২২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্মৃতিতে বেঁচে আছেন ‘কৌতুকের রাজা’ দিলদার

বিনোদন ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১৮:১৩:৩৩
২২ বছর পেরিয়ে গেলেও স্মৃতিতে বেঁচে আছেন ‘কৌতুকের রাজা’ দিলদার

ঢাকাই সিনেমার অন্যতম প্রিয় ও জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা দিলদার হোসেনের আজ ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, তখন তার বয়স ছিল ৫৮ বছর। মৃত্যুর পর ঢাকার ডেমরায় সানারপাড় এলাকার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। বছর পেরিয়ে গেলেও তার অভিনয়ের গুণ ও হাসির ছাপ বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অমলিন হয়ে রয়েছে।

দিলদারের অভিনয়শৈলী ছিল বিশেষ অনন্য। তার কৌতুক প্রতিভার জুড়ি মেলা দুষ্কর। যেকোনো সিনেমায় দিলদারের আবির্ভাবই দর্শককে হাসির রসিকতায় ভরিয়ে দিত। হাস্যরসের মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করার পাশাপাশি তার কষ্টের দৃশ্যগুলোও হৃদয়ে গভীর দাগ ফেলে। এককথায়, তিনি ছিলেন হাসি আর কান্নার একমাত্র আধার, যার মাধ্যমে দর্শক নিজের জীবনের নানা রঙ দেখতে পেত।

অভিনয়ে দিলদারের অবদানের মূল্যায়নও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত চলেছিল। ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তুমি শুধু আমার’ সিনেমার জন্য তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে সম্মানিত করা হয়। এই পুরস্কার তার ক্যারিয়ারের একটি মর্যাদাপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে কৌতুক অভিনেতা দিলদারের প্রয়াণের ২২ বছর পেরিয়ে গেলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনে তার সৃষ্ট স্থান আজ অনেকটাই ফিকে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট নানা মহল থেকে তার প্রতি তেমন কোনো স্মরণসভা বা বিশেষ আয়োজনের খবর পাওয়া যায়নি। এর ফলে প্রিয় অভিনেতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ঘাটতি অনুভূত হয়।

দিলদার জীবদ্দশায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি দলের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জিয়া সাংস্কৃতিক সংসদ’ (জিসাস)-এর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে যদিও জিসাস বেশ সক্রিয়, তবুও দিলদারকে নিয়ে কোনো স্মরণী বা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়নি, যা অনেকের কাছে অবিচার বলে মনে করা হয়।

১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন দিলদার হোসেন। ১৯৭২ সালে ‘কেন এমন হয়’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি অভিনয়ের পথ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে প্রায় ৫ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে চলচ্চিত্র ইতিহাসে অমর হয়ে যান। ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত সারুলিয়া এলাকার নিজস্ব বাসভবনে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন তিনি। ১৯৯৪ সালে নিজ অর্থায়নে নির্মাণ করেন এই বাসভবন।

দিলদারের স্মৃতি আজও হৃদয়ে বেঁচে আছে, তার অভিনীত হাস্যরসের ছন্দ রয়ে গেছে দর্শকের মনে। তবে চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে তার অবহেলা ও স্মৃতিচারণের অভাব যেন এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে কৌতুকের এক যুগান্তকারী প্রতিভাকে আমরা আজ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, এবং আশা করছি ভবিষ্যতে তার প্রতি যথার্থ সম্মান প্রদর্শন হবে।

-রাফসান, নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ