সাপ্তাহিক শেয়ারবাজার বিশ্লেষণ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে টানা প্রবৃদ্ধি: ৩.৫৫% সূচক বৃদ্ধি ও তারল্যে ৩১% লাফ

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ১১ ১২:৩৪:৩০
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে টানা প্রবৃদ্ধি: ৩.৫৫% সূচক বৃদ্ধি ও তারল্যে ৩১% লাফ

গেল সপ্তাহের ৭ থেকে ১০ জুলাইয়ের সপ্তাহজুড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (DSE) একটি ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক বাজার পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের পুনঃআস্থা, নীতিগত স্থিতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্রিয়তার মিলিত প্রতিফলন। সপ্তাহজুড়ে বাজারের প্রধান সূচক DSEX ৩.৫৫ শতাংশ বা ১৭৩.৯৭ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ৫,০৬৮.০৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে, যা বছরের শুরু থেকে এখনও ২.৮৪ শতাংশ ঋণাত্মক হলেও অগ্রগতির একটি স্পষ্ট সংকেত। একই সময়ে, DS30 সূচক ৩.৯৫ শতাংশ এবং ইসলামিক শেয়ারের প্রতিফল DSES সূচক ৩.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগভিত্তিক DSMEX সূচক ০.০৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা SME সেক্টরে তারল্য ও বিনিয়োগ প্রবাহের সীমাবদ্ধতাকে নির্দেশ করে।

লেনদেন ও বাজারমূলধন সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলো বাজারের শক্তি ও গভীরতা প্রকাশ করে। এ সপ্তাহে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৫,৪৪৮.৫৬ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা বেশি। প্রতিদিনের গড় লেনদেন দাঁড়ায় ৬,৩৬২ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় ৩১ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে। মার্কিন ডলার বিবেচনায় গড় দৈনিক লেনদেন ছিল ৫২.২১ মিলিয়ন ডলার, যেখানে আগের সপ্তাহে ছিল মাত্র ৩৯.৬ মিলিয়ন—এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। বাজার মূলধনও যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে উঠেছে; সপ্তাহ শেষে তা দাঁড়ায় ৬.৭৬ লক্ষ কোটি টাকায়, যা বিগত এক বছরের মধ্যে অন্যতম উচ্চ পয়েন্ট। এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা প্রত্যাশা করছেন।

সপ্তাহজুড়ে বাজারের গঠনগত বিস্তার ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে ইতিবাচক। ৩২৪টি শেয়ারের দর বেড়েছে, মাত্র ৩৫টি শেয়ারের দর কমেছে এবং ৩৫টি অপরিবর্তিত ছিল। অর্থাৎ একটি শক্তিশালী অ্যাডভান্স-ডিক্লাইন রেশিও (ADR 9.26) দেখা গেছে, যা বাজারে ক্রয়চাপ এবং আশাবাদের একটি পরিস্কার প্রতিফলন। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনৈতিক সূচকের কিছুটা চাপ থাকা সত্ত্বেও পুঁজিবাজার তার গতিশীলতা ধরে রেখেছে।

খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে যে ব্যাংক, ফার্মাসিউটিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেক্সটাইল খাত বাজারে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়তা দেখিয়েছে। ৩৬টি ব্যাংক নিয়ে গঠিত ব্যাংকিং সেক্টর সর্বোচ্চ ১,২১১ কোটি টাকার গড় দৈনিক লেনদেন করেছে, যা মোট বাজার লেনদেনের ১৯ শতাংশেরও বেশি। এখানে ৩১টি ব্যাংকের দরবৃদ্ধি ঘটে—যা বিনিয়োগকারীদের এই সেক্টরে দৃঢ় আস্থার পরিচায়ক। ফার্মা ও কেমিক্যালস খাতে ৪৩ শতাংশেরও বেশি লেনদেন প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে, যেখানে RENATA এবং SQUARE ফার্মা বড় অবদান রেখেছে। সিমেন্ট সেক্টরের লেনদেন প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ১৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা অবকাঠামোগত খাতের পুনরুত্থানের ইঙ্গিত হতে পারে।

সপ্তাহের ব্লক ট্রেডের চিত্রও দারুণভাবে প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে। BRACBANK, SEMLLECMF, MIDLANDBNK, LOVELLO, PREMIERCEM এবং RENATA–র মতো কোম্পানিগুলো ছিল ব্লক ট্রেডিংয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে। BRACBANK একাই ২১৭ কোটি টাকার ব্লক লেনদেন করেছে, যা ব্যাংকিং সেক্টরে গভীর পুঁজি সঞ্চালনের প্রমাণ। SEMLLECMF এর ৫১ গুণের উচ্চ পিই রেশিও এবং বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখায় যে তারা ভবিষ্যৎ আয় ও রিটার্নের উচ্চ প্রত্যাশায় আছে।

সপ্তাহজুড়ে শীর্ষ গেইনারদের তালিকায় ছিল RAHIMTEXT (৩৭.৫৬%), REGENTTEX (৩৬.৬৭%), RAHIMAFOOD (২২.০১%) এবং TAMIJTEX (১৭.২৬%)। এই শেয়ারগুলোতে মূলত খুচরা বিনিয়োগকারীদের প্রবল আগ্রহ এবং ট্রেডিং চক্রের দ্রুত প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে। বিপরীতে, শীর্ষ লুজারদের মধ্যে YPL, SHEPHERD, SEMLLECMF এবং GHCL ছিল, যাদের দর ২.৫%–৮% পর্যন্ত কমেছে। কিছু কোম্পানির দরপতন তাদের অতিমূল্যায়ন বা স্বল্পমেয়াদি মুনাফা তোলার প্রবণতার কারণে ঘটেছে বলে ধারণা করা যেতে পারে।

সার্বিকভাবে, এই সপ্তাহের বাজারচিত্র একটি সুসংহত, গতিশীল ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ পুঁজিবাজার কাঠামোর প্রতিফলন। সূচকের ধারাবাহিক উন্নয়ন, তারল্যের প্রবাহ, খাতভিত্তিক সক্রিয়তা এবং প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ মিলে বাজার একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সামনের সপ্তাহগুলোতে যদি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, তবে বাজারে এই ইতিবাচক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সচেতন, তথ্যভিত্তিক এবং কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ