মূল্যভিত্তিক শীর্ষ ২০ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন

শেয়ারবাজার ডেস্ক . সত্য নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১৬:০০:০৮
মূল্যভিত্তিক শীর্ষ ২০ কোম্পানির শেয়ার লেনদেন

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন ছিল গতানুগতিক দিনের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয়। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির শেয়ারে মূল্য, ট্রেডের সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণে প্রবল গতিশীলতা লক্ষ্য করা গেছে। নিচে এই তিনটি দিক থেকে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলোর বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো। বাজারে মোট টাকার অঙ্কে লেনদেন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংকিং ও খাদ্যখাত সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। নিচে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কোম্পানির বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:

১. ব্র্যাক ব্যাংক (BRACBANK)

সর্বোচ্চ টাকার অঙ্কে লেনদেন হয় এই কোম্পানির। মোট লেনদেন দাঁড়ায় ১৯৪.৩৪ কোটি টাকা। মোট ১২,০৮টি ট্রেডে ৩৪.৬৪ লাখ শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৫৬.৪ টাকা। ব্যাংকটির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তির ইঙ্গিত দেয়।

২. বিচ হ্যাচারি (BEACHHATCH)

১৬৮.৪২ কোটি টাকার লেনদেন হয় কোম্পানিটির ৪৪৭৮টি ট্রেডের মাধ্যমে। শেয়ারের দর উঠানামা করেছে ৪৯.৪ থেকে ৫১.৩ টাকার মধ্যে। এই পরিমাণ ট্রেড কোম্পানিটির ওপর আশাবাদী বিনিয়োগকারীর সংখ্যাকে প্রকাশ করে।

৩. মিডল্যান্ড ব্যাংক (MIDLANDBNK)

১৩৭.২৫ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। মূল্যসীমা ছিল ২৮ থেকে ২৯.২ টাকা। ব্যাংক খাতের নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি বাজারে ক্রমাগত উচ্চ ভলিউম ও চাহিদার কারণে আলোচনায় এসেছে।

৪. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (BSC)১৩১ কোটি টাকার লেনদেন এবং দর ছিল ৯২.৫ থেকে ৯৪.২ টাকার মধ্যে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি স্থিতিশীল একটি শেয়ার হিসেবে বিবেচিত।

৫. বিডি প্যাকেজিং (BPPL)

৭৩.৩৯ লাখ শেয়ার লেনদেনে ১১৪.৮৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়। সর্বনিম্ন দর ছিল ১৫ টাকা। কোম্পানিটির সক্রিয়তা খাতটির পুনরুজ্জীবনকে ইঙ্গিত করে।

অন্য গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল Lovello (১১১.৭৭ কোটি), Orion Infusion (১০১.৮৫ কোটি), Seapearl (১০০.৪৬ কোটি), IBP (৯৫ কোটি), Agni Systems (৮৯.৬৫ কোটি) এবং Square Pharma (৮১.৩৩ কোটি)।

ভলিউমভিত্তিক শীর্ষ ২০ কোম্পানি: কার শেয়ার সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হলো?

ভলিউম (শেয়ারের পরিমাণে) শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো নিম্নোক্ত:

১. ওয়ান ব্যাংক (ONEBANKPLC)

১০৭ লাখ শেয়ারের লেনদেন। শেয়ারের দাম ছিল ৮.২ টাকা। পেনি স্টক হিসেবেই বিনিয়োগকারীদের বিপুল আগ্রহ লক্ষ করা যায়। এতে মূলত খুচরা বিনিয়োগকারীদের আধিপত্য স্পষ্ট।

২. এক্সিম ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড (EXIM1STMF)

৯০.৮৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়। দর ছিল ৪.৯ টাকা। মিউচ্যুয়াল ফান্ডে আবার বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

৩. বিডি প্যাকেজিং (BPPL)

৭৩.৩৯ লাখ শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে কোম্পানিটি এখানে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করে। শেয়ার দাম তুলনামূলক কম হলেও চাহিদা ছিল প্রবল।

৪. আইবিপি (IBP)

৬৫.৪১ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়। ট্রেডের সংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য (২৯৬০টি)। এটি খাদ্যখাতের শেয়ার এবং অস্থিরতাপূর্ণ বলে বিবেচিত।

৫. ABB 1st মিউচ্যুয়াল ফান্ড (ABB1STMF)

৬৫.৩০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয় ৪ টাকায়। বিনিয়োগকারীরা কম দামে মুনাফার আশায় এখানে ঝুঁকছে।

এই তালিকায় আরও ছিল IFIC (৬২.৮২ লাখ), First Security Islami Bank (৫৮.৬৮ লাখ), Midland Bank (৪৭.৯৭ লাখ), SEMLLECMF (৪৫.৩৪ লাখ), ML Dyeing (৪৪.৬২ লাখ), Fu-Wang Food (৪৩.২৪ লাখ) প্রভৃতি কোম্পানি।

ট্রেড সংখ্যা বা লেনদেনবারিতায় শীর্ষ কোম্পানিগুলো

লেনদেনের ফ্রিকোয়েন্সি বা কতবার শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে, তা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বোঝাতে গুরুত্বপূর্ণ:

১. BEACHHATCH – ৪৪৭৮ বার ট্রেড

এত বেশি ট্রেড একদিকে যেমন চাহিদার ইঙ্গিত দেয়, অন্যদিকে এর মধ্যে স্পেকুলেটিভ ট্রেডিংয়ের প্রবণতা রয়েছে।

২. Orion Infusion – ৩৬৬৩ ট্রেড

উচ্চদরের ওষুধখাতভুক্ত এই কোম্পানির শেয়ারে স্পষ্টতই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।

৩. IBP – ২৯৬০ ট্রেড

উচ্চ ভলিউম ও ট্রেড কোম্পানিটির অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।

৪. BPPL – ২৯৩৫ ট্রেড

খুচরা বিনিয়োগকারীদের অগ্রণী উপস্থিতি এখানে প্রকাশ পায়।

৫. Lovello – ২৬৭১ ট্রেড

খাদ্য খাতের এই কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং বাজার সম্প্রসারণ এধরনের ট্রেডের ব্যাখ্যা দিতে পারে।

এই তালিকায় আরও ছিল: BSC (২৪৩৭), Rahima Food (২৩৮৭), Seapearl (২২৫২), Fu-Wang Food (২১৫৬), Orion Pharma (১৯২৭), RUPALIBANK (১৯৬৯), AIL (১৯০৯), এবং CVOPRL (১৮২৯)।

বিশ্লেষণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন

এদিনের লেনদেন চিত্র বলছে, সামগ্রিকভাবে ব্যাংক, ফার্মা, খাদ্য ও প্যাকেজিং খাত বেশ সক্রিয় ছিল। তবে পেনি স্টক ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডে প্রচুর লেনদেন হওয়ার মানে দাঁড়ায়, বাজারে স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে দ্রুত লাভের মনোভাব প্রবল।

যদিও এই প্রবণতা অনেক সময় স্বল্পমেয়াদি লাভ এনে দেয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে মৌলিক দুর্বল কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বিপজ্জনক হতে পারে।

-তাই বিনিয়োগকারীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে:

-মৌলিকভাবে শক্তিশালী কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দিন

-অতিমূল্যায়িত বা অস্থির শেয়ার এড়িয়ে চলুন

-ট্রেডের সংখ্যা দেখে নয়, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি দেখে সিদ্ধান্ত নিন

ডিএসইর ৯ জুলাইয়ের লেনদেন বিশ্লেষণ স্পষ্ট করে যে, বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন খাতে গতিশীল থাকলেও, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাহীন লেনদেন তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। মৌলভিত্তিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি বাজার মনোবিজ্ঞান এবং সচেতনতা এটাই সফল বিনিয়োগের মূল চাবিকাঠি।

পাঠকের মতামত:

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ