সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে প্রচারের চেষ্টা

 নির্মম সোহাগ হত্যাকে 'সংখ্যালঘু নির্যাতন' সাজাতে চাইল ইন্ডিয়া টুডে

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৬:৪২:৪৬
 নির্মম সোহাগ হত্যাকে 'সংখ্যালঘু নির্যাতন' সাজাতে চাইল ইন্ডিয়া টুডে

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের রাস্তায় গত বুধবার (৯ জুলাই) সন্ধ্যায় পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৩৯)-কে। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটসংলগ্ন সড়কে এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাকে রাস্তায় ফেলে প্রথমে মাথায় পাথর দিয়ে আঘাত করা হয়। এমন ভয়াবহ দৃশ্য দেশজুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও শোকের সঞ্চার করে।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিচারের দাবিতে সোচ্চার হন। ঘটনাটিকে ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কও শুরু হয়, কারণ তদন্তে উঠে আসে বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা। পুলিশ ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং যুবদল নিজে তাদের কয়েকজন সদস্যকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।

এমন এক স্পর্শকাতর মুহূর্তে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ একটি বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। তাদের প্রতিবেদনে সোহাগকে হিন্দু ব্যবসায়ী হিসেবে উপস্থাপন করা হয় এবং ঘটনাটিকে সংখ্যালঘু নির্যাতন বলে বর্ণনা করা হয়। এমনকি প্রতিবেদনটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের নামে একটি পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবি ব্যবহার করা হয়। বাস্তবে নিহত সোহাগ ছিলেন মুসলিম এবং তার নাম ও পারিবারিক পরিচয়েই তা স্পষ্ট।

বাংলাদেশে এই সংবাদকে ঘিরে চরম নিন্দা ও অসন্তোষ তৈরি হয়। অনেকে এটিকে ‘তথ্য সন্ত্রাস’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ হিসেবে দেখছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের আখ্যান তৈরির প্রচেষ্টা একটি বিপজ্জনক কৌশল। এতে আঞ্চলিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বিশ্বদর্শনের স্তরেও।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত সোহাগের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। একই সঙ্গে অস্ত্র আইনে আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ। তদন্তে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সম্ভাব্য সংযোগ পাওয়া গেছে, যা আরও গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

সোহাগ হত্যাকাণ্ড এখন আর কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংসতা, সামাজিক নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রবাহের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। এর মাধ্যমে আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে, অপরাধের বিচারহীনতা বা রাজনৈতিক অপশক্তির দমনহীনতা সমাজকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন আচরণ কতটা সংবেদনশীল পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করতে পারে, তাও এই ঘটনায় স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এখন সময় হয়েছে— অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার পাশাপাশি তথ্যগত নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সচেতনতা জোরদার করার।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ