শিশুদের পেট ফাঁপার সমস্যায় ঘরোয়া প্রতিকার ও করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১২:৪৯:৫৬
শিশুদের পেট ফাঁপার সমস্যায় ঘরোয়া প্রতিকার ও করণীয়

শিশুদের পেট ফাঁপা বা গ্যাস হওয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও তা শিশুর স্বস্তি ও দৈনন্দিন আচরণে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় শিশুরা ঠিকভাবে ব্যথা বা অস্বস্তি প্রকাশ করতে পারে না, ফলে অভিভাবকরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। গ্যাসের কারণে শিশু কাঁদতে পারে, অস্থির হয়ে পড়তে পারে এবং ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটতে পারে। এ সমস্যার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, হজমের অস্বাভাবিকতা, কিংবা কিছু নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতা দায়ী হতে পারে। এ অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শের পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করে শিশুদের স্বস্তি দেওয়া সম্ভব। নিচে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও কার্যকর কিছু কৌশল তুলে ধরা হলো।

১. হালকা পেট ম্যাসাজ

পেটের গ্যাস দূর করার একটি কার্যকর পদ্ধতি হলো ঘড়ির কাঁটার দিকে হালকা চাপে বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করা। এটি শিশুর অন্ত্রে গ্যাসের গতি ত্বরান্বিত করে ও শিথিলতা আনে। প্রতিদিন গোসলের আগে বা রাতে ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

২. চিকিৎসকের পরামর্শে গ্যাসের ওষুধ

যদি ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তবে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিওপেপ্টিন ড্রপ, সিমেথিকন, বা অনুরূপ ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে স্বেচ্ছায় ওষুধ প্রয়োগ কখনোই নিরাপদ নয়।

৩. খাওয়ানোর ধরনে পরিবর্তন

একসঙ্গে বেশি খাওয়ানোর বদলে অল্প অল্প করে কয়েকবার খাওয়ানো শিশুদের হজমে সহায়ক। দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর সঙ্গে বায়ু যেন প্রবেশ না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্তন্যপানকারী শিশুর ক্ষেত্রে মায়ের খাওয়ার ধরনও গুরুত্বপূর্ণ।

৪. গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলা

দুধ, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ডাল, অতিরিক্ত ভাজা বা চর্বিযুক্ত খাবার শিশুদের পেটে গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর খাদ্যতালিকা থেকে এই ধরনের খাবার সাময়িকভাবে বাদ দিলে উপকার মিলতে পারে।

৫. পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ

শিশুর বয়স অনুপাতে বিশুদ্ধ পানি পান করানো হজমের জন্য অপরিহার্য। পানি অন্ত্রে খাবার চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে, ফলে গ্যাস জমে থাকা রোধ হয়।

৬. হালকা ব্যায়াম ও শারীরিক আন্দোলন

শিশুকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করুন। খেলার মাধ্যমে অন্ত্রের গ্যাস সহজেই বের হতে পারে। ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ‘সাইকেল মুভমেন্ট’ অর্থাৎ পা দুটি সাইকেল চালানোর মতো নাড়ানো একটি কার্যকর কৌশল।

৭. প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট

হজমজনিত সমস্যা কমাতে প্রোবায়োটিক জাতীয় খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে।

৮. গ্যাস ও পেট ব্যথার তীব্রতায় চিকিৎসা

যদি শিশুর পেট ফুলে যায়, বমি হয়, জ্বর আসে, বা কাঁদতে কাঁদতে নিস্তেজ হয়ে পড়ে, তবে দেরি না করে শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। অনেক সময় পেট ফাঁপা ছাড়াও অন্তর্নিহিত গুরুতর অসুস্থতা থাকতে পারে।

৯. সঠিক পরিবেশে খাওয়ানো ও ঘুম

শান্ত পরিবেশে খাওয়ালে শিশু ধীরে ধীরে খায় ও অযথা বাতাস গিলতে কম হয়। ঘুমের সময় পেট নিচে দিয়ে শোওয়ার অভ্যাস থাকলে কিছুটা পেটের চাপ পড়ে, যা গ্যাস কমাতে সাহায্য করতে পারে (যদিও এ অবস্থানে দীর্ঘক্ষণ রাখা ঠিক নয়)।

১০. নিয়মিত স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ

শিশুর হজমসংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকলে তা শারীরিক পুষ্টি ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিয়মিত ওজন, খাওয়ার ধরণ এবং মলত্যাগের স্বাভাবিকতা পর্যবেক্ষণ জরুরি।

শিশুর পেট ফাঁপার সমস্যা সাধারণ হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হলে অবহেলা নয়। সচেতন অভিভাবকত্ব এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা পরামর্শ গ্রহণই হতে পারে শিশুর স্বস্তির প্রধান চাবিকাঠি। প্রতিটি শিশু ভিন্ন, তাই প্রতিকারেও ব্যক্তিগত পার্থক্য থাকবে—তা মনে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ