সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের রহস্যময় পালানোর পর্দা ফাঁস

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১১:০৫:২৮
সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের রহস্যময় পালানোর পর্দা ফাঁস

বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও ভয়ংকর ব্যক্তিত্ব হিসেবে উঠে এসেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশীদ। বাহিনীর অভ্যন্তরে চেইন অব কমান্ডের প্রতি অবজ্ঞা, রাজনৈতিক আনুগত্যকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার, নিষ্ঠুর দমননীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে তিনি এক ভয়ংকর প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন। তাকে ঘিরে গড়ে ওঠে এককেন্দ্রিক কর্তৃত্ব, অপশক্তির বলয় এবং আঙুলে মোড়ানো ছিল পুলিশ প্রশাসনের পুরো চক্র।

সূত্র মতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি প্রশ্রয় ও সমর্থনেই এই কর্মকর্তা দমননীতির নির্বিঘ্ন অনুমতি পেয়ে যান। নিজেই বলতেন "আমি চেইন অব কমান্ড"। অর্থাৎ পুলিশি কাঠামোর নিয়মনীতি তার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। কাকে গ্রেফতার করতে হবে, কোন সভা পণ্ড করতে হবে কিংবা কার ওপর নিপীড়ন চালাতে হবে এসব নির্ধারণে তার মূল ভিত্তি ছিল শেখ হাসিনার ফোন অথবা ব্যক্তিগত ইচ্ছা। প্রায়শই গণভবনে যেতেন, ফোন করতেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নম্বরে। এ ছাড়াও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গেও তার ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, যা তার প্রভাব-প্রতিপত্তিকে আরও দুর্দান্ত করে তোলে।

হারুনের এক বিশেষ কৃতিত্ব, যা তাকে ‘বিশ্বস্ত বাহক’ হিসেবে পরিচিত করায়, সেটি হলো ২০১১ সালে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পিটিয়ে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে ওঠা। এরপর থেকে হারুন হয়ে ওঠেন ‘ডিবি হারুন’ নামে পুলিশ বিভাগে আতঙ্ক, আর রাজনীতির মাঠে ত্রাসের নাম। সামাজিক মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে ‘হাউন আঙ্কেল’ নামের কৌতুকও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কিন্তু তার ভেতরের নিষ্ঠুরতা রয়ে যায় বাস্তব ও ভয়ংকর।

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি আয়োজিত ঢাকার নয়াপল্টনের মহাসমাবেশের দিন কাকরাইল মোড়ে প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনে হামলা চালানো হয়, যা সরকারিভাবে বিএনপির নামে চালিয়ে সমাবেশ পণ্ড করে দেন হারুন। এই ঘটনা পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতর থেকেই একটি রাজনৈতিক দলের ওপর দমন চালানোর সুস্পষ্ট উদাহরণ হয়ে আছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পরপরই এই কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অনুসন্ধানে জানা যায়, ৮ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি সেনা হেফাজতে ছিলেন। সেখান থেকে ক্যান্টনমেন্টের নিরাপত্তার ঘেরাটোপ পেরিয়ে এক প্রাইভেট কারে করে চলে যান আখাউড়া সীমান্তে। ভারতীয় ভিসা না থাকা সত্ত্বেও বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যমে ত্রিপুরা হয়ে পৌঁছান নেপালে। সেখান থেকে সেন্ট লুসিয়া এবং পরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় গমন করেন, যেখানে তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে আগে থেকেই বসবাস করছিলেন গ্রিন কার্ডধারী হিসেবে।

বিশেষ সূত্র জানায়, বিপুল পরিমাণ অর্থ যার পরিমাণ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে ব্যয় করেই তিনি এই পালানোর সুযোগ তৈরি করেন। পুলিশের কয়েকজন সাবেক সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার কিছু কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হারুনের পলায়নের সময় দেশের ভেতরে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিই তাকে সহায়তা করেছেন, যা আজও এক ধোঁয়াশায় ঢাকা আছে।

এই কর্মকর্তা যখন দেশের ভেতরে ছিলেন, তখন তার বিরুদ্ধে পুলিশি হেফাজতে নির্যাতন, জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায়, রাজপথে দলীয় সমাবেশে হামলা, এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ উঠেছিল। অথচ রাজনৈতিক প্রশ্রয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহলের প্রশান্তির কারণে তার বিরুদ্ধে কখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

-শরিফুল, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ