সাবটাইটেল দেখে ইংরেজি শেখা মেয়েটিই এখন বিশ্ব তারকা

২০২৫ জুলাই ১৩ ১৫:২৮:৫৫
সাবটাইটেল দেখে ইংরেজি শেখা মেয়েটিই এখন বিশ্ব তারকা

বিশ্বখ্যাত অভিনেত্রী সালমা হায়েকের জীবনকাহিনি শুধুই এক তারকার উত্থানের গল্প নয়—এটি একটি সাহস, সংকল্প আর স্বপ্নের অনুসরণের অনুপ্রেরণাদায়ী অধ্যায়। যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১২ বছর বয়সে পা রাখেন তিনি। যদিও শিক্ষার জন্য সেখানে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু ভাষাগত দুর্বলতা ছিল তার সবচেয়ে বড় বাধা। স্কুলজীবনে ইংরেজিতে সাবলীলভাবে কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। সাবটাইটেল দেখে ইংরেজি শেখার চেষ্টা করলেও সেটি যথেষ্ট ছিল না। মেক্সিকোতে ফিরে গিয়ে তিন মাসের একটি ভাষা কোর্স করলে বুঝতে পারেন, উচ্চারণ ও শব্দ চয়নে কতখানি ঘাটতি রয়ে গেছে।

তবু আত্মবিশ্বাস হারাননি সালমা। যখন হলিউডে যাওয়ার কথা বলতেন, অনেকে তা শুনে ঠাট্টা করত। কিন্তু সেই উপহাসের মাঝেই তিনি নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে মেক্সিকোতে একটি শিশুতোষ নাটকে প্রথম অডিশন দেন। যদিও সে অভিজ্ঞতা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, তবু থেমে থাকেননি। এরপর সিনেমায় প্রথম অডিশন দেন ‘দ্য অ্যালি অব মিরাকল’ চলচ্চিত্রে। তখনো মেক্সিকোর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ফলে নিজের সীমাবদ্ধতাকে পাশ কাটিয়ে সালমা সিদ্ধান্ত নেন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অভিনয়ে নিজের জায়গা করে নেবেন।

কিন্তু তার ভেতর এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করত। খ্যাতি ও অর্থের কাছে যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলছেন—এই ভয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন নিজের প্রতিভা নিয়ে। অনেকেই তার জনপ্রিয়তাকে সফলতা ভাবলেও, তিনি মনে করতেন, তিনি তখনো একজন ভালো অভিনেত্রী হয়ে উঠতে পারেননি। সেই দায়বোধ থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে নতুন করে শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এই শুরুটা ছিল রীতিমতো সংগ্রামমুখর। না ছিল ভালো ইংরেজির দক্ষতা, না গ্রিন কার্ড, না কোনো এজেন্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স।

হলিউডে কাজ পেতে হলে প্রয়োজন হয় একজন এজেন্টের। আর এজেন্ট পেতে হলে দেখাতে হয় পূর্বের কাজের নমুনা। সালমা তার টেলিভিশন নাটকের কান্নার দৃশ্যগুলো কেটে একটি ভিডিও বানান, কিন্তু দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল হতাশাজনক। তারা যেন সালমাকে অচেনা কোনো গ্রহ থেকে আসা এক অদ্ভুত জীব মনে করত। অথচ মেক্সিকোতে তার দিনগুলো ছিল রাজকীয়—অঢেল অর্থ, খ্যাতি, জনপ্রিয়তা। কিন্তু সে আরাম আয়েশের জীবনকে ত্যাগ করে তিনি ঝুঁকি নিয়েছিলেন নিজের স্বপ্নের জন্য। এবং সময়ের পরিক্রমায় প্রমাণ করে দিয়েছেন—ঝুঁকি নিতে পারলেই আসে সাফল্য।

আজ সালমা হায়েক শুধু একজন বিখ্যাত অভিনেত্রী নন, বরং এক সাহসী নারীর নাম, যিনি সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে নিজের যোগ্যতায় বিশ্ব চলচ্চিত্রে নিজের স্থান করে নিয়েছেন।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ