ইতিহাস ও দর্শন
ধ্বংসস্তূপ থেকে মহাশক্তি: চীনের পুনর্জন্মের বিস্ময়গাঁথা

ইশরাত ওয়ারা
ডেস্ক রিপোর্টার

৭০ বছর আগেও চীনের এই সমুদ্রপথে প্রতিদিন ভেসে থাকত অসংখ্য মানুষের নিথর দেহ। তারা মরিয়া হয়ে মূল ভূখণ্ড চীন থেকে হংকংয়ের পথে রওনা দিত, একটি ভালো জীবনের আশায়। সেই সময় চীনে মানুষের পেটে দুবেলা খাবার জুটত না, শিক্ষা ছিল একপ্রকার অপরাধ। স্কুলে যেতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হতো। বেঁচে থাকার শেষ আশাটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছিল সাধারণ মানুষ। কমিউনিজমের কৃত্রিম পরীক্ষাগারে চীন তখন ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে এগোচ্ছিল। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, সেই ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকেই এক সময় এমন এক রূপান্তর ঘটে যে মাত্র ৪০ বছরের ব্যবধানে চীন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়।
নেপোলিয়ন এক সময় বলেছিলেন, চীন একটি ঘুমন্ত দৈত্য। যেদিন সে জেগে উঠবে, গোটা পৃথিবী কেঁপে উঠবে। কথাটি আজ সত্য বলে মনে হয়। ভাবুন একবার, যে দেশের জিডিপি এক সময় তানজানিয়া কিংবা কেনিয়ার চেয়েও কম ছিল, সেই দেশের অর্থনীতি আজ ১৮ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আজকের সাংহাই, চংকিং বা শেনজেনের মতো শহরগুলো উন্নয়ন ও আধুনিকতার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও ইউরোপকেও পেছনে ফেলছে। ধারণা করা হয়, ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রকেও অতিক্রম করবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে?
কীভাবে চীন এত দ্রুত, এত ব্যাপকভাবে ধনী হয়ে উঠল? চীনের এই জাদুকরী রূপান্তরের পেছনের রহস্য কী? আমাদের দেশে এমন পরিবর্তন কেন ঘটল না? এমনকি জাপানের মতো কর্মঠ জাতিও কেন এই গতিতে অগ্রসর হতে পারেনি? নিশ্চয়ই চীনের হাতে কোনো জাদুর কাঠি ছিল না। এর পেছনে ছিল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, বাস্তবসম্মত ভিশন এবং জাতীয় স্বপ্ন।
১৯৩৭ সালে জাপান চীনের উপর আক্রমণ করে। মাত্র একদিনে দুই লক্ষাধিক চীনা নারী জাপানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত হন, নিহত হয় লক্ষ লক্ষ মানুষ। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যাতে চীনের প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। যুদ্ধ শেষে যখন জাপান পরাজিত হয়, তখন চীনে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। দীর্ঘ যুদ্ধের ধাক্কায় চীনের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। অবশেষে গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্টরা বিজয়ী হয় এবং মেইনল্যান্ড চীনে প্রতিষ্ঠিত হয় কমিউনিস্ট শাসন। কিন্তু যেই আশায় মানুষ কমিউনিস্টদের সমর্থন করেছিল, সেটিই পরে পরিণত হয় এক দুঃস্বপ্নে।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও জেদং-এর আদর্শ ও নীতিমালা দেশকে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অথচ এই চীনই এক সময় ছিল বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাষ্ট্র। প্রাচীন চীনের সম্পদ ও জ্ঞান এতই বিস্ময়কর ছিল যে, ইউরোপ ও আমেরিকার তুলনায়ও সে সময় চীন ছিল ধনী। বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ আসত চীন থেকে।
চীনের রেশম ছিল বিশ্ববিখ্যাত। সিল্ক রোডের মাধ্যমে তারা পৃথিবীর নানা প্রান্তের সঙ্গে বাণিজ্য চালাত। বিশ্বের প্রথম কম্পাস, বারুদ, কাগজ ও ছাপাখানার উদ্ভাবন হয়েছিল এই চীনেই। সামরিক শক্তিতেও চীন ছিল বলিষ্ঠ, যার সাক্ষ্য আজও বহন করছে দ্য গ্রেট ওয়াল অব চায়না। কৃষি ও চিকিৎসাশাস্ত্রেও তারা ছিল অগ্রগামী। চীনের উর্বর মাটিতে কখনো খাদ্যের ঘাটতি পড়েনি। তারাই প্রথম আকুপাংচার ও হারবাল মেডিসিন আবিষ্কার করে, যা আজও সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এত সমৃদ্ধ, উদ্ভাবনী ও জ্ঞাননির্ভর এক দেশ কীভাবে একসময় চরম দারিদ্র্য ও হতাশার গভীরে তলিয়ে গেল? ইতিহাসের এই প্রশ্নের উত্তরই বোধহয় আমাদের আজ নতুন করে ভাবতে শেখায় যে একটি জাতি কেবল সম্পদে নয়, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সঠিক দিকনির্দেশনায়ই পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে।
শুধু কি জাপানের আগ্রাসন আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চীনকে ধ্বংস করেছিল? না, এর পেছনে ছিল আরও গভীর ইতিহাস, যার শিকড় অনেক পুরোনো এবং যেখানে পশ্চিমা উপনিবেশবাদী শক্তির কূটচালও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
সময়টা ১৭৭৩ সাল। তখন চীনে চিং রাজবংশের শাসন চলছে। এদিকে ভারতে ইতিমধ্যে ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়েছে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য চালাচ্ছিল, তেমনি তারা চীনের বাজারেও প্রবেশ করতে চায়। কিন্তু চীনের সম্রাট ইংরেজদের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন। পরে নানা রাজনৈতিক চাপের পর সীমিত পরিসরে তাদের ব্যবসার অনুমতি দেওয়া হয়। ইংরেজরা চীন থেকে বিপুল পরিমাণে চা আমদানি শুরু করে, কিন্তু বিনিময়ে তারা চীনকে দিতে শুরু করে আফিম, এক ভয়াবহ নেশাদ্রব্য।
চীনের সভ্যতা ধ্বংসের সূচনা হয়েছিল এই আফিম দিয়ে। ভারতে তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিশাল পরিসরে আফিম চাষ করত এবং সেই আফিম চীনে রপ্তানি করত। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চীনের তরুণ প্রজন্ম আফিমের নেশায় জড়িয়ে পড়ে। পরিশ্রমী মানুষগুলো কাজ বন্ধ করে সারাদিন নেশায় ডুবে থাকত। উৎপাদনশীলতা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে।
চীনের শাসকরা এই অবস্থা দেখে দেশে আফিম বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু ইংরেজরা তা উপেক্ষা করে গোপনে বিক্রি চালিয়ে যায়, কারণ এই ব্যবসায় তারা প্রচুর লাভ করছিল। এক পর্যায়ে চীনের প্রশাসন ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের আফিমের গুদামঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই ১৮৩৯ সালে শুরু হয় প্রথম আফিম যুদ্ধ।
যুদ্ধটি টানা চার বছর ধরে চলে এবং শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা জয়লাভ করে। তারা হংকং দখল করে নেয়, চীনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ও বিশাল অংশের ব্যবসায়িক নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেয়। এখান থেকেই শুরু হয় চীনের “শতবর্ষের অপমান” বা সেঞ্চুরি অব হিউমিলিয়েশন।
যখন পশ্চিমা বিশ্বে শিল্পবিপ্লবের জোয়ার বইছে, তখন চীনের উচিত ছিল বিশ্বের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিস্তার করা। কিন্তু আফিম যুদ্ধের পর চীনের শাসকরা ভয় ও সন্দেহে নিজেদের চারপাশে দেয়াল তুলে দেয়। তারা বিদেশি বাণিজ্য নিষিদ্ধ করে এবং নিজেদের অর্থনীতি বন্ধ করে ফেলে। এর ফলে তারা দ্রুত আধুনিকায়নের স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
পরবর্তী একশ বছর ধরে চীন ক্রমাগত যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। কখনো রাশিয়া, কখনো জাপান, আবার কখনো যুক্তরাষ্ট্র চীনের ভূখণ্ডে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। এইসব যুদ্ধ এবং বিদেশি আগ্রাসনের ফলে চীনের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
অবশেষে আসে ১৯৪৯ সাল। দীর্ঘ যুদ্ধ, আফিম বাণিজ্য, জাপানের দখল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পর চীনের সামনে আবার একবার পুনরুত্থানের সুযোগ আসে। মানুষ আশাবাদী হয়ে ওঠে, মনে হয় নতুন এক যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। কিন্তু এই আশার মুহূর্তেই ক্ষমতায় আসেন এমন একজন নেতা, যার সিদ্ধান্ত চীনের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। তিনি ছিলেন চীনের রাষ্ট্রপতি মাও জেদং।
মাও জেদং চীনের অর্থনীতিকে দ্রুত উন্নতির পথে নিতে কিছু নতুন নীতিমালা প্রবর্তন করেন। এর মধ্যে ছিল গ্রেট লিপ ফরওয়ার্ড এবং কালচারাল রেভলিউশন। বড় জমিদারদের জমি অধিগ্রহণ করে তিনি ছোট চাষিদের মধ্যে ভাগ করে দেন, কিন্তু জমির মালিকানা রাষ্ট্রের হাতেই রাখেন। সরকার নির্ধারণ করত কখন চাষ হবে, কী চাষ হবে এবং কতটা উৎপাদন হবে। কৃষকদের কাজ ছিল শুধু শ্রম দেওয়া। উৎপাদিত ফসলের সবটাই দিতে হতো সরকারের কাছে এবং বিনিময়ে তারা পেত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ।
এই নীতি খুব দ্রুত ব্যর্থ হয়। কৃষকদের কোনো স্বাধীনতা ছিল না, প্রযুক্তি ছিল পুরোনো এবং উৎপাদনশীলতা ক্রমাগত কমতে থাকে। তারা কঠোর পরিশ্রম করেও দুবেলা আহার জুটাতে পারত না। এরই মধ্যে মাও আরেকটি নীতি চালু করেন, যার নাম ছিল ফোর পেস্ট কন্ট্রোল। তিনি চীনের সব চড়ুই, ইঁদুর, মশা ও মাছি নির্মূল করার আদেশ দেন। মাও তখন চীনে প্রায় ঈশ্বরসম মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিলেন, তাই জনগণ তার নির্দেশ অন্ধভাবে পালন করে। কয়েক বছরের মধ্যে চীনে লক্ষ লক্ষ চড়ুই পাখি মারা পড়ে, ফলে পঙ্গপালের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং তারা ফসলে হানা দেয়। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে দেশে দেখা দেয় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যেখানে প্রায় চার কোটি মানুষ প্রাণ হারায়।
মাও শিল্পায়নের দিকেও জোর দেন। গোটা দেশে স্টিল উৎপাদনের লক্ষ্যে বড় বড় ফ্যাক্টরি গড়ে তোলা হয়, এমনকি সাধারণ মানুষকেও ঘরে স্টিল তৈরি করতে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রযুক্তি ও দক্ষতার অভাবে সেই স্টিলের গুণমান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের, ফলে এই পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়।
১৯৬০-এর দশকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ঋণাত্মক চার শতাংশে। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং খাদ্যসংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। সাধারণ মানুষ মাওয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করে। এমনকি কমিউনিস্ট পার্টির অনেক শীর্ষ নেতা তার নীতির সমালোচনা করেন।
চীনের এই দীর্ঘ পতনের ইতিহাস দেখায়, একটি দেশ কেবল দেশপ্রেম বা শ্রম দিয়ে টিকে থাকতে পারে না। সঠিক নেতৃত্ব, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা এবং স্বাধীন চিন্তাশক্তিই পারে একটি জাতিকে পুনর্জন্ম দিতে।
হীরক রাজা একবার বলেছিলেন, “পড়াশোনা করে যে, অনাহারে মরে সে।” মাও জেদংও প্রায় একই বিশ্বাস পোষণ করতেন। তিনি মনে করতেন, শিক্ষিত ও চিন্তাশীল মানুষরা বা বুদ্ধিজীবীরা তার শাসনের জন্য হুমকি। তাই তিনি তাদের দমন করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৬৬ সালে চীনে শুরু হয় কালচারাল রেভলিউশন। মাও ঘোষণা দেন, চীনে নতুন এক বিপ্লব ঘটবে যেখানে পুরনো প্রথা, ধর্ম, জ্ঞান ও সংস্কৃতির স্থান থাকবে না। তখন দেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহরের শিক্ষিত মানুষদের জোর করে গ্রামে পাঠানো হয় যাতে তারা মাঠে কাজ করে কৃষকদের কাছ থেকে শেখে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রগুলো ধ্বংস করা হয়। কেউ যদি পড়াশোনা করতে চাইত, তবে তাকে কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হতো।
এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল একটাই। যে কেউ মাও-এর চিন্তার বিপরীতে কথা বলবে, তাকে রাষ্ট্রবিরোধী ঘোষণা করা হবে। সেই সময় শিক্ষিত মানুষদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। সমাজে ভয়, অরাজকতা ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭০-এর দশকে এসে চীনের প্রায় আশি শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। শিল্প ও বাণিজ্য কার্যত থেমে যায়। দেশের অর্থনীতি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে তখন চীনের রাস্তায় মোটরগাড়ি প্রায় দেখা যেত না। যার কাছে একটি সাইকেল ছিল, তাকেই ধনী মনে করা হতো।
মানুষ তখন চরম দারিদ্র্য ও হতাশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিল। তাদের জীবনে কোনো স্বপ্ন বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল না। অন্যদিকে, পাশেই ছিল হংকং, যা তখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল। হংকং-এ জীবনযাত্রা ছিল বহু গুণ উন্নত। সেখানে কাজের সুযোগ বেশি ছিল, বেতন অনেক বেশি ছিল এবং মানুষ অন্তত দুবেলা খেতে পারত। তাই হংকং চীনের মানুষের কাছে এক স্বপ্নরাজ্য হয়ে ওঠে।
এই সময় সেনজেন প্রদেশের প্রায় সাত লাখ মানুষ সমুদ্র পেরিয়ে হংকং যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র এক লাখ চল্লিশ হাজার মানুষ পৌঁছাতে পারে। কেউ কেউ ফিরে আসে, আর বাকিদের অনেকেই সমুদ্রের ঢেউয়ে প্রাণ হারায়। সেই উপকূল আজও পরিচিত “কোভ অফ কর্পস” নামে, যার অর্থ মৃতদেহের উপসাগর।
এই সময় কেউ ভাবতেও পারত না যে চীন কখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। তখন চীনের এক প্রত্যন্ত গ্রামের মাঠে কাজ করছিলেন এক খাটো মানুষ, যার উচ্চতা ছিল মাত্র পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি। তার নাম দেং জিয়াওপিং। কেউ তখন জানত না যে এই মানুষটিই একদিন চীনকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশে পরিণত করবেন।
দেং জিয়াওপিং একসময় চীনা কমিউনিস্ট পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। কিন্তু মাও জেদং-এর সমালোচনা করার কারণে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং রাজধানী বেইজিং থেকে দূরে এক গ্রামে নির্বাসিত করা হয়। সেখানে তিনি তিন বছর কৃষিকাজ করেন।
১৯৭৬ সালে মাও জেদং-এর মৃত্যুর পর দেং জিয়াওপিং-এর ভাগ্য পরিবর্তন হয়। তার সমর্থকেরা তাকে রাজধানীতে ফিরিয়ে আনে। তখন চীনের মানুষের একটাই লক্ষ্য ছিল, কীভাবে দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা যায়।
দেং জিয়াওপিং-এর আদর্শ ছিল মাও-এর চিন্তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মাও চেয়েছিলেন জনগণ তাকে ঈশ্বরের মতো মানুক এবং তার প্রতিটি কথা যেন চূড়ান্ত সত্য বলে গণ্য হয়। তিনি বিপ্লব ও কঠোর নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু দেং ছিলেন বাস্তববাদী এবং প্রগতিশীল। তিনি কমিউনিজমে বিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু তিনি মনে করতেন উন্নতি ও সমৃদ্ধিই একটি দেশের আসল লক্ষ্য।
মাও-এর মৃত্যুর পর দেং-এর সামনে বড় বাধা ছিল সেই সব নেতারা, যারা এখনও মাও-এর পুরনো আদর্শে বিশ্বাস করতেন। একই সময়ে মাও-এর স্ত্রী জিয়াং ছিং ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন এবং গ্রেফতার হন।
দেং জিয়াওপিং কখনো চীনের রাষ্ট্রপতি বা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান হননি, তবুও তিনি হয়ে ওঠেন দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, চীনের উন্নতির জন্য শিক্ষাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
১৯৭৭ সালে তিনি বেইজিংয়ে শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আহ্বান করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পার্টির রক্ষণশীল নেতারা, যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার বিরোধিতা করছিলেন। তখন দেং জিয়াওপিং একটি ঐতিহাসিক কথা বলেন যা চীনের ভবিষ্যৎ বদলে দেয়। তিনি বলেন, “বিড়াল সাদা না কালো সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতক্ষণ না সে ইঁদুর ধরতে পারে।” অর্থাৎ দেশের উন্নতির জন্য কোনো নীতি কার্যকর হলে সেটা কে তৈরি করেছে বা কোন মতবাদ থেকে এসেছে তা বিবেচ্য নয়। মূল কথা হলো, তা কাজ করছে কি না।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়েই তিনি স্পষ্ট করে দেন যে বাস্তবতা-নির্ভর নীতি গ্রহণই হবে চীনের অগ্রগতির মূলমন্ত্র। তিনি মাও-এর সময় বন্ধ করে দেওয়া স্কুল ও কলেজগুলো পুনরায় খুলে দেন। আবার শুরু হয় ভর্তি পরীক্ষা।
১৯৭৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে বড় পরিসরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ থেকে ৩৮ বছর বয়সী প্রায় ৫৭ লক্ষ মানুষ এই পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ পাস করতে সক্ষম হয়। কিন্তু এই পরীক্ষাই ছিল চীনের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের প্রথম পদক্ষেপ। এখান থেকেই শুরু হয় নতুন চীনের পুনর্জাগরণের ইতিহাস।
চীনের অর্থনীতিকে নতুন পথে নেওয়ার পরবর্তী ধাপে দেং জিয়াওপিং তিরিশ জনের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেন। দলটি ডেনমার্ক, জার্মানি, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের নানা দেশে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছে তারা প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, উৎপাদনশীলতা ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইউরোপের ব্যাপক অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করে বিস্মিত হয়। দেশে তাদের দীর্ঘদিন বলা হয়েছিল যে পুঁজিবাদ শ্রমিকশ্রেণিকে শোষণ করে এবং সমাজকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু বাস্তব পর্যবেক্ষণে তারা দেখতে পায় ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো কার্যকর নীতি, উচ্চ দক্ষতা ও আধুনিক অবকাঠামোর মাধ্যমে বহুগুণ এগিয়ে গেছে।
চীনা প্রতিনিধি দল ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে উন্নয়নের পথরেখা নিয়ে ধারণা নেয়। ইউরোপীয় দেশগুলোও চীনকে সহায়তায় আগ্রহ দেখায়, কারণ বিশাল বাজার হিসাবে চীন তাদের জন্য সম্ভাবনাময় ছিল। এ সময় দেং জিয়াওপিং নিজেও সিঙ্গাপুর ও জাপান সফর করেন। জাপানে তিনি ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার গতির ট্রেন, রোবোটিক্স ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পের আধুনিকতা, এবং নাগরিক জীবনের উচ্চমান দেখে অভিভূত হন। সিঙ্গাপুর ও জাপানের রাস্তা, কারখানা, বসতবাড়ি এবং জীবনযাত্রা তিনি ভিডিও করে দেশে এনে সাধারণ মানুষের সামনে উপস্থাপন করেন। জাপানে সাধারণ শ্রমিকের ঘরেও টেলিভিশন ও ফ্রিজ আছে, উন্নত কৃষিযন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে, এইসব দৃশ্য দেখে চীনের মানুষ নতুন করে আশা পেতে শুরু করে। দেং বুঝতেন যে দীর্ঘদিনের ভুল নীতিতে মানুষ স্বপ্ন দেখা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে। তাই জাতির মনে আশাবাদ সঞ্চার করা ছিল তার প্রথম লক্ষ্য।
তবে ভেতরে ভেতরে অনেকে পরিবর্তন মানতে রাজি ছিলেন না। তাদের ধারণা ছিল, ইউরোপ বা জাপানের মতো উন্নয়ন মডেল গ্রহণ করলে বিপ্লবী আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা হবে। এই প্রেক্ষাপটে ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে দেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে কমিউনিস্ট পার্টির দুই শতাধিক সদস্যকে বেইজিংয়ে ডাকা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দেং জিয়াওপিং। সেখানেই প্রথম তিনি অর্থনীতি উন্মুক্ত করার প্রস্তাব তুলে ধরেন। আফিম যুদ্ধের পর থেকে চীন কার্যত বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করে রেখেছিল। দেং বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দ্রুত অগ্রসর না হলে সমৃদ্ধি সম্ভব নয়।
দেং ভালোভাবেই বুঝতেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদার বানানো জরুরি। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রও চীনকে সোভিয়েত প্রভাববলয় থেকে দূরে টানতে আগ্রহী ছিল। ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো পিপলস রিপাবলিক অব চায়নাকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। সে বছরই দেং ওয়াশিংটনে গিয়ে প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সঙ্গে বৈঠক করেন। শীতল যুদ্ধের দ্বিপাক্ষিক সন্দেহ সত্ত্বেও এই কূটনৈতিক অগ্রগতি ছিল ঐতিহাসিক।
আমেরিকা সফর শেষে দেং চীনের দক্ষিণে যান। হংকংয়ের লাগোয়া মৃতপ্রায় শিল্পকেন্দ্র গুয়াংজৌ ও তার আশপাশে তিনি পুনরুজ্জীবনের পরিকল্পনা হাতে নেন। সেখানে তার ঘনিষ্ঠ চিন্তাধারার নেতা শি ঝোংসুনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পরীক্ষামূলকভাবে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেন। সরকার তহবিল দিতে পারবে না, তবে নীতিগত বাধা কমিয়ে উদ্যোগপতিদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। হংকংয়ের নিকটবর্তী শহর শেনজেনকে বেছে নেওয়া হয় অগ্রাধিকারে। হংকংয়ে তৎকালীন নির্মাণ জোয়ারে স্টিলের চাহিদা আকাশছোঁয়া ছিল, কিন্তু উচ্চ মজুরি ও অবকাঠামো ব্যয়ের কারণে সেখানেই উৎপাদন লাভজনক ছিল না। শেনজেনে তুলনামূলক কম মজুরি এবং অতি স্বল্প দূরত্বের সুবিধা কাজে লাগিয়ে স্থানীয় উদ্যোগীরা হংকংয়ের বিনিয়োগ আনেন, জাহাজ ভাঙা থেকে প্রাপ্ত স্ক্র্যাপ দিয়ে স্টিল উৎপাদন শুরু করেন এবং তা সমুদ্রপথে দ্রুত হংকংয়ে পাঠান। এটাই ছিল চীনে বিদেশি বিনিয়োগের প্রথম সার্থক গল্প।
এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে শেনজেনে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। পরে মডেলটি অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় প্রসারিত করা হয়। করছাড়, শুল্কসহ নানা প্রণোদনায় বিদেশি পুঁজি প্রবাহ বাড়তে থাকে। ঝেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনঝৌতে তুলনামূলক কম রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় কয়েক বছরের মধ্যেই লক্ষাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ গড়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে সরকার এসব বেসরকারি উদ্যোগকে আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন দিতে শুরু করে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দেং সমষ্টিগত মতামত ও দায়িত্ববোধের নীতি চালু করেন। বড় সিদ্ধান্ত আগে আলাপ করতে হবে এবং ভুল হলে যৌথভাবে দায় নিতে হবে।
শিক্ষা ছাড়া উন্নয়ন টেকসই হয় না। মাওয়ের আমলে যেখানে স্কুলে পড়তে গেলেও পার্টির অনুমতি লাগত, সেখানে দেং উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে দেন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করেন। একই সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাকে পুনর্গঠন করা হয়। নয় বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক ও বিনামূল্যের মৌলিক শিক্ষা চালু হয়। পরে ধাপে ধাপে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষার্থী পাঠানো শুরু হয়। অনেকে স্থায়ীভাবে না ফিরলেও দেং-এর বাস্তববাদী যুক্তি ছিল, দশজনের মধ্যে যদি একজনও ফিরে আসে, দেশের লাভই হবে। ধীরে ধীরে বিদেশফেরত তরুণরা দেশে উদ্যোগ গড়ে তোলে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন গতি আনে।
১৯৯০–এর দশকে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বড় বড় ব্র্যান্ড যখন উৎপাদন সম্প্রসারণের জায়গা খুঁজছিল, চীন তাদের আমন্ত্রণ জানায়। কম মজুরি, বিস্তৃত জমি, দক্ষ শ্রমশক্তি এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুবিধা একত্রে বিদেশি কারখানা স্থাপনে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তি শেখা, সরবরাহ শৃঙ্খলা গঠন এবং মান নিয়ন্ত্রণে চীন দ্রুত দক্ষ হয়ে ওঠে। স্থানীয় উদ্যোগীরাও একই শিল্পশৃঙ্খলে যুক্ত হয়ে ক্রমে নিজস্ব ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে থাকে।
ক্রমশ চীন বিশ্ব উৎপাদনকেন্দ্রে পরিণত হয়। গবেষণা ও উন্নয়নে বড় বাজেট বরাদ্দ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পের সংযোগ, এবং অবকাঠামোতে অভূতপূর্ব বিনিয়োগের ফলে উচ্চগতির রেল, উন্নত ইলেকট্রনিক্স, ড্রোন ও রোবোটিক্সসহ বহু ক্ষেত্রে তারা আত্মনির্ভরতা অর্জন করে। প্রাথমিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে স্মার্টফোন তৈরির বাজার অংশীদারিত্ব পর্যন্ত বহু খাতে চীনের প্রভাব সুদৃঢ় হয়।
সমান্তরালে দারিদ্র্য হ্রাসে তারা ব্যতিক্রমী সাফল্য দেখায়। কৃষি সংস্কার, কর্মসংস্থানমুখী শিল্পায়ন, নগরায়ন এবং সামাজিক খাতে ধারাবাহিক বিনিয়োগ মিলিয়ে কয়েক দশকে শত কোটি মানুষের জীবনমান উন্নত হয়। শিক্ষা খাতে ব্যয় ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে। বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতা বিস্তৃত হয় এবং তরুণদের সাক্ষরতার হার প্রায় সার্বজনীন পর্যায়ে পৌঁছে।
উচ্চগতির রেলের উদাহরণটি দেং-এর স্বপ্ন পূরণের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৭৮ সালে তিনি জাপানে যে বুলেট ট্রেন দেখেছিলেন, ২০০৮ সালে চীন নিজের মাটিতে উচ্চগতির ট্রেন চালু করে। পরবর্তী দশকে প্রযুক্তি আয়ত্ত করে নিজেরাই নেটওয়ার্ক প্রসারিত করে। আজ দেশের ভেতরে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ উচ্চগতির রেলপথ জাতীয় সংযোগ ও উৎপাদনশীলতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
সব মিলিয়ে দেং জিয়াওপিং-এর পদক্ষেপগুলোর সারকথা ছিল বাস্তবতাকে প্রাধান্য দেওয়া, উন্মুক্ততার দিকে অগ্রসর হওয়া, শিক্ষা ও দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, এবং নীতিনির্ধারণে সমষ্টিগত জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। এই চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়েই চীন কয়েক দশকে এক অনুন্নত অর্থনীতি থেকে একটি জটিল, প্রযুক্তিনির্ভর ও বিশ্বব্যাপী প্রভাবশালী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
১৯৩২ সালে জন্ম, ২০০৬ সালে যুবক: টাইম ট্র্যাভেলার 'সার্গেই' এর রহস্য!
ভূমিকা: সময় পরিভ্রমণ বা টাইম ট্র্যাভেল – কল্পবিজ্ঞানের এই ধারণা বহু বছর ধরে মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু যদি বলি, এমন ঘটনা সত্যিই ঘটেছিল? ২০০৬ সালে ইউক্রেনের কিয়েভের রাস্তায় আবির্ভূত হয়েছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি ১৯৩২ সালে জন্মেছিলেন কিন্তু ২০০৬ সালেও ছিলেন যুবক। তার গল্প এতটাই রহস্যময় যে, তিনি কি সত্যিই সময়কে টপকে ভবিষ্যতে এসেছিলেন, নাকি এটি নিছকই এক মিথ? সেই অবিশ্বস্য ঘটনাটি নিয়ে এই প্রতিবেদন।
২০০৬ সালে 'অতীত' থেকে আগমন: ২০০৬ সালে ইউক্রেনের কিয়েভের রাস্তায় পথচারীরা এক অদ্ভুত লোককে দেখতে পায়। তার পরনে ছিল পুরোনো ফ্যাশনের পোশাক, দেখে মনে হচ্ছিল তিনি যেন কাউকে খুঁজছেন, কিন্তু কিছুই চিনতে পারছেন না। এই লোকটির নাম ছিল সার্গেই পনমারেনকো। ভীত সার্গেই পুলিশের কাছে পৌঁছান, কারণ তিনি কোনো রাস্তাঘাট চিনতে পারছিলেন না। ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী এই যুবকের পরনে ছিল নতুন কিন্তু পুরোনো ধরনের পোশাক এবং গলায় ছিল বহু পুরোনো মডেলের একটি ক্যামেরা।
পরিচয়পত্র ও বিস্ময়কর তথ্য: সার্গেই পুলিশকে জানান যে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং তার জন্ম ১৯৩২ সালে। তার দেখানো পরিচয়পত্রটি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের আমলের, যা দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ! একটি সময়ে ইউক্রেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হলেও, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেছে প্রায় দুই দশক আগে। পুলিশ যখন তাকে জিজ্ঞেস করে, সে শেষ কোন দিনের কথা মনে করতে পারছে, সার্গেই জানায় যে তিনি সর্বশেষ ১৯৫৮ সালের ২৩ এপ্রিলের কথা মনে করতে পারছেন। অর্থাৎ, তিনি ১৯৫৮ সাল থেকে ২০০৬ সালে এসেছেন, অথচ তার বয়স একটুও বাড়েনি।
ডাক্তারের কাছে বিস্ময়: সার্গেইকে একটি সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। ডাক্তার পাবলো কুট্রিকফ তাকে জিজ্ঞেস করেন যে তিনি কীভাবে ১৯৫৮ সাল থেকে ২০০৬ সালে চলে এলেন, অথচ একটুও বৃদ্ধ হলেন না। তার সর্বশেষ কি মনে আছে? সার্গেই উত্তর দেন যে সেদিন তিনি দিনের বেলায় ঘুরতে বেরিয়েছিলেন এবং ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাও সাথে নিয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি 'বেল শেপের' একটি উড়ন্ত বস্তু দেখতে পান এবং এরপর তার আর কিছুই মনে নেই। তিনি ডাক্তারকে তার ক্যামেরা বাড়িয়ে দিলেন তার তোলা ছবিগুলো দেখার জন্য।
ক্যামেরার রহস্য ও উধাও হয়ে যাওয়া: ক্যামেরাটি ছিল একটি ইয়াসিমা ফ্লেক্স, যার ফিল্ম ১৯৭০ সালের পর থেকে আর তৈরি হয়নি। ফটোগ্রাফি বিশেষজ্ঞ ভ্যাডিম পয়জনার জানান, ক্যামেরার ফিল্মটি ১৯৫৬ সালে তৈরি করা হয়েছে। ছবিগুলো উদ্ধারের পর দেখা গেল, ছবির রাস্তাঘাট, বিল্ডিং, স্থাপনা সবই পুরোনো ধাঁচের। ছবিগুলোর অনেক বিল্ডিং এখন আর নেই। সার্গেইয়ের সাথে একজন মেয়ের ছবিও দেখা গেল, জানা যায় মেয়েটি তার গার্লফ্রেন্ড। সবচেয়ে রহস্যময় শেষ ছবিতে সার্গেইয়ের কথা মতো একটি 'বেল শেপের' ইউএফও (UFO) বা স্পেসক্রাফট দেখা যায়। সার্গেই জানান, "যখনই আমি বস্তুটির ছবি এবং ক্যামেরার দিকে তাকাই, জানিনা আমি কিভাবে এই সময় চলে আসলাম।"
ডাক্তার পাবলো কুট্রিকফ আইনস্টাইনের থিওরি অনুযায়ী 'টাইম ডাইলেশন' ছাড়া এমনটা কিভাবে সম্ভব তা ভাবতে লাগলেন। সেই রাতেই শেষ দেখা যায় সার্গেই পনমারেনকোকে নিজ রুমের দিকে যেতে। এরপর দিনই তিনি যেন পুরোপুরি গায়েব হয়ে যান।
গার্লফ্রেন্ডের চিঠি ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত: এদিকে পুলিশ সার্গেইয়ের তৎকালীন গার্লফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ করে। ৭০ বছর বয়সী সেই নারী জানান, সার্গেই নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে একটি ছবি পাঠান, যেখানে মধ্যবয়স্ক সার্গেইয়ের ছবি ছিল এবং তার পেছনে ছিল উঁচু দালান। ছবিতে লেখা ছিল, এটি ২০৫০ সালে তোলা!
উপসংহার: কীভাবে সার্গেই পনমারেনকো ১৯৫৮ সাল থেকে হঠাৎ করে ২০০৬ সালে চলে এলেন, তা আজও এক অমীমাংসিত রহস্য। রাশিয়ান একটি ডকুমেন্টারিতে এই পুরো ঘটনাটি তুলে ধরা হলেও এর কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইন্টারনেটে এই ঘটনার উপর অসংখ্য ভিডিও থাকলেও শত প্রমাণের অভাবে অনেকে এটিকে মিথ বা প্রচলিত ঘটনা বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে টাইম ট্র্যাভেলের ইতিহাসে এটি নিঃসন্দেহে একটি জনপ্রিয় ও চমৎকার ঘটনা, যা আজও মানুষের মনে প্রশ্ন জাগিয়ে তোলে: সার্গেই কি সত্যিই সময়ের বাঁধন পেরিয়ে গিয়েছিলেন?
কে এই 'জাহানামের মা'? কোরআনে বর্ণিত ইতিহাসের সেই অভিশপ্ত নারী
ইসলামী ইতিহাসে এমন কিছু চরিত্র রয়েছেন, যাদের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় এবং সতর্ক করে। আজ আমরা এমনই এক নারীর কথা বলব, যাকে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সবচেয়ে অভিশপ্ত নারী বলা হয় – তিনি উম্মে জামিল। তাকে 'জাহান্নামের মা' হিসেবেও পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। তার শয়তানি ও বিদ্বেষ এতটাই প্রকট ছিল যে, স্বয়ং শয়তানও নাকি তা দেখে লজ্জা পেত। এই প্রতিবেদনে উম্মে জামিলের গল্প, তার কর্মকাণ্ড এবং কেন তিনি কোরআনে একমাত্র নারী হিসেবে তার শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে চিরতরে অভিশপ্ত হয়ে রয়েছেন, তা তুলে ধরা হলো।
কে ছিলেন উম্মে জামিল? উম্মে জামিলের আসল নাম ছিল আরওয়া বিনতে হারব। তিনি ছিলেন মক্কার প্রভাবশালী কুরাইশ বংশের নারী, ইসলামের কট্টর বিরোধী এবং নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর চাচা আবু লাহাবের স্ত্রী। সামাজিক মর্যাদা, ধন-সম্পদ এবং সৌন্দর্য – সবকিছুই তার জীবনে ছিল। কিন্তু এই উজ্জ্বল আবরণের নিচে লুকিয়ে ছিল এক অন্ধকার আত্মা। যখন নবী মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর একত্বের বার্তা প্রচার শুরু করলেন, তখন উম্মে জামিল ও তার স্বামী আবু লাহাব প্রথম থেকেই সত্যের শত্রু হয়ে ওঠেন।
নবীর প্রতি বিদ্বেষ ও ষড়যন্ত্র: উম্মে জামিলের অন্তরে নবী (সাঃ)-এর প্রতি এতই ঘৃণা ছিল যে, তা আগুনের মতো জ্বলত। তিনি প্রকাশ্যেই নবীর পথে কাটা ছড়াতেন এবং অপমানজনক কথা বলতেন। তার মুখের কথায় এতটাই বিষ ছিল, যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপও হার মেনে যেত। তাফসীর অনুযায়ী, তিনি দিনের বেলা মানুষের মধ্যে গীবত ও অপবাদ ছড়াতেন এবং রাতে কাঁটা সংগ্রহ করে নবীর দরজায় ছুড়ে দিতেন। তার এই আচরণ এতটাই নিকৃষ্ট ছিল যে, পবিত্র কোরআনের সূরা আল-মাসাদে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি তার নাম উল্লেখ করে তার শাস্তির ঘোষণা দেন।
কোরআনে বর্ণিত শাস্তি: সূরা আল-মাসাদে আল্লাহ তায়ালা উম্মে জামিল সম্পর্কে বলেন: "তার স্ত্রীও, যে কাঠ বহন করত, তার গলায় থাকবে পাকানো দড়ি।" এখানে 'কাঠ বহন' বলতে মানুষে মানুষে শত্রুতা ও ফিতনার আগুন ছড়ানোকে বোঝানো হয়েছে, যা তিনি নবীর পথে করতেন। আর 'গলায় দড়ি' মানে সেই অহংকারের ফাঁস, যা শেষ পর্যন্ত তাকেই গ্রাস করবে। ইসলামী ব্যাখ্যায় বলা হয়, তিনি দুনিয়ায় যেমন নবীর পথে আগুন ছড়াতেন, পরকালেও সেই আগুনই হবে তার শাস্তি। তার স্বামী আবু লাহাবেরও ধনসম্পদ তাকে রক্ষা করতে পারেনি; দুজনেই হয়ে গিয়েছিলেন অহংকার ও অবিশ্বাসের প্রতীক।
এক চিরন্তন শিক্ষা: উম্মে জামিলের গল্প শুধু এক নারীর কাহিনী নয়, এটি এক চিরন্তন শিক্ষা যে, যে আগুন অন্যের জন্য জ্বালানো হয়, একদিন সেই আগুন নিজের গলায় দড়ি হয়ে জড়িয়ে যায়। তিনি ইতিহাসে থেকে গেছেন কোরআনের একমাত্র নারী হিসেবে, যার শাস্তি আল্লাহ নিজ মুখে ঘোষণা করেছেন। অহংকার, হিংসা আর বিদ্বেষে পূর্ণ এক আত্মার নাম উম্মে জামিল, যাকে 'জাহান্নামের মা' হিসেবে স্মরণ করা হয়।
পৃথিবীর কক্ষপথের নতুন রহস্য: পৃথিবীর এখন দুটি চাঁদ
৪৫০ কোটি বছর ধরে চাঁদ পৃথিবীর সঙ্গে রয়েছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, পৃথিবীর এখন একটি নয়, দুটি চাঁদ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন এই মহাজাগতিক বস্তু বা গ্রহাণুটি, যা ‘কোয়াজি মুন’ নামে পরিচিত, তা অন্তত ২০৮৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর কাছাকাছি থাকবে।
‘আধা চাঁদ’ এবং রহস্য
শনাক্তকরণ: হাওয়াইয়ের প্যান স্টারস মানমন্দিরের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেপ্টেম্বর মাসে নতুন এই ‘কোয়াজি মুন’-এর সন্ধান পান। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘২০২৫ পিএন৭’।
অবস্থান: বর্তমানে এটি পৃথিবী থেকে ৫৯ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এই বস্তুটি পৃথিবীর মতো একই কক্ষপথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, কিন্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে বাঁধা নয়।
আকার: ৬২ ফুট বা ছয়তলা অট্টালিকার সমান এই ‘কোয়াজি মুন’ পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা বাকি ছয়টি কোয়াজি মুনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।
পর্যবেক্ষণ ও উৎপত্তি
এই নতুন প্রতিবেশী বেশি দিনের অতিথি নয় এবং খুব শীঘ্রই মহাবিশ্বের কোথাও হারিয়ে যাবে। এর আগে আবিষ্কৃত আরেক বিখ্যাত কোয়াজি মুন ‘কামোওয়ালেওয়া’ পৃথিবী সম্পর্কিত কক্ষপথে প্রায় ৩৮১ বছর ধরে আছে বলে জানা যায়।
দেখা: আমাদের চাঁদের মতো এটিকে খালি চোখে দেখা যাবে না। প্রয়োজন ভালো মানের টেলিস্কোপ। টেলিস্কোপের প্রথম দেখায় এটিকে দেখলে মনে হবে ‘কোয়াজি মুন’ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে।
উৎপত্তি: মাদ্রিদের কমপ্লুতেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-লেখক কার্লোস দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস বলেন, এই নতুন কোয়াজি মুনটি ছোট, ম্লান এবং পৃথিবী থেকে দেখার তেমন উপযোগী নয়, তাই এতদিন এটি নজরে আসেনি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এগুলো হয়তো প্রধান গ্রহাণু বলয় থেকে এসেছে, কিংবা চাঁদের ওপর আঘাতের ফলে বা বড় কোনো বস্তুর ভেঙে যাওয়া থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটির বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কোয়াজি মুনগুলো ‘আর্জুনা’ বিশেষ শ্রেণির মহাজাগতিক বস্তুর অন্তর্গত।
তথ্যসূত্র: ডেইলি মেইল
রূপকথা নয় সত্যি! আমাজনের গভীরে মিললো সেই ফুটন্ত জলের নদী
রূপকথার গল্পে কিংবা সিনেমায় আমরা প্রায়ই এমন দৃশ্যের দেখা পাই, যেখানে ফুটন্ত জলে কিছু পড়ে গেলে তা মুহূর্তেই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু যদি বলি, এমন একটি নদী বাস্তবেও আছে, যার জল এতটাই উত্তপ্ত যে তাতে ভুলবশত কোনো প্রাণী পড়ে গেলেই তা সেদ্ধ হয়ে যায়? হ্যাঁ, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন মহাবনের গভীরে পেরুর অংশে রয়েছে এমনই এক রহস্যময় নদী, যার পানি সবসময় ফুটন্ত অবস্থায় থাকে। এই নদীর ভয়ঙ্কর রহস্য নিয়ে বিস্তারিত জানাবো এই প্রতিবেদনে।
আমাজনের গভীরে ফুটন্ত নদী 'সানায় টিম্পি সখা': দক্ষিণ আমেরিকার বিশাল আমাজন মহাবনের গভীরে অবস্থিত পেরুর অংশে এক আজব ও ভয়ঙ্কর ফুটন্ত জলের নদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। স্থানীয় ইনকা জাতির মানুষ এই নদীকে 'সানায় টিম্পি সখা' নামে ডাকে, যার অর্থ 'সূর্যদেবের জলস্রোত'। প্রাচীন ইনকাদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যদেবের তাপেই এই নদীর জল সবসময় ফুটতে থাকে। স্প্যানিশ বাহিনী যখন ইনকা সভ্যতা জয়ের অভিযানে নেমেছিল, তাদের বিবরণেও এই নদীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
আন্দ্রে রুজোর ১২ বছরের অনুসন্ধান: অনেকের কাছে লোককথা বা রূপকথার গল্প মনে হলেও, পেরুর রাজধানী লিমার বাসিন্দা আন্দ্রে রুজু কিশোর বয়স থেকেই এই নদীর রহস্য উন্মোচনের স্বপ্ন দেখতেন। টানা ১২ বছর ধরে তিনি এই নদীর অস্তিত্ব নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচলে ভুগছিলেন। অবশেষে, পেরুর তাপমাত্রার মানচিত্র বা থার্মাল ম্যাপ তৈরির সময় তিনি জানতে পারেন, ছোটবেলায় শোনা সেই ফুটন্ত নদীর অস্তিত্ব সত্যিই আছে। তবে সেই নদীর জল সূর্যদেবের তাপে নয়, বরং মাটির গভীরের প্রাকৃতিক তাপেই ফুটছে।
রহস্যময় নদীটির বৈশিষ্ট্য ও স্থানীয়দের বিশ্বাস: ২০১১ সালের নভেম্বরে আন্দ্রে রুজু পেরুর মধ্য অংশে অভিযান চালিয়ে সেই রহস্যময় ফুটন্ত জলের জলাশয়টি খুঁজে বের করেন। প্রায় ৬ মাইল লম্বা এই নদীটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ঘন সবুজ গাছের প্রাচীর। নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা প্রায় ১৬ ফুট এবং এর পানির উষ্ণতা ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত হতে পারে। ধোঁয়া ওঠা ফুটন্ত জলের স্রোতে প্রায়শই বিভিন্ন প্রাণীর সেদ্ধ হয়ে যাওয়া মরদেহ ভাসতে দেখা যায়।
নদীর কাছাকাছি অবস্থিত মায়ানটুয়াকু গ্রামের পুরোহিতরা এই নদীকে পবিত্র মনে করেন এবং বহিরাগতদের নদীর কাছে যেতে বাধা দেন। তারা বিশ্বাস করেন, এই নদীর জল সংগ্রহ করে ঠান্ডা করার পর তা কেবলমাত্র ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আন্দ্রে বহু চেষ্টা ও আলোচনার পর একজন পুরোহিতের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে নদীর কাছে যাওয়ার অনুমতি পান।
ভূ-তাপীয় রহস্য উন্মোচন: আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই নদীর ধারে কাছে কোনো আগ্নেয়গিরি বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্র নেই। তাহলে এই নদীর জল কীভাবে সবসময় ফুটন্ত অবস্থায় থাকে? আন্দ্রে রুজুর ধারণা, মাটির নিচের তীব্র তাপমাত্রার কারণেই এমনটা ঘটে। তার মতে, পেরুর আমাজন জঙ্গলের গভীরে শিলাময় মাটিতে অসংখ্য ফাটল রয়েছে। বৃষ্টির জল সেই ফাটল দিয়ে মাটির গভীরে প্রবেশ করে এবং ভূগর্ভস্থ তাপের সংস্পর্শে এসে উত্তপ্ত হয়। এরপর সেই উত্তপ্ত জল আবার মাটির ফাটল দিয়ে উপরে উঠে আসে, যার ফলে নদীর পানি কয়েকশ গুণ বেশি উষ্ণ হয়ে ওঠে। অর্থাৎ, 'জিওথারমাল' বা 'হাইড্রোথারমাল' চক্রের বিক্রিয়াই এই ফুটন্ত নদীর মূল রহস্য।
আমাজনের গভীরে অবস্থিত এই ফুটন্ত জলের নদী 'সানায় টিম্পি সখা' প্রকৃতির এক অসাধারণ বিস্ময়। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের পৃথিবী এখনও অসংখ্য অজানা রহস্যে ভরা। আন্দ্রে রুজুর মতো গবেষকদের নিরলস প্রচেষ্টায় এইসব রহস্যের জট খুলছে এবং আমাদের সামনে পৃথিবীর নতুন নতুন বিস্ময় উন্মোচিত হচ্ছে।
যে দেশে ঘর জামাই দত্তক নিয়ে বানানো হয় কোম্পানির সিইও
'ঘর জামাই' শব্দটি বাংলাদেশে শুনলে অনেকে হাসি-ঠাট্টার বিষয় মনে করলেও, বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জাপানে এর রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অর্থ ও মর্যাদা। সেখানে বিলিয়নিয়ার পরিবারগুলো রীতিমতো দত্তক নেয় ঘর জামাই, যারা কেবল পরিবারের সদস্যই নন, হয়ে ওঠেন বিশাল কর্পোরেশনের কর্ণধার। এই প্রথার নাম 'মুকোশি', যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে জাপানের ঐতিহ্য এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
'মুকোশি' – দত্তক ঘর জামাইয়ের প্রথা: জাপানিজ প্রথা 'মুকোশি' (দত্তক ঘর জামাই) অনুযায়ী, কোনো পরিবারে যদি যোগ্য পুত্রসন্তান না থাকে, তাহলে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী একজন উপযুক্ত পুরুষকে দত্তক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। বিয়ের পর এই পুরুষ তার স্ত্রীর পদবী গ্রহণ করেন এবং সরাসরি পরিবারের ব্যবসার সিইও বা চেয়ারম্যানের পদে বসানো হয়। জাপানে এই প্রথাটি এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, গত শতাব্দী ধরে সুজুকি, টয়োটা কিংবা কিমান-এর মতো বড় বড় সাম্রাজ্যগুলোতে একের পর এক দত্তক পুত্ররাই নেতৃত্ব দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, সুজুকির টানা চারজন প্রধানই ছিলেন দত্তক জামাই। এমনকি গত বছর মারা যাওয়া সুজুকি মোটর কর্পোরেশনের প্রধান ওসামু সুজুকি নিজেও ছিলেন একজন দত্তক ঘর জামাই।
করের বোঝা কমানো ও উত্তরাধিকার নির্ধারণ: এই প্রথার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। পালিত সন্তানকে সম্পত্তি হস্তান্তর করলে পরিবারগুলোর উপর করের বোঝা অনেকটাই কমে যায়। তাই জাপানের নিঃসন্তান দম্পতিরা প্রায়ই এই প্রথার মাধ্যমে তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করেন। শুধু জাপানিজ নয়, ভাগ্যের চাকা অনুকূলে থাকলে, আদালতের অনুমতি ও প্রয়োজনীয় যোগ্যতা পূরণ করে বিদেশীরাও এই 'দত্তক ঘর জামাই' হওয়ার সুযোগ পেতে পারে, যদিও সেক্ষেত্রে তারা জাপানের নাগরিকত্ব পান না।
প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিক জীবনব্যবস্থা: ১৩০০ শতক থেকে চলে আসা এই প্রাচীন প্রথাটি আজও জাপানে সচল রয়েছে, যা দেশটির উন্নত জীবনব্যবস্থা, প্রাচীন ঐতিহ্য এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এক অসাধারণ প্যাকেজকে তুলে ধরে। জাপান এমন একটি দেশ, যেখানে 'ঘর জামাই' মানেই কেবল পরিবারের সদস্য নন, বরং অফিসের নতুন সিইও বা একজন সম্মানিত নেতা।
জাপানের 'মুকোশি' প্রথা আমাদের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে এবং প্রমাণ করে যে, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভিন্নতা কীভাবে একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে প্রভাবিত করতে পারে। এটি কেবল একটি বৈবাহিক প্রথা নয়, এটি জাপানের স্থিতিশীলতা ও ধারাবাহিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
এল ডোরাডো থেকে ট্রয়: ইতিহাসের হারানো ৬ শহর, যার রহস্য আজও অমীমাংসিত
মানবসভ্যতার ইতিহাসে বহু নগর গড়ে উঠেছিল শিল্প, স্থাপত্য আর জ্ঞানের উৎকর্ষে। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই শহরগুলোর কিছু হারিয়ে গেছে, কিছু ভেঙে পড়েছে, আবার কিছু মাটির নিচে চাপা পড়েছে। আজও সেসব শহরের ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে নিঃশব্দ সাক্ষীর মতো। ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা চেষ্টা করছেন রহস্যের জট খোলার, তবুও অনেক প্রশ্নের উত্তর আজও অমীমাংসিত।
চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই ৬টি হারানো শহরের কথা, যেগুলো আজও রহস্যে ঘেরা:

১. আটলান্টিস (Atlantis)
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো প্রথম আটলান্টিস নিয়ে লিখেছিলেন। তার মতে, এটি ছিল এক সমৃদ্ধশালী নগররাষ্ট্র, যেখানে প্রযুক্তি ও স্থাপত্য ছিল অতুলনীয়। কিন্তু হঠাৎ কোনো ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে শহরটি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যায়।
রহস্য: শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ আটলান্টিসের সন্ধান করছে। এটি কি সত্যিই ছিল, নাকি প্লেটোর কল্পনার অংশ—এই রহস্য আজও অমীমাংসিত।

২. মাচু পিচু (Machu Picchu)
পেরুর আন্দিজ পর্বতের উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আছে ইনকা সাম্রাজ্যের বিস্ময়কর শহর মাচু পিচু। ১৫শ শতকে নির্মিত এই শহরটি ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের নজরে আসে ২০শ শতকের শুরুতে। পাহাড়ের চূড়ায় পাথর কেটে এমন নিখুঁত স্থাপত্য নির্মাণই এর প্রথম বিস্ময়।
রহস্য: মাচু পিচুর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে—এটি কি রাজপ্রাসাদ ছিল, নাকি ধর্মীয় কেন্দ্র? এত উচ্চতায় পানি সরবরাহ ও কৃষি ব্যবস্থা কীভাবে চলত, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

৩. মোহনজো-দারো (Mohenjo-daro)
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে অবস্থিত মোহনজো-দারো ছিল প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার এক কেন্দ্র। প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত নগরায়ণ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও স্নানাগার।
রহস্য: হঠাৎ কেন শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়? প্রত্নতত্ত্ববিদরা বন্যা, ভূমিকম্প বা আক্রমণের ধারণা করলেও, শহরজুড়ে পাওয়া মানব কঙ্কালগুলোর হঠাৎ মৃত্যুর কারণ আজও নির্দিষ্ট নয়।

৪. পম্পেই (Pompeii)
খ্রিস্টপূর্ব ৭৯ সালে ইতালির পম্পেই শহর হঠাৎ করেই ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যায়। ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে মুহূর্তের মধ্যে শহরটি ছাইয়ের নিচে চাপা পড়ে। আজও ছাইয়ে ঢাকা মানুষের দেহ ও ঘরবাড়ি প্রায় অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।
রহস্য: মানুষ কেন এতদিন ধরে এই বিপজ্জনক আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বসবাস করছিল, যখন তারা বিপদের আভাস পাচ্ছিল—সেই প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত।

৫. অ্যাঙ্কর ওয়াট (Angkor Wat)
কম্বোডিয়ার জঙ্গলে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাঙ্কর ওয়াট শুধু একটি মন্দির নয়, বরং খেমার সাম্রাজ্যের এক বিশাল নগরকেন্দ্র। কিন্তু ১৫শ শতকের দিকে হঠাৎ করেই শহরটি পতনের পথে যায়।
রহস্য: জলবায়ু পরিবর্তন ও খরার কারণে কৃষি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল, নাকি আক্রমণকারীরা ধ্বংস করেছিল—এর পতনের আসল কারণ আজও রহস্যে ঢাকা।

৬. ট্রয় (Troy)
প্রাচীন গ্রিক মহাকাব্য ‘ইলিয়াড’-এ হোমার ট্রয় নগর নিয়ে বর্ণনা করেছেন। দীর্ঘকাল এটি কল্পকাহিনি ভাবা হলেও, ১৯শ শতকে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইনরিখ শ্লিমান আধুনিক তুরস্কে ট্রয়ের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পান।
রহস্য: ট্রোজান যুদ্ধ কি সত্যিই হয়েছিল, নাকি তা কেবল কাহিনি? শহরের ধ্বংসের আসল কারণ কী ছিল—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও সম্পূর্ণ পাওয়া যায়নি।
প্রাণের উৎস পানি, কিন্তু পানির জন্ম কোথায়? উত্তর মিললো বিজ্ঞান ও কোরআনে
আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে এই বিশাল মহাবিশ্বের প্রতিটি প্রাণবন্ত সত্তার টিকে থাকার পেছনে রয়েছে এক অপরিহার্য উপাদান – পানি। 'পানির অপর নাম জীবন' – এই প্রবাদ বাক্যটি তাই কেবল কথার কথা নয়, এর পেছনে রয়েছে সুগভীর বৈজ্ঞানিক ও মহাজাগতিক সত্য। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছি, যে পানি আমাদের অস্তিত্বের মূল, সেই পানির জন্ম ঠিক কখন, কীভাবে হয়েছিল এই অনন্ত মহাবিশ্বে? সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা এই রহস্যের এক চমকপ্রদ উত্তর খুঁজে পেয়েছেন, যা ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কোরআনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।
বিগ ব্যাং ও পানির প্রথম কণা: আধুনিক বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় জানিয়েছেন, মহাবিশ্বের সৃষ্টির মূল ঘটনা 'বিগ ব্যাং' বা মহাবিস্ফোরণের প্রায় ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরেই প্রথম পানির কণা তৈরি হয়েছিল। বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রায় ১৩৮০ কোটি বছর আগে একটি অতি ক্ষুদ্র, উত্তপ্ত এবং ঘন বিন্দু থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি হয়। এরপর এই মহাবিশ্ব অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে প্রসারিত হতে থাকে এবং শীতল হতে হতে বিভিন্ন কণার পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় তৈরি হয় গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি।
কোরআনের অবাক করা ইঙ্গিত: বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারের বহু শতাব্দী আগেই পবিত্র কোরআনে পানির উৎপত্তির এক ধারাবাহিক বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কোরআনের ২১ নম্বর সূরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?"। এই আয়াতে 'আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল' (অর্থাৎ একীভূত অবস্থা) এবং 'অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম' (অর্থাৎ বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং) – এই দুটি ধাপের পরপরই 'প্রাণবন্ত সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম' (অর্থাৎ পানির উৎপত্তি) – এই ধারাবাহিকতা আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এটি নির্দেশ করে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির একেবারে প্রথম দিকেই পানির অস্তিত্ব ছিল।
সুপারনোভা বিস্ফোরণ ও পানির জন্ম প্রক্রিয়া: বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে আরও গভীরের রহস্য উন্মোচন করেছেন। তাদের মতে, মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্রগুলো ধ্বংস হওয়ার পর যে 'সুপারনোভা' বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তারই ফলস্বরূপ পানির সৃষ্টি হয়েছে। এই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন ঠান্ডা হয়ে আশপাশের হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশে গিয়ে পানি তৈরি হয়। আমরা জানি, পানি রাসায়নিকভাবে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত।
বিগ ব্যাংয়ের শুরুর দিকে যখন মহাবিশ্ব শীতল হতে শুরু করে, তখন হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মতো হালকা উপাদানগুলো তৈরি হয়। প্রায় ১০ কোটি বছর পর এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মেঘগুলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে একত্রিত হয়ে নক্ষত্রে পরিণত হয়। এই নক্ষত্রগুলো যখন তাদের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ করে বিশাল সুপারনোভা বিস্ফোরণে ভেঙে যায়, তখন তাপমাত্রা প্রায় ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। এই উচ্চ তাপমাত্রায় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুগুলো অক্সিজেনের সাথে যুক্ত হয়ে বৃহত্তর অণু, অর্থাৎ পানির অণু তৈরি করে।
উপসংহার: পানির এই মহাজাগতিক সৃষ্টি প্রক্রিয়া, যা সুপারনোভা বিস্ফোরণ থেকে শুরু হয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের মিলনে শেষ হয়, তা অত্যন্ত দীর্ঘ ও জটিল একটি বৈজ্ঞানিক ঘটনা। এই বিশাল মহাজাগতিক ঘটনাপ্রবাহ কোনো মহাপরাক্রমশালী স্রষ্টার নির্দেশ ছাড়া ঘটা কি সম্ভব? আধুনিক বিজ্ঞান যখন মহাবিশ্বের গভীরতম রহস্যগুলো উন্মোচন করছে, তখন কোরআনের হাজার বছর আগের আয়াতগুলো যেন সেই রহস্যের চাবি হয়ে ধরা দিচ্ছে।
পিরামিডের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রহস্য: কোরআনের আলোয় ফারাওদের উত্থান-পতনের ইতিহাস
নীল নদের দেশ মিশর, যেখানে যুগে যুগে রাজত্ব করেছেন ফারাওরা। তাদের গৌরবময় সাম্রাজ্য, বিশাল পিরামিড আর রহস্যময় মমিগুলো আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের বিস্ময় কেড়ে নেয়। কিন্তু এই ৫০০০ বছরের পুরনো ইতিহাসের গভীরে লুকিয়ে আছে এক অপ্রত্যাশিত সংযোগ, যা ধর্মের ভবিষ্যদ্বাণী আর ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলে। এটি শুধু ফারাওদের উত্থান-পতনের গল্প নয়, এটি এক মহাপরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের দম্ভ, পতন এবং মুসলিমদের বিজয়ের এক অসাধারণ আখ্যান।
নীল নদের দান ও ফারাওদের উত্থান: প্রায় ৫০০০ বছর আগে, যখন পৃথিবীতে জলের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম, তখন নীল নদের অফুরন্ত জলরাশি মিশরকে দিয়েছিল এক অতুলনীয় শক্তি। এই নদের আশীর্বাদে মিশর হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও ক্ষমতাধর অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। ধীরে ধীরে কিং নরমালের মতো নেতার নেতৃত্বে মিশরে স্থাপিত হয় পৃথিবীর প্রথম সুসংগঠিত রাজতন্ত্র। হাজার বছর ধরে মিশর ছিল বিশ্বের একচ্ছত্র পরাশক্তি। এই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে ফারাওরা নিজেদেরকে কেবল রাজা নয়, বরং 'খোদা' হিসেবে দাবি করতে শুরু করে। তারা এমন এক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে প্রজারা বিশ্বাস করত যে ফারাওদের দাসত্ব করলেই কেবল পরকালে মুক্তি মিলবে।
মমি আর পিরামিডের রহস্য: ফারাওদের এই খোদা হওয়ার ধারণার একটি অদ্ভুত পরিণতি ছিল মমি তৈরির প্রচলন। তারা বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও যদি শরীর অক্ষত থাকে, তবে তাদের 'খোদা' সত্তা টিকে থাকবে। তাই ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের দেহ থেকে অত্যন্ত নিপুণভাবে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে (কেবল হৃদপিণ্ড বাদে) বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত করা হতো। এরপর সেই মমির ওপর তৈরি হতো বিশাল সব পিরামিড। খুফুর মতো ফারাওদের পিরামিডগুলো এত বিশাল ছিল যে, প্রায় ৩৫০০ বছর ধরে এটি ছিল বিশ্বের উচ্চতম স্থাপনা। কিন্তু এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞ মিশরের অর্থনীতিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়।
হযরত ইউসুফ (আঃ) ও বনি ইসরাইলের আগমন: মিশরের অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে এক দাস হিসেবে আগমন ঘটে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর। তার অসাধারণ প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় তিনি মিশরের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশটির অর্থনীতিকে আবার চাঙ্গা করে তোলেন। এরপর তার বংশধর, অর্থাৎ বনি ইসরাইলরা মিশরে বসবাস শুরু করে এবং এক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এক নতুন ফারাওয়ের অত্যাচার ও হযরত মূসা (আঃ)-এর আবির্ভাব: কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস! এক নতুন ফারাওয়ের আগমনের সাথে সাথে বনি ইসরাইলের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। এই ফারাও তাদের দাস বানিয়ে নেয় এবং জ্যোতিষীদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, তার সাম্রাজ্য বিনাশকারী এক বনি ইসরাইলী শিশুর জন্ম ঠেকানোর জন্য সমস্ত নবজাতক পুত্রসন্তানকে হত্যার নির্দেশ দেয়। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যেই জন্ম নেন হযরত মূসা (আঃ), যিনি অলৌকিকভাবে ফারাওয়ের ঘরেই পালিত হন।
ফারাও রামসেসের পতন ও মিশরের অন্ধকার যুগ: নবী হিসেবে আবির্ভূত হয়ে হযরত মূসা (আঃ) ফারাও রামসেসের কাছে বনি ইসরাইলকে মুক্তির দাবি জানান। অনেক অলৌকিক ঘটনার পর ফারাও রাজি হলেও শেষ মুহূর্তে সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে বনি ইসরাইলের পিছু ধাওয়া করে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় লোহিত সাগরে ফারাও রামসেস ও তার বিশাল বাহিনী ডুবে যায়, যা ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। এই ঘটনার পর মিশর আর কখনও তার পুরনো শক্তি ফিরে পায়নি এবং প্রবেশ করে এক দীর্ঘ অন্ধকার যুগে।
রাসূল (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ও মুসলিমদের বিজয়: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মুসলিমরা একদিন মিশর জয় করবে এবং তিনি সেখানকার মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছিলেন। রোমানদের ৬০০ বছরের শাসনের পর, হযরত ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের সময় সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি প্রমাণিত হয়। মুসলিমরা মিশর জয় করে এবং এই অঞ্চলের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
উপসংহার: ফারাওদের মিশর, তার সমৃদ্ধি, ধর্মীয় উন্মাদনা, এবং পতনের গল্প আজও আমাদের অনেক কিছু শেখায়। বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ধর্মের এই সমন্বিত আখ্যান প্রমাণ করে, মহাবিশ্বের প্রতিটি ঘটনার পেছনে রয়েছে এক সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যা কখনো কখনো হাজার বছর আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়।
জ্বীনের অদৃশ্য জগৎ: বিজ্ঞান কি খুলতে চলেছে সেই রহস্যের দরজা?
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব হলেও এই মহাবিশ্বে আমরা একা নই। আমাদের জানার বাইরেও রয়েছে এক বিশাল ও অদৃশ্য জগৎ। যুগ যুগ ধরে ধর্মগ্রন্থগুলো, বিশেষ করে পবিত্র কোরআন, জ্বীন নামক এক অদৃশ্য জাতির কথা বলে আসছে, যারা আগুন থেকে তৈরি এবং যাদের রয়েছে নিজস্ব জীবনব্যবস্থা। এতদিন এই বিশ্বাসটি মূলত আধ্যাত্মিক জগতেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের কিছু যুগান্তকারী তত্ত্ব এই অদৃশ্য জগতের রহস্যের দিকে নতুন করে আঙুল তুলেছে। কোয়ান্টাম ফিজিক্স, প্যারালাল ইউনিভার্স এবং অ্যান্টিম্যাটারের মতো জটিল ধারণাগুলো কি তবে জ্বীনের অস্তিত্বের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হতে চলেছে?
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্বীন হলো এক বিশেষ সৃষ্টি, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু মানুষের মতোই তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, "আমি জ্বীন ও মানুষকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।" এই অদৃশ্য সৃষ্টিকে নিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের মনে অবিশ্বাস থাকলেও বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক কিছু তত্ত্ব নতুন করে ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
অ্যান্টিম্যাটার ও অদৃশ্য জগৎ: পার্টিকেল ফিজিক্স বা কণা পদার্থবিজ্ঞান অনুযায়ী, এই মহাবিশ্বে প্রতিটি কণার (Particle) বিপরীতে একটি প্রতিকণা (Anti-particle) রয়েছে। যেমন, ইলেকট্রনের বিপরীতে রয়েছে পজিট্রন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আমাদের দৃশ্যমান জগৎ যদি পদার্থ (Matter) দিয়ে তৈরি হয়, তবে এর সমান্তরালে প্রতিপদার্থ (Anti-matter) দিয়ে তৈরি একটি জগৎ থাকাও সম্ভব। এই প্রতিপদার্থের জগৎ আমাদের কাছে অদৃশ্য। পৃথিবীতে প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের বিপরীতে যদি সমসংখ্যক 'প্রতি-মানুষ' থাকে, যারা অদৃশ্য, তবে সেই ধারণাকে কি জ্বীনের অস্তিত্বের সাথে তুলনা করা চলে?
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অদ্ভুত জগৎ: কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জগৎ আরও রহস্যময়। এর 'সুপারপোজিশন' তত্ত্ব অনুযায়ী, একটি কণা একই সময়ে একাধিক স্থানে এবং একাধিক অবস্থায় থাকতে পারে। আবার 'কোয়ান্টাম টানেলিং' তত্ত্ব বলছে, একটি কণা যেকোনো বাধা ভেদ করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে পারে। এই ধারণাগুলো যদি সত্যি হয়, তবে এমন এক সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকাও সম্ভব, যারা আমাদের মাত্রার সীমাবদ্ধতা মানে না এবং যেকোনো বাধা অনায়াসে অতিক্রম করতে পারে। কোরআনে বর্ণিত জ্বীনদের অদৃশ্য থাকার এবং বিভিন্ন রূপ ধারণ করার ক্ষমতার সঙ্গে এই ধারণাগুলোর অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্যারালাল ইউনিভার্স বা সমান্তরাল মহাবিশ্ব: আধুনিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর একটি হলো 'প্যারালাল ইউনিভার্স' বা সমান্তরাল মহাবিশ্বের ধারণা। আমাদের মহাবিশ্বের মতোই আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব একইসাথে বিদ্যমান, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়। পবিত্র কোরআনে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগেই সাত আসমান এবং অনুরূপ জমিনের কথা বলা হয়েছে। বিজ্ঞানের 'মাল্টিভার্স' তত্ত্ব যেন কোরআনের এই ধারণারই প্রতিধ্বনি। যদি সত্যিই সমান্তরাল কোনো জগৎ থেকে থাকে, তবে সেখানে জ্বীনের মতো বুদ্ধিমান مخلوق বসবাস করতেই পারে।
শেষ কথা: যদিও বিজ্ঞানীরা জ্বীনের অস্তিত্ব নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে পদার্থবিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী তত্ত্বগুলো আমাদের সামনে এক নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। যা এতদিন কেবল বিশ্বাসের বিষয় ছিল, তা এখন বিজ্ঞানের আলোচনার টেবিলে জায়গা করে নিচ্ছে। ধর্ম ও বিজ্ঞানের এই মেলবন্ধন হয়তো একদিন অদৃশ্য জগতের রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করবে।
পাঠকের মতামত:
- ধ্বংসস্তূপ থেকে মহাশক্তি: চীনের পুনর্জন্মের বিস্ময়গাঁথা
- হাশরের ময়দান: যে অপরাধের জন্য পশু-পাখিরও বিচার হবে
- ০২ নভেম্বর: ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের নামাজের সময়সূচি
- হঠাৎ যমুনায় তিন বাহিনী প্রধানের আগমন নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে যা জানা গেল
- ওষুধ ছাড়াই হাতের ব্যথা সারান সহজ এই ব্যায়ামটি ঘরে বসেই করতে পারবেন
- রাশিয়ার অপ্রতিরোধ্য পারমাণবিক অস্ত্র পসাইডন ইউরোপের নিরাপত্তায় নতুন হুমকি
- সহজ কিছু টিপস মানলেই আমেরিকা ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
- রাজনীতির স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করা হচ্ছে কড়া সমালোচনা সালাহউদ্দিন আহমদের
- যুবদল নেতার চাঁদাবাজির টাকা দিয়েই গণভোট সম্ভব: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর
- সোনার বাংলাদেশ নয় এবার 'খেলাফতের বাংলাদেশ' দেখতে চান মাওলানা মামুনুল হক
- নির্বাচন কমিশন কেকের মতো ভাগাভাগি হয়ে গেছে: হাসনাত
- আয়ারল্যান্ড সিরিজ দিয়ে শান্তর নতুন চক্রের সূচনা তিন অধিনায়কের যুগ বহাল
- ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সরকার বদ্ধপরিকর: ইসি আনোয়ারুল
- ১৪ বছরের প্রতীক্ষা শেষে খুলনায় আধুনিক কারাগার চালু ফুল দিয়ে বরণ করা হলো কয়েদিদের
- ধাপে ধাপে জানুন বিদেশ থেকে আনা হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের প্রক্রিয়া
- উপহার নিয়ে তোলপাড় ভারতে বাংলাদেশের 'বিকৃত' মানচিত্র প্রসঙ্গে দিল্লির জবাব
- কঠিন ব্যাকরণ নয় শিশুদের মতো করে ইংরেজি শেখার সহজ কৌশল শিখে নিন
- বিচার বিলম্বিত করার নতুন কৌশল নভেম্বরের মধ্যে শেখ হাসিনার মামলার রায় অনিশ্চিত
- ট্রাম্পের ৭,৫০০ শরণার্থী সীমা: যুক্তরাষ্ট্রের সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতির পুনরাবৃত্তি
- অভিনয় ছেড়ে শরীর নিয়েই বেশি চর্চা হয় কেন সিডনি সুইনি মুখ খুললেন নগ্ন দৃশ্য বিতর্কে
- তীব্র আর্থিক সংকটে অন্তর্বর্তী সরকার
- ফিলিস্তিনি বন্দির ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস,শীর্ষ ইসরাইলি জেনারেলের পদত্যাগ
- বিশ্ব পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে ভারতের বড় ধস
- ওষুধ নয় প্রাকৃতিক উপায়ে অ্যালার্জি কমাবে রান্নাঘরের ৭ সুপারফুড
- নির্বাচনের আগে গণভোট চায় না যারা তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়: জামায়াত নেতা
- ভারত কি পরামর্শ দেবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে যা জানা গেল দিল্লিতে
- চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে আবারও পর্দায় পূজা চেরি
- নিম্ন-আয়ের মানুষের দুর্ভোগ গরিবের বরাদ্দ চাল নিয়ে 'চালবাজি' থামছে না
- বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলঙ্কায় সরকার পরিবর্তন কেন হলো বিশ্লেষণ করলেন ভারতের এনএসএ
- বাংলাদেশকে নিয়ে অজিত দোভালের করা মন্তব্যে তোলপাড়
- ট্রাম্পের দেওয়া রুপার নেকলেস নিজের কাছে রাখতে মূল্য পরিশোধ করলেন কিয়ার স্টারমার
- অস্কার আলোচনায় সিডনি সুইনি: পর্দায় প্রতিভা, রেড কার্পেটে রূপের জাদু
- আপনার এনআইডিতে কয়টি সিম নিবন্ধিত জেনে নিন এখনই বন্ধ হতে পারে অতিরিক্ত সিম
- দীর্ঘমেয়াদি কাশি হতে পারে ফুসফুস ক্যান্সার জেনে নিন সতর্কতার সংকেত
- ওষুধ ছাড়াই সুস্থ জীবন আদা ব্যবহারের ৪০টি জাদু টিপস যা আপনার জীবন বদলে দেবে
- ভিডিও ডাউনলোডের ঝামেলা শেষ কম ডেটায় দ্রুত কাজ করবে এই অ্যাপগুলো
- ১৯৯২ সালের পর নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের নির্দেশনায় বাড়ল বৈশ্বিক পারমাণবিক ঝুঁকি
- মুরের জাদুতে শীর্ষ দলকে হারাল ওরেক্সহাম
- আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার পথ দেখালেন ড. ইউনূস
- পাকিস্তান আমলের সঙ্গে তুলনায় দুর্নীতি এখন সমাজের অনুষঙ্গ: জামায়াত আমির
- সুদানের আকাশে রক্তের চিহ্ন স্যাটেলাইট চিত্রেও দেখা যাচ্ছে মর্মান্তিক দৃশ্য
- জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের বড় উদ্যোগ আলোচনায় দুই প্রধান দল
- একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট? জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কঠিন দ্বিধায় অন্তর্বর্তী সরকার
- ফখরুলের অভিযোগ: অন্তর্বর্তী সরকার আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে
- শেষ হলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ
- অনন্য মামুনের পোস্টে ঢালিউডে তামান্না ভাটিয়ার সম্ভাব্য আগমন
- নিজ দেশে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ
- ডা. জাকির নায়েক ঢাকায় আসছেন, ভারতের দাবি হস্তান্তরের
- রক্তদান শুধু মানবসেবা নয়, এটি এক মহৎ ইবাদত
- জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে ড. গালিবের সতর্কবার্তা
- রাজনীতি, নির্বাসন ও নৈতিকতা: শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার দক্ষিণ এশিয়ার বাস্তবতাকে কোথায় নিচ্ছে
- IFIC ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
- পূবালী ব্যাংকের Q3 আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
- ইতিহাসের পাতায় আজ: ৩০ অক্টোবর - বিজয়, বিপ্লব আর বেদনার দিন
- ২৮ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- ২৯ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ প্রভাবে ৫ দিন দেশজুড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস
- আজকের বাজারের সেরা এবং খারাপ পারফরমার: লাভের সম্ভাবনা কোথায়?
- রাসুল (সা.) কেন অন্যের পাপকাজ প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন?
- রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- ২৮ অক্টোবর ডিএসই লেনদেনের সারসংক্ষেপ
- মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় বাবা হারানো: দুই শিশুর ভবিষ্যৎ নিয়ে স্ত্রীর আকুল আবেদন
- ২৭ অক্টোবরের ডিএসই লেনদেনে শীর্ষ গেইনার তালিকা প্রকাশ
- GSP ফাইন্যান্স এর Q3 আর্থিক ফলাফল প্রকাশ
- ফখরুলের অভিযোগ: অন্তর্বর্তী সরকার আস্থার সেতু ভেঙে দিয়েছে








