ঘুমন্ত কবরের রহস্য: বাড়ির উঠানে নতুন কবরের গল্প

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১০:০৯:৩৯
ঘুমন্ত কবরের রহস্য: বাড়ির উঠানে নতুন কবরের গল্প

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার সোনামুখী গ্রামে ঘটেছে এক চাঞ্চল্যকর ও অভূতপূর্ব ঘটনা। মৃত্যুর তিন দিন পর স্থানীয় এক তরিকাপন্থি ব্যক্তির মরদেহ কবরস্থান থেকে তুলে এনে তার নিজ বাড়ির উঠানে পুনরায় দাফন করা হয়েছে। বিষয়টি গ্রামে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং সামাজিক-মৌলিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

৬৫ বছর বয়সী আব্দুস সাত্তার গত ৯ জুলাই মারা যান। সেদিনই পরিবারের সদস্যরা তাকে সোনামুখী জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফন করেন এবং পরদিন অনুষ্ঠিত হয় কুলখানি ও দোয়া মাহফিল। ঘটনার মোড় ঘুরে যায় ১৩ জুলাই রাতে, যখন গ্রামবাসীরা হঠাৎ দেখতে পান মরহুমের বাড়ির উঠানে খোঁড়া হয়েছে একটি নতুন কবর।

পরদিন সকালে তার ভাতিজা মজনু রহমান খবর পান বাড়িতে নতুন কবর দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তিনি কবরস্থানে গিয়ে দেখেন, আগের কবর ফাঁকা। তিনি বলেন, “কারা করেছে তা জানা নেই, তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি মরদেহ কবরস্থান থেকে তুলে আনা হয়েছে।”

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আব্দুস সাত্তার ছিলেন একজন তরিকাপন্থি মানুষ। জীবিত থাকতেই তিনি নিজের বাড়ির উঠানে দাফনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে তার পরিবার সেই ইচ্ছা বাস্তবায়ন না করে কবরস্থানে দাফন করে। ধারণা করা হচ্ছে, তার অনুসারী তরিকাপন্থি ভক্তরা মরদেহ পুনরায় তুলে এনে রাতের আঁধারে বাড়ির উঠানে দাফন করেন।

এলাকার বাসিন্দা নবীর উদ্দিন শেখ বলেন, “রাতের বেলা কবরস্থানে পাঁচজন পাঞ্জাবি পরা লোক কবর খুঁড়ছিল। আমি কাছে গেলে তারা ধমক দিয়ে সরিয়ে দেয়।” স্থানীয় ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, জানাজার সময় থেকেই তরিকাপন্থিরা কবরস্থানে দাফনের বিরোধিতা করছিলেন এবং শুরু থেকেই বাড়ির উঠানে দাফনের পক্ষে ছিলেন।

তবে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, তারা কেউ বিষয়টি স্বীকার করছেন না। অনেকেই সাংবাদিকদের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি। এমনকি তরিকাপন্থিদের কেউ কেউ জানান, তারা কিছুই জানেন না।

ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম বলেন, “আমরা কবর থেকে মরদেহ তুলে পুনরায় দাফনের বিষয়টি জেনেছি এবং সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি।”

ধর্মীয়, সামাজিক ও আইনি দিক থেকে এ ঘটনা অত্যন্ত সংবেদনশীল। ইসলামী শরিয়তে অনুমতি ছাড়া দাফনের পর মরদেহ উত্তোলন করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। একই সঙ্গে আইন অনুযায়ী এটি দণ্ডনীয় অপরাধ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুর আগে কেউ নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিতে পারেন, তবে তা বাস্তবায়নে সামাজিক সম্মতি ও আইনি প্রক্রিয়া থাকা প্রয়োজন।

এ ঘটনায় প্রশাসনের নিরবতা ও কোনো অভিযোগ না আসা উদ্বেগজনক। ঘটনাটি সমাজে একটি ভুল নজির সৃষ্টি করতে পারে। এখন সময় এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার এবং ধর্মীয় ভাবাবেগ ও আইনের সীমানা পরিষ্কার করে দেওয়ার। তা না হলে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি সমাজে আরও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ