মোংলা-খুলনা সড়ক যেন মরণফাঁদ, প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ২০:২৭:৩৮
মোংলা-খুলনা সড়ক যেন মরণফাঁদ, প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মোংলা-খুলনা মহাসড়ক এখন ভয়াবহ দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। বহু বছর ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি কার্যত মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। মোংলা বন্দর থেকে রামপাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়েছে, যার ফলে যানবাহন চলাচল অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির মৌসুমে এসব গর্তে পানি জমে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।

সড়কটি খুলনার সঙ্গে মোংলার একমাত্র সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম। প্রতিদিন এই পথে চলাচল করে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, মোটরসাইকেল, সিএনজি ও অন্যান্য ছোট যানবাহন। অথচ বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব যানবাহন চলাচল মানেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি নেওয়া। বিশেষ করে রাতের বেলায় দৃশ্যমানতার অভাবে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, কোনো না কোনো গাড়ি গর্তে আটকে পড়ছে বা উল্টে যাচ্ছে, ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যেমন সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে পাথর বের হয়ে এসেছে। কোন কোন জায়গায় বড় বড় গর্তে আটকে আছে যানবাহন। পথচারীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে সড়কটির কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন, ‘মোংলা থেকে খুলনায় যেতে এখন সময় লাগছে কয়েকগুণ বেশি। শুধু সময় নয়, দুর্ঘটনার ভয় মাথায় নিয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতে হয়।’ পণ্যবাহী ট্রাকচালক সোহেল রানার কথায় ফুটে ওঠে ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ—‘প্রতিদিন কোনো না কোনো ট্রাক এই গর্তে আটকে পড়ে। মনে হয়, চাকা ভেঙে যাচ্ছে।’

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই সড়ক দিয়েই মোংলা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে যাওয়ার ফলে যেমন পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটছে, তেমনি আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ব্যবসায়ী মহলে বাড়ছে উদ্বেগ।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং সড়ক বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ইতোমধ্যে সমস্যাটি জেনেছে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। মোংলা উপজেলার ইউএনও শারমিন আক্তার সুমি জানান, সমস্যাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং দ্রুত সংস্কার কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। মোংলা বন্দরের হারবার ও মেরিন বিভাগের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দিগরাজ পর্যন্ত সড়কের কাজের জন্য অর্ডার দিয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘কাটাখালী থেকে দিগরাজ পর্যন্ত সড়কে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে এলে সংস্কার শুরু হবে।’

অবশ্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, বারবার অবহিত করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বুড়িরডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান উদয় শংকর বিশ্বাস বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। আমরা বহুবার অনুরোধ করেছি সংস্কারের জন্য, কিন্তু এখনো কাজ শুরু হয়নি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’

মোংলা-খুলনা মহাসড়কটি শুধু একটি যোগাযোগ পথ নয়, এটি দেশের একটি অর্থনৈতিক লাইফলাইন। এই সড়ক অব্যবস্থাপনায় পড়ে থাকলে শুধু সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়ই নয়, সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ