কেন বিড়াল-কুকুর ঘাস খায়, বিজ্ঞান কী বলে?

অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, পোষা কুকুর বা বিড়াল মাঝেমধ্যে ঘাস খায়। বিষয়টি অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে—বিশেষ করে বিড়ালের ক্ষেত্রে, যাদের খাদ্যতালিকায় সাধারণত মাছ বা মাংসই থাকে। তাহলে আসলে কেন তারা ঘাস খায়?
নিউ ইয়র্কের সিরাকিউসের স্ট্যাক ভেটেরিনারি হাসপাতাল-এর পশুচিকিৎসক ড. জেমি লাভজয়ের মতে, এই আচরণের পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। যদিও কুকুর ও বিড়ালের হজমতন্ত্র ঘাসের মতো আঁশযুক্ত উদ্ভিদ ভাঙতে তেমন উপযোগী নয়, তবুও তারা নিয়মিত এমন কাজ করে। ঘাস খাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া ও দীর্ঘ পরিপাকতন্ত্র সাধারণত তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়, যা বিড়াল-কুকুরের নেই।
অসুস্থতার জন্য নয়, বরং স্বভাবজাত অভ্যাসএকটি প্রচলিত ধারণা হলো—পোষা প্রাণী পেট খারাপ বা বমির উদ্দেশ্যে ঘাস খায়। তবে গবেষণা বলছে, এ ধারণা সবসময় সঠিক নয়।২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ১,৫৭১ জন কুকুর মালিকের মধ্যে ৬৮% জানিয়েছেন, তাদের কুকুর নিয়মিত বা সপ্তাহে অন্তত একবার ঘাস খায়। কিন্তু মাত্র ৮% বলেছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাদের কুকুর অসুস্থতার লক্ষণ দেখিয়েছিল।
২০২১ সালে অ্যানিম্যালস জার্নালে প্রকাশিত দুটি আলাদা জরিপে বিড়াল মালিকদের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম। প্রথম জরিপে মাত্র ৬% ও দ্বিতীয়টিতে ৯% মালিক বলেছেন, ঘাস খাওয়ার আগে তাদের বিড়াল অসুস্থ লাগছিল। তবে ঘাস খাওয়ার পর যথাক্রমে ২৭% ও ৩৭% বিড়াল ঘন ঘন বমি করেছে। একই গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১% মালিক তাদের বিড়ালকে অন্তত ছয়বার লতাপাতা খেতে দেখেছেন।
চুলের জন্য ঘাস খাওয়া? প্রমাণ নেইঅনেকে মনে করেন, বিড়াল চুল গিললে তা বের করার জন্য ঘাস খায়। তবে গবেষণায় লম্বা চুলওয়ালা ও ছোট চুলওয়ালা বিড়ালের ঘাস খাওয়ার হারে তেমন কোনো পার্থক্য পাওয়া যায়নি।
স্বভাবের শিকড়ে বন্য পূর্বপুরুষ গবেষকরা জানিয়েছেন, বন্য কুকুর ও বিড়ালেরও ঘাস খাওয়ার প্রবণতা আছে। ধারণা করা হয়, এটি পরজীবী দূর করার একটি স্বভাবজাত পদ্ধতি।
২০০৮ সালের গবেষক দলের মতে, ঘাসে তেমন পুষ্টিগুণ নেই। যদিও টেক্সাস এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন কলেজ-এর ড. লরি টেলার মনে করেন, কিছু প্রাণী হয়তো ভিটামিন বি-এর মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের জন্য লতাপাতা খেতে পারে। তবে সুষম খাদ্য পাওয়া সুস্থ প্রাণীর ক্ষেত্রে এই কারণ সাধারণত প্রযোজ্য নয়।
সতর্কতার পরামর্শড. টেলার বলেন, “যদি পোষা প্রাণী সুস্থ থাকে, সুষম খাদ্য খায় এবং মাঝে মাঝে ঘাস খায়, তাহলে চিন্তার কারণ নেই। তবে যদি অতিরিক্ত খায় বা ঘন ঘন বমি করে, তখন পশুচিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।”
ড. লাভজয় জানান, বিড়াল-কুকুরের ঘাস খাওয়া নিয়ে গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে, কারণ এটি খুব কম ক্ষেত্রেই গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। তার মতে, বেশিরভাগ সময় প্রাণীরা কেবল স্বাদ, উদ্দীপনা বা পরিবেশ অন্বেষণের জন্য ঘাস খায়।
তবে মালিকদের সতর্ক করে তিনি বলেন, সব উদ্ভিদ প্রাণীর জন্য নিরাপদ নয়। তাই ঘরে বা আঙিনায় থাকা গাছপালার মধ্যে কোনোটি বিষাক্ত কি না, তা আগে যাচাই করা উচিত।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
অলিম্পিক স্বর্ণপদক কি সত্যিই খাঁটি সোনা, জানুন ইতিহাস
অলিম্পিকের মঞ্চে সর্বোচ্চ ধাপে দাঁড়িয়ে গলায় স্বর্ণপদক পরার মুহূর্তটি যেকোনো ক্রীড়াবিদের কাছে অমূল্য। তবে আবেগের দিক থেকে যতটাই মূল্যবান হোক না কেন, বাস্তব অর্থমূল্যের বিচারে অলিম্পিক স্বর্ণপদক রুপার পদকের চেয়ে খুব বেশি দামী নয়। এর কারণ হলো, অলিম্পিকের নিয়ম অনুযায়ী স্বর্ণপদক আসলে সম্পূর্ণ সোনা দিয়ে তৈরি নয়।
অলিম্পিক গেমস–এর বিধিমালা অনুযায়ী, স্বর্ণপদকে কমপক্ষে ৯২.৫ শতাংশ রুপা থাকতে হয় এবং তার ওপরে মাত্র প্রায় ছয় গ্রাম খাঁটি সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়। একইভাবে রুপার পদকও ৯২.৫ শতাংশ রুপা দিয়ে তৈরি হয়। অন্যদিকে ব্রোঞ্জ পদক বানানো হয় তামা ও বিভিন্ন ধাতুর সংমিশ্রণে। ফলে স্বর্ণ ও রুপার পদকের উপাদানগত পার্থক্য খুবই সীমিত।
পদক প্রদানের এই রীতি আদতে খুব প্রাচীন নয়। আধুনিক অলিম্পিকের সূচনা হয় ১৮৯৬ সালে গ্রিসের এথেন্সে। তবে সে সময়কার পদকগুলো আজকের পরিচিত স্বর্ণ–রুপা–ব্রোঞ্জ কাঠামোর মতো ছিল না। ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম আসরে বিজয়ীদের স্বর্ণপদক দেওয়া হয়নি।
প্রাচীন অলিম্পিকের ইতিহাস আরও পেছনে গেলে দেখা যায়, প্রায় ২ হাজার ৮০০ বছর আগে, খ্রিষ্টপূর্ব ৭৭৬ সালে শুরু হওয়া প্রাচীন অলিম্পিকে বিজয়ীদের মাথায় পরানো হতো বিজয়ের মুকুট। এসব মুকুট সাধারণত স্থানীয় উদ্ভিদ যেমন লরেল পাতা বা জলপাই শাখা দিয়ে তৈরি করা হতো। তখন পদকের ধারণাই ছিল না।
১৮৯৬ সালের আধুনিক অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো পদক প্রদান শুরু হলেও সেখানে মাত্র দুটি পদক দেওয়া হতো। প্রথম স্থান অধিকারী পেতেন রুপার পদক এবং দ্বিতীয় স্থান পাওয়া প্রতিযোগী পেতেন তামার পদক। তৃতীয় স্থান অর্জনকারীদের জন্য কোনো পুরস্কারই নির্ধারিত ছিল না।
এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে। সে আসরে কিছু খেলায় প্রথমবারের মতো শীর্ষ তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয় এবং তখনই স্বর্ণ, রুপা ও ব্রোঞ্জ পদকের ধারণা চালু হয়। তবে সেবার পদকগুলো ছিল আয়তাকার, যা অলিম্পিক ইতিহাসে একমাত্র ব্যতিক্রম। সেই সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে পদকের পরিবর্তে ট্রফি বা শিল্পকর্মও দেওয়া হয়েছিল।
১৯০৪ সালের পর থেকে স্বর্ণ–রুপা–ব্রোঞ্জ পদকের রীতি স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯০৪, ১৯০৮ ও ১৯১২ সালের অলিম্পিকে দেওয়া স্বর্ণপদক সত্যিকার অর্থেই খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি ছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯১৬ সালের অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হয়নি। যুদ্ধ–পরবর্তী সময়ে সোনার দাম বেড়ে যাওয়ায় খাঁটি সোনার পদক দেওয়া আর সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি পদকের ধাতব গঠন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও, আয়োজক দেশের সাংস্কৃতিক পরিচয় তুলে ধরতে পদকে বিশেষ উপাদান যোগ করার অনুমতি দেওয়া হয়। যেমন, ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে পদকে জেড পাথর ব্যবহার করা হয়েছিল।
একই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে প্রতিটি পদকের মধ্যে যুক্ত করা হয়েছে ঐতিহাসিক আইফেল টাওয়ার–এর একটি ক্ষুদ্র অংশ। এর মাধ্যমে অলিম্পিক পদক কেবল একটি পুরস্কার নয়, বরং আয়োজক শহরের ইতিহাস ও পরিচয়ের প্রতীক হিসেবেও নতুন মাত্রা পেয়েছে।
সূত্র: ব্রিটানিকা
ইন্টারনেট ছাড়াই চলবে গুগল ম্যাপস: জেনে নিন অফলাইন ব্যবহারের নিয়ম
অচেনা কোনো শহর বা নতুন কোনো গন্তব্যে যাওয়ার পথে বর্তমানে গুগল ম্যাপস আমাদের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী। তবে অনেক সময় নেটওয়ার্কের দুর্বলতা কিংবা ইন্টারনেট প্যাকেজ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে মাঝপথে বিপাকে পড়তে হয়। বিশেষ করে দুর্গম এলাকা বা বিদেশ ভ্রমণের সময় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। ব্যবহারকারীদের এই ভোগান্তি দূর করতে গুগল ম্যাপসে রয়েছে ‘অফলাইন’ সুবিধা যা সক্রিয় থাকলে কোনো ধরনের ইন্টারনেট ডাটা ছাড়াই নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকনির্দেশনা পাওয়া সম্ভব।
গুগল ম্যাপসের এই অফলাইন মোড ব্যবহারের পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ ও কার্যকর। এটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীকে প্রথমে স্মার্টফোনের গুগল ম্যাপস অ্যাপে প্রবেশ করে প্রোফাইল আইকনে ট্যাপ করতে হবে। সেখানে থাকা 'অফলাইন ম্যাপস' অপশনে গিয়ে ‘সিলেক্ট ইয়োর ওউন ম্যাপ’ নির্বাচন করতে হবে। এরপর যে নির্দিষ্ট অঞ্চল বা শহরের মানচিত্র ভবিষ্যতে অফলাইনে ব্যবহারের প্রয়োজন তা জুম ইন বা আউট করে সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হলে ডাউনলোড বাটনে প্রেস করলেই সেই এলাকার মানচিত্রটি ফোনের মেমোরিতে জমা হয়ে যাবে। একবার সফলভাবে ডাউনলোড হয়ে গেলে পরবর্তী যেকোনো সময় ইন্টারনেট ছাড়াই ওই এলাকার পথঘাট দেখা যাবে।
গুগল ম্যাপসের এই অফলাইন সংস্করণে গাড়ি চালানোর দিকনির্দেশনা পাওয়ার সুবিধা থাকলেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় রাস্তার রিয়েল-টাইম ট্রাফিক পরিস্থিতি বা জ্যামের খবর জানা সম্ভব হয় না। এছাড়া বিকল্প রুট এবং গণপরিবহনের সঠিক সময়সূচিও এই মোডে দেখা যাবে না। তবে ইন্টারনেট ছাড়াই স্মার্টফোনের জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) সবসময় সক্রিয় থাকে যা ডাউনলোড করা মানচিত্রের ওপর ব্যবহারকারীর সঠিক অবস্থান ও গন্তব্যের দূরত্ব নিখুঁতভাবে দেখাতে পারে।
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এই ফিচারটি আশীর্বাদস্বরূপ কারণ বিদেশের মাটিতে দামী ইন্টারন্যাশনাল রোমিং বা লোকাল সিম কার্ডের ডাটা খরচ না করেই তারা মানচিত্র ব্যবহার করতে পারেন। ভ্রমণের আগেই প্রয়োজনীয় শহরের ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখলে স্মার্টফোনটি অনেকটা পুরোনো আমলের পকেট ম্যাপের মতোই কার্যকর হয়ে ওঠে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে অফলাইন নেভিগেশনের এই সুবিধা কেবল ডেটাই সাশ্রয় করে না বরং জরুরি মুহূর্তে পথ হারানোর ভয় থেকেও ব্যবহারকারীকে সুরক্ষিত রাখে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জিমেইল স্টোরেজ ফুল? টাকা খরচ না করে জায়গা খালি করার ৫ উপায়
বর্তমান যুগে ব্যক্তিগত ও পেশাগত যোগাযোগে জিমেইল একটি অপরিহার্য মাধ্যম। তবে গুগলের নির্ধারিত ১৫ জিবি স্টোরেজ দ্রুত পূর্ণ হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা বিপাকে পড়েন। স্টোরেজ পূর্ণ থাকলে গুরুত্বপূর্ণ ই-মেইলগুলো প্রাপকের কাছে না পৌঁছে ফিরে আসে অথবা অনেক ক্ষেত্রে নতুন মেইল আসাও বন্ধ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গুগল অতিরিক্ত স্টোরেজের জন্য অর্থের বিনিময়ে সাবস্ক্রিপশন নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও সামান্য কিছু কৌশল অবলম্বন করে কোনো খরচ ছাড়াই এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।
জিমেইলের জায়গা খালি করার জন্য প্রথমেই নজর দেওয়া উচিত ট্র্যাশ এবং স্প্যাম ফোল্ডারের দিকে। সাধারণত মুছে ফেলা ই-মেইলগুলো সরাসরি ডিলিট না হয়ে ট্র্যাশ ফোল্ডারে ৩০ দিন পর্যন্ত জমা থাকে যা অযথাই স্টোরেজ দখল করে রাখে। নিয়মিত এই ফোল্ডারগুলো ম্যানুয়ালি খালি করার মাধ্যমে অনেকটা জায়গা তাৎক্ষণিক পুনরুদ্ধার করা যায়। এছাড়া ই-মেইলের বড় অ্যাটাচমেন্টগুলো স্টোরেজ পূর্ণ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। জিমেইলের সার্চ বক্সে বিশেষ কোড ব্যবহার করে ১০ মেগাবাইটের বেশি সাইজের ই-মেইলগুলো চিহ্নিত করে অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো ডিলিট করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বা অপ্রয়োজনীয় নিউজলেটার জিমেইলের প্রমোশন ট্যাবে জমে থেকে ইনবক্সকে ভারী করে তোলে। নিয়মিতভাবে এই ধরনের নিউজলেটারগুলো আনসাবস্ক্রাইব করলে ভবিষ্যৎ স্টোরেজ অপচয় রোধ করা যায়। এছাড়া গুগলের ‘ওয়ান স্টোরেজ ম্যানেজার’ টুলটি ব্যবহার করে এক নজরে ড্রাইভ, ফটোস এবং জিমেইলের বড় ফাইলগুলো দেখে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। বড় সাইজের ছবি বা ভিডিও সরাসরি মেইলে না পাঠিয়ে গুগল ড্রাইভের লিংক শেয়ার করাও স্টোরেজ সাশ্রয়ের একটি আধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে জিমেইলের স্টোরেজ পূর্ণ হওয়া মানেই টাকা খরচ করে নতুন মেমোরি কেনা নয় বরং ডিজিটাল হাইজিন বা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাই এর মূল সমাধান। নিয়মিত ইনবক্স পরিষ্কার রাখা এবং ক্লাউড স্টোরেজের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা বছরের পর বছর কোনো চার্জ ছাড়াই জিমেইলের নিরবচ্ছিন্ন সেবা উপভোগ করতে পারবেন। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে কেবল স্টোরেজই বাঁচবে না বরং জিমেইলের গতি ও কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পাবে।
মানুষকে ‘ভিন্ন জগতে’ নেওয়া ৬টি প্রাণী
মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে এমন সব উপাদান ব্যবহার করে আসছে, যা মনের অবস্থা, অনুভূতি ও ইন্দ্রিয়কে সাময়িকভাবে বদলে দিতে পারে। এ ধরনের সাইকোঅ্যাকটিভ বা মন-পরিবর্তনকারী রাসায়নিকের সবচেয়ে পরিচিত উৎস হলো উদ্ভিদ। তবে উদ্ভিদের বাইরেও প্রকৃতিতে এমন কিছু প্রাণী রয়েছে, যাদের দেহে বা নিঃসৃত পদার্থে থাকা রাসায়নিক মানুষের চেতনায় অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এসব প্রাণীজাত উপাদান কখনো বিনোদন, কখনো আধ্যাত্মিক অনুশীলন, আবার কখনো ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো কোনো প্রাণী নিজস্ব বিপাকক্রিয়ার ফল হিসেবে এসব রাসায়নিক তৈরি করে, যা সাধারণত শিকারি প্রতিরোধ বা রোগ প্রতিরোধে কাজে লাগে। আবার কিছু প্রাণীর শরীরে এই রাসায়নিক জমা হয় তাদের খাদ্যের মাধ্যমে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এসব পদার্থের অপব্যবহার মারাত্মক এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
‘স্বপ্নের মাছ’ স্যালেমা পোরজি
ভূমধ্যসাগর ও পূর্ব আটলান্টিক অঞ্চলে পাওয়া যায় স্যালেমা পোরজি নামের সামুদ্রিক মাছটি, যাকে অনেকেই ‘ড্রিম ফিশ’ বা ‘নাইটমেয়ার ফিশ’ বলে থাকেন। কিছু ঐতিহাসিক বিবরণে দাবি করা হয়, প্রাচীন রোমানরা এর মন-পরিবর্তনকারী প্রভাবের কথা জানত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই মাছ খেলে কোনো সমস্যা হয় না, তবে কিছু বিরল ঘটনায় তীব্র দৃশ্য ও শব্দজনিত বিভ্রম দেখা গেছে, যাকে বলা হয় ইকথিওঅ্যালেইনোটক্সিজম। কেন এমন হয়, তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়।
পাফার ফিশ: মারাত্মক বিষ, তবু আকর্ষণ
বিশ্বজুড়ে পাওয়া পাফার ফিশের শরীরে থাকে টেট্রোডোটক্সিন নামের শক্তিশালী স্নায়ুবিষ। ভুলভাবে খেলে এটি পক্ষাঘাত বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তবু জাপানে প্রশিক্ষিত শেফরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ‘ফুগু’ নামে এই মাছ পরিবেশন করেন। সামান্য বিষাক্ত অংশ অনেকের মধ্যে হালকা উচ্ছ্বাস বা অবশ ভাব তৈরি করে, যদিও ঝুঁকি থেকেই যায়।
সোনোরান মরুভূমির ব্যাঙ ও ‘গড মলিকিউল’
উত্তর মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে পাওয়া সোনোরান ডেজার্ট টোডের দেহনিঃসৃত পদার্থে রয়েছে ৫-মিও-ডিএমটি নামের শক্তিশালী হ্যালুসিনোজেন। কিছু আধুনিক আধ্যাত্মিক গোষ্ঠী এটিকে ‘গড মলিকিউল’ নামে অভিহিত করে। তবে এই পদার্থ শরীরে প্রবেশ করলে গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং প্রাণীটির সংরক্ষণ নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।
সাপের বিষ: উচ্ছ্বাস না মৃত্যু
কিছু দেশে এলাপিড গোত্রের সাপের বিষ অল্প মাত্রায় চেতনা পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের ঘটনা শোনা যায়। যদিও সাময়িক উচ্ছ্বাস বা ব্যথা কমার অনুভূতির কথা বলা হয়, বাস্তবে সাপের বিষ অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়।
বিচ্ছুর বিষের ভয়ংকর আকর্ষণ
দক্ষিণ এশিয়ার কিছু এলাকায় বিচ্ছুর বিষ সস্তা বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এই বিষ তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টি করার পর বিভ্রম বা স্বপ্নময় অনুভূতির জন্ম দিতে পারে বলে দাবি করা হয়। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ক্যালিফোর্নিয়া হারভেস্টার পিঁপড়া ও আদিবাসী আচার
উত্তর আমেরিকার কিছু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক আচার-অনুষ্ঠানে ক্যালিফোর্নিয়া হারভেস্টার পিঁপড়ার বিশেষ ভূমিকা ছিল। শত শত পিঁপড়া গিলে ‘স্বপ্ন-সহকারী’ পাওয়ার বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। গবেষকরা মনে করেন, এসব অভিজ্ঞতার পেছনে বিষের প্রভাবের পাশাপাশি দীর্ঘ উপবাস ও আচারিক পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রাণী ও তাদের রাসায়নিক নিয়ে কৌতূহল বৈজ্ঞানিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তব জীবনে এগুলোর ব্যবহার বা অপব্যবহার অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সচেতনতা ও গবেষণাই হতে পারে এসব বিস্ময়কর কিন্তু বিপজ্জনক প্রাকৃতিক উপাদান বোঝার নিরাপদ পথ।
আজও টিকে থাকা ছোট রাজতন্ত্রগুলোর অজানা গল্প
বিশ্বের রাজতন্ত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থা বিশ শতকে ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়ে এবং তাদের জায়গায় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তবুও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখনো বেশ কিছু ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক একক রয়েছে যেখানে রাজপরিবার বা বংশগত শাসকের উপস্থিতি বজায় আছে। কোথাও শাসক জনগণের দ্বারা নির্বাচিত, আবার কোথাও ঐতিহ্যগতভাবে নির্দিষ্ট বংশ থেকে মনোনীত হন। এখানে বিশ্বের ছোট ছয়টি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ওয়ালিস ও ফুটুনা: ফরাসি অঞ্চলের ভেতরে তিনটি ঐতিহ্যবাহী রাজত্ব
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ওয়ালিস ও ফুটুনা দ্বীপপুঞ্জ মাত্র ১৪০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি ফরাসি ওভারসিজ কালেক্টিভিটি হলেও এর ভেতরে তিনটি ঐতিহ্যগত রাজত্ব এখনো সক্রিয় রয়েছে। ফরাসি সরকার এখানে একজন প্রশাসক নিয়োগ করলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠী নিজস্ব প্রথা অনুযায়ী রাজা বা প্রধান নির্বাচন করে থাকে। ওয়ালিস দ্বীপের শেষ রাজা কাপেলিয়েল ফাউপালা ২০০৮ সালে সিংহাসনে বসেন এবং ২০১৪ সালে স্থানীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে পদচ্যুত হন। তাকুমাসিভা বংশ ১৭৬৭ সাল থেকে এ অঞ্চলে শাসন করছে, যদিও ১৮১৮ থেকে ১৮২০ পর্যন্ত কুলিটেয়া বংশ স্বল্প সময়ের জন্য ক্ষমতায় ছিল। ফুটুনা দ্বীপে দুটি স্বতন্ত্র প্রধানতন্ত্র রয়েছে সিগাভে এবং তুয়া। সিগাভের বর্তমান রাজা পোলিকালেপো কোলিভাই এবং তুয়ার চার বছর শাসকশূন্য থাকার পর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে পেটেলো সি এখানকার রাজা নির্বাচিত হন।
ভুটান: নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র থেকে গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে
হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ভুটান ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি বৌদ্ধ রাজত্ব। বিশ শতকের শেষ ভাগ পর্যন্ত দেশটি একটি সম্পূর্ণ নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র হিসেবে পরিচালিত হতো। আইন ব্যবস্থা, কোড বা আলাদা বিচারিক কাঠামো সবই রাজাধিরাজের সিদ্ধান্তনির্ভর ছিল। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক তাঁর স্বেচ্ছা উদ্যোগে কিছু ক্ষমতা ত্যাগ করেন এবং গণতন্ত্রায়নের পথ উন্মুক্ত করেন। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন সম্প্রচার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অনুমতি দেওয়াও এই পরিবর্তনেরই অংশ।
টোঙ্গা: প্রশান্ত মহাসাগরের শতবর্ষী সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
দক্ষিণ-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের ১৭০টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত টোঙ্গা ১৮৭৫ সাল থেকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। এর মোট আয়তন মাত্র ৭৪৮ বর্গকিলোমিটার হলেও টোঙ্গার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সম্রাজ্ঞী সালোতে টুপো তৃতীয় ১৯১৮ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শাসন করেন এবং তাঁর মর্যাদাপূর্ণ আচরণে জনগণ তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। ১৯৫৩ সালে ব্রিটেনের রানী এলিজাবেথ দ্বিতীয়ের অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও খোলা রথে বসে উৎসব উদযাপনে অংশ নেওয়া তাঁর দৃঢ়তা এবং আন্তরিকতা জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ।
ব্রুনাই: তেলসমৃদ্ধ ইসলামি সুলতানাত
বর্নিও দ্বীপের উত্তরাংশে অবস্থিত ব্রুনাই দারুসসালাম ৫৭৬৫ বর্গকিলোমিটারের একটি ইসলামি সুলতানাত। সুলতান দেশটির রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান উভয় পদেই অধিষ্ঠিত। দীর্ঘ শতাব্দী ব্রিটিশ রক্ষণশীলতার অধীনে থাকার পর ১৯৮৪ সালে ব্রুনাই স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে সুলতান ক্রমে কঠোর ইসলামি মূল্যবোধ অনুসরণের আহ্বান জানান এবং ২০১৪ সালে দেশটি শরিয়াভিত্তিক ফৌজদারি আইন কার্যকর করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে।
লেসোথো: পর্বতমালা বেষ্টিত আফ্রিকার একটি ছোট রাজত্ব
লেসোথো ৩০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যা সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বারা বেষ্টিত। উনবিংশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ কলোনি এই অঞ্চলকে দখল করলে সোটো জনগোষ্ঠী অস্ত্রধারণ করে স্বাধীনতা রক্ষায় লড়াই করে এবং ১৮৮০ থেকে ১৮৮১ সালের গান যুদ্ধ দেশটিকে আবার ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে নিয়ে যায়। এই বিশেষ প্রশাসনিক ব্যবস্থা লেসোথোকে দক্ষিণ আফ্রিকার অন্তর্ভুক্তির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ১৯৬৬ সালে দেশটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
এসওয়াতিনি: ঐতিহ্য, সম্পদ এবং দারিদ্র্যের বৈসাদৃশ্য
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী এসওয়াতিনি প্রায় ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি রাজতন্ত্র। এর বর্তমান শাসক রাজা মসোয়াতি তৃতীয় প্রয়াত রাজা সোবুজা দ্বিতীয়ের প্রায় ৭০ স্ত্রীর মধ্যে একজনের সন্তান। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তাঁর স্ত্রীর সংখ্যা ছিল ডজনেরও বেশি। রাজপরিবারের বিলাসী জীবনযাত্রা সাধারণ মানুষের বাস্তবতার সঙ্গে প্রবল বিরোধ সৃষ্টি করে কারণ দেশে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং এইচআইভি সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। গবাদিপশু এখানে শুধু খাদ্য বা পরিশ্রমের উৎস নয় বরং সম্পদের প্রতীক এবং বিবাহের সময় কন্যাদায় হিসেবে গরু দেওয়া হয়। লুদজিদজিনিতে অবস্থিত রাজকীয় গ্রাম এবং পবিত্র গবাদিপশুর খোঁয়াড় এসওয়াতিনির ঐতিহ্যবাহী সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু।
সূত্র: ব্রিটানিকা
পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি কারা? জানুন ভয়ংকর তথ্য
১৯৬৩ সালে আলফ্রেড হিচকক নির্মাণ করেন তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম বিখ্যাত থ্রিলার দ্য বার্ডস। ছবিতে দেখানো হয়, যদি হঠাৎ অসংখ্য পাখি একযোগে কোনও উপকূলীয় শহরকে আক্রমণ করে, তবে কী ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। সিনেমাটি পুরোপুরি কল্পকাহিনি নয়। ১৯৬১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাপিটোলা শহরে ঘটে যাওয়া এক রহস্যময় ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই ছবিটির নির্মাণ। সে সময় সুটি শিয়ারওয়াটার প্রজাতির হাজারো পাখি বিষাক্ত ডায়াটমে আক্রান্ত অ্যাঙ্কোভি খেয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বাড়িঘরের ছাদে আছড়ে পড়ে, রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মৃতদেহ। এই অদ্ভুত ঘটনাই পরবর্তীতে হিচককের কল্পনাকে উসকে দেয়।
আজও দ্য বার্ডস বা দ্য হ্যাপেনিং এর মতো চলচ্চিত্রে প্রকৃতির হঠাৎ প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠার কাহিনি দেখা যায়। কিন্তু সত্য হলো, বাস্তব জীবনেও পাখির আক্রমণ কখনো কখনো মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে, এলাকা রক্ষা ও ছানাদের সুরক্ষার বিষয়টি পাখিদের কাছে অত্যন্ত সংবেদনশীল। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে কিছু প্রজাতির পাখি এমনভাবে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে যে তা মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলে দেয়।
ক্যাসোয়ারি: পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি
অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনির ঘন বনে বসবাসকারী ক্যাসোয়ারিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক পাখি বলা হয়। উড়তে না পারা এ পাখির পায়ের ভেতরের আঙুলে থাকে লম্বা ছুরির মতো ধারালো নখ। এই নখের এক আঘাতে মানুষ পর্যন্ত মারা যেতে পারে। ক্যাসোয়ারি ঘণ্টায় প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে, আর কৌতূহলবশত মানুষের কাছে ঘন ঘন চলে আসে।
ক্যাসোয়ারির আক্রমণ খুব বেশি ঘটে না, তবে সাধারণত হয় খাবারের লোভে। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক পর্যটককে ক্যাসোয়ারি লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়, যদিও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ঘটে ১৯২৬ সালে, যখন ক্যাসোয়ারি শিকারে যাওয়া এক কিশোরকে পাখিটি মাটিতে ফেলে তার তীক্ষ্ণ নখ দিয়ে জুগুলার শিরা কেটে ফেলে।
অস্ট্রিচ: দানবাকার পাখি, ভয়ংকর লাথির শক্তি
আফ্রিকার তৃণভূমিতে বসবাসকারী উটপাখি বিশ্বের সবচেয়ে বড় জীবিত পাখি। পুরুষ উটপাখির উচ্চতা ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, ওজন ১৫০ কেজির বেশি। তারা ঘণ্টায় প্রায় ৭২ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে। তবে শত্রুর মুখোমুখি হলে উটপাখি ভয়ংকর লাথি মারতে সক্ষম, যা বড় শিকারী প্রাণীকেও মেরে ফেলতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উটপাখির আক্রমণ ঘটে মানুষের উত্তেজনা বা প্ররোচনার কারণে। ১৯৮১ সালে বিখ্যাত আমেরিকান গায়ক জনি ক্যাশ নিজ বাড়ির কাছে হাঁটার সময় একটি আক্রমণাত্মক উটপাখির মুখোমুখি হন। পাখিটি তার পেটে ধারালো নখ দিয়ে আঘাত করে—সৌভাগ্যবশত শক্ত বেল্ট বাকলের কারণে প্রাণঘাতী ক্ষতি হয়নি।
ইমু: দ্রুত দৌড়বিদ কিন্তু বিপজ্জনক প্রতিরক্ষক
ইমু ক্যাসোয়ারির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। প্রায় ৫০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে, তবে কোণঠাসা হলে ভয়ংকর লাথি দিতে সক্ষম। ইমুর আক্রমণে মানব মৃত্যুর ঘটনা প্রায় নেই বললেই চলে, তবে চিড়িয়াখানা ও খামারে ইমুর আক্রমণে আহত হওয়ার ঘটনা বহুবার নথিবদ্ধ হয়েছে। ২০০৯ সালে এক বছরেই বিশ্বজুড়ে ১০০টিরও বেশি ইমু আক্রমণের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়।
ল্যামারগায়ার: আকাশে ভাসমান অস্থিখাদক শকুন
হিমালয় থেকে আফ্রিকার পাহাড়ি অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ল্যামারগায়ার বা দাড়িওয়ালা শকুন তাদের অনন্য খাদ্যাভ্যাসের জন্য পরিচিত। এরা বড় হাড় আকাশ থেকে পাথরের ওপর ফেলে ভেঙে ভেতরের মজ্জা খায়। আক্রমণাত্মক আচরণ মানুষের প্রতি খুব কম দেখা গেলেও প্রাচীন গ্রিক নাট্যকার এস্কাইলাসকে নাকি এমন একটি পাখি কচ্ছপ ফেলে ভুলবশত হত্যা করেছিল—যদিও আধুনিক বিশেষজ্ঞরা এটিকে কিংবদন্তি বলেই মনে করেন।
প্যাঁচা: নীরব শিকারি, ভয়ংকর প্রতিরক্ষামোড
প্যাঁচা সাধারণত লাজুক হলেও বাসা বা ছানার সুরক্ষায় অস্বাভাবিক আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেট-হর্নড ও বার্ড প্যাঁচার আক্রমণের বহু ঘটনা রয়েছে। ২০১২ সালে সিয়াটলে একাধিক মানুষ একই গ্রেট-হর্নড প্যাঁচার আক্রমণের শিকার হন। ওরেগনে এক দৌড়বিদের মাথায় বারবার আঘাত করে আরেকটি প্যাঁচা।
গ্রেট-হর্নড প্যাঁচার টালন বা নখর ৫০০ পিএসআই শক্তিতে চাপ দিতে পারে, যা গার্ড ডগের কামড়ের সমান। আক্রমণের সময় তারা সাধারণত মানুষের মাথা ও মুখ লক্ষ্য করে।
প্যাঁচা-সম্পর্কিত সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে উত্তর ক্যারোলিনার একটি হত্যা মামলা, যেখানে দাবি করা হয় যে এক নারীর মাথায় প্যাঁচার আঘাত থেকে শুরু হওয়া দুর্ঘটনাতেই তার মৃত্যু ঘটে।
বাস্তবতা বনাম প্রচারণা: টাইটানিক রহস্য উন্মোচন
বিশ্বের অন্যতম বড় সামুদ্রিক দুর্ঘটনা টাইটানিক ডুবে যাওয়ার পরই “আনসিঙ্কেবল” বা ‘অডুবিত’ জাহাজ–সংক্রান্ত গল্পটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়। কিন্তু জাহাজটি ডুবে যাওয়ার আগেও কি সেটিকে সত্যিই অডুবিত বলা হয়েছিল? ইতিহাসের দলিল-দস্তাবেজ বলছে, হ্যাঁ যদিও বিষয়টি ছিল অনেকটা প্রচারণার অংশ, নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের আস্থার ব্যাপারে।
টাইটানিক নির্মাণ করেছিলেন বিখ্যাত ডিজাইনার থমাস অ্যান্ড্রুস। ৫০ হাজার টনেরও বেশি ওজনের এই জাহাজটিকে তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ও নিরাপদ যাত্রীবাহী জাহাজ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল। জাহাজটির প্রচারণা ও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বহু প্রতিবেদনে এটিকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ‘অডুবিত’ বলে দাবি করা হয়েছিল। সেই দাবি এতটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে যে জাহাজ ডোবার মুহূর্তেও অনেক যাত্রী আতঙ্কিত হননি।
জাহাজ ডোবার সময়ও হোয়াইট স্টার লাইনের একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্কিন কংগ্রেসকে জানিয়েছিলেন, প্রথমে তিনি টাইটানিক ডুবছে—এই খবরই বিশ্বাস করতে পারেননি, কারণ তার ধারণা ছিল জাহাজটি অডুবিত।
নিরাপত্তা নকশাই জন্ম দিল ‘অডুবিত’ তকমা
টাইটানিককে অডুবিত মনে করার প্রধান কারণ ছিল জাহাজটির অত্যাধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। এর হালের ভেতরে ছিল ১৬টি বিশাল ওয়াটারটাইট কম্পার্টমেন্ট, যেগুলোর দরজা একটিমাত্র সুইচ টিপে বন্ধ করে ফেলা যেত। ধারণা ছিল, জাহাজের কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই কম্পার্টমেন্টগুলো খুব দ্রুত সিল করে দিলে জাহাজ ভেসে থাকতে পারবে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নকশায় ত্রুটি ছিল। কম্পার্টমেন্টগুলো উপরের দিকে সম্পূর্ণ সিল করা ছিল না, ফলে আইসবার্গে ধাক্কা লাগার পর পানি এক কম্পার্টমেন্ট থেকে পরেরটিতে গড়িয়ে পড়ে পুরো জাহাজকে ডুবিয়ে দেয়।
বিলাসিতা, প্রচারণা এবং ট্র্যাজেডির পর জন্ম নেওয়া একটি ‘মিথ’
ডুবির আগ পর্যন্ত টাইটানিকের মূল আকর্ষণ ছিল এর বিলাসবহুল কেবিন, বিশাল আকার ও অভিজাত সুবিধা। যাত্রীরা এটি বেছে নিয়েছিলেন নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং এর আভিজাত্যের জন্য। সংবাদমাধ্যমেও জাহাজটির বিলাসিতা নিয়ে বেশি লেখা হতো, নিরাপত্তা নিয়ে নয়।
জাহাজ ডোবার পরই ‘আনসিঙ্কেবল’ তকমাটি যেন নাটকীয়তা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। অথচ বাস্তবতা হলো, জাহাজটিকে সম্পূর্ণ অডুবিত বলা হলেও, সেই দাবি ছিল অতিরঞ্জিত। তবে এটাও সত্য প্রচারণা, বিজ্ঞাপন ও সংবাদ প্রতিবেদনে টাইটানিককে ‘অত্যন্ত নিরাপদ’ বলা হয়েছিল বারবার।
টাইটানিক দুর্ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, প্রকৃতিকে অবমূল্যায়ন করার সুযোগ নেই। জাহাজটি অডুবিত এই আত্মবিশ্বাসই অনেককে দেরিতে লাইফবোটে উঠতে বাধ্য করেছিল এবং বাড়িয়েছে প্রাণহানির সংখ্যা।
সূত্র: ব্রিটানিকা
শীতে সাদা হয়ে যায় যে সাত প্রাণী, জানুন তাদের রহস্য
উত্তর গোলার্ধে শীত নেমে আসতেই প্রকৃতিতে ঘটে বিস্ময়কর এক পরিবর্তন। বরফের সঙ্গে মিশে যেতে কিছু প্রাণী বাদামি বা ধূসর রঙ ত্যাগ করে হয়ে ওঠে একেবারে সাদা। গ্রীষ্মে যাদের দেখা যায় সাধারণ রঙে, শীতে তারাই অল্প সময়ে রূপ নেয় বরফসাদা আচ্ছাদনে। যদিও আর্কটিক অঞ্চলের অনেক প্রাণী সারাবছরই সাদা থাকে, যেমন ধবলভালুক বা স্নো-অাওল, তবে এই সাত প্রাণী মৌসুমি রঙ পরিবর্তনের অনন্য ক্ষমতা দেখায়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু আড়াল বা ক্যামোফ্লাজ নয়, বরং তাপ সংরক্ষণ, শক্তি ব্যবস্থাপনা এবং ফটোপিরিয়ডের প্রভাবও এই রঙ পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রাখে। মেলানিনহীন সাদা লোমের ভেতরে সৃষ্টি হওয়া বায়ুফাঁক শীতে অতিরিক্ত উষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
নীচে একে একে তুলে ধরা হলো শীতে রঙ বদলানো সাত প্রাণীর বৈজ্ঞানিক রহস্য-
১. খরগোশজাতীয় প্রাণী: ফটোপিরিয়ডের জাদু
আর্কটিক হেয়ার, মাউন্টেন হেয়ার ও স্নোশু হেয়ার শীতের শুরুতেই বাদামি ও ধূসর লোম বদলে সাদা হয়ে যায়। দিনের আলোর পরিমাণ কমতে থাকলে চোখের রেটিনা সেই সংকেত মস্তিষ্কে পাঠায়, এবং শরীরে নতুন সাদা লোম গজাতে শুরু করে। প্রথমে পা, কান ও বাহ্যিক অংশ সাদা হয়, পরে পুরো শরীর।
গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তুষারাবরণ দ্রুত কমে গেলে এই প্রাণীরা সাদা হয়ে পড়ে মাটির রঙের বিপরীতে ফলে শিকারিদের কাছে সহজ টার্গেট হয়।
২. বেজি বা উইজেল: রাজকীয় পোশাকের উৎস
তিন প্রজাতির উইজেল লিস্ট উইজেল, লং-টেইল্ড উইজেল এবং স্টোট শীতে বরফসাদা লোম পায়। স্টোটের সাদা লোমকেই মধ্যযুগ থেকে পরিচিত ‘আরমাইন’ নামে, যা রাজা-রাজড়াদের পোশাকের গলায় ব্যবহৃত হতো। দক্ষিণাঞ্চলে থাকা উইজেলরা রঙ না বদলালেও উত্তরাঞ্চলের উইজেলরা পুরোপুরি সাদা হয়। গবেষণা বলছে, এদের রঙ পরিবর্তনও তাপমাত্রার কারণে নয়, বরং ফটোপিরিয়ডের প্রভাবে ঘটে।
৩. পিয়ারি ক্যারিবু: একমাত্র রঙ বদলানো ক্যারিবু উপপ্রজাতি
কানাডা ও গ্রিনল্যান্ডের উচ্চ আর্কটিকে পাওয়া পিয়ারি ক্যারিবু শীতে রূপ নেয় সম্পূর্ণ সাদা আচ্ছাদনে। অন্য উপপ্রজাতির ক্যারিবুরা সারাবছর বাদামি-ধূসরই থাকে। ছোট আকার, ভিন্ন শিং কাঠামো ও রঙ বদলানোর ক্ষমতার কারণে এগুলোকে একসময় আলাদা প্রজাতি ভাবা হতো।
৪. কলার্ড লেমিং: অদ্ভুত শীতের নখর
ডিক্রোস্টনিক্স গণের লেমিংগুলো শীতে পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। যদিও এরা বেশিরভাগ সময়ই বরফের নিচে বাস করে, যেখানে ক্যামোফ্লাজ খুব দরকার নেই, তবুও বিবর্তনে এ বৈশিষ্ট্য রয়ে গেছে। শীতকালে তাদের পায়ের পাতায় গজায় বিশেষ ‘শীতের নখর’ যা বরফ খুঁড়ে বাসা বানাতে সাহায্য করে।
৫. পটারমিগান: পালকের জাদু
পটারমিগান তিন প্রজাতির পাখি, যারা শীতে বাদামি বা ছোপ ছোপ পালক ত্যাগ করে দেহজুড়ে সাদা পালক ধারণ করে। উইলো ও রক পটারমিগানের লেজে কিছু কালো পালক থাকে, তবে হোয়াইট-টেইলড পটারমিগান পুরোপুরি সাদা হয়ে যায়। এমনকি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ‘হোয়াইট বুট’ গজায়, যা তুষারের ওপর হাঁটতে সুবিধা দেয়। সাদা রঙের উজ্জ্বলতা আসে পালকের ভিতরে থাকা বায়ুফাঁকের কারণে।
৬. সাইবেরিয়ান হ্যামস্টার: ঘরের আলোয়ও বদলায় রঙ
একমাত্র গৃহপালিত প্রজাতি হিসেবে এই তালিকায় রয়েছে সাইবেরিয়ান হ্যামস্টার, যাকে অনেকে ‘উইন্টার হোয়াইট’ নামেও চেনে। যদি এদের এমন ঘরে রাখা হয় যেখানে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে, তবে শীতে তারা ধূসর-রূপালি রঙ থেকে সাদা হয়ে যায়। তাপমাত্রা নয়, আলোই নিয়ন্ত্রণ করে এদের মোল্টিং চক্র।
৭. আর্কটিক ফক্স: রঙ বদলের প্রতিযোগীতা
গ্রীষ্মে বাদামি-ধূসর আর শীতে বরফসাদা এই দারুণ পরিবর্তনের জন্য আর্কটিক ফক্স বিখ্যাত। তবে আলাস্কা ও কানাডার উপকূলীয় এলাকায় এদের ‘নীল রঙের’ ভ্যারিয়েন্টও পাওয়া যায়, যারা শীতে কেবল অল্প হালকা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে লাল শেয়াল এখন আর্কটিক অঞ্চলে ঢুকে পড়ছে, এবং খাদ্য প্রতিযোগিতায় অনেক সময় আর্কটিক ফক্সকে হারিয়ে দিচ্ছে।
তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা
সুগার বিট: পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ চিনির উৎস
বিশ্বের চিনি উৎপাদনে আখের পরেই যে ফসলটি সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে, তা হলো সুগার বিট বা বিটা ভালগারিস। আধুনিক কৃষি, খাদ্যশিল্প ও বায়োটেকনোলজির অগ্রগতির কারণে এই ফসল এখন ইউরোপসহ পৃথিবীর বহু অঞ্চলের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উচ্চমাত্রার সুক্রোজসমৃদ্ধ রসের জন্য সুগার বিটকে আজ চিনি শিল্পের প্রধান শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সুগার বিট মূলত অ্যামারান্থেসি পরিবারের উদ্ভিদ এবং বহু শতাব্দী ধরে এটি পুষ্টিকর সবজি ও পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৭৪৭ সালে জার্মান রসায়নবিদ আন্দ্রেয়াস মার্গগ্রাফ প্রথমবারের মতো বিট থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন করেন। তবে শিল্পকারখানায় বিট থেকে চিনি তৈরির যাত্রা শুরু হয় ১৮০২ সালে সিলেশিয়ায় প্রথম বিট সুগার ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
ন্যাপোলিয়ন ১৮১১ সালে এ শিল্পের প্রসারের প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখান। ব্রিটিশ অবরোধে যখন ফরাসি সাম্রাজ্যের আখের চিনি আমদানি বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিনি বিকল্প হিসেবে বিট সুগার উৎপাদনকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার দেন এবং চারোনদিকে দ্রুত কারখানা স্থাপন শুরু হয়। যদিও ন্যাপোলিয়নের পতনের পর শিল্পটি সাময়িকভাবে ম্লান হয়েছিল, তবে ১৮৪০-এর দশক থেকে ইউরোপজুড়ে এর বিস্তার দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ১৮৮০ সালের মধ্যেই ইউরোপে বিটের উৎপাদন আখকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় শতভাগ চিনি উৎপাদন বিট থেকে হয়।
চাষাবাদ ও উৎপাদন চক্র
সুগার বিট সাধারণত শীতল নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ফসল হিসেবে চাষ হয়; তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণ অঞ্চলে এটি শীতকালীন ফসল হিসেবেও ব্যাপক প্রচলিত হয়েছে। সাধারণত ১৭০ থেকে ২০০ দিনের ফসলচক্রে এটি পূর্ণবয়স্ক হয়।
বীজ বপন থেকে শেকড় পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া তুলনামূলক ঠান্ডা হলে ফলন বাড়ে এবং সুক্রোজের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। উপযুক্ত অবস্থায় প্রতিটি বিটের ওজন ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে এবং এতে ৮ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত সুক্রোজ পাওয়া যায়।
সুগার বিটের জন্য আদর্শ মাটি হচ্ছে হিউমাসসমৃদ্ধ লোম; তবে বালুকামাটি থেকে শুরু করে ভারী মাটি পর্যন্ত বিভিন্ন মাটিতেই এটি চাষ করা যায়। শিল্পোন্নত কৃষি খামারে গভীর চাষ, যথাযথ সারের ব্যবহার, প্রিসিশন ড্রিলিং, কীটনাশক ও হার্বিসাইড ব্যবহারের মাধ্যমে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন করা হয়।
রোগবালাই ও কীটপতঙ্গের হুমকি
কালো রুট রট, সারকোসপোরা লিফ স্পটসহ নানান ছত্রাকঘটিত রোগ সুগার বিটের শেকড়ের ওজন ও সুক্রোজ মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। এছাড়া নিমাটোড, পোকামাকড় ও বিভিন্ন ধরনের গুবরেপোকার আক্রমণ ফসলের বড় অংশ নষ্ট করে দিতে সক্ষম। এজন্য নিয়মিত ফসল ঘুরিয়ে চাষ এবং রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করা হয়।
জেনেটিক উন্নয়ন ও ব্রিডিং
উচ্চ সুক্রোজমাত্রা, রোগপ্রতিরোধ এবং ভারী শেকড় নিশ্চিত করার জন্য বহু দেশে উন্নত হাইব্রিড ও পলিপ্লয়েড জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে গ্লাইফোসেট-সহনশীল জিএম (জেনেটিকালি মডিফাইড) সুগার বিট এখন বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত।
ফলন, রোগপ্রতিরোধ, অভিযোজনশক্তি এবং চিনি আহরণশীলতা—এই চারটি বৈশিষ্ট্য বাড়াতে বিশ্বব্যাপী গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।
পাঠকের মতামত:
- পুলিশি চক্রান্তে অস্ত্র মামলায় ফাঁসলেন নিরীহ অটোচালক জাফর
- গুলশানের বাসায় তারেক রহমান ,শুরু হলো নতুন অধ্যায়
- ১৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের আদি নক্ষত্র এবং মহাবিশ্বের শৈশব দেখছে নাসা
- হিট অব দ্য মোমেন্টে দল ছাড়ার ঘোষণা সুজনের
- মাত্র ১০ মিনিটেই স্মৃতিশক্তি দ্বিগুণ করার ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল
- অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে পারে এনসিপি: রিফাত রশিদের ৫টি কড়া যুক্তি
- ক্যালেন্ডারের প্রথম পাতাতেই শুরু হচ্ছে বাণিজ্য মেলার মহোৎসব
- রাজনৈতিক মাঠে তারেক রহমানের ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করবে জামায়াত
- মহানবীর ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ গড়ব: তারেক রহমান
- ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ডে তিন আসামি আদালতে সব সত্য ফাঁস করলেন
- পদত্যাগের গুঞ্জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া নিয়ে যা বললেন রুমিন ফারহানা
- তারেক রহমানের ফেরা গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের চূড়ান্ত বিজয়: নাহিদ ইসলাম
- আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং যার থেকে ইচ্ছা কেড়ে নেন: তারেক রহমান
- প্রবাসী ভোটারদের জন্য সুখবর!
- গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি: শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর
- ৪৬তম বিসিএস ভাইভার সূচি প্রকাশ
- যাত্রাপথে নিরাপদ থাকার সুন্নাহ দোয়া
- ফেসবুকে যে বার্তা দিলেন তারেক রহমান
- তারেক রহমানকে সমর্থন জানিয়ে এনসিপি থেকে পদত্যাগ
- ঢাকায় অবতরণ, প্রথম যোগাযোগ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে
- শেয়ারবাজারের সাপ্তাহিক পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ
- নিকোটিন পাউচ ও ই-সিগারেটের দিন শেষ আসছে নতুন আইন
- কাল মাঠে নামার কথা ছিল চট্টগ্রামের, আজই উধাও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক
- আরবের মরুভূমি কাঁপিয়ে বাংলার সবুজ গালিচায় তাসকিন ও মোস্তাফিজ
- তিল ধারণের জায়গা নেই, ৩০০ ফিট জুড়ে উৎসবের মহোৎসব
- তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে সারজিসের ফেসবুক পোস্টে নতুন বার্তা
- ঢাকার মাটিতে তারেক রহমান
- বাংলাদেশের ৫৫ বছরের ইতিহাসে আজ অবিস্মরণীয় দিন: সালাহউদ্দিন আহমেদ
- এক নজরে আজকের খেলা: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
- শীতে বাড়ে কর্নিয়ার আলসার: চোখের যত্নে করণীয়
- তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে বিমানবন্দরে শীর্ষ নেতাদের ভিড়
- দেশের মাটিতে তারেক রহমান
- নাইজেরিয়ায় রক্তাক্ত মাগরিব: নামাজের সিজদায় থাকা অবস্থায় বিস্ফোরণ
- যিশু খ্রিষ্টের মানবমুক্তির বার্তা সবার অনুপ্রেরণা: উপদেষ্টা ড. ইউনূস
- আজ ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি
- আজ মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার কামড় দেখল ঢাকাবাসী
- জামায়াতের সঙ্গী হচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি
- ছয় স্তরের অভেদ্য নিরাপত্তায় তারেক রহমান
- তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনে যানজট এড়াতে যেসব রাস্তা পরিহার করবেন
- পাকস্থলীর ধ্বংস করছে আপনার এই ৩টি সাধারণ অভ্যাস
- কম ঘুমে শরীরে বাসা বাঁধছে যেসব মারাত্মক রোগ
- মাত্র ৭ দিনে চুল পড়া কমানোর জাদুকরী ঘরোয়া পদ্ধতি
- সরকারি পদ ছেড়ে ভোটের ময়দানে অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
- ভারতের 'বাহুবলী' রকেটের কাঁধে চড়ে মহাকাশ জয়
- রিকশায় চড়ে মনোনয়নপত্র কিনলেন আলোচিত বক্তা আমির হামজা
- হাদি হত্যার রহস্য উন্মোচন: যুবলীগ কর্মী হিমনের বড় স্বীকারোক্তি
- ভারত এবং আওয়ামী লীগ দেশ অস্থিতিশীল করছে: নাসীরুদ্দীন
- আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকারের কড়া বার্তা
- হাদিকে সেলাই করা ব্যাঙের সাথে তুলনা করলেন বিএনপি নেত্রী মনি
- বৈপ্লবিক বিয়ে: বরের সাজে হাদি হত্যার বিচার চাইলেন ফরহাদ
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন আকাশছোঁয়া দাম
- রেকর্ড দামে স্বর্ণ: আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে বাজুসের নতুন মূল্য
- নারী-সঙ্গীর হাতে পুরুষের যৌনাঙ্গ ছিন্নকরণ: বাংলাদেশে অবহেলিত এক সহিংসতার সংকট
- আজ টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- আজ ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়
- হাদির প্রথম জানাজা কোথায় ও কখন? জানাল ইনকিলাব মঞ্চ
- বাংলা দখল করতে এলে দিল্লি কেড়ে নেব: মমতা
- সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে শরিফ ওসমান হাদি
- স্বর্ণের বাজারে আগুন: আজ ইতিহাসের দামী সোনা কিনবেন ক্রেতারা
- হাদির মৃত্যু ঘিরে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- ছুটির দিনেও উত্তপ্ত ঢাকা: আজ কোথায় কী কর্মসূচি?
- যখন দেশে ফিরছে শরিফ ওসমান হাদির মরদেহ
- হাদির জানাজা উপলক্ষে রাজধানীতে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা
- প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার প্রতিবাদে মির্জা ফখরুল
- হাদির মৃত্যুতে শায়খ আহমাদুল্লাহ ও আজহারীর আবেগঘন বার্তা








