আখেরি চাহার শোম্বা: সফর মাসের শেষ বুধবারের ইতিহাস ও তাৎপর্য

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২০ ১১:৫০:০৭
আখেরি চাহার শোম্বা: সফর মাসের শেষ বুধবারের ইতিহাস ও তাৎপর্য
ছবিঃ সংগৃহীত

আখেরি চাহার শোম্বা’ মূলত আরবি ও ফারসি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত একটি নাম। আরবি ও ফারসিতে ‘আখেরি’ শব্দের অর্থ হলো শেষ। ফারসি ‘চাহর’ অর্থাৎ সফর মাসকে নির্দেশ করে এবং ‘শোম্বা’ শব্দের অর্থ হলো বুধবার। ফলে ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ বলতে বোঝানো হয় সফর মাসের শেষ বুধবার। মুসলিম উম্মাহর কাছে দিনটি খুশি ও আনন্দের দিন হিসেবে পরিচিত এবং দীর্ঘকাল ধরে মুসলিম সমাজে এটি উৎসবমুখরভাবে পালিত হয়ে আসছে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনের প্রেক্ষাপট

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবন ছিল মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। মক্কায় নবুওয়াতের ১৩ বছর তিনি কোরাইশ কাফেরদের কঠিন নির্যাতন নীরবে সহ্য করেছিলেন। হিজরতের পর মদিনায় এসেও ইহুদি ও মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পাননি। নানা রণাঙ্গনে শত্রুদের মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে এবং প্রতিবারই ইসলাম বিজয় অর্জন করেছে। এসব ষড়যন্ত্রকারীরা এমনকি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রাণনাশের চেষ্টা পর্যন্ত করেছে। তবুও আল্লাহর সাহায্যে তিনি সবসময় ইসলামকে বিজয়ের পথে অগ্রসর করেছেন।

অসুস্থতা ও আশার আলো

ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক তার গ্রন্থ সীরাতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এ উল্লেখ করেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রচণ্ড শিরপীড়ায় আক্রান্ত হন। একই তথ্য ইবনে হিশামের সীরাতুন্নবী (সা.)-এও পাওয়া যায়। এ অসহ্য মাথাব্যথা এতটাই মারাত্মক ছিল যে, তিনি অধিকাংশ সময় অচেতন হয়ে থাকতেন। চিকিৎসার জন্য আবিসিনিয়া থেকে আনা ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও স্থায়ী উপশম মিলেনি। কখনো সুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলেও মুহূর্তের মধ্যে আবার জ্ঞান হারাতেন। এতে সাহাবায়ে কেরাম ও পরিবারের সদস্যরা গভীর দুশ্চিন্তায় পড়ে যান এবং প্রিয় নবীর জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে ওঠেন।

কিন্তু একদিন আশার আলো দেখা দেয়। সফর মাসের শেষ বুধবারের সকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি সাত কূপের পানি দিয়ে গোসল করেন এবং স্বাভাবিকভাবে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটান। কন্যা ফাতিমা (রা.), নাতি হাসান (রা.) ও হোসেনের (রা.) সঙ্গে খাবার গ্রহণ করেন। এ ঘটনায় সাহাবারা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন, নফল নামাজ পড়েন এবং দান-খয়রাত করেন। ঐ দিন হজরত আবু বকর (রা.) পাঁচ হাজার, হজরত উমর (রা.) সাত হাজার, হজরত আলী (রা.) তিন হাজার দিরহাম দান করেন। আর হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) শত উট আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করেন।

দিনটির স্মরণে উৎসব

হজরত আয়েশা (রা.)-এর বর্ণনা অনুযায়ী, নবীজী (সা.) দুপুর পর্যন্ত সুস্থ ছিলেন, কিন্তু সন্ধ্যা নামার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবুও সাহাবাদের কাছে এ দিনের আনন্দ অমূল্য হয়ে থাকে। সেই স্মৃতি ধরে রাখতে মুসলিম সমাজে দিনটি আজও ‘আখেরি চাহার শোম্বা’ নামে পালিত হয়।

পালনের ধরন

আখেরি চাহার শোম্বা মূলত শুকরিয়া দিবস হিসেবে পালিত হয়। মুসলিমরা এ দিনে সাধারণত গোসল করে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন, রোগ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া করেন এবং দান-খয়রাত করেন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদ, মাদরাসা, দরবার ও খানকায় ওয়াজ-নসিহত, মিলাদ, জিকির-আজকার, দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।

সফর মাসের শেষ বুধবারের এই বিশেষ ঘটনার স্মৃতিকে কেন্দ্র করে যে দিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটিই আখেরি চাহার শোম্বা। নবীজী (সা.)-এর হঠাৎ সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে আনন্দের সঞ্চার করেছিল, আজও সেই আবেগ ও কৃতজ্ঞতা নিয়ে এ দিনকে মর্যাদার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।


পরিবারে নামাজ প্রতিষ্ঠায় যে দোয়াটি পাঠ করবেন

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২১ ১১:৩০:৪৭
পরিবারে নামাজ প্রতিষ্ঠায় যে দোয়াটি পাঠ করবেন
ছবিঃ সংগৃহীত

নামাজি সন্তান লাভের দোয়া

নিজের সন্তানাদি ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামাজি বানানোর জন্য কোরআনে উল্লেখিত একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করা যেতে পারে। এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি উপায়। এটি নিয়মিত পাঠ করলে ভালো ফলাফল আশা করা যায়।

رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ

উচ্চারণ: ‘রাব্বিজ আলনী মুক্বীমাস স্বালা-তি ওয়ামিন যুররিয়্যাতি, রাব্বানা ওয়াতাক্বাব্বাল দুআ।’

অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামাজ প্রতিষ্ঠাকারী বানাও এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমাদের প্রতিপালক! আমার দোয়া কবুল করো।’

এই দোয়াটি কোরআনের সুরা ইবরাহিমের ৪০ নম্বর আয়াতের অংশ। এর মাধ্যমে একজন মুসলিম তার নিজের এবং তার সন্তানদের জন্য আল্লাহর কাছে নামাজি হওয়ার প্রার্থনা করেন।


কোরআনের আলোকে অবিশ্বাসীদের অবাধ্যতা ও হঠকারিতা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২১ ১০:৩৩:৪৭
কোরআনের আলোকে অবিশ্বাসীদের অবাধ্যতা ও হঠকারিতা
ছবিঃ সংগৃহীত

অবিশ্বাসীদের হঠকারিতা

সুরা আনআম, আয়াত : ৭

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে

وَ لَوۡ نَزَّلۡنَا عَلَیۡكَ كِتٰبًا فِیۡ قِرۡطَاسٍ فَلَمَسُوۡهُ بِاَیۡدِیۡهِمۡ لَقَالَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡۤا اِنۡ هٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ

সরল অনুবাদ: আর যদি আমি কাগজে লিখিত কিতাব তোমার উপর নাযিল করতাম অতঃপর তারা তা হাত দিয়ে স্পর্শ করত তবুও যারা কুফরী করেছে তারা বলত, ‘এ তো প্রকাশ্য যাদু ছাড়া কিছু না।’

সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা: এ আয়াতে অবিশ্বাসীদের চরম অবাধ্যতা, অস্বীকার ও হঠকারিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহর পক্ষ হতে সুস্পষ্ট লিখিত বিষয় এসে যাওয়া সত্ত্বেও তারা তা মানতে প্রস্তুত হবে না এবং সেটাকে একটি যাদুর কিতাব গণ্য করবে। যেমন, কোরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে:

وَلَوْ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَابًا مِنَ السَّمَاءِ فَظَلُّوا فِيهِ يَعْرُجُونَ، لَقَالُوا إِنَّمَا سُكِّرَتْ أَبْصَارُنَا بَلْ نَحْنُ قَوْمٌ مَسْحُورُونَ

‘যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোনো দরজাও খুলে দিই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণও করতে থাকে, তবুও ওরা এ কথাই বলবে যে, আমাদের দৃষ্টির বিভ্রাট ঘটানো হয়েছে, না বরং আমরা যাদুগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

(সুরা আল হিজর, আয়াত : ১৪-১৫)

আরেক আয়াতে বলা হয়েছে:

وَإِنْ يَرَوْا كِسْفًا مِنَ السَّمَاءِ سَاقِطًا يَقُولُوا سَحَابٌ مَرْكُومٌ

‘তারা যদি আকাশের কোনো খণ্ডকে পতিত হতে দেখে, তবে বলে, এটা তো পুঞ্জীভূত মেঘ।’

(সুরা ত্বূর, আয়াত ৪৪)

অর্থাৎ, তারা আল্লাহর আজাবের এমন কোনো একটা অপব্যাখ্যা করে নেবে, যাতে আল্লাহর ইচ্ছার কথা তাদেরকে স্বীকার করতে না হয়। অথচ সারা বিশ্বজাহানে যা কিছু হয়, সবই তাঁর ইচ্ছাতেই হয়।

এই আয়াত থেকে আমাদের শিক্ষা:

অবিশ্বাসীদের স্বভাব হলো অবাধ্যতা ও অস্বীকার করা: তারা যত বড় নিদর্শনই পাক না কেন, সেটাকে তারা অপব্যাখ্যা করে ‘যাদু’, ‘ভ্রম’ বা ‘প্রাকৃতিক ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যায়।

হৃদয়ের অন্ধত্ব যুক্তির অন্ধত্বের চেয়েও ভয়াবহ: যাদের অন্তরে অহংকার ও ঈমানের আলো নেই, তারা প্রমাণ পেলেও মানতে চায় না।

আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা: আসমান-জমিনের প্রতিটি ঘটনা আল্লাহরই নির্দেশে ঘটে; তা অস্বীকার করলে মানুষ নিজেকেই বিভ্রান্ত করে।

ঈমান শুধু প্রমাণের ওপর দাঁড়ায় না, বরং অন্তরের সততার ওপর দাঁড়ায়: আল্লাহর কিতাব হাতে পাওয়ার পরও যারা অবিশ্বাস করে, তারা প্রকৃতপক্ষে হঠকারী ও বিদ্বেষী।


জানা গেল আসন্ন রমজানের সম্ভাব্য তারিখ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ২০ ০৯:৩৩:১২
জানা গেল আসন্ন রমজানের সম্ভাব্য তারিখ
ছবিঃ সংগৃহীত

পবিত্র রমজান মাস মুসলমানদের জন্য সারা বিশ্বের অন্যতম প্রত্যাশিত সময়। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন, পরিবারে বন্ধন দৃঢ় করা এবং সমাজে ভালোবাসা ও সহযোগিতা ছড়িয়ে দেওয়ার অনন্য সুযোগ তৈরি করে এই মাস। প্রতি বছরের মতো ২০২৬ সালও এর ব্যতিক্রম হবে না।

সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ জানিয়েছে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুযায়ী ২০২৬ সালে রমজান শুরু হতে পারে ১৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার। এর আগের সন্ধ্যায় আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আকাশে রমজানের চাঁদ দেখা যেতে পারে। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সবসময়ই নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ওপর, যারা শাবান মাসের ২৯ তারিখ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের শুরু ও শেষ ঘোষণা করে থাকেন।

ইসলামী ক্যালেন্ডার যেহেতু সম্পূর্ণভাবে চন্দ্রচক্রের ওপর নির্ভরশীল, তাই প্রতিটি মাস নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমেই শুরু ও শেষ হয়। চন্দ্রমাস সাধারণত সৌরমাসের তুলনায় ১০ থেকে ১১ দিন ছোট হওয়ায় প্রতিবছর রমজান গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে কিছুটা এগিয়ে আসে। এর ফলে কখনো শীতকালে, কখনো গ্রীষ্মে, আবার কখনো বর্ষা কিংবা বসন্তকালে মুসলমানরা রোজা রাখার ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জন করে থাকেন।


২০২৬ সালের রমজান: তারিখ জানাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৯ ২২:৪১:৩৫
২০২৬ সালের রমজান: তারিখ জানাল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা
ফাইল ছবি : এএফপি

জ্যোতির্বিজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের রমজান মাস আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই পবিত্র মাসটি ইবাদত, পারিবারিক বন্ধন ও সংহতি স্থাপনের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের কাছে বিশেষভাবে চিহ্নিত।

যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে রমজানের শুরু নির্ভর করবে চাঁদ দেখার ওপর, যা শাবান মাসের ২৯ তারিখে পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি দেশের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ও চাঁদ দেখা কমিটি নিজেদের প্রক্রিয়া অনুযায়ী রমজান শুরুর ঘোষণা দেবে।

ইসলামিক ক্যালেন্ডার চন্দ্রচক্র অনুসরণ করে, যেখানে প্রতিটি মাস নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে শুরু হয়। চন্দ্রমাস সৌর মাসের তুলনায় ছোট হওয়ায় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে রমজান প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১১ দিন আগে আসে। ৩৩ বছরের এক পূর্ণচক্রে মুসলমানরা এই পবিত্র মাসটি বছরের সব ঋতুতেই পালন করে।

সূত্র : গালফ নিউজ


আজানের পর দরুদ ও বিশেষ দোয়া: হাদিসে ক্ষমা ও সুপারিশের সুসংবাদ

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৪ ১৬:৩৬:১৭
আজানের পর দরুদ ও বিশেষ দোয়া: হাদিসে ক্ষমা ও সুপারিশের সুসংবাদ
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামে আজান কেবল নামাজের আহ্বান নয়, বরং তা একটি মহান ইবাদত, যা শোনার পর মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আদব ও দোয়া পালনের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সহিহ হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, আজানের সময় অযথা কথাবার্তা না বলে মনোযোগ দিয়ে আজান শোনা, মুয়াজ্জিন যা বলেন তা পুনরাবৃত্তি করে বলা, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্য বিশেষ মর্যাদা ওয়াসিলা কামনা করা এগুলোর রয়েছে অপরিসীম ফজিলত ও পুরস্কার।

সহিহ মুসলিমের (হাদিস: ৩৮৪) একটি বর্ণনায় আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন —

“তোমরা মুয়াজ্জিনের আজান শুনলে, সে যা বলে তুমিও তাই বলো। এরপর আমার ওপর দরুদ পাঠ করো। কারণ যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্য আল্লাহর কাছে ওয়াসিলা প্রার্থনা করো। ওয়াসিলা হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান, যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল একজনকে দেওয়া হবে, আর আমি আশা করি সেই ব্যক্তি আমিই হব। যে আমার জন্য ওয়াসিলা কামনা করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য আমার সুপারিশ অবশ্যম্ভাবী হবে।”

এছাড়া জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন -

“যে ব্যক্তি আজান শুনে এই দোয়া পড়বে, তার জন্য আমার সুপারিশ অবশ্যকরণীয় হয়ে যাবেاللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُঅর্থ: হে আল্লাহ! এ পূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রভু! আপনি মুহাম্মাদ (সা.)-কে দান করুন ওয়াসিলা ও সুমহান মর্যাদা এবং তাকে সেই প্রশংসিত স্থানে পৌঁছান, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাকে দিয়েছেন।” (সহিহ বুখারি: ৬১৪)

আরেকটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আজান শুনে যে ব্যক্তি এই দোয়া পড়ে, তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় —

وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًاঅর্থ: “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদকে রাসুল হিসেবে এবং ইসলামকে দীন হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট।” (সুনানে আবু দাউদ)

হাদিসগুলো স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে, আজানের জবাব দেওয়া, দরুদ পাঠ করা এবং নবিজি (সা.)-এর জন্য ওয়াসিলা কামনা করা কেবল সুন্নতই নয়, বরং এর মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ, গুনাহ মাফ এবং কেয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশ লাভের বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়।ইসলামি আলেমদের মতে, এ আমলগুলো সহজ হলেও এর আধ্যাত্মিক পুরস্কার বিশাল এবং একজন মু’মিনের জন্য এটি দৈনন্দিন ইবাদতের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত।


আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য: সর্বপ্রথম কি কলম নাকি আরশ?

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৪ ০৯:২৪:২৭
আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য: সর্বপ্রথম কি কলম নাকি আরশ?
প্রতীকী ছবি

আল্লাহ তাআলা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। পবিত্র কোরআনে তিনি বলেছেন, "আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা, আর তিনি সবকিছুর উপর কর্তৃত্বশীল।" (সুরা আয-যুমার: ৬২) কিন্তু তিনি সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেছেন—এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে। এই বিষয়ে কোরআন ও হাদিসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা এসেছে।

অনেক আলেম মনে করেন, আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম 'কলম' সৃষ্টি করেছেন। তারা এই মতের পক্ষে সহিহ হাদিসের দলিল দিয়েছেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যে জিনিসটি সৃষ্টি করেছেন, তা হচ্ছে কলম। এরপর কলমকে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা লিখতে বললেন।" (সুনানে তিরমিজি, ইবনু মাজাহ)

আলেমদের আরেকটি দল মনে করেন, আরশ প্রথম সৃষ্টি। এর পক্ষে তারা হাদিসের প্রমাণ দিয়েছেন।

রাসুল (সা.) বলেছেন, "আল্লাহ তাআলা তাঁর আরশ পানির উপর সৃষ্টি করেছেন।" (তিরমিজি: ৩০১৯, ইবনু মাজাহ: ১৮২)

পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি রহস্য গভীর এবং অসীম। এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই আলোচনা চলে আসছে। এটি একটি প্রতীকী আলোচনা হতে পারে, যেখানে কলম সৃষ্টির মাধ্যমে জ্ঞান ও লিপিবদ্ধ করার গুরুত্ব এবং আরশ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরকে বোঝানো হয়েছে। সবশেষে, আল্লাহ তাআলাই সর্বজ্ঞ।


জ্বর ও মাথাব্যথা থেকে মুক্তির দোয়া: কোরআন ও সুন্নাহর বরকতময় আমল

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১৩ ১৬:২৭:১৯
জ্বর ও মাথাব্যথা থেকে মুক্তির দোয়া: কোরআন ও সুন্নাহর বরকতময় আমল
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, সুস্থতা-অসুস্থতা—সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। যখন আমরা সুস্থ থাকি, তখন তা তাঁর অশেষ অনুগ্রহ; আর যখন অসুস্থ হই, তখন তা আমাদের জন্য পরীক্ষা। একজন মুমিন বিশ্বাস করে যে, রোগ-ব্যাধি শুধু কষ্ট নয়, বরং এটি গুনাহ মাফেরও একটি সুযোগ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনের ওপর যা কিছু কষ্ট আসে; এমনকি একটি কাঁটার খোঁচাও—তা তার গুনাহ মাফের কারণ হয়।” (বোখারি: ৫৬৪১)

তবে এর মানে এই নয় যে আমরা চিকিৎসার চেষ্টা করব না। বরং সুস্থতার জন্য ওষুধ, চিকিৎসা এবং আল্লাহর কাছে কোরআন-সুন্নাহয় বর্ণিত দোয়া পড়া আমাদের কর্তব্য। জ্বর এবং মাথাব্যথার মতো সাধারণ রোগগুলোও আমাদের কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এমন অবস্থায় আল্লাহর কাছে দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য কিছু বরকতময় দোয়া ও আমল রয়েছে।

মাথাব্যথা থেকে মুক্তির দোয়া

কোরআনে সুরা ওয়াক্বিয়ার ১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, যা পাঠ করলে শিরঃপীড়া দূর হতে পারে:

لَا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَ

উচ্চারণ: লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইউনজিফুন।

অর্থ: “যা পান করলে তাদের শিরঃপীড়া হবে না এবং তারা বিকারগ্রস্তও হবে না।” (সুরা ওয়াক্বিয়া: ১৯)

জ্বর থেকে মুক্তির দোয়া

যে কোনো ধরনের জ্বরের সময় মহান আল্লাহর কাছে এই দোয়া পড়ে সাহায্য চাওয়া উচিত। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জ্বর ও গলা ব্যথায় এই দোয়াটি পড়তে শিক্ষা দিতেন:

بِسْمِ اللَّهِ الْكَبِيرِ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عِرْقٍ نَعَّارٍ وَمِنْ شَرِّ حَرِّ النَّارِ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল কাবির, আউজুবিল্লাহিল আজিম, মিন শাররি কুল্লি ই’রকিন নায়্যার, ওয়া মিন শাররি হাররিন নার।

অর্থ: “মহান আল্লাহর নামে, দয়াময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, শিরা-উপশিরায় শয়তানের আক্রমণ থেকে এবং শরীরের আগুনের উত্তাপের মন্দ প্রভাব থেকে।” (নাসায়ি, মকবুল দোয়া: ১৬৩)

জ্বর এবং মাথাব্যথার সময় যতবার সম্ভব এই দোয়াগুলো পাঠ করলে আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তিকে রোগ থেকে মুক্তি দেবেন।


দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য কার্যকর আমল ও দোয়া

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১০ ১৯:৫১:৪০
দ্রুত বিয়ে হওয়ার জন্য কার্যকর আমল ও দোয়া
ছবি: সংগৃহীত

বিয়ে মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা মানুষকে শালীন, পবিত্র ও সুশৃঙ্খল জীবনের পথে নিয়ে যায়। মানব ইতিহাসের শুরু থেকেই বিয়ের প্রথা চলে আসছে। ইসলামে বিয়েকে বরকতময় ইবাদত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য বিয়ে দেরি না করে সম্পন্ন করা ইমানি দায়িত্ব হিসেবে বিবেচিত।

নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “হে যুবসমাজ, তোমাদের মধ্যে যার বিয়ের সামর্থ্য আছে, তার বিয়ে করা উচিত। কেননা বিয়ে চোখকে নিচু রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে, কেননা রোজা যৌবনের খায়েশ কমিয়ে দেয়।” (বোখারি: ৫০৬৫, মুসলিম: ১৪০০)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন, মাস বা ঋতুর শর্ত নেই। সামর্থ্য হলে বিলম্ব না করাই উত্তম। কিন্তু সামাজিক বাধা, আর্থিক সংকট বা উপযুক্ত সঙ্গী না পাওয়ায় অনেকের বিয়ে দেরিতে হয়।

দ্রুত বিয়ের জন্য আমল ও দোয়া

সহজে বিয়ে হওয়ার জন্য বেশি বেশি সালাতুল হাজত আদায় করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। কোরআনে বর্ণিত একটি দোয়া—

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণ: রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।

অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের এমন দান করুন, যারা আমাদের চোখের শীতলতা হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের জন্য আদর্শ বানান। (সুরা ফুরকান: ৭৪)

কিছু আলেমের মতে, যুবকেরা ফজরের নামাজের পর সূর্যোদয়ের আগে ৪০ দিন ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কব্জি চেপে এবং যুবতীরা বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ৪০ বার “ইয়া ফাত্তাহু” পাঠ করলে দ্রুত বিয়ে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কেউ কেউ চল্লিশ দিন সুরা মুমতাহিনা তেলাওয়াত করার পরামর্শ দেন।

কোরআনের নির্দিষ্ট আয়াতের আমল

সুরা তাওবা (আয়াত ১২৯): فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ : ফাইং তাওয়াল্লাও ফাকুল হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।

অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তাঁর বাইরে কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁর ওপর ভরসা করি, তিনিই মহান আরশের অধিপতি।

সুরা কাসাস (আয়াত ২৪): فَسَقَى لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّى إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

উচ্চারণ : ‘ফাসাক্বা লাহুমা ছুম্মা তাওয়াল্লা ইলাজজিল্লি ফাক্বালা রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খায়রিং ফাক্বির।’

হজরত মুসা (আ.) যখন একাকিত্বে ভুগতেন, তখন এ দোয়া পড়তেন। আলেমরা বলেন, এ আমলও বিয়ে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হতে পারে।

সুরা ইয়াসিনের বিশেষ আমল:

যাদের বিয়ের প্রস্তাব আসলেও সম্পন্ন হয় না, তারা সূর্যোদয়ের সময় পশ্চিমমুখী হয়ে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবেন এবং ‘মুবিন’ শব্দে সূর্যের দিকে ইশারা করবেন।

এ ছাড়া প্রতিদিন ১১ বার সুরা দোহা পড়াও একটি কার্যকর আমল হিসেবে বিবেচিত।


দুরুদ শরীফের ফজিলত ও বরকত: কীভাবে পড়বেন ও লাভ করবেন?

ধর্ম ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ আগস্ট ১০ ১০:০৪:০৯
দুরুদ শরীফের ফজিলত ও বরকত: কীভাবে পড়বেন ও লাভ করবেন?
ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামের আমলসমূহের মধ্যে দুরুদ শরীফের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ। এটি কেবল নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রতি প্রণাম জানানোর একটি মাধ্যম নয়, বরং একটি শক্তিশালী ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর অসীম রহমত, মাগফিরাত এবং জীবনের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। দুরুদ শরীফের ফজিলত বোঝার জন্য আমরা চারটি মূল বিষয়কে বিশেষভাবে বিবেচনা করতে পারি, যা আমাদের বিশ্বাস ও আমলকে আরও শক্তিশালী করে।

প্রথমত, দুরুদ শরীফ পাঠ করার সময় আমাদের জানিয়ে রাখা দরকার যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নাম জানেন। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, যখন আমরা নবীর জন্য দুরুদ পাঠ করি, তখন একজন বিশেষ ফেরেশতা তা সরাসরি নবীর নিকট পৌঁছে দেয় এবং আমাদের নামও উল্লেখ করে। এটি স্পষ্ট করে যে, আমাদের প্রতিটি দুরুদ আল্লাহর প্রিয় নবীর কাছে পৌঁছে যায়। তিনি নিজে বলেন, “তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের দুরুদ আমার কাছে পৌঁছায়।” (সুনান আবু দাউদ, মুসনাদ আহমদ)। এই সত্য আমাদের দুরুদ পাঠে অন্তর থেকে মনোযোগী হওয়ার প্রেরণা দেয়, কারণ আমাদের নামসহ পাঠানো দুরুদ নবীর কাছে পৌঁছে তার কাছে আমাদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং আত্মিক সমর্পণ প্রকাশ পায়।

দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তাআলা একবার দুরুদ পাঠের বিনিময়ে দশগুণ রহমত বর্ষণ করেন, গুনাহ মাফ করেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তাকে দশবার রহমত বর্ষণ করবেন, তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।” (সুনান আন-নাসায়ি, সহিহ ইবনে হিব্বান)। কুরআনে আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করে। হে বিশ্বাসীগণ! তোমরাও নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করো এবং যথাযথ সালাম প্রেরণ করো।” (আল-আহযাব: ৫৬)। এই আয়াত ও হাদিস আমাদের বোঝায়, দুরুদ শরীফ শুধু একজন নবীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন নয়, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকেও এক বিশেষ অনুগ্রহ ও বরকতের কারণ।

তৃতীয়ত, দুরুদ শরীফ জীবনের নানা সমস্যা ও কষ্ট থেকে মুক্তি এবং গুনাহ মাফের জন্য অপরিহার্য। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের সমস্যা ও গুনাহ মাফের জন্য দুরুদকে অধিক পরিমাণে পড়ো।” (সুনান তিরমিজি)। একজন সাহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে জানায়, তিনি তার দোয়ার একটি অংশ দুরুদে নির্ধারণ করেছেন। নবী উত্তরে বলেন, “তাহলে তোমার চিন্তা-ভাবনা থেকে দুঃখ-কষ্ট দূর হবে এবং গুনাহ মাফ হবে।” (সুনান তিরমিজি)। এই বিষয়টি আমাদের শেখায় যে, নিয়মিত ও আন্তরিক দুরুদ শরীফ পাঠ করলে জীবনের কষ্ট ও সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায় এবং আল্লাহর মাগফিরাত লাভ হয়।

চতুর্থত, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি অসংখ্য নির্যাতন সত্ত্বেও তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করেছেন। কিয়ামতের দিনও তিনি তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করবেন এবং বারবার আল্লাহর দরবারে বলবেন, “হে আল্লাহ! আমার উম্মতকে ক্ষমা করো।” (সহিহ মুসলিম)। এই মহান দোয়া ও আন্তরিকতা আমাদের দুরুদ শরীফের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান ও গুরুত্ব বৃদ্ধিতে অনুপ্রাণিত করে।

অতিরিক্ত আমল হিসেবে দুরুদের সঙ্গে ইস্তেগফার (আস্তাগফিরুল্লাহ) ও দোয়া ইউনুস পাঠের গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, “যে ব্যক্তি দোয়া ইউনুস পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে সমস্ত সংকট থেকে মুক্তি দেবেন।” (সুনান তিরমিজি)। এই আমলগুলো জীবনের বিপদ ও সংকট থেকে মুক্তির শক্তিশালী হাতিয়ার। ইস্তেগফার পাঠের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়, আর দুরুদ শরীফ আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের পথ প্রশস্ত করে।

সর্বশেষে বলা যায়, দুরুদ শরীফ শুধুমাত্র একটি আমল নয়, এটি আল্লাহর অসীম রহমত, করুণা এবং জীবনের সকল সমস্যা ও সংকটের সমাধানের মাধ্যম। নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জন্য সেরা পথ প্রদর্শন করেছেন, যেটা অনুসরণ করলে আমরা জান্নাতের সুন্দর সুফল অর্জন করব এবং দুনিয়ার বিপদ থেকে মুক্তি পাবো। তাই প্রতিদিন অন্তরের গভীরতা থেকে বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পাঠের তাওফিক প্রার্থনা করা উচিৎ, যাতে আল্লাহ আমাদের জীবনের সব দুঃখ ও বিপদ থেকে রক্ষা করেন, আমিন।

পাঠকের মতামত: