ইউএনএফপিএ এর এক জরিপে

সন্তান নেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১২:১৯:৪৫
সন্তান নেওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে তরুণদের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের আগ্রহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে। পেশাগত ব্যস্ততা, আর্থিক চাপ ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা এই পরিবর্তনের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখছে বলে উঠে এসেছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) ও ইউ গভ পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে।

এই জরিপে বিশ্বের ১৪টি দেশের ১৪ হাজার তরুণ-তরুণী অংশগ্রহণ করেন। সেখানে দেখা যায়, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, স্বাস্থ্যসেবা ঘাটতি এবং উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব সবমিলিয়ে সন্তান ধারণ ও পরিবার গঠনের প্রশ্নে একটি বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠী নানাভাবে পিছিয়ে পড়ছে।

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গতকাল ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নীতিনির্ধারকরা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, যিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “ক্ষমতায়নের পূর্বশর্ত হলো আর্থিক স্বাবলম্বন। তরুণদের শুধু পরিবার গঠনের কথা বললে হবে না তাদের উপযুক্ত করে তুলতে হলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমর্থনের একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “যে সমাজে সমতা নেই, সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার গঠনের সিদ্ধান্তও সীমিত হয়ে পড়ে। তরুণদের পরিবার গঠনের পথ উন্মুক্ত করতে হলে প্রজনন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সচেতনতার উপর নজর দিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বলা হয়, জরিপে অংশগ্রহণকারী তরুণদের একটি বড় অংশ সন্তান নিতে চাইলেও তা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতি চারজনে একজন তরুণ সময়মতো সন্তান নিতে না পারায় ভবিষ্যতে আর সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা রাখেননি। ১৩ শতাংশ তরুণ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পরও সন্তানের জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, ১৪ শতাংশ উপযুক্ত সঙ্গী না পাওয়ায় সন্তান নিতে পারেননি এবং ১৮ শতাংশ তরুণ প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ পাননি।

এ তথ্যগুলো ইঙ্গিত দেয়, বিশ্বের তরুণ প্রজন্ম সন্তান ধারণের স্বাধীনতা ও সক্ষমতা উভয়ের ঘাটতিতে ভুগছে। এই প্রবণতা শুধু জনসংখ্যা হ্রাস নয়, দীর্ঘমেয়াদে মানবজাতির টিকে থাকার দিকেও এক গুরুতর সংকেত হয়ে উঠছে।

‘স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন’ রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্ব জনসংখ্যা ৮ বিলিয়নের নিচে নেমে আসা যতটা উদ্বেগজনক নয়, তার চেয়ে বড় আশঙ্কা হলো প্রজনন হারে দীর্ঘমেয়াদি পতন। এই প্রবণতা চলতে থাকলে, অনেক দেশেই কর্মক্ষম জনসংখ্যার ঘাটতি, পেনশন ব্যবস্থার চাপ এবং সামাজিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বিশ্ব জনসংখ্যার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮২৩ কোটি ছাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, প্রতি পাঁচ মিনিটে বিশ্বে ১২৫০টি শিশু জন্ম নিচ্ছে এবং প্রায় ১০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। ২০৫৬ সালে এই সংখ্যা ১০০০ কোটিতে পৌঁছবে এবং ২০৯৮ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছানোর পর থেকে জনসংখ্যা হ্রাসের ধারা শুরু হতে পারে।

অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, “রোবটিকস, মেশিন লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির ফলে বিশ্ব কর্মবাজার ও জীবনধারায় বড় পরিবর্তন আসবে। এই নতুন বাস্তবতায় তরুণ সমাজকে প্রস্তুত করাই হবে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের মূল চ্যালেঞ্জ।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী। আলোচনার শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দেশের শ্রেষ্ঠ কর্মীদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের সন্তান গ্রহণের সক্ষমতা ও ইচ্ছা পুনরুদ্ধারে একটি সমন্বিত নীতি কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে লিঙ্গ-সমতা নিশ্চিতকরণ।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন শিক্ষানীতিতে প্রজনন স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্তি, স্বাস্থ্য বাজেটে পরিবার পরিকল্পনা খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিনির্ভর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে তরুণদের কাছে সঠিক তথ্য ও সহায়তা পৌঁছে দেওয়া।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ