সাত মাসে ১,৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি ধরল এনবিআরের নতুন ইউনিট

জাতীয় ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১৪:৫৪:৩৭
সাত মাসে ১,৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি ধরল এনবিআরের নতুন ইউনিট

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট মাত্র সাত মাসের কার্যক্রমে কর ফাঁকির চমকপ্রদ একটি চিত্র উন্মোচন করেছে। ইউনিটটি এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছে, যা রাজস্ব প্রশাসনের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সোমবার (১৪ জুলাই) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এনবিআর এই তথ্য প্রকাশ করে।

গত বছরের ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এনবিআরের নতুন এই ইউনিট। এর লক্ষ্য ছিল কর ফাঁকি রোধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করা এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা কর ফাঁকির প্রবণতায় নিয়ন্ত্রণ আনা। ইউনিটটি দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করে এবং এখন পর্যন্ত ১৮৩ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে কর ফাঁকির অভিযোগে অনুসন্ধান চালিয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আয় গোপন করে কোটি কোটি টাকার কর ফাঁকি দিয়েছেন, যা এখন ধরা পড়েছে এই ইউনিটের নজরদারিতে।

এনবিআর জানায়, অভিযুক্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে ৬৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় কর মেটাতে সম্মত হয়েছেন এবং ২৩১টি এ-চালানের মাধ্যমে মোট ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন। এই অর্থমূল্য সরকারের রাজস্ব খাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এসব হিসাব বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া করের পরিমাণ আরও নির্ধারণ করা হচ্ছে। এনবিআর মনে করছে, এই গোয়েন্দা ইউনিটের কার্যক্রম ভবিষ্যতে রাজস্ব পুনরুদ্ধার এবং কর ব্যবস্থার স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।

উল্লেখ্য, এনবিআরের অধীনে আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট ছাড়াও ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের পৃথক তদন্ত ইউনিট রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (CIC) নামে একটি স্বাধীন ইউনিটও দীর্ঘদিন ধরে কর ফাঁকিবাজদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে।

আয়কর গোয়েন্দা ইউনিটকে এনবিআর একটি ‘নৈতিক, প্রযুক্তিনির্ভর এবং আইনি অগ্রগতির প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, এ ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা শুধু অর্থ আদায়ে নয়, বরং করদাতাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং কর সংস্কৃতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।

সরকারি একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে কর ফাঁকির মতো অপরাধ আরও দ্রুত চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা যায়। এই ইউনিটের সাফল্য সরকারের রাজস্ব আদায় এবং আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষায় একটি ইতিবাচক বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ