রোজকার শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ

সমতার ছায়ায় শেয়ার বাজার: বাড়ল ১৭৭, কমল ১৭০—চূড়ান্ত টানাপোড়েন!

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ০৯:৩৯:৩৯
সমতার ছায়ায় শেয়ার বাজার: বাড়ল ১৭৭, কমল ১৭০—চূড়ান্ত টানাপোড়েন!

গতকাল ১৩ জুলাই ২০২৫ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) লেনদেন কার্যদিবসটি বাজারের জন্য একটি ব্যতিক্রমী ‘সাম্যাবস্থার সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকলো। সার্বিক মূল্য পরিবর্তনের গড় চিত্র থেকে বোঝা যায় যে বিনিয়োগকারীরা এখন দিকনির্ধারণমূলক সংকেতের অপেক্ষায় অবস্থান করছেন। এদিন মোট ৪০২টি সিকিউরিটির লেনদেন হয়েছে, যার মধ্যে ১৭৭টি শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ১৭০টি কমেছে, আর ৫৫টি অপরিবর্তিত ছিল। এ রকম প্রায় সমানুপাতিক দরবৃদ্ধি ও দরপতনের হার বাজারে দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব এবং একটি অনিশ্চিত রেঞ্জ-চ্যানেলে আবদ্ধ থাকার ইঙ্গিত দেয়। Advance-Decline Ratio (ADR) ১.০৪ হওয়া বাজারে গতি থাকলেও তার অভিমুখ নির্ধারিত হয়নি বলে প্রতীয়মান হয়।

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাজারের প্রধান A ক্যাটাগরির শেয়ারগুলোর মধ্যেও একই ধরনের দ্বৈততা বিদ্যমান ছিল। মোট ২২১টি A ক্যাটাগরির শেয়ারের মধ্যে ৯৮টি শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ৯৬টি কমেছে। এটি স্পষ্ট করে যে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ লাভ তুলে নিচ্ছেন, অন্যদিকে আরেক অংশ মৌলভিত্তি শক্তিশালী কোম্পানিগুলোয় পজিশন নিচ্ছেন। ঠিক একইভাবে, B ক্যাটাগরির ৮৩টি শেয়ারের মধ্যে ৩২টির দর বৃদ্ধি ও ৪২টির দরপতন হয়—এতে বোঝা যায় যে এই সেগমেন্টে আরও বড় অনিশ্চয়তা কাজ করছে, যেখানে বাজার অস্থিরতার মধ্যে স্বল্পমেয়াদি মুনাফা তোলার প্রবণতা বেশি। তবে Z ক্যাটাগরির পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে চমকপ্রদ—৯৭টি ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারের মধ্যে ৪৬টির দর বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি হয়তো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্পেকুলেটিভ আচরণ বা অতীত দর পতনের পরে স্বল্পমূল্যে কেনার প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।

মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও বন্ড মার্কেটেও একটি বিভক্ত চিত্র দেখা গেছে। মোট ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১০টির দর বৃদ্ধি, ১৩টির দর হ্রাস এবং ১৩টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। এই ফলাফল নির্দেশ করে যে বিনিয়োগকারীরা এ খাতে সতর্ক রয়েছে এবং নিরাপদ রিটার্নের প্রত্যাশায় অপেক্ষমাণ। করপোরেট বন্ড ও সরকারি সিকিউরিটিজ সেগমেন্টেও লেনদেন ছিল খুবই সীমিত। করপোরেট বন্ডে মাত্র ৪টি সিকিউরিটির ট্রেড হয়েছে, যার মধ্যে দুইটির দর বৃদ্ধি ও একটির দর হ্রাস পেয়েছে। সরকারি সিকিউরিটিতে (G-Sec) চারটি লেনদেন হয়েছে, তবে দর কমেছে তিনটির। এটি পুঁজিবাজারে সরকারি সম্পদে বিনিয়োগের চেয়ে ইকুইটি মার্কেটে অংশগ্রহণের হার বেশি থাকার ইঙ্গিত দেয়।

লেনদেনের পরিমাণ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে বাজারে এখনও যথেষ্ট তারল্য রয়েছে। এদিন মোট ২০৭,২০৬টি ট্রেডে ২৬.৮ কোটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ছিল ৬৬৫৯.৯৯ কোটি টাকা। যদিও এই পরিমাণ আগের কার্যদিবসের তুলনায় কিছুটা কম, তা সত্ত্বেও এটি একটি স্থিতিশীল বাজার কাঠামোর নির্দেশ করে। সর্বমোট বাজার মূলধন সামান্য হ্রাস পেয়েও ৬.৭৬ লক্ষ কোটি টাকার ওপরেই রয়েছে—যা একদিকে বিনিয়োগকারীদের দৃঢ় মনোভাবের প্রতিফলন, অন্যদিকে বাজারের অবকাঠামোগত স্থিতিশীলতার প্রমাণ।

এই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিশ্লেষণযোগ্য অংশ ছিল ব্লক ট্রানজ্যাকশন। মোট ৩৩টি কোম্পানির ৭২টি ব্লক ট্রেডের মাধ্যমে ১.৭৫ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৩৩৮ কোটি টাকা—যা মোট বাজার লেনদেনের প্রায় ৫ শতাংশ। এককভাবে BANKASIA এর ব্লক ট্রেড ছিল অভাবনীয়, যেখানে ১.০২ কোটি শেয়ারের মাধ্যমে ১৬৬.৭৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এরকম লেনদেন সাধারণত বড় প্রাতিষ্ঠানিক বা উদ্যোক্তা পর্যায়ের শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে দেখা যায়, যা কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ কাঠামোগত বা কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে। এছাড়া RENATA, AL-HAJTEX, LOVELLO, এবং DBH1STMF–এর ব্লক ট্রেডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লেনদেন হয়েছে, যা নির্দেশ করে যে বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত কিছু শেয়ারে কৌশলগতভাবে প্রবেশ করছেন।

সব মিলিয়ে, ১৩ জুলাইয়ের বাজারচিত্র একটি দ্বিমুখী এবং কৌশলগত বিনিয়োগ-সন্ধিক্ষণের প্রতিফলন। মূল্যবৃদ্ধি ও পতনের প্রায় সমতা, স্থিতিশীল লেনদেন, এবং নির্বাচিত শেয়ারে ব্লক ট্রেডের সক্রিয়তা বাজারকে নতুন গতি দেওয়ার আগমনী বার্তা বহন করছে। তবে এই প্রবণতা আরও জোরদার বা ভিন্নমুখী হবে কিনা তা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি, মুদ্রানীতির সিগনাল, এবং বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতির ওপর। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য সময়োপযোগী কৌশল হলো—সুনির্বাচিত কোম্পানির মৌলভিত্তি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে অবস্থান নির্ধারণ এবং অস্থিরতার মুখে সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে পোর্টফোলিও ব্যালান্স করা।

-মুশফিক, ডেস্ক রিপোর্টার।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ