলাকায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তাঁরা উদ্যানমুখী হন। অনেকের হাতে দেখা যায় দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লার পতাকা, আবার কারও গায়ে ছিল জামায়াতের প্রচারণামূলক স্লোগান লেখা সাদা গেঞ্জি—যেখানে লেখা ছিল ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট, জামায়াতের পক্ষে হোক’ এবং ‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিন’।

সমাবেশকে ঘিরে দলটি ঘোষণা দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে এটি আয়োজন করতে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জামায়াত জানিয়েছে, এবারের সমাবেশে তারা ১০ লাখেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়, যার জন্য সারাদেশজুড়ে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালানো হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যানার-ফেস্টুন, মিছিল, লিফলেট বিতরণ, পোস্টারিং ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে এই সমাবেশের প্রচারণা চালিয়েছে দলটি। মিরপুর, শাহবাগ, বাড্ডা, মহাখালী, উত্তরা, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দলটির প্রচার-প্রচারণার দৃশ্য ছিল চোখে পড়ার মতো।

সমাবেশ থেকে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করবে জামায়াত। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে—২০২৪ সালের ৫ আগস্টসহ পূর্ববর্তী সময়ের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে মৌলিক সংস্কার আনা, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসন, পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা চালু, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা।

এছাড়া জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, এই সমাবেশকে তাঁরা একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তাই তারা ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সমাবেশে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। আমন্ত্রিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ আরও কয়েকটি উদীয়মান ও বিকল্প রাজনৈতিক দল। যদিও বিএনপিকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জামায়াত নেতারা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবে কিছু সূত্র জানায়, বিএনপির শীর্ষ নেতাদেরও আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে।

ঢাকার বাইরে থেকে আগত নেতাকর্মীদের কেউ কেউ গণমাধ্যমকে জানান, “সমাবেশের মূল দিনটি শনিবার হলেও যানজট ও নিরাপত্তা বিবেচনায় আমরা একদিন আগেই চলে এসেছি। এই সমাবেশ আমাদের জন্য শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং এটি একটি আদর্শিক ও সাংগঠনিক ঐক্যের প্রতীক।” ইতোমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরেই অনেককে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে, যা সমাবেশের শৃঙ্খলা ও ধর্মীয় আবহকেই তুলে ধরে।

সার্বিকভাবে বিচার করলে বলা যায়, জামায়াতে ইসলামীর এই সমাবেশ তাদের রাজনৈতিক পুনরুত্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নিষেধাজ্ঞা, রাজনৈতিক সংকট ও সাংগঠনিক দুর্বলতার পর এবার দলটি নতুন প্রজন্ম ও ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক ধারার ওপর ভর করেই নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। সাত দফা দাবির মাধ্যমে তাঁরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চায় যে, জামায়াত কেবল ধর্মভিত্তিক দল নয়, বরং একটি রাজনৈতিক সংস্কার ও প্রতিরোধের ধারাবাহিক দাবিদার। সমাবেশে উপস্থিতির সংখ্যা, শৃঙ্খলা এবং জাতীয় রাজনীতিতে বার্তার অনুরণন—এই তিনটি দিক থেকেই এটি একটি পরীক্ষার মাঠ হয়ে উঠতে চলেছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ