বিশেষ সংবাদ

ইনসুলিনের দামে বৈষম্য: বন্ধের মুখে দেশীয় উৎপাদন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৪ ০৮:১৫:৩০
ইনসুলিনের দামে বৈষম্য: বন্ধের মুখে দেশীয় উৎপাদন
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীদের জীবন রক্ষাকারী অন্যতম ওষুধ ইনসুলিন উৎপাদনে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক বড় সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ইনসুলিনের দামের তুলনায় বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ইনসুলিনের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় দেশীয় কোম্পানিগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে, যার ফলে উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ওষুধ কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ২০০৭ সাল থেকে দেশে আন্তর্জাতিক মানের ইনসুলিন তৈরি করে আসছে। বিদেশি ওষুধের তুলনায় দেশীয় ইনসুলিন সাশ্রয়ী হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীরা ব্যাপকভাবে এটি ব্যবহার করে।

ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ১৪ বছর আগে দেশীয় ইনসুলিনের একটি ডোজের মূল্য ২২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল এবং আজও সেই একই দামে এটি বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই সময়ে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত ইনসুলিনের দাম ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে ৬৩৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এই অস্বাভাবিক মূল্য বৈষম্যের কারণে দেশীয় উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে, ইনসুলিন আমদানির জন্য দেশ থেকে প্রচুর ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে।

দেশে প্রায় ১৩ লাখ ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত ইনসুলিন ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৬০ ভাগ দেশীয় ইনসুলিন এবং ৪০ ভাগ আমদানিকৃত ইনসুলিন ব্যবহার করেন। এই ৪০ ভাগ রোগীর পেছনে বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা খরচ হয়, যেখানে দেশীয় ইনসুলিন ব্যবহারকারী ৬০ ভাগ রোগীর খরচ মাত্র ৩২ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ওষুধ শিল্প সমিতির মতে, দেশে উৎপাদিত ইনসুলিনের গুণগত মান উন্নতমানের। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এটি অনেক দেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন বলেন, ডায়াবেটিস রোগীদের বৃহত্তর স্বার্থে এই মূল্য বৈষম্য দ্রুত নিরসন করা জরুরি। অন্যদিকে ওষুধ বিক্রেতারা মনে করেন, প্রচুর ডলার বিদেশে যাওয়া বন্ধ করতে চিকিৎসকদের মানসিকতা পরিবর্তন করা এবং দেশীয় ইনসুলিনের ব্যবহার বাড়ানো জরুরি।

তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, জনস্বার্থে ইনসুলিনের দাম বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা বর্তমানে সরকারের নেই।


কেন শীতেই কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং বাঁচার উপায় কী?

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৮ ১১:৫৪:৩৩
কেন শীতেই কিডনির ওপর বাড়তি চাপ পড়ে এবং বাঁচার উপায় কী?
ছবি : সংগৃহীত

শীতের মৌসুমে সাধারণ সর্দি-কাশির আড়ালে বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে কিডনির জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতকালে রক্তসঞ্চালন ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় বড় ধরনের পরিবর্তনের কারণে কিডনির ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। ভারতের বিখ্যাত নেফ্রোলজিস্ট ডা. আদিত্য নায়ক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, শীতে মানুষের কম পানি পান করা এবং দীর্ঘ সময় ঘরের ভেতরে থাকার প্রবণতা মূত্রনালির সংক্রমণ বা ইউটিআইয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যা থেকে শেষ পর্যন্ত কিডনি বিকল হতে পারে।

২০২৩ সালে ‘বিএমসি নেফ্রোলজি’ সাময়িকায় প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, শীতকালীন ঠান্ডা আবহাওয়ায় মানুষের রক্তনালি সংকুচিত হয়ে যায়। এর ফলে কিডনিতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। যাদের আগে থেকেই কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা কম, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে ওঠে। এছাড়া শীতকালে নিউমোনিয়ার মতো বক্ষসংক্রমণও বাড়ে, যা পরোক্ষভাবে কিডনিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। গবেষকদের মতে, পানিশূন্যতা এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শীতকালে ‘আকস্মিক কিডনি বিকল’ বা ‘একিউট কিডনি ইনজুরি’র প্রধান কারণ।

কিডনি সুস্থ রাখতে চিকিৎসকরা কিছু বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন। শরীর গরম রাখতে স্তরে স্তরে পোশাক পরার পাশাপাশি তৃষ্ণা না পেলেও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। সুষম খাদ্য হিসেবে ফল ও সবজি গ্রহণ করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী এবং যারা আগে থেকেই কিডনি রোগে আক্রান্ত, তাদের ফুসফুসের সংক্রমণ রোধে আগাম টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. আদিত্য নায়ক। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা কিডনি সুরক্ষায় অপরিহার্য।

বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করেছেন যে, প্রস্রাবে জ্বালা, জ্বর, তলপেটে ব্যথা কিংবা প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে কোনোভাবেই দেরি করা যাবে না। শীতকালে রক্তচাপ ও শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখলে কিডনি ক্ষতির ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসই পারে হাড়কাঁপানো শীতে আপনার গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিকে নিরাপদ রাখতে।


স্ট্রেস থেকে উচ্চ রক্তচাপ: হার্ট অ্যাটাক রুখতে মেনে চলুন ৫ নিয়ম

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ২১:৫৪:১৫
স্ট্রেস থেকে উচ্চ রক্তচাপ: হার্ট অ্যাটাক রুখতে মেনে চলুন ৫ নিয়ম
ছবি : সংগৃহীত

আধুনিক যুগের ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এখন নিত্যসঙ্গী। তবে এই চাপ যখন দীর্ঘমেয়াদি হয়, তখন তা কেবল মনের ওপর নয়, সরাসরি হৃদযন্ত্রের ওপর মরণ কামড় বসায়। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন যে, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের ফলে শরীরে 'কর্টিসল' নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। এই হরমোনের আধিক্য রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ধমনীতে চর্বি জমায় এবং রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যায়, যা শেষ পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

চিকিৎসকদের মতে, কর্মক্ষেত্রের অতিরিক্ত চাপ, পারিবারিক কলহ, আর্থিক অনটন এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী বিষণ্নতা ও উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই মানসিক অস্থিরতা সরাসরি হৃদস্পন্দনকে অনিয়মিত করে তোলে এবং হৃদপিণ্ডের পেশিকে দুর্বল করে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে কোনো আগাম উপসর্গ ছাড়াই ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এক ধরনের 'সাইলেন্ট কিলার' বা নীরব ঘাতক বলা হয়।

বিশেষজ্ঞরা আরও লক্ষ্য করেছেন যে, মানসিক চাপে থাকা ব্যক্তিরা প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত ধূমপান, মদ্যপান, জাঙ্ক ফুড গ্রহণ এবং কায়িক শ্রম কমিয়ে দেওয়ার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি আরও প্রকট হয়। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা এবং ডিজিটাল ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

এই মরণব্যাধি থেকে বাঁচতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত শরীরচর্চা ও সুষম খাবারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, পর্যাপ্ত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম এবং যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে জাদুর মতো কাজ করে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, জীবনের ছোটখাটো সমস্যাগুলোকে বড় করে না দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি লালন করতে হবে। যদি মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে লজ্জা না পেয়ে দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। সচেতন জীবনযাপনই পারে আপনার হৃদযন্ত্রকে দীর্ঘকাল সচল ও প্রাণবন্ত রাখতে।


অজান্তেই পিত্তথলিতে পাথর জমাচ্ছে আপনার এই ৫টি ভুল অভ্যাস

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৭ ১২:১৭:০৫
অজান্তেই পিত্তথলিতে পাথর জমাচ্ছে আপনার এই ৫টি ভুল অভ্যাস
ছবি : সংগৃহীত

পিত্তথলিতে পাথর বা গলস্টোন বর্তমান সময়ের একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকের ক্ষেত্রেই এটি শুরুতে কোনো উপসর্গ প্রকাশ করে না, কিন্তু যখন পাথর পিত্তনালিতে আটকে যায়, তখন শুরু হয় অসহ্য ব্যথা, বমি এবং বদহজম। চিকিৎসকদের মতে, আমাদের প্রতিদিনের কিছু ভুল অভ্যাসই লিভারে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জমিয়ে পাথর তৈরির প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ম্যানিপাল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. অনিকেত পায়াগুডে সতর্ক করেছেন যে ৫টি অভ্যাস পিত্তথলির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি।

প্রথমত, নিয়মিত সময় মেনে খাবার না খাওয়া পিত্তথলির বড় শত্রু। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে পিত্তথলিতে পিত্ত জমে ঘন হয়ে যায় এবং সেখান থেকেই কোলেস্টেরল জমে পাথর তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার পিত্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তৃতীয়ত, শারীরিক পরিশ্রমহীন অলস জীবনযাপন বিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়, যা স্থূলতা ও গলস্টোনের ঝুঁকি তৈরি করে। এছাড়া দ্রুত ওজন কমানোর জন্য 'ক্র্যাশ ডায়েট' করলে লিভার অতিরিক্ত কোলেস্টেরল নিঃসরণ করে, যা পিত্তথলির ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। সবশেষে, খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পানি ও আঁশযুক্ত খাবারের অভাব হজম প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন যে সব ধরনের গলস্টোনের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। তবে যদি পিত্তথলিতে সংক্রমণ, প্যানক্রিয়াটাইটিস বা পিত্তনালিতে বাধা সৃষ্টি হয়, তবে 'ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটমি' বা আধুনিক ফুটো করে অস্ত্রোপচারই সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান। জটিল ক্ষেত্রে অনেক সময় ওপেন সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে। তাই দীর্ঘদিনের পেটব্যথা বা হজমের সমস্যাকে সাধারণ গ্যাস্ট্রিক মনে করে অবহেলা করা ঠিক নয়।

পিত্তথলির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুষম খাদ্যাভ্যাস, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পানি পানের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে শাকসবজি, ফলমূল এবং হোলগ্রেন খাবার পিত্তের স্বাভাবিক প্রবাহ বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে আপনিও এড়িয়ে যেতে পারেন পিত্তথলিতে পাথরের মতো যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা। সুস্থ থাকতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


শীতে বাড়ে কর্নিয়ার আলসার: চোখের যত্নে করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৫ ১১:১৮:২৯
শীতে বাড়ে কর্নিয়ার আলসার: চোখের যত্নে করণীয়
ছবি : সংগৃহীত

গ্রীষ্মের প্রখর রোদে আমরা চোখের সুরক্ষায় সচেতন থাকলেও শীতকালে বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই উপেক্ষা করা হয়। তবে চক্ষু বিশেষজ্ঞদের মতে বছরের এই সময়ে চোখের স্বাস্থ্যঝুঁকি গ্রীষ্মের তুলনায় বহুগুণ বেড়ে যায়। এর প্রধান কারণ হলো শীতের শুষ্ক বাতাস এবং আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়া বায়ুদূষণ। বাতাসে ভেসে থাকা বিষাক্ত ধূলিকণা আর ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান সরাসরি চোখের সংস্পর্শে এসে চোখের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। শহর ও শিল্পাঞ্চলের ধোঁয়াশা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে যার ফলে চোখের কর্নিয়ায় সূক্ষ্ম ক্ষত তৈরি হতে পারে। এই ক্ষতস্থানে ধূলিকণা বা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘কর্নিয়ার আলসার’ বলা হয়।

কর্নিয়া হলো আমাদের চোখের আলোক প্রবেশের স্বচ্ছ লেন্স বা প্রবেশদ্বার। কর্নিয়ার আলসারকে একটি ‘মেডিকেল এমার্জেন্সি’ হিসেবে গণ্য করা হয় কারণ এটি চোখের স্থায়ী অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। সংক্রমণের ফলে কর্নিয়ায় যে সাদাটে দাগ তৈরি হয় তা আলোক রশ্মি চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে ঝাপসা করে দেয়। সংক্রমণের মাত্রা গভীর হলে কর্নিয়া ফুটো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে যা চোখের অভ্যন্তরীণ অংশকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলে। বিশেষ করে ছত্রাক বা বিশেষ কিছু ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এতটাই দ্রুত ছড়ায় যে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরো চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যথাযথ চিকিৎসা না করালে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রোপচার করে চোখ বাদ দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

কর্নিয়ার আলসারের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে চোখ প্রচণ্ড লাল হয়ে যাওয়া এবং অনবরত পানি পড়া। এর পাশাপাশি চোখে তীব্র ব্যথা বা খচখচানি ভাব অনুভব করা এবং আলোর দিকে তাকাতে সমস্যা হওয়া অন্যতম লক্ষণ। অনেক সময় চোখের মণির ওপর স্পষ্ট সাদা দাগ লক্ষ্য করা যায় যা সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায় নির্দেশ করে। বিশেষ করে যারা পেশাগত কারণে বাইরে কাজ করেন কিংবা ধুলোবালির মধ্যে বেশি যাতায়াত করেন তাদের ক্ষেত্রে এই রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

দৃষ্টিশক্তি সুরক্ষিত রাখতে হলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বাইরে বের হওয়ার সময় সানগ্লাস বা প্রোটেক্টিভ চশমা ব্যবহার করা উচিত যা সরাসরি বাতাস ও ধূলিকণা থেকে চোখকে রক্ষা করবে। চোখে বারবার হাত দেওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করার পাশাপাশি প্রতিদিন পরিষ্কার ও ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধোয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। যদি চোখে কোনো ধরণের অস্বস্তি বা লাল ভাব দেখা দেয় তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কোনো ড্রপ ব্যবহার করা একদমই উচিত নয়। সামান্য সচেতনতাই পারে শীতের এই বৈরি পরিবেশে আপনার মূল্যবান দৃষ্টিশক্তিকে সুরক্ষিত রাখতে।


পাকস্থলীর ধ্বংস করছে আপনার এই ৩টি সাধারণ অভ্যাস

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ২১:৩৯:৩৪
পাকস্থলীর ধ্বংস করছে আপনার এই ৩টি সাধারণ অভ্যাস
ছবি : সংগৃহীত

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলোকে আমরা আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা ক্ষতিকর মনে করি না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই অভ্যাসগুলোই নীরবে আমাদের পাকস্থলীর অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে। ফ্লোরিডার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট এবং প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. জোসেফ সালহাব সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায় পাকস্থলীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তিনটি ‘গাট টক্সিন’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে ধূমপান, অতিরিক্ত ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার এবং নিয়মিত মদ্যপান—এই তিনটি অভ্যাসই গ্যাস্ট্রাইটিস ও রক্তক্ষরণজনিত আলসারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।

ডা. সালহাবের বিশ্লেষণ অনুযায়ী ধূমপান বা ভেপিং কেবল ফুসফুসেরই ক্ষতি করে না বরং এটি সরাসরি খাদ্যনালি ও পাকস্থলীতে আঘাত হানে। সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকা রাসায়নিক উপাদান পাকস্থলীর নরম আস্তরণে ক্ষত সৃষ্টি করে যা দীর্ঘমেয়াদে প্রদাহ ও তীব্র গ্যাস্ট্রাইটিসের কারণ হয়। এছাড়া নিকোটিনের প্রভাবে পাকস্থলীতে স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ কমে যায় যার ফলে কোনো ক্ষত তৈরি হলে তা সহজে সারতে চায় না। এটি ক্রমান্বয়ে পাকস্থলীর ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে।

অনেকেই সামান্য শরীর ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ বা এনএসএআইডিএস (NSAIDs) গ্রহণ করেন। ডা. সালহাব জানান যে এই ধরণের ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার পাকস্থলীর আস্তরণে তীব্র জ্বালা এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যথানাশক ব্যবহারের ফলে পেপটিক আলসারের সম্ভাবনা তৈরি হয় যা প্রাণঘাতী হতে পারে। একইভাবে অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের ক্ষতির পাশাপাশি পাকস্থলীর আস্তরণে প্রদাহ সৃষ্টি করে যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘অ্যালকোহল গ্যাস্ট্রাইটিস’ বলা হয়। এর ফলে দীর্ঘস্থায়ী পেটব্যথা, বমি ও বুকজ্বালার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

পাকস্থলী ও হজমতন্ত্রকে সুস্থ রাখতে ডা. সালহাব কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ধূমপান ও ভেপিং সম্পূর্ণ বর্জন করার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ধরণের ব্যথানাশক ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ এবং দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করা জরুরি। পেটের কোনো সমস্যা বা আলসারের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট। ছোট কিছু সচেতন সিদ্ধান্তই দীর্ঘমেয়াদে আপনার পাকস্থলীকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখতে পারে।


ঠোঁট ফাটা কেবল শীতের দোষ নয় বরং আসল অপরাধী অন্য কেউ

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৩ ২০:৫৪:১৪
ঠোঁট ফাটা কেবল শীতের দোষ নয় বরং আসল অপরাধী অন্য কেউ
ছবি : সংগৃহীত

শীতের আগমনে প্রকৃতির রুক্ষতার প্রথম প্রভাব পড়ে মানুষের ঠোঁটের ওপর। বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে গায়ের চামড়ার পাশাপাশি অনেকের ঠোঁট ফেটে চৌচির হয়ে যায় এবং ক্ষেত্রবিশেষে রক্তক্ষরণের মতো যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষ একে কেবল ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব মনে করলেও চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। ঠোঁট ফাটার নেপথ্যে কেবল আবহাওয়া নয় বরং শরীরে বিশেষ একটি পুষ্টি উপাদানের অভাব বড় ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিনের ঘাটতি থাকলে শীতের প্রকোপ ছাড়াও সারা বছর ঠোঁট শুষ্ক ও খসখসে থাকতে পারে।

প্রাকৃতিকভাবে শীতকালে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অন্য যেকোনো ঋতুর তুলনায় অনেক কম থাকে যার ফলে আমাদের শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণ কমে যায়। এর ফলে ত্বকের গভীরে থাকা সিবেসিয়াস গ্রন্থি থেকে যে তৈলাক্ত পদার্থ বা সিবাম নির্গত হয় তা পুরো ত্বকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে না। লুব্রিকেন্টের এই অভাবের কারণেই ত্বক কুঁচকে যায় এবং ঠোঁটের সূক্ষ্ম চামড়া ফাটতে শুরু করে। তবে যাদের শরীরে ভিটামিন বি২ পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই ভিটামিনের অভাবে কেবল ঠোঁট ফাটা নয় বরং মুখে আলসার বা ঘায়ের মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।

ভিটামিন বি২ মূলত ত্বকের কোষ পুনর্গঠন এবং এর নমনীয়তা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। তাই চিকিৎসকদের মতে কেবল বাহ্যিক প্রসাধনী ব্যবহার করে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। ঠোঁটের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সবার আগে খাদ্যতালিকায় ভিটামিন বি২ যুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। দুগ্ধজাত পণ্য, ডিম, সবুজ শাকসবজি এবং কলিজার মতো খাবারগুলো এই ভিটামিনের চমৎকার উৎস। এছাড়া শীতে তৃষ্ণা কম পেলেও পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত জরুরি কারণ অভ্যন্তরীণ পানিশূন্যতা ঠোঁট ফাটার অন্যতম প্রধান কারণ।

ঘরোয়া উপায়ে ঠোঁটের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক স্ক্রাব ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন রূপ বিশেষজ্ঞরা। সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারবার হলুদ এবং মধুর মিশ্রণ দিয়ে ঠোঁট স্ক্রাব করলে মৃত কোষ দূর হয়ে ঠোঁট সজীব হয়ে ওঠে। বাজারে থাকা রাসায়নিকযুক্ত লিপবামের বদলে খাঁটি নারিকেল তেল বা অর্গানিক লিপবাম ব্যবহার করা অধিকতর নিরাপদ। চিকিৎসকদের মতে শীতের শুরু থেকেই খাদ্যাভ্যাস ও সঠিক পরিচর্যার দিকে নজর দিলে ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হওয়া বা ব্যথার মতো কষ্টদায়ক পরিস্থিতি অনায়াসেই এড়ানো সম্ভব।


শীতে জয়েন্টে তীব্র ব্যথা নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের কার্যকরী টিপস

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৩ ১২:১৮:৫৭
শীতে জয়েন্টে তীব্র ব্যথা নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের কার্যকরী টিপস
ছবি : সংগৃহীত

সারাদেশে জেঁকে বসা শীতের প্রকোপে জনজীবনে যেমন স্থবিরতা নেমে এসেছে তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ও জয়েন্টে ব্যথার মতো শারীরিক সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ইতোমধ্যে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। এই তীব্র ঠান্ডায় অনেকেই পেশিতে টান পড়া বা হাড়ের সংযোগস্থলে শক্তভাব অনুভব করছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে যে এটি মূলত শরীরের একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া তবে যাদের আগে থেকেই আর্থ্রাইটিস বা স্নায়ুর সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য এই পরিস্থিতি বেশ যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে শীতকালে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপ ধরে রাখার জন্য রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে পড়ে যার ফলে হাত ও পায়ের প্রান্তে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণেই মূলত পেশিগুলো শক্ত হয়ে ব্যথার সৃষ্টি করে। এছাড়া হাড়ের জয়েন্টের ভেতরে থাকা লুব্রিকেন্ট বা সিনোভিয়াল ফ্লুইড ঠান্ডায় ঘন হয়ে যাওয়ায় জয়েন্টের নড়াচড়া কঠিন হয়ে পড়ে। ঠান্ডার সময় মানুষের স্নায়ুগুলো ব্যথার সংকেত অনেক বেশি তীব্রভাবে মস্তিষ্কে পাঠায় যার ফলে পুরনো চোট বা বাতের ব্যথা কয়েক গুণ বেশি অনুভূত হয়।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসকেরা শরীর সবসময় গরম রাখার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন। উলের মোজা, গ্লাভস এবং পর্যাপ্ত গরম কাপড় ব্যবহারের পাশাপাশি কুসুম গরম পানি দিয়ে সেঁক নেওয়া বা নিরাপদ দূরত্বে হিটার ব্যবহার করা বেশ কার্যকর হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ২০ মিনিট হালকা স্ট্রেচিং বা ব্যায়াম করলে শরীরে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং জয়েন্টের জড়তা কেটে যায়। এছাড়া শীতে তৃষ্ণা কম পেলেও পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি কারণ পানিশূন্যতা পেশিকে আরও শক্ত করে তোলে যা ব্যথার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।

খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনেও এই সমস্যা থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সামুদ্রিক মাছ, ডিম, কলা, বাদাম এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফ্ল্যাক্সসিড শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। চিকিৎসকেরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে হুটহাট ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া কিডনি বা পাকস্থলীর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদি ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা জয়েন্ট ফুলে লাল হয়ে যায় তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। শীতকালীন এই ব্যথা নিয়ে সমাজে প্রচলিত নানা কুসংস্কার বা ঝাড়ফুঁকের বদলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করলেই সুস্থ থাকা সম্ভব বলে মনে করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।


১ মিনিটের ঘরোয়া পরীক্ষায় ধরুন ফুসফুসের রোগ: আজই চেষ্টা করুন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২২ ২১:১১:২২
১ মিনিটের ঘরোয়া পরীক্ষায় ধরুন ফুসফুসের রোগ: আজই চেষ্টা করুন
ছবি : সংগৃহীত

ফুসফুস ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা জানার জন্য সবসময় ব্যয়বহুল বা জটিল মেডিকেল পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। বর্তমান সময়ে বায়ুদূষণ এবং শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকায় চিকিৎসকরা প্রাথমিক সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন। কেবল ধূমপায়ীরাই ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হন এই ধারণা এখন অনেকটাই অতীত। ধোঁয়া, ধুলোবালি এবং বাতাসের বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে সাধারণ মানুষও এখন হাঁপানি, সিওপিডি এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই মাত্র ১ মিনিটে নিজের ফুসফুসের প্রাথমিক অবস্থা বুঝে নেওয়ার একটি সহজ পদ্ধতি বেশ কার্যকর হতে পারে।

এই ঘরোয়া পরীক্ষার প্রথম ধাপ হলো শান্ত হয়ে সোজা হয়ে বসা এবং নাক দিয়ে অত্যন্ত ধীরে ও গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করা। পর্যাপ্ত সময় নিয়ে শ্বাস টানার পর দ্বিতীয় ধাপে সেই শ্বাসটি টানা ৬০ সেকেন্ড বা এক মিনিট ধরে রাখতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি অনায়াসেই ৬০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখতে পারেন এবং এর পর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে পারেন, তবে ধরে নেওয়া হয় তার ফুসফুস আপাতত সুস্থ রয়েছে। তবে এই পরীক্ষার সময় যদি নাকে অস্বস্তি, হাঁচি বা কাশির উদ্রেক হয়, তবে বুঝতে হবে ফুসফুসের কার্যক্ষমতায় কোনো ধরণের বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে শ্বাস ধরে রাখার এই এক মিনিটের মধ্যে যদি কারোর প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, বুকে চাপ অনুভব করেন কিংবা অনবরত কাশি আসে, তবে বিষয়টি অবহেলার নয়। বিশেষ করে শ্বাস ছাড়ার সময় নাক বন্ধ হয়ে আসা বা গলা দিয়ে শ্লেষ্মা ওঠার মতো লক্ষণগুলো ফুসফুসে ব্লকেজ বা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেক সময় হাঁপানি বা অ্যালার্জির সমস্যা শুরুতে ধরা পড়ে না যা এই সহজ পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব। বায়ুদূষণ যেহেতু পুরোপুরি এড়িয়ে চলা কঠিন, তাই ফুসফুসের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিয়মিত সচেতন থাকা এখন সময়ের দাবি।

তবে মনে রাখা জরুরি যে এই ১ মিনিটের পরীক্ষাটি কেবল প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার জন্য। এটি কোনোভাবেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ বা আধুনিক মেডিকেল টেস্টের বিকল্প নয়। যদি পরীক্ষার সময় বা দৈনন্দিন চলাফেরায় কোনো অস্বাভাবিকতা টের পাওয়া যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি এড়াতে স্পাইরোমেট্রি বা এক্স-রের মতো পরীক্ষাগুলো সঠিক সময়ে করা প্রয়োজন। বায়ুদূষণের এই প্রতিকূল সময়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির যত্ন নিতে নিয়মিত সচেতনতাই হতে পারে বড় ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।


আধুনিক জীবনযাত্রায় বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব: বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২০ ২০:৪০:১৭
আধুনিক জীবনযাত্রায় বাড়ছে বন্ধ্যাত্ব: বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
ছবি : সংগৃহীত

আধুনিক জীবনধারা ও ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণ আমাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর নীরব ঘাতকের মতো প্রভাব ফেলছে যা অনেক দম্পতির কাছেই অজানা থেকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক যুবক ও যুবতী অনিয়মিত মাসিক চক্র, দুর্বল শুক্রাণু এবং অনির্ণেয় বন্ধ্যাত্বের মতো জটিল সমস্যায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন যে আমরা যা খাচ্ছি বা যে বাতাসে শ্বাস নিচ্ছি তার বিষাক্ত পদার্থগুলো সরাসরি আমাদের দেহের হরমোন ও কোষের ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রিস্টিন কেয়ার ফার্টিসিটির প্রধান আইভিএফ কনসালট্যান্ট ডা. ইলা গুপ্তা টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন যে পরিবেশগত বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব অত্যন্ত সূক্ষ্ম হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী ও ক্ষতিকর।

বায়ু দূষণ এখন আর কেবল শ্বাসকষ্টের কারণ নয় বরং এটি প্রজনন ক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত একটি বড় গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘমেয়াদী দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে থাকা ৩৫ বছরের ঊর্ধ্ব নারী ও পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ফর্টিস নোয়েডার ওবস্টেট্রিকস-গাইনোকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. অঞ্জনা সিং জানিয়েছেন যে পেস্টিসাইড ও ভারী ধাতু সরাসরি ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর ফলে বর্তমানে দুর্বল ভ্রূণ মানের কারণে গর্ভপাতের ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। এমনকি দূষণ প্লাসেন্টায় প্রদাহ সৃষ্টি করে অকাল জন্ম বা মৃত জন্মের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করছে।

জীবনযাত্রার অদৃশ্য শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ। উচ্চ মাত্রার কোর্টিসল হরমোন শরীরের এস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরন ও টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। অনেক দম্পতির মেডিকেল রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও তারা গর্ভধারণে ব্যর্থ হচ্ছেন যার মূল কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা অতিরিক্ত মানসিক চাপকে দায়ী করছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রেও এটি শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দেয় এবং টেস্টোস্টেরন লেভেলকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করে। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস এই সংকটকে আরও ঘনীভূত করছে। আধুনিক নারীরা অফিস ও ঘর একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে যে ‘সুপারউম্যান চাপের’ শিকার হচ্ছেন তা তাদের মাসিক চক্রকে অনিয়মিত করে তুলছে।

প্রজনন ক্ষমতা রক্ষা করতে চিকিৎসকরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন। দূষণ থেকে সুরক্ষায় এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার এবং ব্যস্ত সময়ে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম, যোগব্যায়াম এবং সূর্যালোকের সংস্পর্শে থাকা জরুরি। খাদ্যাভ্যাসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সবুজ সবজি ও ফলমূল যোগ করার পাশাপাশি স্ক্রিন টাইম কমানোর ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে কারণ এটি প্রজনন হরমোনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মেলাটোনিনকে প্রভাবিত করে। চিকিৎসকদের মতে প্রজনন স্বাস্থ্য কেবল একটি চিকিৎসা বিষয় নয় বরং এটি একটি সচেতন জীবনযাত্রার অংশ। আজকের ছোট পরিবর্তনই আগামীকালের সুস্থ প্রজন্মের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

পাঠকের মতামত:

ব্যক্তিগত দায় বনাম প্রাতিষ্ঠানিক দায়: দায়মুক্তির এক রাজনৈতিক সংস্কৃতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের ঘটনা কাগজে পড়লে প্রথমে মনে হয় এটা যেন কোনো যুদ্ধের খবর। এক তরুণকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে হাত–পা প্রায়... বিস্তারিত