মাত্র ৪০ মিনিটে চার্জ! ডেনমার্কে চালু হলো বৈদ্যুতিক উড়োজাহাজ

বিশ্ব ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ২১:৪৪:৫৪
মাত্র ৪০ মিনিটে চার্জ! ডেনমার্কে চালু হলো বৈদ্যুতিক উড়োজাহাজ

ডেনমার্কের আকাশে প্রথমবারের মতো এক সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত উড়োজাহাজ ওড়ার মধ্য দিয়ে ইউরোপের পরিবেশবান্ধব বিমান চলাচলে এক নতুন যুগের সূচনা হলো। একটানা ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে প্লেনটি প্রমাণ করেছে, জ্বালানিমুক্ত আকাশপথ আর কেবল ভবিষ্যতের কল্পনা নয়—এখন তা বাস্তবতা। ‘আলিয়া সিটিওএল’ নামের এই বৈদ্যুতিক উড়োজাহাজটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এরোস্পেস প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বেটা টেকনোলোজিস।

উড়োজাহাজটি ডেনমার্কের সন্ডারবর্গ থেকে রাজধানী কোপেনহেগেন পর্যন্ত সফলভাবে যাত্রা সম্পন্ন করেছে। দেখতে সাধারণ স্প্রিন্টার ভ্যানের মতো হলেও প্রযুক্তিগতভাবে এটি একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। মাত্র ১৫ মিটার ডানার বিস্তারযুক্ত এই প্লেন ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৮১ কিলোমিটার বেগে উড়তে পারে এবং একবার সম্পূর্ণ চার্জে এটি ৬২২ কিলোমিটার পথ অতিক্রমে সক্ষম।

বেটা টেকনোলোজিসের তথ্যমতে, প্রচলিত হেলিকপ্টার ও উড়োজাহাজের তুলনায় এই বৈদ্যুতিক প্লেন অনেক বেশি নিরাপদ ও নিরব। এর অপারেশনাল ব্যয় কম এবং কার্বন নিঃসরণ প্রায় ৮৪ শতাংশ কমিয়ে আনে, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। চার্জিংয়ের ক্ষেত্রেও এর জটিলতা কম, কারণ এটি সাধারণ বৈদ্যুতিক গাড়ির ফাস্ট চার্জার দিয়েই চার্জ করা যায়, সময় লাগে মাত্র ২০ থেকে ৪০ মিনিট।

তবে এখনও এর প্রযুক্তির সামনে কিছু বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে ইউরোপজুড়ে চার্জিং অবকাঠামোর অভাব অন্যতম। ফলে প্লেনটি নিজস্ব চার্জিং সিস্টেম বহন করে চলাচল করছে। ড্যানফস ব্যাটারি সিস্টেমের চেয়ারম্যান এমেরিটাস ইয়োর্গেন ম্যাডস ক্লাউসেন আশা করছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে বৃহৎ বৈদ্যুতিক উড়োজাহাজের উপযোগী উন্নত ব্যাটারি বাজারে আসবে।

কোপেনহেগেন বিমানবন্দরের সিইও ক্রিশ্চিয়ান পুলসেন বলেছেন, ভবিষ্যতের পরিবহন ব্যবস্থায় বৈদ্যুতিক উড়োজাহাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই চার্জিং সুবিধা নিয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করা প্রয়োজন। বেটা টেকনোলোজিসের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শন হল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে উঠেছে, তবে ইউরোপে তা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে।

এই মুহূর্তে উড়োজাহাজটি ইউরোপ সফরে রয়েছে। আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এটি বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনীমূলকভাবে অবতরণ করছে। আগামী আগস্টে এটি নরওয়ের বার্গেন থেকে স্ট্যাভেঙ্গার পর্যন্ত পরীক্ষামূলক পণ্য পরিবহন করবে। পুরো পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছে নরওয়ের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবেশবান্ধব আকাশযান প্রযুক্তিতে শুধু বৈদ্যুতিক প্লেনই নয়, হাইব্রিড ও হাইড্রোজেন জ্বালানিভিত্তিক প্রযুক্তিরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। ড্যানিশ টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের নবায়নযোগ্য জ্বালানি টিম প্রধান লাসে স্টেনহয় ইনগভার্ডসেনের মতে, টেকসই বিমান চলাচলের জন্য একক কোনো প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে একাধিক বিকল্প ব্যবহার করতে হবে।

ডেনমার্ক সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে প্রথম সম্পূর্ণ টেকসই অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চালুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সব অভ্যন্তরীণ রুটে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এজন্য যাত্রীপ্রতি একটি পরিবেশ করও চালু করা হয়েছে।

এই পথেই এগোচ্ছে আরও কয়েকটি দেশ। নরওয়ে ২০৪০ সালের মধ্যে সব অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটকে বৈদ্যুতিক কিংবা হাইব্রিডে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে। সুইডেন ২০৩০ সালের মধ্যে অভ্যন্তরীণ এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।

এই পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের পথে সুইডিশ কোম্পানি হার্ট অ্যারোস্পেসও ইতোমধ্যে ৩০ আসনের ব্যাটারি চালিত ইএস-৩০ নামের উড়োজাহাজ তৈরি করছে, যা এক চার্জে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উড়তে সক্ষম। এটি প্রমাণ করছে, আগামী দিনের আকাশপথে সবুজ প্রযুক্তির জয়যাত্রা শুরু হয়ে গেছে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ