লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার নানান কারণ ও প্রতিকার

স্বাস্থ্য ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১৯:৫৭:৩৫
লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার নানান কারণ ও প্রতিকার

আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি। শরীরে কোনো সংক্রমণ ঘটলে এই লিম্ফ নোডগুলো সক্রিয় হয়ে অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে, যা রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে। কখনো কখনো অতিরিক্ত কাজের ফলে এই লিম্ফ নোডগুলো ফুলে উঠতে পারে, যা সাধারণত গলা, কানে, বগলে বা কুঁচকিতে দেখা যায়।

অধিকাংশ সময় এটি ভাইরাসজনিত সংক্রমণের কারণে হয়, তবে কখনো কখনো গুরুতর অসুস্থতার ইঙ্গিতও দিতে পারে। সাধারণত জ্বর বা সর্দি-কাশির সঙ্গে লিম্ফ নোড ফোলা দেখা যায়। সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে ভাইরাল সংক্রমণ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা, এপস্টেইন-বার ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রয়েছে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ যেমন টনসিলাইটিস, দাঁতের সংক্রমণ, যক্ষ্মা ও ত্বকের সংক্রমণও এই অবস্থার জন্য দায়ী হতে পারে।

কিছু ক্ষেত্রে অটোইমিউন ডিজিজ যেমন লুপাস বা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস লিম্ফ নোড ফোলার কারণ হতে পারে। এর পাশাপাশি ক্যানসার, যেমন লিম্ফোমা বা লিউকোমিয়া ও কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়াও এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। প্যারাসাইটিক বা ফাঙ্গাল সংক্রমণও এর অন্যতম কারণ।

যেসব লক্ষণে অবহেলা করা চলবে না, তার মধ্যে রয়েছে এক সপ্তাহের বেশি সময় লিম্ফ নোড ফোলা থাকা বা বাড়তে থাকা, ফোলা স্থানে ব্যথা, লালচে ভাব বা গরম অনুভব হওয়া, একাধিক স্থানে লিম্ফ নোড ফোলা, অকারণে ওজন কমে যাওয়া, খাবারে অরুচি, রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া এবং শিশুদের ক্ষেত্রে বারবার সংক্রমণ বা দুর্বলতা দেখা দেওয়া।

চিকিৎসার জন্য দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসক প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন এবং মূল রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা দেবেন। ভাইরাসজনিত সংক্রমণে সাধারণত বিশ্রাম, পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ এবং জ্বর কমানোর ওষুধ যথেষ্ট, তবে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজনে দেওয়া হয়। যক্ষ্মা ও ক্যানসারের মতো জটিল অবস্থায় বিশেষায়িত চিকিৎসা নিতে হয়। নিজের মতো করে বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা বিপজ্জনক, কারণ তা সংক্রমণকে লুকিয়ে রাখতে পারে বা রোগকে আরো জটিল করে তুলতে পারে।

ফোলা লিম্ফ নোডের ক্ষেত্রে নিজেই হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা উচিত, যেমন ফোলা জায়গায় হাত দেয়া বা চাপ দেওয়া ঠিক নয়। নিয়মিত রোগের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ বজায় রাখা প্রয়োজন। শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া মানেই যে বড় ধরনের কোনো রোগ হয়েছে, তা নয়, তবে এটি গুরুত্বহীনও নয়। বিশেষ করে জ্বরের সঙ্গে এটি থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি। সময়মতো সঠিক রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা নিতে পারলে জীবন রক্ষা সম্ভব।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ