‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হচ্ছে গণভবন

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১২:৫০:১৯
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হচ্ছে গণভবন

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিকে স্থায়ী রূপ দিতে এবং শহীদদের আত্মত্যাগকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষণ করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ‘গণভবন’কে রূপান্তর করা হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’-এ। এ লক্ষ্যে সরকার ৫ আগস্টের মধ্যে জাদুঘর রূপান্তরের কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করেছে এবং দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই সংক্রান্ত দুটি বড় নির্মাণ প্রকল্প সিভিল এবং ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল (ই/এম)—এর জন্য মোট ১১১ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমে এই কাজ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের পথ উন্মুক্ত হয়েছে।

জাদুঘরের সিভিল অংশ, অর্থাৎ মূল ভবনের কাঠামো, দেয়াল, ফিনিশিং, ছাদ ও অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এই কাজ বাস্তবায়ন করবে গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড’। অন্যদিকে ই/এম অংশ—যার আওতায় থাকবে পুরো জাদুঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, এসি ও আলো, শব্দ এবং অন্যান্য মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতির স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ—এর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৪০ কোটি ৮২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এই অংশের কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে ‘মেসার্স শুভ্রা ট্রেডার্স’।

সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে। এরপর বিষয়টির ওপর উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সম্মতি ও প্রশাসনিক নীতিগত অনুমোদন আসে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে কি না, তা নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে, বিশেষত ই/এম কাজের সময়সীমা নিয়ে।

নির্মাণাধীন জাদুঘরটিকে শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং এটি হবে একটি জাতীয় চেতনার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে থাকবে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের নাম ও জীবনকাহিনি, গণতন্ত্রকামী আন্দোলনের দলিল, নিপীড়নের চিহ্ন, ছবি, ব্যানার-পোস্টার, ভিডিও ফুটেজ ও ইন্টারঅ্যাকটিভ গ্যালারি। ভবিষ্যতে এখানে গবেষণা কার্যক্রম চালানো, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য শেখার ব্যবস্থা রাখা এবং নাগরিক পর্যায়ে গণসচেতনতা গড়ে তোলার ব্যবস্থা থাকবে।

গণভবনের মতো একটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতীকী স্থানকে জাদুঘরে রূপান্তর করায় এটি গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশের যাত্রায় একটি মৌলিক বাঁক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের একনায়কতান্ত্রিক দুঃশাসনের নিদর্শন হিসেবে যে ভবনটি গণআন্দোলনের সময়ও আলোচিত ছিল, সেটিকে এখন গণচেতনার স্থায়ী স্মারকে রূপ দেওয়া হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তকে অনেকে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং ইতিহাসকে জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত রাখার একটি রাষ্ট্রীয় প্রয়াস হিসেবে দেখছেন।

এদিকে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর একযোগে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের তদারকিতে রয়েছে। সূত্র বলছে, জাদুঘরটি উদ্বোধনের জন্য ৫ আগস্ট নির্ধারিত রয়েছে। এটি জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীর অংশ হিসেবে আয়োজিত হবে, যা আরও বড় মাত্রার রাষ্ট্রীয় স্মরণে রূপ নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ