দিল্লিতে বাংলায় কথা বলায় পানি-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৪:৫৯:৪০
দিল্লিতে বাংলায় কথা বলায় পানি-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন!

ভারতের একাধিক রাজ্যে সম্প্রতি বাংলা ভাষাভাষীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ ঘিরে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, দিল্লি, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, ওড়িশা এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অঞ্চলে শুধু বাংলায় কথা বলার কারণেই বহু মানুষকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সন্দেহ করা হচ্ছে। এমনকি, স্থানীয় প্রশাসন তাদের আটক করে ফের বাংলাদেশে পাঠানোর মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।

বিশেষ করে দিল্লির বসন্তকুঞ্জ এলাকার ‘বাঙালিপাড়া’ নামে পরিচিত স্থানে কিছু বাসিন্দাকে শুধুমাত্র বাংলা বলার দায়ে বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দেশটির গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে, ওড়িশায় সাম্প্রতিক সময়েই সাড়ে তিনশ'র বেশি মানুষকে কেবল বাংলা ভাষায় কথা বলার অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নয়, এটি ভারতের বহুত্ববাদী মূল্যবোধকেও চ্যালেঞ্জ করছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

এই প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে ‘ভয়ংকর ভাষাভিত্তিক নিপীড়ন’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ভারতীয় নাগরিকদের শুধুমাত্র বাংলা বলার কারণে বাংলাদেশি হিসেবে আখ্যায়িত করা অমানবিক এবং একে কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। চলমান সংসদের বাদল অধিবেশনেও তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠিতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিতর্কের মধ্যে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার এক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি বলেন, যদি কেউ জনগণনায় মাতৃভাষা হিসেবে বাংলা উল্লেখ করেন, তবে তাকে বিদেশি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। এই বক্তব্যে গোটা দেশের বাঙালি সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা নিয়ে এমন মনোভাব ও প্রশাসনিক দমন-পীড়ন দেশজুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিচ্ছে।

বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলো এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের মতে, ভাষা ও সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ ভারতীয় সংবিধানের বহুত্ববাদী চেতনাকে লঙ্ঘন করছে। এমন অবস্থায় দেশের মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিক সমাজ ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এ ধরনের আচরণ ভারতীয় ফেডারেল কাঠামো এবং সামাজিক সংহতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই পরিস্থিতি শুধু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং ভারতের জাতীয় পরিচয় ও সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের প্রশ্নও। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসন এই সংকট নিরসনে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ