‘বেঁচে থাকা কষ্টকর’ চিঠি লিখে নিখোঁজ সেনাকর্মকর্তার মেয়ে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১০:৪১:৪৪
‘বেঁচে থাকা কষ্টকর’ চিঠি লিখে নিখোঁজ সেনাকর্মকর্তার মেয়ে

ভারতের রাজধানী দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী স্নেহা দেবনাথ গত এক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ। তার কক্ষ থেকে পাওয়া একটি চিঠিতে আত্মহত্যার ইঙ্গিত মিললেও, পরিবার বিষয়টি নিয়ে গভীর সন্দেহ প্রকাশ করেছে। ঘটনায় উঠে এসেছে হতাশা, নিরাপত্তা ব্যর্থতা এবং তদন্ত নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন।

ত্রিপুরার বাসিন্দা স্নেহা দিল্লিতে উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছিলেন। গত ৭ জুলাই তিনি সরাই রোহিলা রেলস্টেশনে এক বন্ধুকে বিদায় দিতে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। কিন্তু এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরিবার ও পুলিশ জানায়, তিনি রেলস্টেশনে না গিয়ে উত্তর দিল্লির ওয়াজিরাবাদ সংলগ্ন ‘সিগনেচার ব্রিজ’-এ নামেন। পরে জানা যায়, সেখানেই শেষবার তাকে দেখা গিয়েছিল।

স্নেহার কক্ষ থেকে একটি চার লাইনের চিঠি উদ্ধার করে তার পরিবার। সেখানে লেখা ছিল, “বাঁচা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে গেছে। আমি ব্যর্থ, একটা বোঝা। কাউকে দোষ দেবেন না, এ সিদ্ধান্ত একান্তই আমার।” চিঠির ভাষা সরল, কিন্তু এতে উঠে আসে গভীর মনস্তাত্ত্বিক চাপের প্রতিচ্ছবি। যদিও স্নেহার বোন বিপাশা দেবনাথ এই চিঠি ঘিরে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “স্নেহা আত্মহত্যা করতে চাইলেও, এমন দূর সিগনেচার ব্রিজে গিয়ে কেন ঝাঁপ দিতে যাবে? বাড়ির কাছেই তো অনেক উপায় ছিল। এটা আত্মহত্যার চাইতে কিছুটা ‘influenced’ মনে হচ্ছে।”

এই ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে ব্রিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। স্নেহার পরিবার জানায়, ব্রিজে কোনো কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল না। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীও ছিল না। ফলে নিখোঁজ হওয়ার সময়কার ভিডিও ফুটেজ বা প্রত্যক্ষদর্শীদের সন্ধান মিলছে না। তারা সিগনেচার ব্রিজে যদি কিছু ঘটেও থাকে, সেটির কোনো প্রমাণ মেলেনি এখনো।

ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) গত ৯ জুলাই থেকে সিগনেচার ব্রিজের আশেপাশে ৭ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে উদ্ধার অভিযান চালালেও স্নেহার কোনো সন্ধান মেলেনি। নদীতে ডুবুরিরা অভিযান চালাচ্ছেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো দেহ উদ্ধার হয়নি।

স্নেহার বাবা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা সুবেদার মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) প্রিতিশ দেবনাথ বর্তমানে কিডনি জটিলতায় ভুগছেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন। মেয়ের এই অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পরিস্থিতিতে পুরো পরিবার চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছে। তাদের একমাত্র আশা মেয়েটি জীবিত এবং কোথাও নিরাপদে আছে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে এবং দিল্লি পুলিশকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের তৎপরতা পর্যাপ্ত নয়। তারা বলছে, “যদি স্নেহা আজ কোনো ক্ষমতাধর পরিবারের মেয়ে হতেন, তাহলে তদন্ত এভাবে ঝিমিয়ে থাকত না।”

স্নেহার পরিবার সামাজিক মাধ্যমে তার ছবি ও বিবরণ দিয়ে তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য সবার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। তারা আশঙ্কা করছে, স্নেহাকে কেউ অপহরণ করে থাকতে পারে, অথবা সে কোনোভাবে মগজ ধোলাইয়ের শিকার হয়ে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে।

-রফিক, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ