তথ্য গোপন, তহবিল আত্মসাৎ—হাসিনার সন্তানদের ঘিরে জটিল তদন্ত

গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের প্রতিষ্ঠিত দুই সংস্থা—সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) ও সূচনা ফাউন্ডেশন—এর বিরুদ্ধে অনুদান ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় জটিলতার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) পাঠানো চিঠিতে উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানের দান ও অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত নথিপত্র চাওয়া হয়েছে।

রবিবার (১৪ জুলাই) দেওয়া চিঠিতে দুদক জানিয়েছে, সিআরআই-এর ট্রাস্টি সজীব ওয়াজেদ জয় ও স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করার অভিযোগ রয়েছে। একইসঙ্গে, সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের CSR তহবিল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে নিজের প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরের মাধ্যমে অনিয়ম ও আত্মসাতের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

দুদকের দাবি, এসব গুরুতর অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান করতে গিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দলিল ও তথ্য জরুরি ভিত্তিতে এনবিআরের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অনুদানের উৎস, ব্যাংক হিসাব, কর বিবরণী এবং সংশ্লিষ্ট আর্থিক কার্যক্রমের স্বচ্ছতা যাচাইয়ের প্রমাণপত্র। চিঠিতে এনবিআরকে আগামী কার্যদিবসের মধ্যেই তথ্য দিতে বলা হয়েছে।

অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক উপপরিচালক মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি তদন্তদল গঠন করেছে। এই টিমের সদস্যরা হলেন—সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস এম রাশেদুল হাসান, এ কে এম মুর্তজা আলী সাগর, মনিরুল ইসলাম এবং উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গত মার্চ মাসে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দুদক দুটি মামলা দায়ের করে। মামলাগুলোতে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় প্রভাব ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি সূচনা ফাউন্ডেশনের জন্য প্রায় ৩৩ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করেছেন। সেই অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম করেছেন। এছাড়া জানুয়ারিতে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে তথ্য গোপন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে পুতুল ও জয়—স্বৈরাচার পরিবারের এই দুই সদস্যের বিরুদ্ধেই আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।

এই মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতি এবং এনবিআরের কাছ থেকে চাওয়া নথি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে বলছেন, এইসব কার্যক্রম স্বৈরাচার পরিবারের আর্থিক ও প্রশাসনিক নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।