শিশুর বিকাশে মায়ের চুমুর বৈজ্ঞানিক রহস্য

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৮ ১৩:১০:১০
শিশুর বিকাশে মায়ের চুমুর বৈজ্ঞানিক রহস্য

সন্তানের গালে মায়ের একটি চুমু , এই দৃশ্য শুধু আবেগঘন নয়, এটি এক প্রকার চিকিৎসাও। বিজ্ঞানের ভাষায়, এটি একটি জৈবিক এবং মানসিক থেরাপি, যা শিশুর মানসিক শান্তি থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়ের চুমু শিশুর শরীরে শুধু ভালোবাসা ছড়ায় না, বরং অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণের মাধ্যমে শিশুর মস্তিষ্কে এক ধরনের নিরাপত্তা ও প্রশান্তির সংকেত পাঠায়। এই হরমোন, যাকে ‘ভালোবাসার হরমোন’ বলা হয়, শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে, মস্তিষ্কের নিউরোনাল সংযোগ বাড়ায় এবং সামগ্রিক মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়।

মায়ের চুমু কীভাবে কাজ করে?

১. অক্সিটোসিনের স্পর্শ

মায়ের চুমু শিশুর এবং মায়ের শরীরে একযোগে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ ঘটায়। এটি মা ও সন্তানের বন্ধন দৃঢ় করে এবং শিশুর মনে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি তৈরি করে। গবেষণা বলছে, এই হরমোনের প্রভাবে শিশুর আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে এবং কান্না বা উদ্বেগ কমে।

২. স্ট্রেস হরমোন হ্রাস

চুমু বা মায়ের আদরের কারণে শিশুদের শরীরে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) এর মাত্রা কমে যায়। এতে শিশু নিজেকে নিরাপদ অনুভব করে। বিশেষ করে মা’র কোল, গায়ের গন্ধ ও হৃদস্পন্দন শিশুকে গর্ভকালীন অবস্থার অনুরূপ এক শান্ত পরিমণ্ডলে ফিরিয়ে নেয়।

৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

বিজ্ঞান বলছে, নিয়মিত মায়ের চুমু বা আদরের মাধ্যমে শিশুর শরীরে অল্প পরিমাণ জীবাণুর সংস্পর্শ ঘটে, যা তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে। তবে এটি কেবল মা এবং শিশুর মধ্যকার জীবাণু বিনিময়ে নিরাপদ; অন্যদের ক্ষেত্রে শিশুকে চুমু দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. ব্যথা উপশমে সহায়ক

২০১৩ সালে ন্যাশনাল ব্রেস্টফিডিং জার্নাল-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, মায়ের আদর বা চুমু শিশুর ব্যথা সহনশীলতা বাড়ায়। বিশেষ করে টিকা দেওয়ার সময় বা পেটব্যথার সময় মায়ের উপস্থিতি ও চুমুর স্পর্শ ব্যথার অনুভূতি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে।

৫. মানসিক ও সামাজিক বিকাশে ভূমিকা

মায়ের নিয়মিত আদর ও চুমু শিশুর মানসিক বিকাশে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। শিশুর আত্মবিশ্বাস ও সামাজিকতা তৈরি হয়, ভাষাগত দক্ষতা বাড়ে এবং ভবিষ্যতে তারা আরও সুখী, আত্মনির্ভর এবং সংবেদনশীল মানুষে পরিণত হয়।

বিজ্ঞান কী বলে?

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল জানায়, মায়ের স্পর্শ শিশুদের মস্তিষ্কে নিউরোনাল কানেকশন বাড়িয়ে শেখার ক্ষমতা উন্নত করে।

মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলা হয়, প্রিম্যাচিউর শিশুদের দিনে মাত্র ১৫ মিনিট আদর করলে তাদের ওজন বৃদ্ধি, ঘুম এবং খাবার গ্রহণে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নতি ঘটে।

মায়ের চুমু শুধুই আবেগ নয়, এটি একধরনের ‘প্রাকৃতিক ওষুধ’। ভালোবাসা, স্নেহ ও নিরাপত্তা মিশ্রিত এই চুমু শিশুর শরীর ও মনের ওপর একযোগে কাজ করে। এটি যেমন মানসিক প্রশান্তি দেয়, তেমনই জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

একটি মায়ের চুমুতে থাকে উষ্ণতা, সুরক্ষা আর নির্ভরতার আশ্বাস। তাই মা’র ভালোবাসা শিশুর প্রথম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যুহ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে মানবিক ও কার্যকর থেরাপিগুলোর একটি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরে প্রতিদিন মিলবে ৫০ লাখ ঘনফুট গ্যাস

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ 'জামালপুর-১'-এ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড... বিস্তারিত