ভিটামিন ডি-র ঘাটতি: শরীরে নীরব বিপর্যয়ের শুরু?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১০ ১৪:৩২:২৫
ভিটামিন ডি-র ঘাটতি: শরীরে নীরব বিপর্যয়ের শুরু?

শরীরের সুস্থতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হলো ভিটামিন ডি। অধিকাংশ মানুষ এটি শুধু হাড়ের মজবুতির সঙ্গে যুক্ত করে দেখেন। কিন্তু চিকিৎসা গবেষণা বলছে, ভিটামিন ডি-র অভাব আমাদের শরীরে একাধিক মারাত্মক রোগের জন্ম দিতে পারে তাও আবার অনেকটা নীরবেই। ফলে যাঁরা শুধু কোমর বা পিঠে ব্যথাকে সাধারণ সমস্যাভেবে এড়িয়ে যান, তাঁদের জন্য এই ঘাটতি হতে পারে ভবিষ্যতের একটি ভয়াবহ সংকেত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা হাড় গঠনে অপরিহার্য। ভিটামিন ডি কমে গেলে কেবল হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে না, সেইসঙ্গে হাড়ে ব্যথা, ক্লান্তি, পেশি দুর্বলতা এবং অস্থিরতা দেখা দেয়। এটি শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেটস এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্টিওমালেশিয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তবে এসব চেনা উপসর্গ ছাড়াও এর রয়েছে আরও গভীর ও ভয়ানক প্রভাব।

২০২৪ সালে ইংল্যান্ডের 'Scientific Reports' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, শহরতলি ও গ্রামীণ এলাকার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৯১.২ শতাংশেই ভিটামিন ডি-র ঘাটতি রয়েছে। আর পঞ্চাশোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই হার আরও ভয়াবহ ৯৪ শতাংশ। অর্থাৎ, নিরবচ্ছিন্ন রোদে না থাকা বা খাদ্যাভ্যাসে ভিটামিন ডি যুক্ত না থাকলে আমাদের বিপদের আশঙ্কা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

শুধু হাড় নয়, ভিটামিন ডি শরীরের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন ডি-র ঘাটতির কারণে ইনসুলিন কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।

মনোবিজ্ঞান ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকেও ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরে সুখানুভূতির জন্য দায়ী নিউরোট্রান্সমিটার সেরোটোনিনের ক্ষরণ নির্ভর করে ভিটামিন ডি-র মাত্রার ওপর। এই ভিটামিনের অভাবে সেরোটোনিন নিঃসরণ কমে গিয়ে মানুষ বিষণ্নতা ও অবসাদগ্রস্ততায় ভুগতে পারে। বিশেষত যারা রোদে কম থাকেন, ঘরবন্দি জীবনযাপন করেন, তাঁদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়।

আরও উদ্বেগজনক হলো, সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে ভিটামিন ডি-র ঘাটতির সঙ্গে কিছু মারাত্মক ক্যানসারের বিশেষ করে কোলোরেক্টাল, স্তন ও প্রস্টেট ক্যানসার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। ২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘MDPI’ জার্নালের একটি গবেষণাপত্রে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের চিকিৎসায় ভিটামিন ডি-র সহায়ক ভূমিকার কথা স্বীকৃত হয়েছে। অর্থাৎ, শুধু প্রতিরোধ নয়, রোগ মোকাবিলাতেও ভিটামিন ডি গুরুত্বপূর্ণ।

ভিটামিন ডি ঘাটতি রোধে চিকিৎসকরা প্রতিদিন কিছুটা সময় সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় দুধ, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ, চিজ ও ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করাও উপকারী হতে পারে।

-

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ