নওগাঁয় মায়ের জন্য বন্ধ নিজের ঘরের দরজা, তালা দিয়ে রুখলেন একমাত্র ছেলে

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ২১:৪১:৫৪
নওগাঁয় মায়ের জন্য বন্ধ নিজের ঘরের দরজা, তালা দিয়ে রুখলেন একমাত্র ছেলে

নওগাঁ শহরের কাজীর মোড় এলাকায় এক করুণ পারিবারিক বিরোধের চিত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রে। ৬৮ বছর বয়সী বিলকিস আক্তার নিজের স্বামীর নির্মিত বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছেন তার একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজুল ইসলামের কাছ থেকে। সোমবার (১৪ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে রাত পর্যন্ত তিনি বাড়ির নিচতলায় গ্যারেজে বসে ছিলেন, কারণ তার জন্য সিঁড়ির মুখে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে লোহার ফটকে তালা। ছেলের স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া, মায়ের প্রবেশ এই বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিত।

বিলকিস আক্তারের স্বামী প্রায় ৩০ বছর আগে কাজীর মোড়ে ১০ শতাংশ জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর আইনি বিধান অনুযায়ী স্ত্রী ও সন্তানরা সমানভাবে সম্পত্তির অংশীদার হন। কিন্তু ২০২১ সালে স্বামীর মৃত্যু পরবর্তীতে ছেলের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে শুরু হয় জটিলতা। মোস্তাফিজুল পুরো বাড়ির মালিকানা দাবি করলেও তার মা ও দুই বোন এতে রাজি হননি। বিরোধ ক্রমে তীব্র হয়ে ওঠে এবং পরিবারে বিভাজনের রেখা স্পষ্ট হয়।

ঘটনার দিন বিলকিস আক্তার নিজের ফ্ল্যাটে উঠতে গিয়ে দেখতে পান, সিঁড়িতে লোহার কাঁচি গেট লাগানো ও তালা ঝুলছে। ছেলেকে তালা খুলতে বললে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তাকে মায়ের উপস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও হুমকি মনে হয়। মোস্তাফিজুল বলেন, তার জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে, এবং মায়ের বাড়িতে আসা নতুন করে কলহ তৈরি করবে—তাই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অপরদিকে বিলকিস আক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী, ছেলের আচরণ দীর্ঘদিন ধরে অসহ্য পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “আমি এই বাড়ির একজন আইনগত অংশীদার। আমার স্বামীর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এখানে। আমি চাই জীবনের বাকিটা সময় এই বাড়িতেই কাটাতে।” তিনি জানান, তার দুই মেয়ে তাকে অসম্মান সহ্য করতে না পেরে নিজেদের অংশ তাকে লিখে দিয়েছেন। এখন কাগজপত্র অনুযায়ী তিনি বাড়ির প্রায় ৭০ শতাংশের মালিক।

বাড়ির ফটকে তালা ঝোলানো আর মাকে ‘দুই আনার মালিক’ বলে কটাক্ষ করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এলাকাবাসী এই ঘটনাকে মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের নিদর্শন হিসেবে দেখছেন।

বিলকিস আক্তারের বড় মেয়ের স্বামী ও চিকিৎসক আবুজার গাফফার বলেন, “আমার শ্যালক আগে থেকেই শাশুড়িকে নির্যাতন করে আসছিলেন। এমনকি গায়ে হাত তোলার ঘটনাও রয়েছে, যা নিয়ে মামলা চলছে। এখন তিনি সম্পূর্ণ মালিকানা নিজের নামে নিতে চাচ্ছেন। অথচ কাগজপত্র বলছে, আমার শ্বাশুড়িরই সবচেয়ে বড় অংশ রয়েছে।”

এই ঘটনাটি শুধু একটি পারিবারিক কলহ নয়, বরং সামাজিকভাবে মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও আচরণ নিয়ে এক বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে। আইনি অংশীদারত্ব থাকা সত্ত্বেও একজন বৃদ্ধা তার নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না—এটা শুধু ন্যায়বিচারের নয়, নৈতিকতারও বড় ব্যর্থতা।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ