ঢাবির জগন্নাথ হলে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

শিক্ষা ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১০:৩৬:০১
ঢাবির জগন্নাথ হলে শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হলে আত্মহত্যা করেছেন সঞ্জু বাড়ই নামে এক শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ জুলাই) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হলটির নবনির্মিত রবীন্দ্র ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল।

নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সঞ্জু বাড়ই ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ না হলেও হল জীবনে তিনি নিঃসঙ্গতার মধ্যে ছিলেন বলে ধারণা করছেন সহপাঠীরা।

হলের এক শিক্ষার্থী রাখাল রায় জানান, “ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার দিকে হঠাৎ ছাদ থেকে একটি বিকট শব্দ আসে। পরে নিচে ছুটে গিয়ে দেখি সঞ্জু মাটিতে পড়ে আছেন ততক্ষণে নিথর দেহ। দ্রুত আমরা হল কর্তৃপক্ষকে জানাই।” অন্য শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদও বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ার পর তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ একটি সূত্র জানায়, সঞ্জু বাড়ই মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছিলেন। তবে তিনি কোনো চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা মেলেনি। ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা একাডেমিক চাপে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের সহায়তায় মরদেহ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক দেবাশীষ পাল বলেন, “এই দুর্ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তাঁর পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব সহায়তা আমরা তাদের প্রদান করবো।”

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই আত্মহত্যার ঘটনা নতুন নয়। আগেও একাধিক শিক্ষার্থী হতাশা, মানসিক চাপে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যকর সহায়তা না থাকা, একাকীত্ব ও সামাজিক চাপে অনেকে অসহায় বোধ করেন এমন মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত একটি সুসংহত কাউন্সেলিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’ তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক সাফল্যের পেছনে ছুটতে উৎসাহিত করলেই চলে না, বরং তাদের মানসিক ও আবেগিক স্বাস্থ্যকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

সঞ্জু বাড়ইয়ের অকালমৃত্যু কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, এটি আমাদের সমাজ ও শিক্ষাব্যবস্থার বৃহত্তর সংকেতও বয়ে নিয়ে আসে। এখনই সময়, এ ধরনের মৃত্যুর কারণ খুঁজে সমাধানমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ