ফেনীতে বন্যা বিপর্যয়: বিপুল ক্ষয়খতি

সারাদেশ ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১১:২২:৫৪
ফেনীতে বন্যা বিপর্যয়: বিপুল ক্ষয়খতি

টানা বর্ষণ ও ভারতের পাহাড়ি এলাকায় নেমে আসা বৃষ্টিপাতের ফলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ১৫টি জায়গায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে জেলার পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার ৩২টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোর রাস্তা, পুকুর-মাছের ঘের এবং খেত-খামারও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফেনী জেলা আবহাওয়া অফিসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ৯ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ফেনীতে ৫৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরশুরাম গেজ স্টেশনে ৮ জুলাই সকালে মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা ১২.৫৫ মিটার ছাড়িয়ে ১৩.৮৫ মিটার উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা বিপদসীমার চেয়ে প্রায় ১৩০ সেন্টিমিটার বেশি।

বাঁধ ভাঙনের ফলে পরশুরাম উপজেলার জঙ্গলগোনা, উত্তর শালধর, নোয়াপুর, পশ্চিম অলকা, ডি এম সাহেবনগর, পশ্চিম গদানগর, দক্ষিণ বেড়াবাড়ীয়া, পূর্ব সাতকুচিয়া ও উত্তর টেটেশ্বর এলাকায় ভাঙন হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলার দেড়পাড়া, শ্রীপুর, উত্তর দৌলতপুর ও কমুয়া এলাকায় আরও পাঁচটি ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোতে পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকায় নতুন প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহেও বিঘœ ঘটেছে। ফেনীর সদর, সোনাগাজী, পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক মিটার ও সাবস্টেশন পানিতে তলিয়ে গেছে। পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়ে বিদ্যুৎ পিলারের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে বহু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি অবনতি হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার পরিধি আরও বাড়তে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যে, গতবারের মতো এবারও বন্যার পানি বাড়ার ফলে তাদের জীবন-জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে। পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার জাকিয়া আক্তার বলেন, “রাত ৮টা থেকে পানি ঢুকে পড়তে শুরু করেছে ঘরে। গতবার বন্যায় সব হারিয়েছিলাম, ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারো স্বপ্ন ডুবে যাচ্ছে।”

মির্জানগর ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “বাঁধের প্রবেশ মুখ বন্ধ না করায় পানি ঢোকার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রতিবছরই অনেকে দায়সারা কাজের কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ে।”

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং ভাঙনের কারণে নতুন প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহরিয়া ইসলাম জানান, উপজেলার শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন এবং তাদের জন্য খাবার ও অন্যান্য জরুরি সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, “টানা দুদিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। আগামী দুই দিনও ফেনীজুড়ে বৃষ্টিপাত থাকতে পারে।”

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, “মুহুরী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির স্রোত আরও বাড়তে পারে এবং নতুন বাঁধ ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে।”

ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের জন্য রান্না করা ও শুকনো খাবারের জন্য প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ফেনী জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন থেকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছে।

-ইসরাত, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ