প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কর্মতৎপরতা চাই – ব্যারিস্টার নাজির আহমদ

শহিদুল ইসলাম
শহিদুল ইসলাম
প্রতিবেদক
রাজধানী ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১৫:৫৫:৫২
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কর্মতৎপরতা চাই – ব্যারিস্টার নাজির আহমদ

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিশিষ্ট আইনজীবী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও নিউহ্যাম বারার সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, "দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশের নাগরিক, যাদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কর্মতৎপরতা এখনই শুরু করতে হবে। সময় খুবই অল্প। নির্বাচন সামনে, আর সরকার ইতিমধ্যেই ১১ মাস পার করেছে। এখন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে প্রবাসীরা আবারও বঞ্চিত হবেন।"

শুক্রবার (৪ জুলাই ২০২৫) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে “প্রবাসী ভোটাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ, ইউকে” আয়োজিত “দেড় কোটি প্রবাসীর ভোটাধিকার নিশ্চিতের দাবি” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার মুজাক্কির হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতা সৈয়দ আব্দাল আহমদ এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, “বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বিভিন্ন দেশে তারা দূতাবাস ও হাইকমিশনের সামনে দিনের পর দিন আন্দোলন করেছেন, জেলও খেটেছেন। এখন গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। এই মুহূর্তে প্রবাসীদের বাদ দেওয়া মানে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে পিছিয়ে দেওয়া।”

তিনি বলেন, অতীতের কোনো রাজনৈতিক সরকারই প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আন্তরিক পদক্ষেপ নেয়নি। শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘মুলা ঝুলিয়ে’ রেখেছে। অথচ দেড় কোটি প্রবাসী নাগরিক রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন। পৃথিবীর বহু দেশের মোট জনসংখ্যাও এত নয়। সুতরাং এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি একগুচ্ছ সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “এই সরকার প্রবাসীদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম নাসির উদ্দিন এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবুল ফজল মু. সানাউল্লাহর সঙ্গে বৈঠকে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুস ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গেও আমরা আলাপ করেছি। প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন—‘এটা আমরা করব।’ যদি করতেই হয়, তাহলে এখনই সেই সদিচ্ছা, কমিটমেন্ট, রিসোর্স এবং দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রবাসে বসবাসকারী বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার নাজির প্রবাসীদের পক্ষে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন:

১. আগামী সংসদ নির্বাচনে সকল প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

২. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ভোটাধিকার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কর্মতৎপরতা দেখাতে হবে।

৩. প্রবাসীদের ভোটার তালিকা প্রস্তুতির কাজ এখনই শুরু করতে হবে। শুধু এনআইডির ভিত্তিতে তালিকা করলে অনেকেই বাদ পড়বেন। বাংলাদেশি পাসপোর্ট, নো ভিসা রিকোয়ার্ড স্ট্যাম্প, জন্ম সনদ, এসএসসি সনদ—এসব সরকারি দলিল নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করতে হবে।

৪. প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরাই এই প্রক্রিয়ার মূল স্টেকহোল্ডার। তাই তাদের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা গ্রহণ করা আবশ্যক।

৫. যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে রিটার্নিং বা প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে ভোট কেন্দ্র ও বুথ স্থাপন করে প্রবাসীদের জন্য সরাসরি ভোট প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ব্যারিস্টার নাজির আহমদ। তিনি বলেন, “প্রবাসীরা শুধু অর্থনৈতিক অবদান রাখে না, তারা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার সহযোদ্ধা। তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত হলে, তারা দেশের জন্য বিশ্বজুড়ে হয়ে উঠবে অঘোষিত রাষ্ট্রদূত।”

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ