বুক ধড়ফড়: জানুন কারণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১৫:০০:৩৬
বুক ধড়ফড়: জানুন কারণ ও প্রাকৃতিক প্রতিকার

বুক ধড়ফড়- বাংলায় যাকে বলে বুকে ধক ধক করা, হার্টবিট খুব জোরে বা অনিয়মিতভাবে অনুভব হওয়া এটি একটি সাধারণ শারীরিক উপসর্গ। অনেক সময় এটা হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই থেমে যায়। কেউ কেউ মনে করেন এটি উদ্বেগ বা ঘুমের ঘাটতির ফল, কেউবা ভাবেন পেটের অস্বস্তি থেকে হচ্ছে। তবে এই উপসর্গ অনেক সময় এমন এক বিপদের আগাম বার্তা দেয়, যা অবহেলা করলে হতে পারে চরম পরিণতি। কারণ, বুক ধড়ফড়ের পেছনে থাকতে পারে হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা, রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা বা হৃদযন্ত্রের ছন্দে বিপর্যয়।

বুক ধড়ফড়ের সাধারণ কারণ

বুক ধড়ফড়ের অনেক কারণ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি অস্থায়ী ও নিরীহ। যেমন:

মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: জীবনের নানা সংকটময় মুহূর্তে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হার্টবিটে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এ সময় বুক ধড়ফড়, শ্বাস নিতে কষ্ট বা মাথা ঘোরা দেখা দেয়।

ক্যাফেইন, নিকোটিন ও অ্যালকোহল: অতিরিক্ত চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংকস খেলে, ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবনে নার্ভাস সিস্টেম উত্তেজিত হয়, যা হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ বিঘ্নিত করে।

শারীরিক পরিশ্রম বা ঘুমের ঘাটতি: প্রচণ্ড ক্লান্তি, অনিদ্রা বা অতিরিক্ত পরিশ্রমেও শরীর সাড়া দেয় হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে।

হরমোন পরিবর্তন: গর্ভাবস্থা, মেনোপজ বা থাইরয়েডের ভারসাম্যহীনতা নারীদের মাঝে বুক ধড়ফড়ের অন্যতম কারণ হতে পারে।

ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ, বিশেষত ইনহেলার, ডিকনজেস্ট্যান্ট, অ্যাজমার ওষুধ বা স্নায়ুবিষয়ক ওষুধ বুক ধড়ফড়ের জন্ম দিতে পারে।

রোগজনিত কারণসবসময় বুক ধড়ফড় নিরীহ নয়। কিছু চিকিৎসা-গুরুত্বপূর্ণ কারণও থাকতে পারে:

রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া): রক্তে অক্সিজেন পরিবহনকারী হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হলে হৃদযন্ত্র বেশি কাজ করতে বাধ্য হয়, এতে স্পন্দন বেড়ে যায়।

ইনফেকশন বা জ্বর: ভাইরাস সংক্রমণ, ডেঙ্গু, বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে হার্টরেট বেড়ে যেতে পারে।

হৃদযন্ত্রের ছন্দে গড়বড় (Arrhythmia): এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা ভেন্ট্রিকুলার ট্যাকিকার্ডিয়ার মতো অবস্থা বুক ধড়ফড়ের প্রধান কারণ, যা মৃত্যুঝুঁকিও বাড়ায়।

করোনারি আর্টারি ডিজিজ বা হার্ট অ্যাটাকের পূর্ব লক্ষণ: হার্টে রক্ত সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হলে বুক ধড়ফড়, চাপ, বুকে জ্বালা ও শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

কখন দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাবেন?

বুক ধড়ফড়ের পাশাপাশি যদি দেখা দেয়:

  • বুকে ব্যথা বা জ্বালা
  • শ্বাস নিতে কষ্ট
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরা
  • হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া

তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

প্রাথমিক প্রতিকার ও ঘরোয়া ব্যবস্থাপনা

মানসিক প্রশান্তির চর্চা: মেডিটেশন, ধ্যান, প্রানায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে নার্ভ শান্ত হয়, বুক ধড়ফড় কমে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ঘুম: ক্যাফেইন-ফ্রি খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে ভারসাম্য রাখে।

পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ডিহাইড্রেশন হৃদস্পন্দনে প্রভাব ফেলে, তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

গরম পানির গোসল: রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং নার্ভকে শান্ত করে।

বুক ধড়ফড় একটি উপসর্গ, যার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে স্নায়বিক চাপ, জীবনযাপনগত অভ্যাস, এমনকি গুরুতর হৃদরোগ। এই অনুভূতিকে অবহেলা না করে বরং নিজের শরীরের ভাষা বোঝার চেষ্টা করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতা এবং সঠিক ব্যবস্থা নিলে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হৃদরোগ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তাই বুক ধড়ফড় করলেই আতঙ্ক নয়, বরং সচেতন হোন, কারণ সতর্কতা রোগ প্রতিরোধের প্রথম ধাপ।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ