অভিবাসীদের স্বপ্নপূরণে বাহরাইনের সোনালী অফার

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৪ ১৭:৪৫:৪১
অভিবাসীদের স্বপ্নপূরণে বাহরাইনের সোনালী অফার

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক কেন্দ্র বাহরাইন তার উদার অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে ‘গোল্ডেন রেসিডেন্সি ভিসা’ চালু করেছে, যা বর্তমানে অভিবাসীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। দেশটির ভিশন ২০৩০ কৌশলের অংশ হিসেবে চালু হওয়া এই ভিসা কর্মজীবী, বিনিয়োগকারী, অবসরপ্রাপ্ত এবং বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য একটি স্থিতিশীল ও দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের সুযোগ এনে দিচ্ছে।

এই গোল্ডেন ভিসার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো এর স্বল্প ব্যয় এবং নমনীয় শর্তাবলি। সাধারণত উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা সৌদি আরবের প্রিমিয়াম রেসিডেন্সির ক্ষেত্রে যেসব কঠোর আর্থিক ও প্রশাসনিক নিয়ম পালন করতে হয়, বাহরাইনে তার তুলনায় অনেক সহজ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন বাহরাইনের ভিসা পেতে একজন বিনিয়োগকারীকে মাত্র দুই লাখ বাহরাইনি দিনার মূল্যের সম্পত্তির মালিক হতে হয়। যেখানে আমিরাতে এ পরিমাণ দ্বিগুণেরও বেশি ২০ লাখ দিরহাম বা প্রায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন।

এছাড়া বাহরাইনের জীবনযাত্রার ব্যয় অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায় অনেক কম। মানামায় একটি পরিবার নিয়ে বসবাস করতে যে ব্যয় হয়, তা দুবাইয়ের তুলনায় গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম। দৈনন্দিন খরচ যেমন বাজার খরচ, বাসস্থান ভাড়া এবং গণপরিবহনের খরচ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় মধ্যম আয়ের অভিবাসীরা এখানে বসবাসের বিষয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

আরেকটি বড় সুবিধা হলো, এই ভিসা পাওয়ার পর কোনো স্পনসর বা নিয়োগকর্তার ওপর নির্ভর করতে হয় না। গোল্ডেন রেসিডেন্সি ভিসাধারীরা চাইলে নিজেই ব্যবসা চালু করতে পারেন, ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন কিংবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারেন—তাতে কোনো বাধা নেই। এই দিকটি মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসী কর্মীদের জন্য এক বিরল সুবিধা।

বাহরাইনের গোল্ডেন ভিসায় পারিবারিক সুবিধার বিষয়টি আরও এক ধাপ এগিয়ে রেখেছে দেশটিকে। একবার কেউ এই ভিসা পেয়ে গেলে স্বামী বা স্ত্রী, সন্তান এমনকি পিতামাতাকেও সহজেই স্পনসর করতে পারেন। শুধু তাই নয়, ভিসার মেয়াদ নবায়নের জন্য কোনো নির্দিষ্ট চাকরি ধরে রাখার বা সম্পত্তি সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা নেই—যা একে দীর্ঘমেয়াদে আরও টেকসই করে তোলে।

এই ভিসার জন্য চারটি যোগ্যতা ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত, দক্ষ পেশাজীবীরা যারা বাহরাইনে অন্তত পাঁচ বছর বসবাস করেছেন এবং যাদের মাসিক আয় দুই হাজার দিনার বা তার বেশি। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগকারীরা যারা কমপক্ষে দুই লাখ দিনার সমমূল্যের সম্পত্তির মালিক। তৃতীয়ত, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা—যাদের মাসিক পেনশন বাহরাইনে বসবাসরতদের জন্য ন্যূনতম দুই হাজার দিনার এবং বাহরাইনের বাইরে অবস্থানকারীদের জন্য চার হাজার দিনার হতে হবে। চতুর্থত, বিশেষ প্রতিভাসম্পন্ন ব্যক্তি, যাঁরা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ক্রীড়া, শিল্প বা উদ্যোক্তা খাতে স্বীকৃত।

আবেদন প্রক্রিয়াও বেশ সহজ। আবেদনকারীদের বাহরাইনের সরকারি পোর্টাল bahrain.bh–তে গিয়ে ‘eKey’ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং সেখান থেকে ডিজিটাল ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র যেমন পাসপোর্ট কপি, স্বাস্থ্য বীমা, ইনকাম বা বিনিয়োগের প্রমাণ সংযুক্ত করে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি মাত্র ৫ বাহরাইনি দিনার এবং অনুমোদনের পর ভিসা ইস্যুর জন্য দিতে হয় ৩০০ দিনার। সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই ভিসার আওতায় আসা ব্যক্তিদের ওপর বাহরাইনের বাইরে থাকার সময়সীমা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অন্যদিকে আমিরাতে গোল্ডেন ভিসাধারীদের প্রতি ছয় মাসে দেশটিতে ফিরে আসতে হয়, না হলে ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি বসবাস এবং ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনার দিক থেকে বাহরাইনের গোল্ডেন ভিসা অনেক বেশি নমনীয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

এই সুবিধাসমূহের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমানোর চিন্তাভাবনা করা অভিবাসীদের জন্য বাহরাইনের গোল্ডেন রেসিডেন্সি এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। যারা নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও স্বাধীন পরিবেশে পরিবার নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান, তাদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি আকর্ষণীয় বিকল্প। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রোগ্রাম বাহরাইনের অর্থনীতিকে যেমন বিদেশি বিনিয়োগ ও মেধা আকর্ষণের মাধ্যমে চাঙ্গা করবে, তেমনি এটি অভিবাসীদের জীবনেও নতুন মাত্রা যোগ করবে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ