শাসন করায় শিক্ষকের মাথা ফাটিয়ে দিলেন ছাত্রের বাবা

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১১:১৬:৪৯
শাসন করায় শিক্ষকের মাথা ফাটিয়ে দিলেন ছাত্রের বাবা

যশোরের অভয়নগরের একটি মাদরাসায় পবিত্র দ্বীনি শিক্ষা প্রদানকারী তরুণ শিক্ষক হাফেজ মাওলানা রফিকুল ইসলামের ওপর নির্মম হামলার ঘটনা শিক্ষাঙ্গনে নৈরাজ্য ও সহিংসতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। মাত্র ২৩ বছর বয়সী এই শিক্ষক শৃঙ্খলা ও শিক্ষার স্বার্থে ছাত্রকে শাসন করায় ছাত্রের পিতা তার মাথা ফাটিয়ে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ জুলাই (রোববার) বিকেলে অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ মাদরাসায়। তবে পরদিন অর্থাৎ সোমবার তা আলোচনায় আসে স্থানীয়ভাবে।

ভুক্তভোগী শিক্ষক হাফেজ মাওলানা রফিকুল ইসলাম নওয়াপাড়া পৌরসভার গুয়াখোলা গ্রামের বাসিন্দা এবং তিনি ঐ মাদরাসায় মোহতামিম তথা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি জাহাঙ্গীর শেখ (৪৫) শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং তার ছেলে বিল্লাল হোসেন (৯) দীর্ঘদিন ধরে ওই মাদরাসায় অধ্যয়নরত। তবে ছেলের লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা ও পিছিয়ে পড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। এ অবস্থায় শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ছাত্রটির প্রতি কিছুটা কঠোর হন, যার মধ্যে ছিল শাসনের অংশ হিসেবে ৩–৪টি লাঠির আঘাত।

ঘটনার সূত্রপাত এখানেই। রোববার বিকেলে মোটরসাইকেলে করে মাদরাসায় এসে শিক্ষক রফিকুল ইসলামের ওপর আচমকা হামলা চালান জাহাঙ্গীর শেখ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এসময় লোহার রড বা ভারী বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে শিক্ষককে রক্তাক্ত করে ফেলেন তিনি।

মাদরাসার অন্য শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহফুজুর রহমান সবুজ জানিয়েছেন, রফিকুল ইসলামের মাথায় গুরুতর জখম হয়েছে, ১৪টি সেলাই দিতে হয়েছে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত, তবে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর শেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি এলাকা ছেড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলীম বলেন, “ঘটনার খবর পেয়েছি, এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং অভিভাবকমহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, একজন শিক্ষক যিনি ধর্মীয় নৈতিকতা শেখান, তাকেই যদি ছাত্রের অভিভাবক এমন ভয়ংকরভাবে আক্রমণ করেন, তবে ভবিষ্যতে শিক্ষকতা পেশায় নিরাপত্তা থাকবে কি?

একজন শিক্ষক ছাত্রকে ভালোবেসে শাসন করতে পারেন এই চিরায়ত ধারণা যেন হুমকির মুখে পড়ছে। পিতার আবেগ যদি নৈতিকতার সীমা পেরিয়ে সহিংসতায় রূপ নেয়, তবে শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ