কেন বিড়াল-কুকুর ঘাস খায়, বিজ্ঞান কী বলে?

২০২৫ আগস্ট ০৯ ২১:১৯:৪৯
কেন বিড়াল-কুকুর ঘাস খায়, বিজ্ঞান কী বলে?
ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, পোষা কুকুর বা বিড়াল মাঝেমধ্যে ঘাস খায়। বিষয়টি অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে—বিশেষ করে বিড়ালের ক্ষেত্রে, যাদের খাদ্যতালিকায় সাধারণত মাছ বা মাংসই থাকে। তাহলে আসলে কেন তারা ঘাস খায়?

নিউ ইয়র্কের সিরাকিউসের স্ট্যাক ভেটেরিনারি হাসপাতাল-এর পশুচিকিৎসক ড. জেমি লাভজয়ের মতে, এই আচরণের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। যদিও কুকুর ও বিড়ালের হজমতন্ত্র ঘাসের মতো আঁশযুক্ত উদ্ভিদ ভাঙতে তেমন উপযোগী নয়, তবুও তারা নিয়মিত এমন কাজ করে। ঘাস খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ও দীর্ঘ পরিপাকতন্ত্র সাধারণত তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়, যা বিড়াল-কুকুরের নেই।

অসুস্থতার জন্য নয়, বরং স্বভাবজাত অভ্যাসএকটি প্রচলিত ধারণা হলো—পোষা প্রাণী পেট খারাপ বা বমির উদ্দেশ্যে ঘাস খায়। তবে গবেষণা বলছে, এ ধারণা সবসময় সঠিক নয়।২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ১,৫৭১ জন কুকুর মালিকের মধ্যে ৬৮% জানিয়েছেন, তাদের কুকুর নিয়মিত বা সপ্তাহে অন্তত একবার ঘাস খায়। কিন্তু মাত্র ৮% বলেছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাদের কুকুর অসুস্থতার লক্ষণ দেখিয়েছিল।

২০২১ সালে অ্যানিম্যালস জার্নালে প্রকাশিত দুটি আলাদা জরিপে বিড়াল মালিকদের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। প্রথম জরিপে মাত্র ৬% ও দ্বিতীয়টিতে ৯% মালিক বলেছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাদের বিড়াল অসুস্থ লাগছিল। তবে ঘাস খাওয়ার পর যথাক্রমে ২৭% ও ৩৭% বিড়াল ঘন ঘন বমি করেছে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১% মালিক তাদের বিড়ালকে অন্তত ছয়বার লতাপাতা খেতে দেখেছেন।

চুলের জন্য ঘাস খাওয়া? প্রমাণ নেইঅনেকে মনে করেন, বিড়াল চুল গিললে তা বের করার জন্য ঘাস খায়। তবে গবেষণায় লম্বা চুলওয়ালা ও ছোট চুলওয়ালা বিড়ালের ঘাস খাওয়ার হারে তেমন কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।

স্বভাবের শিকড়ে বন্য পূর্বপুরুষ গবেষকরা জানিয়েছেন, বন্য কুকুর ও বিড়ালেরও ঘাস খাওয়ার প্রবণতা আছে। ধারণা করা হয়, এটি পরজীবী দূর করার একটি স্বভাবজাত পদ্ধতি।

২০০৮ সালের গবেষক দলের মতে, ঘাসে তেমন পুষ্টিগুণ নেই। যদিও টেক্সাস এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন কলেজ-এর ড. লরি টেলার মনে করেন, কিছু প্রাণী হয়তো ভিটামিন বি-এর মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের জন্য লতাপাতা খেতে পারে। তবে সুষম খাদ্য পাওয়া সুস্থ প্রাণীর ক্ষেত্রে এই কারণ সাধারণত প্রযোজ্য নয়।

সতর্কতার পরামর্শড. টেলার বলেন, “যদি পোষা প্রাণী সুস্থ থাকে, সুষম খাদ্য খায় এবং মাঝে মাঝে ঘাস খায়, তাহলে চিন্তার কারণ নেই। তবে যদি অতিরিক্ত খায় বা ঘন ঘন বমি করে, তখন পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।”

ড. লাভজয় জানান, বিড়াল-কুকুরের ঘাস খাওয়া নিয়ে গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে, কারণ এটি খুব কম ক্ষেত্রেই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। তার মতে, বেশিরভাগ সময় প্রাণীরা কেবল স্বাদ, উদ্দীপনা বা পরিবেশ অন্বেষণের জন্য ঘাস খায়।

তবে মালিকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, সব উদ্ভিদ প্রাণীর জন্য নিরাপদ নয়। তাই ঘরে বা আঙিনায় থাকা গাছপালার মধ্যে কোনোটি বিষাক্ত কি না, তা আগে যাচাই করা উচিত।

তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স


জামালপুরে প্রথম বিড়াল প্রদর্শনী, রাজকীয় সাজে মুগ্ধতা

২০২৫ আগস্ট ০২ ২১:১৭:৩৭
জামালপুরে প্রথম বিড়াল প্রদর্শনী, রাজকীয় সাজে মুগ্ধতা
জামালপুর শহরের নিউ কলেজ রোড এলাকায় শনিবার আয়োজন করা হয় বিড়াল প্রদর্শনীর। ছবি : কালের কণ্ঠ

জামালপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী বিড়াল প্রদর্শনী

জামালপুরে প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হলো ব্যতিক্রমী এক বিড়াল প্রদর্শনীর, যেখানে রাজকীয় ভঙ্গিমায় সজ্জিত ছিল অর্ধশতাধিক দেশি ও বিদেশি জাতের বিড়াল। সাদা, ধূসর, কালো কিংবা বিভিন্ন রঙের লোমে ঢাকা ছোট প্রাণীগুলোর চোখেমুখে ছিল কৌতূহল, আচরণে রাজকীয়তা। প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ জাগায় এ আয়োজন।

শনিবার (২ আগস্ট) সকালে শহরের নিউ কলেজ রোড এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ প্রদর্শনী। নানা জাতের বিড়ালের উপস্থিতি প্রদর্শনীটিকে পরিণত করে প্রাণীপ্রেমীদের মিলনমেলায়। কেউ এসেছেন নিজের আদরের বিড়াল নিয়ে, কেউবা এসেছেন শুধুই দর্শনার্থী হিসেবে। কারো চোখ নীল, কারো লোমে বিচিত্র দাগ, কেউ নিছকই দুষ্টুমি করে দর্শকদের আনন্দ দিচ্ছিল।

আয়োজনস্থলে ছিল রঙিন ব্যানার, ক্যাট ফুডের স্টল এবং বিড়ালের স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা বিষয়ে সচেতনতামূলক পোস্টার। আয়োজকদের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণকারী বিড়ালদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, যা প্রদর্শনীর মানবিক দিকটিও তুলে ধরে।

আয়োজক ডা. নাজমুন নাহার জানান, অনেক সময় বিড়ালকে সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই মনোভাব বদলাতে ও মানুষকে সচেতন করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন। তিনি বলেন, “আমরা চাই বিড়াল যেন সঠিকভাবে লালন-পালন পায়। সে বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন চালিয়ে যেতে চাই।”

আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষার্থী শাকিলা জান্নাত বলেন, “আমরা হঠাৎ করেই এখানে এসে এমন আয়োজন দেখতে পেলাম। ভাবিনি জামালপুরে এমন কিছু হবে। খুব ভালো লেগেছে।”

প্রদর্শনীতে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের একজন অংশগ্রহণকারী বলেন, “আমি আমার বিড়ালকে সঙ্গে এনেছিলাম এবং তাকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আগে ভেবেছিলাম বিড়াল বাইরে অশান্ত হবে, কিন্তু এখানে এসে খুব শান্ত ছিল।”

এমন আয়োজন প্রাণীপ্রেমী মানুষের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়ায় প্রাণীদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণের গুরুত্ব সম্পর্কে।

/আশিক


মৃত ৮ মিনিট, জীবনের সন্ধান: এক নারীর অতিলৌকিক অভিজ্ঞতা

২০২৫ আগস্ট ০২ ১৯:৫২:১২
মৃত ৮ মিনিট, জীবনের সন্ধান: এক নারীর অতিলৌকিক অভিজ্ঞতা
ব্রিয়ানা লাফার্টি। ছবি: সংগৃহীত।

বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে বহুকাল ধরেই মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের রহস্য ঘিরে রয়েছে এক গভীর আগ্রহ ও কৌতূহল। সভ্যতার প্রারম্ভ থেকে ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞান এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা ও ব্যাখ্যার বিপরীতে বিতর্ক তুলে ধরেছে। তবে কখনো কখনো বাস্তব জীবনের কিছু বিরল অভিজ্ঞতা এই বিতর্কের কেন্দ্রে এসে দাঁড়ায়— যেমনটি ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী, ব্রিয়ানা লাফার্টির জীবনে। মৃত্যুর মতো এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে ফিরে এসে তিনি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন চেতনা, অস্তিত্ব এবং মানবজীবনের গভীর অর্থ।

ব্রিয়ানা লাফার্টি, বয়স ৩৩, দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন Myoclonus Dystonia নামক একটি জটিল ও প্রাণঘাতী স্নায়বিক রোগে। একপর্যায়ে তার দেহের সব শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা তখন তাকে ‘ক্লিনিক্যালি মৃত’ ঘোষণা করেন। সময়কাল— আট মিনিট। এই আট মিনিটের মধ্যেই ঘটে যায় এমন কিছু, যা তার ভাষায় ছিল ‘জীবনের চেয়েও গভীর এক উপলব্ধি’।

‘আমি তখন আর দেহে ছিলাম না, কিন্তু বেঁচে ছিলাম— আরও বেশি জীবন্ত, আরও বেশি গভীরভাবে সচেতন।’

এভাবেই শুরু করেন ব্রিয়ানা তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা। তার ভাষায়, “আমি অনুভব করলাম আমার আত্মা যেন শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে, অথচ আমি সম্পূর্ণ চেতন এবং গভীর প্রশান্তিতে আচ্ছন্ন। কোনো ব্যথা ছিল না, ভয় ছিল না, বরং ছিল এক বিস্ময়কর স্বচ্ছতা।”

এই অবস্থায় তিনি উপলব্ধি করেন যে মানবজীবন আসলে এক ক্ষণস্থায়ী মায়া, যার অন্তরালে রয়েছে এক উচ্চতর সত্ত্বার উপস্থিতি— যিনি নিঃশর্ত ভালোবাসায় আমাদের রক্ষা করেন। “আমার মনে হয়েছিল, আমি এমন এক বাস্তবতায় প্রবেশ করেছি, যেখানে সময় নেই, তবু সব কিছু নিজ নিজ স্থানে নিখুঁতভাবে সংগঠিত। সবকিছু একসাথে ঘটছিল, কিন্তু অদ্ভুত এক শৃঙ্খলার মধ্যে।”

ব্রিয়ানা জানান, তিনি এমন কিছু সত্ত্বার উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন, যারা মানুষের মতো নয়, তবুও অচেনা নয়। তাদের আচরণ ছিল আশ্বাসদায়ক, এবং তার প্রতি তারা যেন গভীর আত্মীয়তার স্নেহে সাড়া দিয়েছিল।

“মৃত্যু আসলে শেষ নয়, বরং একটি রূপান্তর।”

এটি ব্রিয়ানার অভিজ্ঞতার সারকথা। তিনি বিশ্বাস করেন, মৃত্যুর পরে চেতনা বিলীন হয় না, বরং এক ভিন্ন মাত্রায় প্রবেশ করে— যেখানে চিন্তা ও ইচ্ছাই বাস্তবের রূপ দেয়।

এই অভিজ্ঞতা তার দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। “যে বিষয়গুলো একসময় খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো, এখন আর তা তেমন কিছু নয়। এখন আমার জীবন অর্থবহ, কারণ আমি জানি— আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য আছে।”

আবার নতুন করে জীবন শিখতে হয়েছে

এই অলৌকিক অভিজ্ঞতার পর ব্রিয়ানাকে আবার হাঁটা ও কথা বলা শিখতে হয়েছে নতুন করে। কারণ তার pituitary gland মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাকে এক জটিল ও পরীক্ষামূলক মস্তিষ্ক অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, যা এখন পর্যন্ত সফল বলে বিবেচিত হচ্ছে।

তবে ব্রিয়ানা আরেকবার এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে চান না। তার ভাষায়, “শারীরিকভাবে যে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া আমাকে পেরোতে হয়েছে, তা এতটাই কষ্টকর ছিল যে দ্বিতীয়বার সেই অভিজ্ঞতা হলে হয়তো আমি ফিরতে পারতাম না।”

বিজ্ঞান বনাম অভিজ্ঞতা

ব্রিয়ানার অভিজ্ঞতা এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, যেখানে বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা ও চেতনাবিদ্যার সীমারেখা ঘোলাটে হয়ে যায়। ‘নিউরোসায়েন্স’ এখনো মৃত্যুর পরবর্তী চেতনা বা ‘near-death experience’-এর সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে এই ধরনের ঘটনা আমাদের চেতনার সংজ্ঞা ও মানব অস্তিত্বের গভীরতা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।

ব্রিয়ানা লাফার্টির ঘটনা হয়তো আরও একবার আমাদের মনে করিয়ে দেয়— জীবন শুধু একটি শারীরিক অস্তিত্ব নয়, বরং একটি জটিল চেতনার প্রক্ষেপ, যার উৎস ও গন্তব্য এখনো মানববুদ্ধির ধরাছোঁয়ার বাইরে। হয়তো এই জীবনই যথেষ্ট নয় তা অনুধাবনের জন্য— প্রয়োজন এমন এক অভিজ্ঞতা, যা সীমা ছাড়িয়ে দেয় অস্তিত্বের দিগন্ত।


হুয়াংহে নদীর তীরে এক মহাজাতির উত্থান: চীনা সভ্যতার আদিগন্ত ইতিহাস

২০২৫ আগস্ট ০২ ১৬:১৩:৪৬
হুয়াংহে নদীর তীরে এক মহাজাতির উত্থান: চীনা সভ্যতার আদিগন্ত ইতিহাস

দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক বিস্ময়কর ভূখণ্ড—চীন। পাহাড়, মরুভূমি, নদীনালা আর বিস্তৃত সমভূমির মাঝে হাজার হাজার বছরের এক বর্ণাঢ্য ইতিহাস ধারণ করে আছে এই দেশটি। প্রাচীন চীন কোনো একক রাজ্যের নয়, বরং এক মহাজাতির আত্মপরিচয়, দর্শন ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। আজকের চীন শুধু একটি আধুনিক রাষ্ট্র নয়—এর জন্ম, বিকাশ ও বিস্তার এক মহাকাব্যিক যাত্রা।

হুয়াংহে নদী: সভ্যতার জননী

প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে, পৃথিবীর মানচিত্র তখনো গঠিত হয়নি, নগরায়নও শুরু হয়নি। কিন্তু আজকের চীনের উত্তরাংশে এক নদী—হুয়াংহে, বা ‘হলুদ নদী’—বয়ে চলেছিল। কখনও শান্ত, কখনও করাল; এই নদী ছিল একদিকে মৃত্যুর কারণ, অপরদিকে প্রাণের উৎস। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে ওঠে হুয়াশিয়া নামক সভ্যতা, যেটি চীনের ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতির বীজ রোপণ করে।

গবেষণা বলছে, হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা ন্যাঙ্গাও ও লুয়াংঝু সংস্কৃতির মানুষ কৃষি করত, পশুপালন করত, আর মৃত্তিকা দিয়ে গৃহস্থালির পাত্র বানাতো। তারা ধর্মীয় রীতিতে বিশ্বাস করত এবং সমাজবদ্ধ জীবনযাপন করত। এদের ধাতব অস্ত্র ছিল না, রাজাও ছিল না, কিন্তু ছিল চিন্তা, দর্শন এবং শিল্প।

শিয়া রাজবংশ: কিংবদন্তির ইতিহাস

হুয়াংহে নদীভিত্তিক সভ্যতার ধারাবাহিকতায় চীনের প্রথম কিংবদন্তীতুল্য রাজবংশ ছিল ‘শিয়া’। যদিও এই রাজবংশের কোনো লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তথাপি ‘গ্রেট ইউ’-এর বাঁধ নির্মাণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাহিনী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে। তাকে চীনের প্রথম রাজা হিসেবে স্মরণ করা হয়।

এই পর্যায়ে আকাশপূজা, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ড্রাগনের ধারণা সমাজে গুরুত্ব পেতে শুরু করে। ড্রাগন এখানে ছিল শক্তি, বৃষ্টি ও রাজত্বের প্রতীক। স্বর্গের অনুমোদন ব্যতীত কেউ রাজা হতে পারবে না—এই বিশ্বাস থেকেই জন্ম নেয় "Mandate of Heaven" ধারণা, যা পরবর্তী চীনা রাজতন্ত্রের মৌলিক নৈতিক ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।

সাং রাজবংশ: লিখিত ইতিহাসের শুরু

খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১০৪৬ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী সাং বা শ্যাং রাজবংশ ছিল চীনের প্রথম প্রমাণিত শাসনব্যবস্থা। এই রাজবংশের হাতে গড়ে ওঠে সংগঠিত প্রশাসন, শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও কর ব্যবস্থা। রাজারা নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করত এবং পূর্বপুরুষদের আত্মাকে সম্মান জানাতো।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ছিল অরেকেল বোনস—গরুর হাড় বা কচ্ছপের খোলে খোদাই করা প্রতীক, যা আগুনে গরম করে ফাটলের মাধ্যমে ভবিষ্যদ্বাণী করা হতো। এই প্রতীকগুলোই চীনা ভাষার প্রাচীনতম রূপ জিয়াগুয়ানের সূচনা করেছে। পাশাপাশি সাং রাজবংশ ব্রোঞ্জ প্রযুক্তি এবং যুদ্ধ সংস্কৃতিতে চীনের ভিত মজবুত করে।

ঝৌ রাজবংশ: চীনা দর্শনের অগ্রযাত্রা

খ্রিস্টপূর্ব ১০৪৬ সালে ঝৌদের রাজা উ একটি বিশাল যুদ্ধে সাং রাজবংশকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধ ছিল কেবল সামরিক বিজয় নয়, বরং এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিষ্ঠা। “Mandate of Heaven” ধারণার ওপর ভিত্তি করে ঝৌ শাসকরা স্বর্গীয় অনুমোদনের মাধ্যমে তাদের শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠা করে।

ঝৌ রাজবংশ ছিল ইতিহাসের দীর্ঘতম—প্রায় ৮০০ বছর। এই সময়েই গড়ে ওঠে সমাজ শ্রেণীবিন্যাস (শাসক, কৃষক, কারিগর, ব্যবসায়ী), ধর্মীয় রীতিনীতির পরিশীলন, এবং ৫ উপাদান তত্ত্ব—আগুন, জল, মাটি, ধাতু ও কাঠ। পাশাপাশি সমাজে শুরু হয় দার্শনিক আত্মানুসন্ধান।

আত্মার জন্ম: কনফিউশনিজম ও টাওইজমের বীজ

ঝৌ যুগের শেষার্ধে চীন বিভক্ত হতে থাকে ছোট ছোট রাজ্যে। যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা আর কেন্দ্রীয় শাসনের দুর্বলতার মধ্যেও জন্ম নেয় চিন্তা, দর্শন এবং আত্মপরিচয়ের খোঁজ। এখানেই সূচনা হয় চীনের দুই মহান দার্শনিক ধারা—কনফিউশনিজম এবং টাওইজম—যা আগামী হাজার বছর ধরে চীনের সামাজিক কাঠামো, শাসন ও মূল্যবোধ গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।

সময়ের গভীরে গাঁথা চীনের আত্মপরিচয়

হুয়াংহে নদীর পলিমাটি শুধু চাষযোগ্য জমি তৈরি করেনি, বরং ধারণ করেছে এক জাতির ইতিহাস, দর্শন এবং সাংস্কৃতিক আত্মপরিচয়। শিয়া থেকে ঝৌ—প্রতিটি রাজবংশ, প্রতিটি আবিষ্কার, প্রতিটি বিশ্বাস গড়ে তুলেছে এমন এক চীন, যা সময়ের চেয়ে প্রাচীন, কল্পনার চেয়েও বিস্তৃত।

আজকের আধুনিক চীন যখন অর্থনীতিতে, ভূরাজনীতিতে এবং প্রযুক্তিতে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেয়, তখন তার শেকড় ফিরে যায় সেই প্রাচীন হুয়াংহে নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক নিরব, অথচ প্রবল, সভ্যতায়।


বারমুডা ট্রায়াঙ্গল: রহস্য, ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

২০২৫ আগস্ট ০২ ১১:৫৩:০১
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল: রহস্য, ইতিহাস ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (যাকে ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গলও বলা হয়) উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের একটি কাল্পনিক ত্রিভুজাকার অঞ্চল, যেখানে লোকমুখে বলা হয়ে থাকে যে ৫০টির বেশি জাহাজ এবং ২০টিরও বেশি বিমান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে এই এলাকাকে ঘিরে নানা ঘটনার কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে এবং অদ্ভুতভাবে জাহাজ-উড়োজাহাজ উধাও হয়ে যাওয়ার গল্প জনপ্রিয় সংস্কৃতি ও জনমনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।

অবস্থান ও ভৌগোলিক সীমা

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মূলত উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত একটি অঞ্চলের ধারণাগত নাম। এর সুনির্দিষ্ট সীমানা সর্বজনস্বীকৃত নয়, তবে সাধারণভাবে এই ত্রিভুজের কোণ তিনটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মায়ামি উপকূল, আটলান্টিকের বারমুডা দ্বীপ, এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোর সান জুয়ান। এই বিন্দুগুলোকে যোগ করলে সমুদ্রে একটি প্রশস্ত ত্রিভুজাকৃতি এলাকা গঠিত হয়, যার মোট আয়তন বিভিন্ন হিসাবে প্রায় ১৩,০০,০০০ থেকে ৩৯,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার হতে পারে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কোনো প্রশাসনিক বা সরকারি স্বীকৃত অঞ্চল নয়; যুক্তরাষ্ট্রের ভূগোল নামকরণ বোর্ড এই নামে কোনো স্থানকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং আনুষ্ঠানিক মানচিত্রেও এটির সীমারেখা চিহ্নিত নেই।

Baromuda

ছবি: মানচিত্রেবারমুডা ট্রায়াঙ্গল

ইতিহাস ও গুরুত্বপূর্ণ নিখোঁজ ঘটনা

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যের ইতিহাস উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। তখন থেকেই মাঝে মাঝে এমন প্রতিবেদনের কথা শোনা গেছে যে কিছু জাহাজ সমুদ্রে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে কিংবা কোনো বিপদ সংকেত পাঠানো ছাড়াই হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে বিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকে এই অঞ্চলে একের পর এক নিখোঁজির ঘটনার কাহিনি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং “বারমুডা ট্রায়াঙ্গল” একটি আলোচিত রহস্যে পরিণত হয়। নিম্নে এ পর্যন্ত আলোচিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিখোঁজ ঘটনার তালিকা তুলে ধরা হলো:

এইচএমএস এটলান্টা (১৮৮০): রয়্যাল নেভির প্রশিক্ষণ帆 জাহাজ এটলান্টা (পূর্ব নাম এইচএমএস জুনো) ৩১ জানুয়ারি ১৮৮০ তারিখে বারমুডা থেকে ইংল্যান্ডের ফ্যালমাউথের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর পূর্ণ ক্রুসহ অদৃশ্য হয়ে যায়। ধারণা করা হয় পথিমধ্যে এক প্রবল ঝড়ে জাহাজটি ডুবে যায়, যদিও পরবর্তীতে অনেকেই এটিকে ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় নিখোঁজের অংশ বলে প্রচার করেছিলেন।

ইউএসএস সাইক্লোপ্স (১৯১৮): মার্কিন নৌবাহিনীর কয়লা বহনকারী জাহাজ ইউএসএস সাইক্লোপ্স বার্বাডোস দ্বীপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে মার্চ ১৯১৮ সালে ৩০৬ জন ক্রুসহ রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিল। যুদ্ধকালীন শত্রুদের আক্রমণ, ঝড় অথবা অতিরিক্ত ভারের কারণে জাহাজের কাঠামোগত ভাঙ্গনসহ নানা কারণ অনুমান করা হলেও কোনোটির পক্ষেই দৃঢ় প্রমাণ মেলেনি এবং জাহাজের ধ্বংসাবশেষও আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ক্যারল এ. ডিয়ারিং (১৯২১): পাঁচ-মাস্তওয়ালা বাণিজ্যিক পালতোলা জাহাজ ক্যারল এ. ডিয়ারিং ৩১ জানুয়ারি ১৯২১ তারিখে নর্থ ক্যারোলাইনার কাছাকাছি ডায়মন্ড শোলস অঞ্চলে ধ্বংসাবশেষসহ আটকে থাকতে দেখা যায়, কিন্তু জাহাজটিতে একজনও ক্রু উপস্থিত ছিল না। তদন্তে জলদস্যুতা, নাবিকদের বিদ্রোহ, রাম চোরাচালানসহ নানা সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হলেও কী কারণে জাহাজটি পরিত্যক্ত হয়েছিল তার নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা মেলেনি।

ফ্লাইট ১৯ (১৯৪৫): এটি ছিল পাঁচটি টিবিএম অ্যাভেঞ্জার টর্পেডো বোমারু বিমানের একটি নৌবাহিনীর প্রশিক্ষণ মিশন, যারা ৫ ডিসেম্বর ১৯৪৫ তারিখে ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেল ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করার পর আটলান্টিকের উপর দিক নির্ধারণে বিভ্রান্তিতে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। নৌবাহিনীর তদন্তে ধারণা করা হয় যে দিকভ্রান্ত হয়ে জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে বিমানগুলো সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই বিমানের খোঁজে পাঠানো একটি উদ্ধারকারী PBM মেরিনার উড়োজাহাজও বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়ে নিখোঁজ হয় এবং ১৩ জন উদ্ধারকর্মীরও কেউ জীবিত ফেরত আসেননি।

স্টার টাইগার ও স্টার এরিয়েল (১৯৪৮–১৯৪৯): ব্রিটিশ সাউথ আমেরিকান এয়ারওয়েজের দুইটি যাত্রীবাহী বিমান স্টার টাইগার (৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮) এবং স্টার এরিয়েল (১৭ জানুয়ারি ১৯৪৯) আটলান্টিক উড়ানে চলাকালীন হঠাৎ রেডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। প্রথমটি অ্যাজোরেস থেকে বারমুডাগামী ও দ্বিতীয়টি বারমুডা থেকে জ্যামাইকার পথে ছিল। দুটো বিমানই তাদের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত জ্বালানি নিয়ে উড়ছিল এবং সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটি বা নাবিকদের ভুল দিকচ্যুতি ঘটালে ছোট দ্বীপ লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ত বলে তদন্তকারীরা উল্লেখ করেন। কোনো বিমানটিরই ধ্বংসাবশেষ সন্ধান করা যায়নি।

ডগলাস ডিসি-৩ (১৯৪৮): ২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৮ তারিখে সান জুয়ান (পুয়ের্তো রিকো) থেকে মিয়ামিগামী একটি চার্টার্ড ডগলাস ডিসি-৩ বিমান (নম্বর NC16002) ৩২ জন আরোহীসহ আচমকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমানটি কি কারণে হারিয়ে গেল তা নির্ণয়ের মতো পর্যাপ্ত তথ্য তদন্তকারীরা পাননি, এবং এটিও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে আলোচিত হয়ে আছে।

ছবি: বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সমুদ্রগর্ভে বিলিন হওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ

উপরোক্ত ঘটনাসমূহ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে অনেক নৌযান ও উড়োজাহাজের দুর্ঘটনা বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের সাথে জুড়ে জনশ্রুতিতে স্থান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা লক্ষ্য করেছেন যে বহু ক্ষেত্রে এগুলো প্রকৃতপক্ষে খারাপ আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা মানবিক ভুলের ফল হলেও জনমনে “রহস্য” হিসেবে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাক।

জনপ্রিয় তত্ত্ব ও কল্পনাবারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটনাগুলোর জন্য নানা জনপ্রিয় তত্ত্ব ও কল্পনাপ্রবণ ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে। গণমাধ্যম ও লোককাহিনীতে বারবার উঠেছে এমন কিছু কাল্পনিক তত্ত্ব নিচে উল্লেখ করা হলো:

ভিনগ্রহের প্রাণী (এলিয়েন) কর্তৃক অপহরণ: অনেকের বিশ্বাস, এলিয়েনরা গবেষণার জন্য মানুষ বা যানবাহনকে অপহরণ করে থাকে এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকা এসব ভিনগ্রহবাসীদের ক্রিয়াকলাপের একটি হটস্পট হতে পারে। উড়ন্ত সাজ এবং অদ্ভুত আলো দেখার দাবিও মাঝে মাঝে এই এলাকার সাথে যুক্ত করে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

আটলান্টিসের ডুবে যাওয়া মহাদেশের প্রভাব: কিংবদন্তি মহাদেশ আটলান্টিস আটলান্টিক মহাসাগরে তলিয়ে গেছে বলে যাদের বিশ্বাস, তারা মনে করেন আটলান্টিসের অবশিষ্ট অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বা শক্তির ক্ষেত্র বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটনার জন্য দায়ী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাহামার বিমিনি দ্বীপের উপকূলের রহস্যময় প্রস্তর কাঠামো “বিমিনি রোড” কেউ কেউ আটলান্টিসের সড়ক বলে রটনা করেন, যদিও ভূতত্ত্ববিদদের মতে এটি প্রাকৃতিক গঠন।

টাইম ওয়ার্প বা অন্য মাত্রায় প্রবেশ: কিছু তত্ত্ব অনুযায়ী বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায় সময় ও স্থান বাস্তবতার বিকৃতি ঘটে; অর্থাৎ এখানে এক ধরনের টাইম ওয়ার্প বা সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গমস্থল রয়েছে, যেখানে প্রবেশ করলে জাহাজ-উড়োজাহাজ অন্য কোন কাল-মাত্রায় হারিয়ে যেতে পারে। এমনকি “ভূতুড়ে ত্রিভুজে” প্রবেশ করে ভিন্ন সময়ে পৌঁছে যাওয়ার কাহিনিও কল্পনায় শোনা যায়।

কল্পনা থেকে এনিমেটেড ছবি

অতিপ্রাকৃত বা ভৌতিক শক্তি: ডেভিল’স ট্রায়াঙ্গল নামটিই ইঙ্গিত করে অনেকের ধারণায় এটি কোন শয়তানি বা অতিপ্রাকৃত শক্তির আখড়া। কিছু লেখক দাবি করেছেন এই অঞ্চলে এমন অজানা শক্তি কাজ করে যা কম্পাস বিকল করে দেয়, যন্ত্রপাতি অচল করে দেয় কিংবা মানুষকে বুদ্ধিভ্রষ্ট করে ফেলে। ভূত-পেত্নীর অভিশাপ থেকে শুরু করে সমুদ্রের দানব—এ ধরনের নানা অলৌকিক ব্যাখ্যাও লোকমুখে প্রচলিত।

এই সব তত্ত্বের পক্ষে বাস্তব প্রমাণ না থাকলেও সত্তরের দশকে জনপ্রিয় বই, চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এগুলো ব্যাপক প্রচার পায় এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যকে ঘিরে জনинтерес আরও বাড়িয়ে তোলে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও গবেষণালব্ধ তথ্য

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুসন্ধানে যেসব বাস্তবসম্মত কারণ উঠে এসেছে, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

কম্পাসের চৌম্বক বিচ্যুতি: অনেক নিখোঁজ ঘটনার বর্ণনায় কম্পাস অস্বাভাবিকভাবে ঘোরাফেরা করেছে বলে দাবি করা হয়। আসলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে চৌম্বক উত্তর ও ভৌগোলিক উত্তরের মধ্যে প্রাকৃতিক ভ্রম থাকেই, এবং বারমুডা অঞ্চলেও কম্পাসের দিক কিছুটা পরিবর্তিত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। কিছু পুরনো নাবিক হয়তো এ বিষয়ে কম জ্ঞাত ছিলেন এবং ভুল করে কম্পাসের নির্দেশনা মেনে পথভ্রষ্ট হন। তবে আধুনিক জরিপে ঐ অঞ্চলে কোনো অস্বাভাবিক চৌম্বকীয় অনিয়ম পাওয়া যায়নি।

সাগরের স্রোত (গাল্ফ স্ট্রিম): এই ত্রিভুজাক্ষেত্রের ভেতরে গাল্ফ স্ট্রিম নামের একটি প্রবল সাগরধারা মেক্সিকো উপসাগর থেকে উত্তরমুখী হয়ে প্রবাহিত হয়। একটি নৌযান ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে থাকলে বা ছোট বিমানের সমুদ্রে اضطرকালী অবতরণ ঘটলে এই স্রোত সেটিকে মূল অবস্থান থেকে বহুদূরে টেনে নিয়ে যেতে পারে। ফলে দুর্ঘটনাস্থলের ভুল হিসেবের কারণে পরবর্তীতে ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়।

মানবিক ভুল: সমুদ্র ও আকাশপথে ঘটে যাওয়া বহু দুর্ঘটনার মূল কারণই মানবীয় ভুল বা অবহেলা বলে তদন্তে দেখা গেছে। অভিজ্ঞতার অভাব, ভুল সিদ্ধান্ত, দুর্বল নকশার জাহাজ কিংবা পাইলটের দূর্নিবার জেদ - এসব কারণে খারাপ আবহাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ পথে পাড়ি দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার উদাহরণ আছে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যবসায়ী হার্ভি কোনোভার ১ জানুয়ারি ১৯৫৮ তারিখে ঝড়ের মধ্যে জোর করে নিজের ইয়ট নিয়ে রওনা হলে সেটিও ফ্লোরিডা উপকূলে ডুবে যায়।

প্রচণ্ড আবহাওয়া ও ঝড়: আটলান্টিক মহাসাগরের এই অংশে ট্রপিক্যাল ঘূর্ণিঝড় ও হারিকেন প্রায়শই আঘাত হানে, যা অতীতে হাজারো প্রাণহানি ও জাহাজডুবির কারণ হয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক আবহাওয়া সতর্কতার যুগের আগে, হঠাৎ করে উদয় হওয়া হারিকেনে সতর্কবার্তা ছাড়াই বহু জাহাজ নিমেষে ডুবে যেত। এছাড়া বজ্রঝড় থেকে সৃষ্টি হওয়া আকস্মিক ডাউনড্রাফট বা মাইক্রোবার্স্টও সমুদ্রপৃষ্ঠে বোমার মতো আঘাত হেনে জাহাজ ডুবিয়ে দিতে পারে। ১৯৮৬ সালে Pride of Baltimore নামক জাহাজ এমন এক ভয়ানক প্রবল বায়ুর ধাক্কায় ডুবে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

দৈত্যাকার ঢেউ: সমুদ্রের বুকে খুব কমই হলেও হঠাৎ অত্যন্ত বিশাল আকারের ঢেউ জন্ম নিতে পারে, যাকে রোগ ঢেউ বলা হয়। এই ঢেউ সাধারণ সমুদ্রের তরঙ্গ থেকে বহু গুণ বড় (১০০ ফুট বা তারও বেশি উচ্চতা) হতে পারে এবং শিকারকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে কোনো চিহ্ন অবশিষ্ট না রাখার ক্ষমতা রাখে। বারমুডা অঞ্চলে বহুমুখী ঝড়-ঝঞ্ঝার মিলনক্ষেত্র হওয়ায় এমন ঢেউ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন যে কিছু জাহাজ বা বিমানের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে এমন বিরল প্রকৃতির বিশাল ঢেউ দায়ী থাকতে পারে।

মিথেন গ্যাসের উদ্গিরণ: সমুদ্রতলের নিচে প্রচুর পরিমাণে জমাট বাঁধা মিথেন হাইড্রেট গ্যাস রয়েছে, যা কোনো কোনো সময় হঠাৎ বড় বুদবুদ আকারে পানির মধ্যে মুক্ত হতে পারে। গবেষণাগারে দেখা গেছে, মিথেন গ্যাসের বিস্তর বুদবুদ পানির ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে এবং এর মধ্যে কোনো জাহাজ পড়লে তা হঠাৎ নিমজ্জিত হয়ে যেতে পার। এধরনের গ্যাস উদ্গিরণের ফলে জাহাজডুবি ঘটলে ধ্বংসাবশেষ দ্রুত তলিয়ে যায় বা স্রোতে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে সন্ধান পাওয়া কঠিন হয়। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS) জানিয়েছে যে গত ১৫,০০০ বছরে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এলাকায় এ ধরনের বিশাল মিথেন উদ্গিরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, উপরের কারণগুলো ছাড়াও আরও নানা বাস্তব কারণ (যেমন যান্ত্রিক ত্রুটি, আগুন, আটকে পড়া ইত্যাদি সাধারণ দুর্ঘটনা) অনেক তথাকথিত রহস্যময় ঘটনার নেপথ্যে ছিল। কিন্তু মানুষের মন সাধারণ কারণের বদলে অজানা এবং রোমাঞ্চকর কারণকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে মনে রাখে বলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে জল্পনা কল্পনা দীর্ঘদিন ধরে টিকে ছিল।

রহস্যেরপ্রভাব

বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যের গল্প বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম ও populaire সংস্কৃতিতে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল এবং জনমনে ভীতি ও কৌতূহল দুটোই তৈরি করেছিল।

গণমাধ্যম ও জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে: ১৯৭০-এর দশকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল নিয়ে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে একপ্রকার ক্রেজ সৃষ্টি হয়েছিল। এই সময়ে বিখ্যাত লেখক চার্লস বার্লিৎস ১৯৭৪ সালে The Bermuda Triangle নামে একটি বেস্টসেলার বই প্রকাশ করেন, যা বিশ্বব্যাপী ২০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয় এবং জনসাধারণের কল্পনাশক্তিকে উসকে দেয। জনপ্রিয় টিভি সিরিজ Scooby-Doo কিংবা Wonder Woman-এর এপিসোডে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের প্রসঙ্গ এসেছে, ভিনসেন্ট প্রাইস বর্ণিত ১৯৭৪ সালের তথ্যচিত্র The Devil’s Triangle-এ নানা তত্ত্ব উপস্থাপন করা হয়েছে, এমনকি বারি ম্যানিলো (১৯৮১) ও ফ্লিটউড ম্যাক (১৯৭৪) ব্যান্ডের গানে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের উল্লেখ রয়েছে। এসবের ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্যটি বিশ্বজনীন জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়। পত্র-পত্রিকায়, সিনেমায় এবং সাহিত্যেও এ রহস্যের উল্লেখ বহুবার এসেছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে উদ্দীপনা ও শিহরণ জাগিয়ে তোলে।

জনমনে ভীতি ও কৌতূহল: বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের গল্পগুলি একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর কৌতূহল সৃষ্টি করেছে, তেমনি অনেকের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কও জাগিয়েছে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী জাহাজ বা বিমানে এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ভ্রমণ করবেন যাঁরা, কখনও কখনও তারা অমূলক ভীতিতে ভোগেন। বাস্তবে যদিও এই ত্রিভুজ এলাকার মধ্য দিয়ে নিয়মিত অসংখ্য জাহাজ ও উড়োজাহাজ নির্ঘাতপূর্বক যাতায়াত করছে এবং কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে না, তবু লোককাহিনি এবং মিডিয়ার প্রভাবে মানুষের মনে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ঘিরে এক রহস্যময় বিপদের ধারণা থেকে গেছে। এমনকি আধুনিক যুগে শিশুরাও কখনও কখনও বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা শুনে আতঙ্কিত হয়, ফলে অভিভাবকদের তাদের ভুল ধারণা ভাঙতে হয় বলে শোনা যায়। এসবই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল মিথের গণমনের উপর প্রভাবের উদাহরণ।

পর্যটন ও বাস্তবতা: ভয়ের পাশাপাশি বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পর্যটন সংশ্লিষ্ট কৌতূহলের বিষয়ও হয়ে উঠেছে। অনেক পর্যটক বরং এই রহস্যময় এলাকাকে কাছ থেকে দেখতে আগ্রহী। বাস্তবে আজকের দিনে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ঘিরে কোনো বাস্তব বিপদ না থাকায় ক্রুজ জাহাজ কোম্পানিগুলি নিশ্চিন্তে এই পথ দিয়ে চলাচল করে এবং কিছু পর্যটন প্যাকেজে “বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ট্যুর” বলে আকর্ষণও তৈরি করা হয়। আধুনিক নৌপরিবহন ও বিমান চলাচলের জন্য এই অঞ্চল সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত, তাই ইচ্ছুক পর্যটকরা ভয়ের বদলে রোমাঞ্চের স্বাদ নিতেই এখানে আসেন।

সমসাময়িক দৃষ্টিকোণ

আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের দৃষ্টিতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আর ততটা রহস্যময় নয়, যতটা আগে ভাবা হত। বহু বছরের তদন্ত ও পরিসংখ্যান থেকে বিশেষজ্ঞদের সার্বিক মত হলো:

বিশ্বমানের অন্যান্য সমুদ্রপথের তুলনায় বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে দুর্ঘটনা বা নিখোঁজের ঘটনা সংখ্যাগতভাবে বেশি নয়। মার্কিন নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড স্পষ্টভাবে বলেছে যে এখানে ঘটে যাওয়া রহস্যময় ঘটনাগুলো প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক পরিস্থিতি ও মানবীয় ভুলের সাধারণ ফলাফল – এর পিছনে অলৌকিক কিছু নেই । কোনো সরকারি সংস্থার রেকর্ডে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আলাদা করে বিপজ্জনক এলাকা হিসেবে চিহ্নিত নয় এবং আনুষ্ঠানিক মানচিত্রে এর সীমানা চিত্রিত করা হয় না। আধুনিক জিপিএস ন্যাভিগেশন, উন্নত আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে জাহাজ ও বিমান এখন সমুদ্রে অনেক নিরাপদ এবং নজরদারির মধ্যে চলাচল করে। তাই আগে যেসব ঘটনা রহস্যে ঢেকে ছিল সেগুলোরও অধিকাংশ ব্যাখ্যা উদঘাটিত হয়েছে বা সহজ ব্যাখ্যা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এক সময় যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে ‘মৃত্যুত্রিভুজ’ বলে ভয় করা হত, আজ তা বাস্তবে নির্ঝঞ্ঝাট ও পর্যটনবান্ধব এলাকা – রহস্যের চেয়ে যার গুরুত্ব এখন রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক কিংবদন্তি হিসেবেই বেশি। বিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল হল মানুষের স্মৃতিতে জায়গা করে নেয়া একটি নগরকথা (আর্বান লেজেন্ড), যার পেছনে বাস্তবিক বিশেষত্বের চেয়ে মানুষের ভুল ধারণা এবং গল্প বলার প্রবণতাই বেশি দায়ী।


স্মার্টফোনই এখন আয়ের প্ল্যাটফর্ম: তরুণদের মাসে আয় হাজার ডলার

২০২৫ আগস্ট ০২ ০৮:৫১:৫৭
স্মার্টফোনই এখন আয়ের প্ল্যাটফর্ম: তরুণদের মাসে আয় হাজার ডলার
ছবি: সংগৃহীত

আজকাল স্মার্টফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়—এখন এটি হয়ে উঠেছে এক শক্তিশালী আয়ের উপায়। বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী এখন শুধুমাত্র একটি স্মার্টফোন ব্যবহার করেই মাসে এক হাজার ডলারের বেশি আয় করছেন। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে বাড়ছে ঘরে বসে উপার্জনের সুযোগ।

বিশ্বজুড়ে স্মার্টফোনভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলোর চাহিদা বেড়েছে, যা ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্ম এখন নানা উপায়ে আয় করছে। শুধু ইন্টারনেট সংযোগ আর কিছু নির্দিষ্ট স্কিল থাকলেই আয় সম্ভব।

কীভাবে আয় করছেন তরুণরা?

ফ্রিল্যান্সিং

প্ল্যাটফর্ম: Fiverr, Upwork, PeoplePerHour

কাজের ধরন: কনটেন্ট লেখা, গ্রাফিক ডিজাইন, ভয়েসওভার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট

অ্যাপ ও টুলস: ChatGPT, Canva, Grammarly—সবই মোবাইলেই ব্যবহারযোগ্য

কনটেন্ট ক্রিয়েশন (ইউটিউব ও টিকটক)

ভিডিও সম্পাদনা অ্যাপ: CapCut, InShot, Kinemaster

স্ক্রিপ্ট ও ভয়েসওভার: AI টুলস বা নিজস্ব

কণ্ঠআয়ের উৎস: Google AdSense, স্পনসরশিপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং

Amazon, Daraz, ClickBank-এর প্রোডাক্ট লিংক স্মার্টফোন থেকেই শেয়ার করে আয় করা সম্ভব।

অনলাইন টিউশন ও কোচিং

Zoom বা Google Meet-এর মাধ্যমে ভিডিও ক্লাস নেওয়া যাচ্ছে। কেউ কেউ AI টুল ব্যবহার করে লেসন প্ল্যান তৈরি করছেন এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে ভালো আয় করছেন।

বাস্তব উদাহরণ

মারিয়া ইসলাম নামে এক ফ্রিল্যান্সার জানান, "আমি মোবাইল দিয়েই শুরু করি। প্রথম মাসে ২৮০ ডলার আয় হয়, এখন মাসে ১,০০০ ডলারের বেশি আসে।"মিরপুরের শাওন বলেন, "CapCut দিয়ে মোবাইলে ভিডিও এডিট করে ইউটিউবে দিতাম। এখন মাসে ৮০-৯০ হাজার টাকা আয় হয়।"

ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সজল রহমান বলেন, "স্মার্টফোন এখন একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবসার হাতিয়ার। যিনি জানেন কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তিনিই নিজের বস।"

শুরু করবেন কীভাবে?

১. আপনার দক্ষতা বেছে নিন (যেমন: লেখা, ডিজাইন, কথা বলা)

২. স্মার্টফোনে প্রয়োজনীয় অ্যাপ ডাউনলোড করুন

৩. Fiverr বা Upwork-এ প্রোফাইল তৈরি করুন

৪. নিজস্ব কনটেন্ট তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করুন

৫. প্রতিদিন ২-৩ ঘণ্টা সময় দিলেই শুরু হবে আয়

স্মার্টফোনে সময় নষ্ট না করে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে ঘরে বসেই নিশ্চিত করা সম্ভব একটি সফল ক্যারিয়ার।

/আশিক


কর্ণফুলীর তীরে এক নীরব বিপ্লব: বাংলাদেশের অস্ত্র কারখানা নিয়ে উত্তপ্ত দক্ষিণ এশিয়া

২০২৫ আগস্ট ০১ ১৭:০১:৩৪
কর্ণফুলীর তীরে এক নীরব বিপ্লব: বাংলাদেশের অস্ত্র কারখানা নিয়ে উত্তপ্ত দক্ষিণ এশিয়া

জুলাইয়ের শেষ বিকেলে চট্টগ্রামের বাতাসে যেন ভেসে বেড়াচ্ছিল এক অদৃশ্য উত্তেজনা। পাহাড়ঘেরা পুরনো একটি পরিত্যক্ত টেক্সটাইল মিল—বছরের পর বছর ধরে যেখানে নীরবতা ছিল অবিচল, সেখানে হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে সামরিক যানবাহনের একটি বহর। আশেপাশের মানুষ বুঝতে পারে কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তবে কেউ নিশ্চিত নয় কী ঘটতে যাচ্ছে। যেন হঠাৎ করেই কারো কানে কানে কেউ বলে দিয়েছে—বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে।

মাত্র ৬২ কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমান্ত রেখা। আর এই সীমান্ত ঘেঁষেই গড়ে উঠছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় অস্ত্র নির্মাণ কারখানা, সরাসরি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে। এটি কেবল একটি অস্ত্র কারখানা নয়—এটি এক প্রতীক। এটি হলো আত্মবিশ্বাসের, কৌশলগত স্বাধীনতার, এবং সবচেয়ে বড় কথা, দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুত বদলে যাওয়া ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে বাংলাদেশের নতুন অবস্থানের।

জলিল টেক্সটাইল থেকে প্রতিরক্ষা বিপ্লব

চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী এলাকায় অবস্থিত পুরনো জলিল টেক্সটাইল মিলের ৫৪.৯৯ একর জমি এখন শুধুই স্মৃতির ধ্বংসাবশেষ নয়। এই ভূমি হয়ে উঠেছে একটি সামরিক-শিল্প বিপ্লবের ভিত্তি। জমিটির সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ১১১ কোটি টাকা, কিন্তু সেনাবাহিনী সেটি পাচ্ছে মাত্র ১৭ কোটিতে—টোকেন মূল্যে। অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষকরা একে বলছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার "দ্বিতীয় স্তম্ভ", কারণ এটি দেশকে আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শিল্পের দিকে ধাবিত করছে।

বাংলাদেশ এতদিন ধরে আমদানিনির্ভর অস্ত্র ও নিরাপত্তা নীতিতে চলে এসেছে। এবার নিজস্ব সামরিক শিল্প গড়ার মধ্য দিয়ে এই নির্ভরতার অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম: একটি কৌশলগত অবস্থানের নাম

কারখানার জন্য চট্টগ্রাম নির্বাচিত হওয়া কেবল স্থানগত সুবিধার বিষয় নয়; এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এই অঞ্চল দেশের বাণিজ্যিক, সামুদ্রিক এবং সামরিক কেন্দ্র। নেভাল একাডেমি, রপ্তানিমুখী ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন, মেরিন একাডেমি ও বন্দর অবকাঠামো—সবই এই অঞ্চলে ঘনীভূত। এমন একটি জায়গায় অস্ত্র কারখানা গড়ে উঠা মানেই কেবল যুদ্ধ প্রস্তুতি নয়, বরং সমুদ্রপথে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিজের অবস্থান শক্ত করা।

এই প্রতিযোগিতা এখন কেবল আঞ্চলিক নয়; চীন হাম্বানটোটা বন্দর দখল করে ফেলেছে, ভারত আন্দামানে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বঙ্গোপসাগরে সক্রিয় নৌবাহিনী ঘাঁটি। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ নিজের অবস্থানকে নীরবে পুনঃসংজ্ঞায়িত করছে।

একটি নতুন সামরিক কল্পনাঃ ড্রোন, ইলেকট্রনিকস এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর

এই কারখানা কেবল রাইফেল বা গ্রেনেড তৈরির মতো প্রাথমিক উদ্দেশ্য নয়, বরং উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর সামরিক সরঞ্জাম—ড্রোন, মিলিটারি ইলেকট্রনিকস, আর্মড ভেহিকেল, কন্ট্রোল সিস্টেম ইত্যাদি তৈরির সম্ভাবনা নিয়ে গড়ে উঠছে। এখানেই এসে যাচ্ছে বিদেশি অংশীদারত্বের প্রসঙ্গ—বিশেষ করে তুরস্কের ASELSAN এবং চীনের NORINCO-এর সম্ভাব্য প্রযুক্তিগত ও যৌথ বিনিয়োগ।

অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, বাংলাদেশ এই প্রকল্পে শুধু অস্ত্র কিনবে না, বরং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে নিজস্ব সামরিক উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তুলবে। অর্থাৎ এটি একটি অস্ত্র কারখানা নয়, বরং এক নতুন ভূরাজনৈতিক সক্ষমতার নাম।

দিল্লির ঘুম ছুটে গেছে

এই খবরের প্রতিক্রিয়া ইতোমধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতিতে আলোড়ন তুলেছে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার মাঝে বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্ত ভারতের জন্য একটি অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ। দিল্লির থিংক ট্যাংক ও সামরিক বিশ্লেষকদের ভাষায়, ভারত দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ার ‘বড় ভাই’ হয়ে থাকতে চেয়েছে, কিন্তু আজ বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তান একটি নতুন ‘স্ট্র্যাটেজিক ব্যালেন্স’ তৈরি করছে, যেখানে ভারত একঘরে হয়ে পড়ছে।

এটিকে ভারতীয় কূটনীতির ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন অনেকে—যেখানে সম্মান ও আস্থার জায়গায় বারবার প্রদর্শিত হয়েছে আধিপত্য ও চাপ।

নীরব বাংলাদেশ, শঙ্কিত প্রতিবেশী

বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি। কিন্তু এই ‘নীরবতা’ই যেন হয়ে উঠেছে সবচেয়ে বড় বার্তা। ঢাকায় কেউ উচ্চস্বরে কিছু বলছে না, তবে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও তুরস্কের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে কর্ণফুলীর প্রতিটি নড়াচড়া।

চীন, তুরস্ক ও পাকিস্তানের সম্ভাব্য পর্দার পেছনের উপস্থিতি এবং প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ এই উদ্যোগকে পরিণত করেছে একটি ‘সাইলেন্ট ওয়ার ফ্রন্ট’-এ। কূটনীতির পরিভাষায় একে বলা হয় pre-conflict posture—এক ধরনের অঘোষিত যুদ্ধ প্রস্তুতি।

মিডিয়ার নিরবতা ও আন্তর্জাতিক নজরদারি

ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া যেমন টাইমস নাউ, রিপাবলিক, হিন্দুস্তান টাইমস—সবাই আশ্চর্যজনকভাবে চুপ। কেউ সরাসরি বলছে না কিছু, কেউ বলছে বাংলাদেশ চীনের কৌশলে জড়াচ্ছে, আবার কেউ বলছে, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এতটাই বন্ধুত্বপূর্ণ যে এমন কিছু হবার কথা নয়। কিন্তু এই নিরবতা বিশ্লেষকদের মতে “ভয়ের প্রতিফলন”।

যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, রাশিয়ার এফএসবি ও চীনের MSS—সবাই এখন বাংলাদেশে নতুন কূটনৈতিক ধারা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পে নজর রাখছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি নয়া রেখা আঁকা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের দ্বিধাবিভক্ত জোট ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে।

একটি নীরব বিপ্লবের সূচনা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে পুরনো পরিত্যক্ত এক টেক্সটাইল মিল আর শুধু একটি ঐতিহাসিক জমি নয়—এটি আজ একটি প্রতিরোধের প্রতীক। এখানে গড়ে ওঠা অস্ত্র কারখানা কেবল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নয়, বরং কৌশলগত অবস্থান, কূটনৈতিক শৃঙ্খলা ও ভূরাজনৈতিক মনোভঙ্গির এক মৌলিক রূপান্তরের সূচনা করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই রূপান্তর কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে? বাংলাদেশ কি সফলভাবে কৌশলগত ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবে? নাকি এক সময় এই অস্ত্র কারখানাই পরিণত হবে আঞ্চলিক উত্তেজনার উৎসে?

সত্যিটা হলো—ইতিহাস নীরবতায় গঠিত হয় না, তবে অনেক সময় নীরবতা থেকেই ইতিহাস শুরু হয়।


আকাশ এখন আমাদের: বিমূর্ত ষড়যন্ত্রের ছায়া ভেদ করে বাংলাদেশের নীরব প্রতিরোধ

২০২৫ জুলাই ২৮ ০৯:৩২:৪৯
আকাশ এখন আমাদের: বিমূর্ত ষড়যন্ত্রের ছায়া ভেদ করে বাংলাদেশের নীরব প্রতিরোধ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, বুধবার ঢাকায় বিএএফ বেস বীর উত্তম এ কে খন্দকার-এ বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মহড়া উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। ছবি: ফেসবুক/প্রধান উপদেষ্টা, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

ঢাকার আকাশে সেদিন মেঘ ছিল। কিন্তু সেই মেঘ ছিল না কেবল প্রকৃতির; ছিল রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তরে জন্ম নেওয়া দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের ছায়া, যা নির্জন আলোচিত হয়েছিল রাজধানীর এক নিষ্প্রভ সরকারি ভবনের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে। বঙ্গভবনের ছায়ায় গড়ে ওঠা ওই কক্ষে বসেছিল এক নিঃশব্দ উচ্চপর্যায়ের গোপন বৈঠক—উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একাধিক সাবেক কর্মকর্তা, একাধিক প্রভাবশালী রাজনীতিক এবং এক বিশেষ দূত, যিনি এসেছিলেন দিল্লি থেকে।

টেবিলে ছিল অগোছালো কাগজপত্র, মানচিত্র ও গোপন স্ট্র্যাটেজিক নোট। আলোচনা হচ্ছিল এমন একটি বিষয়ে, যা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের সবচেয়ে সূক্ষ্ম স্তম্ভ—বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা—তাকে কীভাবে ভারতীয় কৌশলগত প্রভাবের আওতায় আনা যায়।

এক দীর্ঘ পরিকল্পনার অলিখিত রূপরেখা

এই ষড়যন্ত্র কোনো হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ঘটনা নয়। বরং একটি দীর্ঘ ১৫ বছরব্যাপী প্রস্তুত করা নীলনকশা, যার প্রকৃত লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সামরিক আধিপত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বাংলাদেশের আকাশসীমাকে একটি ‘সহযোগিতার মোড়কে বাধা দখলদারিত্বে’ পরিণত করা।

২০১০-এর দশকে শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারতের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতার নামে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল বাহিনী—বিমানবাহিনী—কে রাজনৈতিক দয়া ও কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতার বলয়ে ঠেলে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর কঠোর সাংগঠনিক ঐতিহ্যের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানবাহিনীকে শিথিলভাবে ভারতমুখী করে গড়ে তোলা হয়।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে Dhaka Tribune একটি খবর প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল: "Indian Air Chief Visits Bangladesh, Set to Tour Major Bases." খবরটি শুধু সফরের নয়, বরং পুরো নীতির প্রতিফলন—যেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান বাংলাদেশের প্রধান বিমানঘাঁটিগুলো ঘুরে দেখেন, যৌথ মহড়া ও প্রশিক্ষণের নকশা তৈরি করেন, এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কাঠামো পুনর্বিন্যাসের জন্য সুপারিশ করেন।

এই প্রক্রিয়া কোনো দিন-দুপুরে শুরু হয়নি। ২০২১ সালে জয়পুরহাটে অনুষ্ঠিত বিমানবাহিনীর পাসিং আউট প্যারেডে প্রথমবারের মতো ভারতীয় এয়ার চিফ আর. কে. এস. ভাদুরিয়াকে প্রধান অতিথি হিসেবে রাখা হয়। এটি ছিল প্রতীকীভাবে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে আত্মসমর্পণের এক প্রক্রিয়ার সূচনা।

মৈত্রীর নামে নির্ভরতাকে পুঁজি করে কৌশলগত নিঃস্বতা

এই কৌশল শুধু কূটনীতির খাতায় সীমাবদ্ধ ছিল না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম Eurasian Times জানায়—“Historic First: Bangladesh Air Force to Operate From India.” এর অর্থ, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ভারতীয় কমান্ডের অধীনে মহড়ায় অংশ নিতে সম্মত হয়েছে। এর মাধ্যমে বন্ধুত্বের নামে শুরু হয়েছিল একতরফা নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ণ।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিগত এক যুগে একটি আধুনিক যুদ্ধবিমান পর্যন্ত পায়নি। চীন থেকে জে-১০সি অথবা পাকিস্তান থেকে জেএফ-১৭ সংগ্রহের সম্ভাবনা বারবার ‘বাজেটের অজুহাতে’ নাকচ হয়েছে। প্রতিস্থাপনের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে সোভিয়েত যুগের মিগ-২১ বা ৮০’র দশকে কেনা পুরনো চীনা ট্রেনার প্লেন। পাইলটেরা অচল ইঞ্জিনে উড়েছেন, কেউ কেউ ফেরেননি।

এক সাবেক উইং কমান্ডার বলেন, “আমরা প্রতিদিন জানতাম আমাদের হাতে কার্যকর অস্ত্র নেই, তবুও উড়েছি—এই বিশ্বাসে যে, একদিন কেউ আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে। সেই দিন আসেনি, যতক্ষণ না রাজনীতি বদলায়।”

একজন মানুষ, এক সঙ্কল্প, এক প্রতিরোধ

২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ঢেউ উঠছিল, তখন এক নীরব অথচ দূরদর্শী ব্যক্তিত্ব দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন—নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস। ক্ষমতায় এসে প্রথমেই তার সরকার শুরু করে বিমান বাহিনীর কাঠামোগত বিশ্লেষণ। অনুসন্ধানে উঠে আসে বিস্ফোরক সত্য: ১৫ বছরে কোনো আধুনিক যুদ্ধবিমান কেনা হয়নি, বরং ভারতীয় কারিগরদের দিয়ে পুরনো যুদ্ধবিমানের রক্ষণাবেক্ষণ করানো হয়েছে। এমনকি প্রশিক্ষণ বিষয়েও সীমিত ছিল বাংলাদেশি অধিকার।

প্রফেসর ইউনুস বুঝেছিলেন এটি নিছক অবহেলা নয়; এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত, বহুপাক্ষিক সামরিক-রাজনৈতিক নীরব দখলদারিত্ব। তিনি কূটনীতির পরিবর্তে আত্মমর্যাদাকে প্রধান অস্ত্র করেন।

তারপরই ইতিহাসের চাকা ঘুরে দাঁড়ায়।

চুক্তির ছেঁড়াফেঁড়া আর নতুন আকাশনীতি

ভারতের সঙ্গে করা সব যৌথ মহড়ার চুক্তি বাতিল করা হয়। বিমান বাহিনীর নেতৃত্বে আনা হয় সাহসী, চিন্তাশীল ও আধুনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা—যিনি সম্প্রতি চীন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরেছেন। ঘোষণা করা হয় নতুন নীতিমালা:
“বাংলাদেশ এয়ার ফোর্স থাকবে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, কিন্তু দুর্বল নয়।”

কুর্মিটোলা, যশোর ও তেজগাঁও ঘাঁটিগুলোতে বিদেশি প্রবেশ—বিশেষ করে ভারতের—নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধুত্বের নামে যে ঘাঁটিগুলোতে ভারতীয় পতাকা উড়েছিল, সেখানে আবার উড়তে শুরু করে আত্মমর্যাদার প্রতীক জাতীয় পতাকা।

নতুন মিত্রতা, নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের আকাশ আবার মুখ তুলে দাঁড়ায়। শুরু হয় তুরস্ক, পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে সমন্বিত এয়ার ড্রিল। করাচি থেকে যুদ্ধবিমান উড়ে আসে ঢাকায়। চীনের চেংডুর সঙ্গে চুক্তি হয় চতুর্থ প্রজন্মের ফাইটার জেট কেনার বিষয়ে। বাংলাদেশের ক্যাডেটদের নতুন প্রশিক্ষণ মডিউলে নিয়ে আসা হয় বৈশ্বিক কৌশলগত প্রযুক্তি।

দিল্লিতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। এনএসএ, এমইএ, র-এর ঘনঘন বৈঠকে উঠে আসে একটাই কথা—“প্রফেসর ইউনুস ভারতের কোনো কূটনৈতিক ফাঁদে পা দিচ্ছেন না।” এক চীনা কূটনীতিকের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ঐতিহাসিক বাক্যটি—
“বাংলাদেশ এখন আর ভারতীয় ছাতার নিচে নয়। তারা নিজের মেঘে নিজের বৃষ্টি নামাতে শিখেছে।”

ইতিহাসের মুহূর্ত: আকাশে ফিরে আসা আত্মমর্যাদা

কুর্মিটোলা হেলিপ্যাডে নামলেন প্রফেসর ইউনুস। সঙ্গে ছিলেন নতুন বিমান বাহিনী প্রধান। ইউনুসের হাতে ছিল একটি কালো ফোল্ডার, যাতে লেখা—“Bangladesh’s Sky Belongs to Bangladeshis Only.”

ঠিক সেই মুহূর্তে, আকাশ থেকে ভেসে এলো এক গর্জন। করাচি থেকে উড়ে এলো একটি জেএফ-১৭ থান্ডার। কুর্মিটোলার রানওয়েতে তার অবতরণ ছিল এক নতুন ইতিহাসের সূচনা।

রানওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক সাবেক বিমান বাহিনী সার্জেন্ট, কোলে তার ছোট ছেলে। শিশুটি যুদ্ধবিমানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাবা, আমি একদিন ওরকম উড়বো।”
পিতা মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“এখন পারবি। কারণ এই আকাশ আর কারো নয়। এটা তোর, আমার, আমাদের।”

এই মুহূর্তটাই ছিল প্রতীকী। প্রফেসর ইউনুস কোনো যুদ্ধ করেননি। কিন্তু তিনি থামিয়ে দিয়েছেন এক দীর্ঘ ষড়যন্ত্র। অস্ত্র নয়, চেতনা দিয়ে।

বাংলাদেশ এখন জানে, আকাশ শুধু প্রতিরক্ষা নয়—আকাশ মানে গর্ব, মানে স্বাধীনতা, মানে অস্তিত্ব। আর সেই আকাশকে রক্ষা করেছেন যিনি, তিনি এই সময়ের নীরব বিপ্লবের নায়ক—প্রফেসর মোহাম্মদ ইউনুস


"ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে" — ওবামার এক বাক্যে কাঁপলো কূটনীতি 

২০২৫ জুলাই ২৪ ১৯:৩১:২০
"ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যাবে" — ওবামার এক বাক্যে কাঁপলো কূটনীতি 

২০২৩ সালের এক রাজকীয় সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের প্রাসাদোপম কক্ষে আলো ছড়িয়ে পড়েছিল এক ঐতিহাসিক রাষ্ট্রীয় আয়োজনে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। করতালির মধ্য দিয়ে তার আগমন, মুখে এক প্রশান্ত হাসি এবং পাশে ছিলেন বাইডেনের উজ্জ্বল অভ্যর্থনা। এই মুহূর্তটি ছিল কূটনৈতিক সৌজন্যের নিখুঁত উপস্থাপন, যেখানে দুই বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ ফুটে উঠেছিল।

কিন্তু এই জাঁকজমকপূর্ণ কূটনৈতিক আয়োজনের বাইরেই চলছিল আরেকটি নাটক। একই দিনে, হাজার মাইল দূরে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক সাক্ষাৎকারে এমন এক মন্তব্য করেন যা গোটা বিশ্বমাধ্যম এবং কূটনৈতিক মহলে আলোড়ন তোলে।

ওবামার সতর্কতা: ভারত টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে

সাক্ষাৎকারে ওবামার কণ্ঠ ছিল শান্ত, কিন্তু তার বক্তব্য ছিল বিস্ফোরণের মতো। তিনি বলেন, যদি ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের অধিকার রক্ষা না করা হয়, তবে একদিন এই দেশটি টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, "আমি যদি মোদির সামনে বসতাম, তাকে বলতাম সংখ্যালঘুদের অধিকারকে সম্মান করুন। নইলে ভারতের ঐক্য ধরে রাখা যাবে না।"

এই বক্তব্য নিছক রাজনৈতিক নয়, বরং অভিজ্ঞতার আলোকে এক গম্ভীর ভবিষ্যদ্বাণী। ওবামা ও মোদি অতীতে একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছেন, একে অপরকে ব্যক্তিগতভাবে জানেন। ফলে ওবামার এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং আন্তরিক উদ্বেগ হিসেবেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা।

একদিকে হাসির ছবি, অন্যদিকে রাজনৈতিক বিদ্যুৎচমক

সেই সময়ে হোয়াইট হাউসে বাইডেন ও মোদির হাসিমুখে ছবি তোলার দৃশ্য চলছিল। বাইডেন বলছেন, "ভারত ও আমেরিকার ডিএনএ-তে গণতন্ত্র রয়েছে।" মোদির পক্ষ থেকেও ছিল গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশংসা। তিনি বলেন, "গণতন্ত্রকে সফলভাবে পরিচালনা করার উদাহরণ আমরা তৈরি করেছি।"

তবে এই সৌজন্যবাক্যের আড়ালে চলছিল অন্য এক বাস্তবতা। কারণ ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি চিঠি পান, যেখানে ৭৫ জন মার্কিন কংগ্রেস সদস্য মোদির সঙ্গে আলোচনায় মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রেস কনফারেন্সে মোদি বলেন, "ভারতে বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। আমাদের সংবিধান সকল নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত করে।" তবে উল্লেখযোগ্যভাবে, সেখানে কেবল দুজন সাংবাদিককে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। একজন ভারতীয় এবং একজন আমেরিকান, এবং প্রশ্নগুলো ছিল পূর্বনির্ধারিত। তবুও মোদি আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর দেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং প্রশ্নবিদ্ধ কৌশলগত সম্পর্ক

ওবামার মন্তব্য ভাইরাল হয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। এনডিটিভি, সিএনএন, বিবিসি, নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ শীর্ষ গণমাধ্যমগুলো শিরোনাম করে "India risks breaking apart if minority rights not protected: Obama warns"।

ভারতে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন নতুন কিছু নয়। বহু বছর ধরে সাংবাদিকদের দমন, দলিত এবং মুসলিমদের ওপর সহিংসতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদনে। তবে এই প্রথম এত উচ্চপর্যায়ের কোনও ব্যক্তি এত সরাসরি ভাষায় সতর্কবার্তা দিলেন।

ওবামার মন্তব্য শুধু বিতর্ক সৃষ্টি করেনি, বরং একটি নৈতিক প্রশ্ন সামনে এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র কি কৌশলগত স্বার্থে ভারতের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উপেক্ষা করবে, নাকি সত্য প্রকাশের নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে?

ভারতের অভ্যন্তরেও এই মন্তব্য তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। বিজেপি ঘনিষ্ঠ মহল একে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখছে, অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো বলছে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের বাস্তবতা অবশেষে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

এক সন্ধ্যার হাসি আর এক বাক্যের ছায়া

হোয়াইট হাউসের সেই রাজকীয় সন্ধ্যা হয়তো বাইরের চোখে মোদির জন্য ছিল সফল সফর। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সেই সফলতার ভিতরেই লুকিয়ে ছিল এক গভীর সতর্কবার্তা। ওবামার এক বাক্য যেন অন্ধকারে ছোড়া এক আলোকশলাকা, যা বলেছিল গণতন্ত্র শুধু কাগজে নয়, তা রক্ষার জন্য প্রয়োজন সাহস, সহনশীলতা এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা।

২০২৫-এর বাস্তবতা: ওবামার আশঙ্কা কি সত্যি হতে চলেছে?

২০২৫ সালে এসে দেখা যাচ্ছে ভারতের সংখ্যালঘু পরিস্থিতির মৌলিক চিত্র এখনো অপরিবর্তিত। বরং আরও উদ্বেগজনকভাবে, ধর্মীয় বিভাজন, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনা ভারতের ভেতরে-বাইরের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ওবামার সতর্কবাণী কি বাস্তবের দিকে এগোচ্ছে? ভারত কি জাতিগত ও ধর্মীয় উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সত্যিই একটি বিভক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে?

এই প্রশ্ন এখন শুধু ভারতের নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনীতি, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে গেছে।


বাস্তবায়নের পথে তিস্তা প্রকল্প: উত্তরাঞ্চলের প্রাণ ফিরে পাওয়ার শেষ আশা

ফিচার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ২৪ ১৭:৩৬:৪৬
বাস্তবায়নের পথে তিস্তা প্রকল্প: উত্তরাঞ্চলের প্রাণ ফিরে পাওয়ার শেষ আশা
প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত।

উজানে ভারতের হঠাৎ পানি ছেড়ে দেওয়া কিংবা শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রাখার কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে তিস্তা নদী দীর্ঘদিন ধরে এক দুঃসহ অভিশাপ হয়ে আছে। কখনো বন্যা, কখনো খরা, কখনো ফসল হারানো, আবার কখনো গৃহহীন হওয়া, এই নদী আজ এক বিষাদগ্রস্ত স্মৃতির নাম। হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন মাটিচাপা পড়েছে এর তীরে, হারিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জমি, তলিয়ে গেছে জীবনের সম্ভাবনা। ঠিক এমন এক সময়, বহু প্রতীক্ষার পর, বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা মহাপরিকল্পনা। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ চীনের কাছে প্রস্তাবিত ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে এবং চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে চূড়ান্ত চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই প্রকল্পের লক্ষ্য শুধু নদীভাঙন রোধে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন রূপকল্প হিসেবে কাজ করবে। দুই তীরে ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ, ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, ১৭৩ কিলোমিটার তীর সুরক্ষা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা, স্যাটেলাইট শহর, পর্যটন নগরী, শিল্পাঞ্চল, নৌবন্দর, মেরিন ড্রাইভ এবং সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ এক বিস্তৃত পরিকল্পনা এর অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার কৃষিজ উৎপাদন, এক লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান এবং নদীভাঙনে প্রতিবছর হারিয়ে যাওয়া শত শত কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা সম্ভব হবে। ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পানি-অধিকার নিশ্চিত করার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

তিস্তাকে ঘিরে এতদিন ধরে চলে আসা আন্তর্জাতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে চীনের সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৬ সালে চীনের সঙ্গে সমঝোতা সই হলেও দিল্লির আপত্তির কারণে প্রকল্পটি থমকে ছিল। তবে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে চীন সক্রিয় আলোচনায় আছে এবং আগামী অক্টোবরের মধ্যেই প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা প্রস্তুত হবে বলে জানা গেছে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তিস্তাকে ঘিরে গড়ে উঠবে কৃষিভিত্তিক শিল্প, পর্যটন শহর, নদী শাসনের মাধ্যমে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো এবং এক স্বনির্ভর উত্তরাঞ্চল। নদীর নাব্যতা ফিরলে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ কমবে, লবণাক্ত পানির অগ্রযাত্রা রোধ হবে, শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং বর্ষায় বন্যা প্রতিরোধ সম্ভব হবে। জীববৈচিত্র্য ফিরে পাবে স্বাভাবিকতা, নদীর বুকে আবার উড়বে পাখি, সাঁতরাবে মাছ।

এই প্রকল্প কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, এটি কূটনৈতিক বার্তাও বয়ে আনবে। তিস্তা বাংলাদেশের নদী এবং এর উপর বাংলাদেশিদের অধিকার রয়েছে। স্থানীয় মানুষের পরামর্শ এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রকল্পে গণশুনানি ও পরামর্শ সংযুক্ত করা হয়েছে।

তিস্তাপারের মানুষ যারা দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙন, খরা ও বন্যার শিকার হয়ে জীবিকা হারিয়েছেন, তাদের কাছে এই প্রকল্প কেবল উন্নয়ন নয়, এটি এক নতুন জীবনের স্বপ্ন। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা, জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিশ্চিত করতে হবে। উত্তরাঞ্চল আর যেন অবহেলার ছায়াতলে না থাকে, সেটিই হোক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি।

পাঠকের মতামত: