আশুগঞ্জে এনসিপি কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়েই তোলপাড়

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৯:৪৮:২৫
আশুগঞ্জে এনসিপি কমিটিতে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়েই তোলপাড়

আশুগঞ্জে নবগঠিত ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) উপজেলা সমন্বয় কমিটি নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও সমালোচনা। কারণ, এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ২০২৪ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি হলেন শরীফপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক ইউপি সদস্য নবী হোসেন সাগর। এই নিয়োগে দলটির ভেতরে ও বাইরে নানা প্রশ্ন উঠেছে, যা এনসিপির ঘোষিত নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শনিবার (১২ জুলাই) এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আশুগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তি দলটির ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করা হয়, যার মাধ্যমে নবী হোসেন সাগরকে কমিটির ৫ নম্বর সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাকে প্রধান সমন্বয়কারী করা হয়েছে মো. আমিনুল ইসলাম ডালিম এবং যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন জয়ন্তী বিশ্বাসসহ আরও চারজন।

একমাত্র ঘটনা যা সবাইকে বিস্মিত করেছে, তা হলো ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট আশুগঞ্জ গোলচত্বরে যখন ছাত্র ও সাধারণ মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, সেই সময় নবী হোসেন সাগরকে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে থেকে আন্দোলন দমন করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ ঘটনার ভিডিও ও ছবি সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা এখনও অনেকের স্মৃতিতে জেগে আছে। সেই ব্যক্তিকে এনসিপির মতো একটি নতুন প্রজন্মভিত্তিক, আন্দোলনের আদর্শকে সামনে রেখে গড়ে ওঠা দলে অন্তর্ভুক্ত করা কতটা যৌক্তিক—এ নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।

এ বিষয়ে এনসিপির আশুগঞ্জ উপজেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক সুফিয়ান আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার পর বিব্রত হয়েছি। তার অতীত সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা ছিল না। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানিয়েছি এবং আশা করছি দ্রুত সংশোধনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তিনি আরও জানান, এনসিপি বিশ্বাস করে, যারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জনগণের পাশে ছিল না, তাদেরকে কোনো অবস্থাতেই দলে স্থান দেওয়া উচিত নয়।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এনসিপির মতো আদর্শিক অবস্থান নেওয়া দলের উচিত নিজের অভ্যন্তরীণ যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে আরও জোরদার করা, যাতে এমন বিতর্কিত ব্যক্তিরা ভুল করে কিংবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে দলে ঢুকে আদর্শের ক্ষতি করতে না পারে।

এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই লিখছেন, "এনসিপি কি আদর্শ বিসর্জন দিচ্ছে?" কিংবা "যিনি আন্দোলন দমন করেছিলেন, তিনি কীভাবে আন্দোলনের উত্তরাধিকারী দলে আসতে পারেন?" এ ধরনের মন্তব্য ইতোমধ্যেই এনসিপির ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ফলে দলটির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এবং নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত এখন সকলের নজরে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ